তিস্তা বাঁচাতে উত্তরের পাঁচ জেলায় অবস্থান
Published: 18th, February 2025 GMT
আন্তর্জাতিক নদী হওয়া সত্ত্বেও তিস্তার পানি ইচ্ছেমতো আটকে রাখে বা প্রত্যাহার করে ভারত। তারা নদীতে বাঁধ দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে; কিন্তু বাংলাদেশের কৃষকেরা পানির অভাবে ফসল ফলাতে পারেন না। আবার বর্ষার মৌসুমে পানি ছেড়ে দিলে ভাঙে বসতবাড়ি, নষ্ট হয় ফসল। নদী ও নদীপারের বাসিন্দাদের রক্ষায় সোচ্চার হতে হবে। ভারতকে বলতে হবে, ‘আমার পানির ন্যায্য হিস্যা আমি চাই।’
গতকাল সোমবার বিকেলে তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলন কমিটির ডাকা অবস্থান কর্মসূচিতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথাগুলো বলেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যা আদায় ও তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবিতে গতকাল থেকে ৪৮ ঘণ্টার এ অবস্থান কর্মসূচি শুরু হয়েছে। তিস্তা নদীবেষ্টিত পাঁচটি জেলার ১১টি স্থানে একসঙ্গে এ কর্মসূচি চলছে।
‘জাগো বাহে তিস্তা বাঁচাই’ স্লোগানে এ অবস্থান কর্মসূচি চলছে লালমনিরহাট সদর, হাতীবান্ধা, কালীগঞ্জের দুটি স্থানে ও আদিতমারী; রংপুরের গঙ্গাচড়া ও কাউনিয়া; কুড়িগ্রামের রাজারহাট ও উলিপুর; নীলফামারীর ডিমলা এবং গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলায়। বিএনপির নেতা-কর্মীদের পাশাপাশি নদীপারের হাজারো বাসিন্দা কর্মসূচিতে অংশ নেন। কর্মসূচিতে যোগ দেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারাও।
অবস্থান কর্মসূচি থেকে তিস্তাপারের মানুষের দুঃখ-দুর্দশা লাঘবে জরুরি পদক্ষেপ নেওয়ার পাশাপাশি তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যা আদায়ে
ভারতকে চাপ দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়। বিএনপি নেতারা বলেন, বিগত আওয়ামী লীগ সরকার ভারতকে ‘বন্ধু’ বললেও তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যা আদায় করতে পারেনি। দাবি না মানা পর্যন্ত এ আন্দোলন চলবে বলে জানান দলটির নেতারা।
‘তিস্তা বাঁচাও স্লোগান নয়, মানুষের আহাজারি’গতকাল বেলা সাড়ে তিনটায় রংপুর-লালমনিরহাটের সীমানায় অবস্থিত তিস্তা রেলসেতু ও তিস্তা সড়কসেতুর মাঝখানের চরে অবস্থান কর্মসূচিতে অংশ নেন মির্জা ফখরুল। তিস্তার পানি একতরফা প্রত্যাহারের কঠোর সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘অনেকে আওয়ামী লীগকে ভারতের বন্ধু ভাবতেন; কিন্তু গত ১৫ বছরে শেখ হাসিনা দেশকে বেঁচে দিলেও তিস্তার এক ফোঁটা পানিও আনতে পারেনি।’
নদীভাঙনের শিকার হাজারো মানুষের দুর্ভোগের কথা উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, কী করুণ অবস্থা তাঁদের। একদিকে ভারত পানি ছেড়ে দেয়, পানির তোড়ে ঘরবাড়ি, সম্পদ ভেসে যায় ও নষ্ট হয়। আবার বাঁধের মাধ্যমে পানিপ্রবাহ বন্ধ করে দিলে এই এলাকা শুকিয়ে যায়। তিস্তাপারের মানুষের দুঃখ আর যায় না।
শুধু তিস্তা নয়, ভারত আন্তর্জাতিক ৫৪টি নদীর উজানে বাঁধ দিয়েছে উল্লেখ করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘ভারত বাঁধ দিয়ে পানি নেয়, বিদ্যুৎ উৎপাদন করে। আমাদের দেশের মানুষ পানির অভাবে ফসল ফলাতে পারেন না। জেলেরা নদীতে মাছ ধরতে পারেন না। এ সময়ে তিস্তা বাঁচানোর ডাক আমাদের অন্তরের সবার দাবি। লড়াই করেই আমরা তিস্তার পানি আনব।’
ভারতকে পরিষ্কার করে বলতে চাই, বাংলাদেশের মানুষের সঙ্গে যদি বন্ধুত্ব করতে চান, তাহলে আগে তিস্তার পানি দেন। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, মহাসচিব, বিএনপিমাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর ‘ফারাক্কা লংমার্চ’-এর প্রসঙ্গ উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘জাগো বাহে তিস্তা বাঁচাই কিন্তু কোনো স্লোগান নয়, এটা তিস্তাপারের মানুষের বাঁচার আহাজারি। এই সরকারকে পরিষ্কার করে বলতে চাই, আপনারা কথায় তো বলেন নিরপেক্ষ। নিরপেক্ষ কিন্তু এই জায়গায় থাকলে চলবে না। এই জায়গায় আপনাকে মুখ খুলতে হবে। ভারতকে বলতে হবে, আমার পানির ন্যায্য হিস্যা আমি চাই।
মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘ভারতকে পরিষ্কার করে বলতে চাই, আগেও বলেছি, এখনো বলছি, বাংলাদেশের মানুষের সঙ্গে যদি বন্ধুত্ব করতে চান, তাহলে আগে তিস্তার পানি দেন। সীমান্তে গুলি করে হত্যা বন্ধ করেন। আর আমাদের সঙ্গে বড় দাদার মতো যে আচরণ, সেটা বন্ধ করেন।’
অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী ও বিএনপির রংপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুল হাবিব (দুলু) বলেন, তিস্তা পাড়ের পাঁচ জেলার লাখো হতভাগ্য মানুষ এই অবস্থান কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছেন। এ অঞ্চলকে বিরানভূমিতে পরিণত করা হয়েছে। নদীভাঙনের শিকার হয়ে অনেকে গৃহহীন ও দেশান্তরি হয়েছেন। তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যার দাবিতে এখন সবাই ঐক্যবদ্ধ। অবিলম্বে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে হবে। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।
অন্তত তিস্তার ভাঙন ঠেকানলালমনিরহাটে অবস্থান কর্মসূচিতে যোগ দেওয়া দিনমজুর আজহার আলী ও সিরাজুল ইসলামের সঙ্গে কথা হয় রংপুর-কুড়িগ্রাম সড়কের তিস্তা সড়ক সেতুর নিচে। সত্তরোর্ধ্ব এই দুই ব্যক্তি তিস্তার ভাঙনে সর্বস্বান্ত হয়েছেন জানিয়ে বলেন, নদীর ভাঙনে দুবার বসতভিটা হারিয়েছেন। জমিজিরাত হারিয়ে এখন দিনমজুর। অন্তত তিস্তার ভাঙন বন্ধ করার ব্যবস্থা নেওয়া হোক, এটাই তাঁদের দাবি।
আজহার ও সিরাজুলের মতো তিস্তাপারের হাজারো মানুষ দুই দিনব্যাপী এ অবস্থান কর্মসূচিতে যোগ দিয়েছেন। গতকাল বেলা ৩টা ২০ মিনিটে জাতীয় সংগীত ও থিম সংয়ের মাধ্যমে অনুষ্ঠান শুরু হয়।
হেঁটে, ভ্যানে, রিকশায়, বাসে ও নৌকায় করে লোকজন কর্মসূচিতে যোগ দিতে আসেন। বিভিন্ন এলাকার জন্য আলাদা আলাদা প্যান্ডেল করা হয়েছে। প্রতিটি প্যান্ডেলের পাশে রান্না চলছে। রাত আটটার দিকে দেখা যায়, নদীর চরে প্যান্ডেল ও তাঁবু করে অবস্থান করছেন হাজারো মানুষ।
একটি প্যান্ডেলে কথা হলো মানিক মিয়া নামের এক কৃষকের সঙ্গে। ২০ বিঘা জমি গত ২০ বছরে তিস্তার ভাঙনে সব নদীগর্ভে চলে গেছে জানিয়ে তিনি বলেন, এখন অন্যের জমিতে ঘর করে আশ্রয় নিয়েছেন। তাঁর মতো তিস্তাপারের হাজারো মানুষ নদীভাঙনের শিকার; কিন্তু সরকার নদীভাঙন প্রতিরোধে কোনো ব্যবস্থা নেয় না।
নতজানু পররাষ্ট্রনীতিই দায়ীগাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার তিস্তা সেতু পয়েন্টে ‘জনতার সমাবেশে’ প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকতউল্লা বলেন, ‘আমরা যতই স্লোগান দিই, লাখো মানুষ তিস্তার পাড়ে শুয়ে থাকে, নির্বাচিত সরকার ছাড়া তিস্তার মতো মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। আগামী দিনে যে নির্বাচিত সরকার আসবে, তাদেরই বিভিন্ন দেশ সাহায্য দেবে, তিস্তা মেগা প্রকল্প বাস্তবায়িত হবে।’
কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার বুড়িরহাটে তিস্তা তীরে অবস্থান কর্মসূচিতে অংশ নেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন। তিনি বলেন, গত সরকারের নতজানু পররাষ্ট্রনীতির কারণে তিস্তাপারের মানুষ পানির ন্যায্য হিস্যা পাননি।
রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার মহীপুরে তিস্তা সেতুর নিচে অবস্থান কর্মসূচিতে গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, ভারত আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে বাঁধ দিয়েছে। তারা একবার পানিতে শুকিয়ে মারে, একবার ডুবিয়ে মারে।
এ ছাড়া কুড়িগ্রামের উলিপুর পাকার মাথায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু
মাহমুদ চৌধুরী, লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলায় তিস্তা নদীতীরে অবস্থান কর্মসূচিতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ, রংপুরের কাউনিয়ায় বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (জেপি) সভাপতি মোস্তফা জামাল হায়দার, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বক্তব্য দেন।
তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, আজ মঙ্গলবার সকাল ১০টায় তিস্তা সেতু থেকে রংপুরের কাউনিয়া পর্যন্ত গণপদযাত্রা, তিস্তার পানিতে নেমে প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন ও সংগীত পরিবেশন করা হবে। বিকেল পাঁচটায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এসব অবস্থান কর্মসূচিতে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে বক্তব্য দেবেন।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়েছেন প্রতিনিধি, লালমনিরহাট, নীলফামারী, কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধা]
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ল ইসল ম ব এনপ র উপজ ল ফখর ল গতক ল সরক র ভ রতক
এছাড়াও পড়ুন:
সন্তানদের টানে বিচ্ছেদ থেকে বন্ধন, আদালত চত্বরে আবার বিয়ে
তিন বছর আট মাস আগে বিবাহবিচ্ছেদ হয় এক দম্পতির। পরে দুই কন্যাসন্তানের হেফাজত চেয়ে আদালতে পাল্টাপাল্টি মামলা করেন মা ও বাবা। শুনানির সময় বাবার সঙ্গে আদালতে সন্তানদের দেখা হতো। কিন্তু এতটুকু দেখাতে মন ভরত না সন্তানদের। সন্তানেরা মা-বাবাকে সব সময় একসঙ্গে কাছে পেতে চাইত। সাত বছর বয়সী বড় কন্যা প্রতিবার সাক্ষাতের সময় কান্নাকাটি করে মা-বাবাকে একসঙ্গে থাকার জন্য আকুতি জানাত।
পরে দুই কন্যার মানসিক অবস্থা বিবেচনা করে ব্যথা ও অভিমান ভুলে ওই দম্পতি আবার একসঙ্গে থাকার সিদ্ধান্ত নেন। প্রায় তিন বছর মামলা চালানোর পর গত মার্চ মাসে আদালত চত্বরে তাঁদের বিয়ে সম্পন্ন হয়।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মলয় কুমার সাহা প্রথম আলোকে বলেন, শুধু কন্যাদের মানসিক অবস্থা বিবেচনায় নিয়ে ওই দম্পতি আবার এক হয়েছেন। আপসের পর ধর্মীয় বিধান মেনে আদালত চত্বরে তাঁদের আবার বিয়ে সম্পন্ন হয়েছে। তাঁরা সংসার শুরু করেছেন।
যেভাবে দ্বন্দ্ব, যেভাবে আপস
২০১৭ সালে পারিবারিকভাবে এই দুজনের বিয়ে হয়। তাঁরা দুজনই উচ্চশিক্ষিত। দুজনই উচ্চপদে চাকরি করেন। বিয়ের পর নারীর বাবার বাড়িতে তাঁদের সংসার শুরু হয়। পরে রাজধানীতে একটি ভাড়া বাসা নিয়ে থাকা শুরু করেন। বিয়ের এক বছরের মাথায় তাঁদের কন্যাসন্তানের জন্ম হয়।
নারীর ভাষ্য, বিয়ের পর তাঁদের সংসার ভালোই চলছিল। স্বামী যৌতুক চেয়েছিলেন। এ কারণে মেয়ের সুখের কথা ভেবে যৌতুক হিসেবে ছয় লাখ টাকা ব্যয় করে টিভি, ফ্রিজ, খাট ও আলমারি উপহার দেন তাঁর বাবা।
মামলায় ওই নারী অভিযোগ করেন, বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় তাঁর স্বামীর ভাড়া বাসায় ওঠার কয়েক মাস পর থেকে সংসারে অশান্তি শুরু হয়। ভাড়া বাসার পাশে তাঁর ননদের বাসা ছিল। শাশুড়ি কখনো তাঁদের সঙ্গে, আবার কখনো মেয়ের বাসায় থাকতেন। তুচ্ছ কারণে শাশুড়ির সঙ্গে তাঁর প্রায় সময় মনোমালিন্য হতো। এ নিয়ে স্বামী তাঁকে কটু কথা বলতেন। একপর্যায়ে মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন করতেন স্বামী। তবু সন্তানের কথা ভেবে অত্যাচার সহ্য করে সংসার করতে থাকেন তিনি।
মামলায় ওই নারী আরও অভিযোগ করেন, একপর্যায়ে বাবার কাছ থেকে জমি লিখে নিতে স্বামী তাঁকে চাপ দিতে শুরু করেন। এ প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন আরও বেড়ে যায়। একসময় তাঁদের মধ্যে দূরত্ব তৈরি হয়। পরে নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে বিয়ের চার বছরের মাথায় তিনি স্বামীকে তালাক দিয়ে সন্তান নিয়ে বাবার বাড়ি চলে যান।
তালাক কার্যকরের (তিন মাস) আগে স্বামীর পরিবারের সদস্যরা তালাকের নোটিশ প্রত্যাহারের অনুরোধ করতে থাকেন। স্বামী ও তাঁদের স্বজনেরা ওই নারীর কাছে অঙ্গীকার করেন, আর কখনোই শারীরিক বা মানসিক নির্যাতন করা হবে না। স্বামীর অনুরোধ ও সন্তানের কথা ভেবে কার্যকর হওয়ার আগে ওই নারী তালাকের নোটিশ প্রত্যাহার করে নেন। আবার সংসার শুরু করেন।
আদালতের কাছে নারী দাবি করেন, আবার সংসার শুরুর পর থেকে কয়েক মাস তাঁর স্বামীর সঙ্গে সম্পর্ক বেশ ভালো ছিল। তবে দ্বিতীয় সন্তান গর্ভে আসার পর থেকে আবারও স্বামী নির্যাতন করা শুরু করেন। তিনি এতটাই উগ্র হয়ে ওঠেন যে নির্যাতন ঠেকাতে পরিবারের অন্য সদস্যরা এগিয়ে এলে স্বামী তাঁদের সঙ্গেও খারাপ ব্যবহার করতেন। নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে আবারও স্বামীর বাসা ছেড়ে চলে যান বাবার বাসায়। ২০২১ সালের ৩০ আগস্ট তিনি আবার তাঁর স্বামীকে তালাকের নোটিশ দেন। তালাক কার্যকরও হয়। ছয় মাস পর একটি বেসরকারি হাসপাতালে তাঁর দ্বিতীয় কন্যাসন্তানের জন্ম হয়। স্বামী কখনো দ্বিতীয় সন্তানকে দেখতে আসেননি।
তবে এই নারীর সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন তাঁর সাবেক স্বামী। সাবেক স্বামীর অভিযোগ, তাঁর মায়ের সঙ্গে স্ত্রীর বনিবনা হতো না। এ কারণে স্ত্রী প্রায় সময় তাঁর মায়ের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করতেন। একদিন রাগ করে তাঁর স্ত্রী বড় মেয়েকে নিয়ে বাবার বাড়ি চলে যান। দ্বিতীয় সন্তান জন্মের পর কন্যাদের দেখতে তিনি শ্বশুরবাড়িতে গেলে শ্বশুরবাড়ির লোকজন তাঁকে মারধর করেন। এ সময় তিনি জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯–এ ফোন দেন। পরে পুলিশ তাঁকে উদ্ধার করে।
এ ঘটনার পর তাঁদের দুজনের মধ্যে আর কোনো সমঝোতা হয়নি। পরে দুই কন্যার হেফাজত চেয়ে সাবেক স্ত্রীকে বিবাদী করে পারিবারিক আদালতে মামলা করেন সাবেক স্বামী। অন্যদিকে ওই নারীও সাবেক স্বামীকে বিবাদী করে একই ধারায় মামলা করেন।
আরও পড়ুনবিয়ের অনেক বছর পরও কেন বিচ্ছেদ হয়১০ জুলাই ২০২৪বিবাদীপক্ষের আইনজীবী মলয় কুমার সাহা প্রথম আলোকে বলেন, এই দম্পতির বড় সন্তানের বয়স প্রায় সাত বছর, আর ছোট সন্তানের বয়স চার বছর। পারিবারিক আদালতে মামলার শুনানি চলাকালে আদালতকক্ষে স্বামী-স্ত্রীর দেখা হতো। দুই কন্যা তখন মা–বাবা দুজনের সঙ্গেই কথা বলত। তারা কান্নাকাটি করত; সবাই মিলে একসঙ্গে থাকতে চাইত। একসময় স্বামী-স্ত্রী দুজনই সন্তানের মানসিক অবস্থার কথা চিন্তা করে আবার একসঙ্গে সংসার করার সিদ্ধান্ত নেন।
আইনজীবী মলয় কুমার সাহা বলেন, মা–বাবার বিচ্ছেদের পর সন্তানেরা মানসিক যন্ত্রণার মুখোমুখি হয়। শিশুর মানসিক বিকাশে মা–বাবার আদর-ভালোবাসা বিরাট ভূমিকা রাখে। বিচ্ছেদের কারণে আদর-ভালোবাসার ঘাটতি সন্তানদের জীবনে দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলে। এ কারণে দুই কন্যার মানসিক সুস্থতার কথা ভেবে গত মার্চ মাসে আপস করে ওই দম্পতি আবার বিয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তাঁরা সংসার শুরু করেছেন। তাঁদের ব্যাপারে নিয়মিত খোঁজখবর রাখা হচ্ছে। তাঁরা এখন সুখে আছেন।
আরও পড়ুনবিচ্ছেদের ৫০ বছর পর আবার একসঙ্গে দুজন ০৮ ডিসেম্বর ২০২৪আরও পড়ুনডিভোর্সের পরও সন্তানের কথা ভেবে এক ছাদের নিচে থাকা কি ঠিক২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫