নতুন ধরনের স্বৈরতন্ত্রের আশঙ্কা রাষ্ট্রের ওপর চেপে বসেছে
Published: 18th, February 2025 GMT
দেড় দশকের বেশি সময় ধরে চলা দুঃশাসনের পর সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন ছিল জাতীয় ঐক্য ও সংহতি। কিন্তু বিভেদমূলক রাজনীতিকে ব্যবহার করে সারা দেশে সহিংসতা, বল প্রয়োগ, মব-সন্ত্রাস, তথ্য গোপন, কণ্ঠরোধ ও রাষ্ট্রীয় বাহিনীর হেফাজতে নেওয়াসহ বিভিন্ন উপায়ে নতুন ধরনের স্বৈরতন্ত্রের আশঙ্কা রাষ্ট্রের ওপর চেপে বসেছে।
দেশের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে এসব কথা বলেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সংগঠন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক। আজ মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত ‘অন্তর্বর্তী সরকারের ৬ মাস: কেমন আছে দেশ ও শিক্ষাঙ্গন’ শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলন এ কথা বলা হয়।
অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর যা হচ্ছে, সেটা বিশেষ উদ্বেগের জানিয়ে সংবাদ সম্মেলনে অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘সৃজনশীলতাবিরোধী শক্তিগুলোর লম্ফঝম্ফ দেখতে পাচ্ছি। তাদের দাপট দেখতে পাচ্ছি। তাদের বিভিন্ন অজুহাতে সেটা লালনের গান হোক, নাটকের উৎসব হোক, প্রদর্শনী হোক, শিল্পকর্ম হোক, ভাস্কর্য হোক, সেই সমস্তের ওপর আক্রমণ। মনে হচ্ছে যে শিল্পবিরোধী, সৃজনশীলতাবিরোধী মানুষের প্রাণ প্রকাশের যে সমস্ত মাধ্যম আছে, সকল কিছুর ওপরে আক্রমণ আসছে।’ তিনি বলেন, এসব ঠেকানো অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব হলেও সেটা করা হচ্ছে না।
সাম্প্রতিক ঘটনাবলির বিষয়ে আনু মুহাম্মদ বলেন, গায়ের জোর খাটানো, দমন করা, অত্যাচার করা, জোর-জুলুম করা, জবরদস্তি করা—এসব শেখ হাসিনার আমলের বৈশিষ্ট্য ছিল। এর পুনরাবৃত্তি কোনোভাবেই প্রত্যাশা ছিল না। এই সরকারের কোনো কোনো উপদেষ্টার কথায় মনে হচ্ছে, তাঁরা এগুলোকেই একটা যৌক্তিকতা দেওয়ার চেষ্টা করেন।
সংবাদ সম্মেলনে অধ্যাপক কামরুল হাসান মামুন বলেন, ‘গণ-অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন রাষ্ট্রে কিংবা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কোথাও দেখা যাচ্ছে না। পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে কীভাবে সবকিছু দলীয় আবরণে হলো, এ এক আশ্চর্য বিষয়। প্রত্যেকটা নিয়োগ—ভিসি, প্রোভিসি থেকে শুরু করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সব জায়গায় খুঁজে খুঁজে দলীয় ব্যক্তিদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এক ফ্যাসিজম থেকে উল্টো আরেক ফ্যাসিজমের দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক গীতি আরা নাসরীন বলেন, ‘সময়ের অভাবে কাউকে ধরে উপদেষ্টা করে দিলাম। কিন্তু করার পরে যিনি ঠিকমতো কাজ করতে পারছেন না, তাঁকে আমরা রাখছি কেন? যে দেশে শিক্ষকদের নিপীড়ন করা হয়, গায়ে হাত তোলা হয়, যে সরকারের অধীনে, সেই সরকারের কাছে কী আশা করা যায়?’ সরকারের অগ্রাধিকার তালিকায় প্রথমে হত্যাকারীকে ফিরিয়ে এনে বিচার করা উচিত ছিল বলেও মনে করেন তিনি।
বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে উপাচার্য নিয়োগের নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়নি জানিয়ে অধ্যাপক নাসির আহমেদ বলেন, একটি বিশেষ দলের ইঙ্গিতে ভিসিদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। ভিসিরা একইভাবে মৌলবাদী চর্চাকারী বিশেষ ছাত্রসংগঠনের যোগসাজশে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে পরিচালনা করছে বা স্বাধীনতা চর্চার ক্ষেত্রগুলোকে বিনষ্ট করছে। এ ধারা ভঙ্গ করতে হবে।
শুরুতে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন শিক্ষক দীপ্তি দত্ত, অলিউর সান ও অধ্যাপক সৌমিত জয়দ্বীপ।
দেশের সার্বিক পরিস্থিতির বিষয়ে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, হত্যাকাণ্ডের হোতা ও জড়িতদের বিচারের দৃশ্যমান অগ্রগতি নেই। ‘আয়নাঘরের’ রহস্য উন্মোচনে রহস্য তৈরি করা হয়েছে এবং কুশীলবদের রক্ষার পাঁয়তারা হচ্ছে। পাঠ্যপুস্তকের প্রচ্ছদ থেকে ‘আদিবাসী’ লেখা গ্রাফিতি সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ধর্মীয় উগ্রপন্থীদের বাধার মুখে নারায়ণগঞ্জ ও টাঙ্গাইলে লালন মেলা বন্ধ, ঢাকার উত্তরায় বসন্ত উৎসব পণ্ড, মহিলা সমিতি মিলনায়তনে নাট্যোৎসব বন্ধ হয়েছে।
শিক্ষক নেটওয়ার্কের সংবাদ সম্মেলন থেকে দেশের প্রেক্ষাপটে ৭টি এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেক্ষাপটে ৬টি দাবি জানানো হয়। দেশের প্রেক্ষাপটে দাবির মধ্যে জুলাই হত্যাকাণ্ডের স্বচ্ছ ও গ্রহণযোগ্য বিচারিক প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করা, রাষ্ট্রের সব স্তরে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অনুসরণ, সব ধরনের মত ও বিশ্বাসের অধিকার প্রতিষ্ঠায় রাষ্ট্রকে সক্রিয় ও শক্তিশালী ভূমিকা পালন, মব সংস্কৃতি কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ এবং অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর সব ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানানো হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেক্ষাপটে দাবিগুলো হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থাপনা সংস্কারের উদ্যোগ গ্রহণ, প্রশাসনিক পদে নিয়োগে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অনুসরণ, শিক্ষার্থীদের অবাধ চলাচল ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত এবং শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সকল ফোরাম গণতান্ত্রিক পন্থায় সক্রিয় করা।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
বিএনপি ৭ হাজারের বেশি সদস্যের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিয়েছে: তারেক রহমান
ছবি: তারেক রহমানের ফেসবুক পোস্ট থেকে