মস্কোর প্রতি ট্রাম্প প্রশাসনের নমনীয় মনোভাবে দিশাহারা ন্যাটো
Published: 17th, February 2025 GMT
ইউরোপের দেশ বেলজিয়ামের ব্রাসেলসে ন্যাটোর সদর দপ্তরে ১২ ফেব্রুয়ারি একটি বৈঠক হয়েছিল। কাগজে-কলমে ইউক্রেনের জন্য সামরিক সহায়তা এবং নতুন মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে স্বাগত জানানোই ছিল ওই বৈঠকের মূল উদ্দেশ্য। কিন্তু বাস্তবে এটি ছিল এমন একটি দিন, যখন ট্রাম্প প্রশাসন প্রায় তিন বছর চলা রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রতি ন্যাটোর দৃষ্টিভঙ্গিকে পুরোপুরিভাবে উল্টে দিয়েছিল। ট্রাম্প প্রশাসন এমন একটি দৃষ্টিভঙ্গি সামনে এনেছে, যা মস্কোর কিছু গুরুত্বপূর্ণ দাবির পক্ষে যাবে বলেই মনে হচ্ছে।
ন্যাটোর জন্য সামনের দিনগুলো যে মসৃণ হবে না, আগে থেকেই তার স্পষ্ট ইঙ্গিত ছিল। ইউক্রেনের অনুকূল শান্তি চুক্তির প্রত্যাশায় জল ঢেলে দিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর কূটনীতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ সপ্তাহের শুরু করেছেন।
ডোনাল্ড ট্রাম্প ১০ ফেব্রুয়ারি ফক্স নিউজে বলেছেন, ইউক্রেনের কিছু ভূখণ্ড হয়তো কোনো একদিন রাশিয়ার দখলে চলে যেতে পারে। যদিও ট্রাম্পের এই মন্তব্যের ব্যাপারে এখনো মুখ খোলেননি ইউরোপের নেতারা।
১২ ফেব্রুয়ারি লাটভিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী আন্দ্রিস স্প্রুডস বলেছেন, ‘এখন নানা রকম কথাবার্তা শোনা যাচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে খুব স্পষ্ট ও সুনির্দিষ্ট একটি পরিকল্পনা গ্রহণ করা প্রয়োজন।’
সম্মেলন-পূর্ব ব্রিফিংয়ে ফক্স নিউজকে দেওয়া ট্রাম্পের ওই মন্তব্যের বিষয়ে সিএনএনের করা এক প্রশ্ন পুরোপুরি এড়িয়ে যান ন্যাটো মহাসচিব মার্ক রুট। এ সময় তিনি শুধু বলেন, ‘আমরা সব স্তরে ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে নিবিড়ভাবে কাজ করছি। তাদের সঙ্গে খুব ভালো আলাপ-আলোচনা হচ্ছে।’
ব্রাসেলসে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে দিনের শেষের দিকে যখন ন্যাটোর মন্ত্রীরা রাশিয়ার আগ্রাসন বন্ধের উপায় খুঁজছিলেন, তখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে ৯০ মিনিট ফোনে কথা বলেছেন। এই ঘটনা যুক্তরাষ্ট্রের খেয়ালখুশিমতো সিদ্ধান্ত নেওয়ার জ্বলন্ত উদাহরণ।তবে মিত্রদেশগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করা ট্রাম্প প্রশাসনের জন্য সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার না–ও হতে পারে। ট্রাম্পের নেতৃত্বাধীন মার্কিন সরকার ন্যাটো জোটের ঘোষিত একটি নীতিকে রাতারাতি নড়বড়ে পরিস্থিতির মধ্যে ফেলে দিয়েছে। ন্যাটো একসময় বলেছিল, ইউক্রেনের জন্য জোটটির সদস্যপদ পাওয়ার পথ অপ্রতিরোধ্য।
কিন্তু ন্যাটোর ওই বৈঠকে পিট হেগসেথ স্পষ্টভাবে বলেছেন, রাশিয়ার সঙ্গে শান্তি আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে ইউক্রেনের ন্যাটোর সদস্যপদ লাভের প্রত্যাশাকে বাস্তবসম্মত বলে মনে করছে না যুক্তরাষ্ট্র।
ন্যাটো ও যুক্তরাষ্ট্রের এই দুটি অবস্থান আসলে অসংগতিপূর্ণ নয় বলে যুক্তি দেওয়ার চেষ্টা করেছেন ইউরোপের অনেক নেতা।
যুক্তরাজ্যের প্রতিরক্ষামন্ত্রী জন হিলি বলেছেন, ‘ন্যাটো জোট হিসেবে আমরা সব সময় স্পষ্ট করে বলেছি, ন্যাটোতে ইউক্রেনের ন্যায্য স্থান রয়েছে। তবে এটি এমন একটি প্রক্রিয়া, যার জন্য কিছুটা সময় লাগবে।’ তবে হেগসেথের ওই মন্তব্য মস্কোর কাছে আত্মসমর্পণের ঝুঁকি তৈরি করে কিনা, সিএনএনের এমন একটি প্রশ্ন এড়িয়ে যান ব্রিটিশ এই কূটনৈতিক।
অন্যদিকে এস্তোনিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী হ্যানো পেভকুরও একইভাবে সিএনএনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘হেগসেথের বক্তব্যে কোনো সময়সীমার উল্লেখ ছিল না। তিনি যা বলতে চেয়েছেন.
এটি হোক বা না হোক কিংবা যুক্তরাষ্ট্রের আগের নীতি থেকে সরে এসে ইউক্রেনের ২০১৪ সালের আগের সীমান্তে ফিরে যাওয়ার উচ্চাভিলাষ বাস্তবসম্মত নয় বলে হেগসেথ যে মন্তব্য করেছেন সেটি হোক, একটি বিষয় স্পষ্ট। লন্ডনের একটি থিঙ্ক ট্যাংক রয়েল ইউনাইটেড সার্ভিসেস ইনস্টিটিউটের সামরিক বিজ্ঞানের পরিচালক ম্যাথিউ স্যাভিল বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র অন্যদের কথা না ভেবে নিজের মতো সিদ্ধান্ত নিতেই পছন্দ করছে। আর তাদের এসব সিদ্ধান্তের ফল ভোগ করতে হচ্ছে ইউরোপ ও ইউক্রেনকে।’
রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পউৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ইউক র ন র এমন একট বল ছ ন র জন য ইউর প
এছাড়াও পড়ুন:
শি জিনপিং ফোন করেছিলেন, ট্রাম্পের এমন দাবি প্রত্যাখ্যান চীনের
শুল্ক আরোপ নিয়ে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং তাকে ফোন করেছিলেন বলে যে দাবি করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তা প্রত্যাখ্যান করেছে চীন। সোমবার বেইজিং জানিয়েছে, শি জিনপিং সম্প্রতি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে ফোনে কথা বলেননি। এমনকি দুই দেশের মধ্যে শুল্কযুদ্ধ মেটাতে কোনো আলোচনাও হচ্ছে না। চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র এক বিবৃতিতে এ কথা জানিয়েছে। খবর-সিএনএন
গত সপ্তাহে টাইম সাময়িকীকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেছিলেন, চীনের প্রেসিডেন্ট সি তাঁকে ফোন করেছেন। এ ঘটনায় চীন তাৎক্ষণিক কোনো প্রতিক্রিয়া না জানালেও আজ দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে ট্রাম্পের এমন দাবি নাকচ করে দিয়েছে।
চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র গুয়ো জিয়াকুন নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘আমার জানামতে, সম্প্রতি দুই রাষ্ট্রপ্রধানের মধ্যে ফোনে কোনো কথা হয়নি। আমি আবারও স্পষ্ট করে বলতে চাই, চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে শুল্ক ইস্যু নিয়ে কোনো আলোচনা বা দর–কষাকষি চলছে না।’
গত শুক্রবার টাইম সাময়িকীতে প্রকাশিত সাক্ষাৎকারে সির প্রতি ইঙ্গিত করে ট্রাম্প বলেন, ‘তিনি আমাকে ফোন করেছিলেন। আমি মনে করি না এটি তাঁর পক্ষ থেকে কোনো দুর্বলতার ইঙ্গিত।’
ট্রাম্প বারবার সি চিন পিংকে ‘বন্ধু’ বলে উল্লেখ করেছেন। তবে টাইম সাময়িকীকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে চীনের নেতার সঙ্গে কথিত ফোনালাপের বিষয়বস্তু বা সময় সম্পর্কে কোনো নির্দিষ্ট তথ্য দেননি। এমনকি সিএনএন শুক্রবার জানতে চাইলেও তিনি এ বিষয়ে কিছু বলতে চাননি।
শুক্রবার হোয়াইট হাউসে সিএনএনের সাংবাদিক অ্যালাইনা ট্রিনের প্রশ্নের জবাবে ট্রাম্প বলেন, ‘আমি এ বিষয়ে মন্তব্য করতে চাই না। তবে আমি তাঁর (সি চিন পিং) সঙ্গে অনেকবার কথা বলেছি।’
সর্বশেষ গত ১৭ জানুয়ারি ট্রাম্প দ্বিতীয় দফায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেওয়ার কয়েক দিন আগে দুই নেতা ফোনে কথা বলেন।