গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় সড়ক নির্মাণে অনিয়মের অভিযোগে তৎকালীন প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা এবং ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যানসহ তিনজনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে ‍দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। 

বুধবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) দুদক গোপালগঞ্জ জেলা কার্যালয়ের উপ-সহকারী পরিচালক আল আমিন ইসলাম বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন।

মামলার আসামিরা হলেন- টুঙ্গিপাড়া উপজেলার তৎকালীন প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো.

আরিফুল ইসলাম, ডুমুরিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আলী আহম্মেদ ও একই ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য কবির তালুকদার।

আরো পড়ুন:

দেবরের ছুরিকাঘাতে ভাবির মৃত্যু, গ্রেপ্তার ৪

সেনা কর্মকর্তা হত্যা মামলার ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি গ্রেপ্তার

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে দুদক জানায়, অভিযোগের বিষয়ে সরেজমিনে অভিযান চালিয়ে প্রাপ্ত তথ্য, সংশ্লিষ্টদের জিজ্ঞাসাবাদ ও তথ্য অনুসন্ধানকালে সংগৃহীত রেকর্ডপত্র পর্যালোচনায় দেখা যায় যে, ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কার (কাবিখা-কাবিটা) কর্মসূচির আওতায় বিশেষ বরাদ্দ দ্বারা বাস্তবায়িত ২৬টি প্রকল্পের মধ্যে ২ কোটি ৭৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা ব্যয়ে ২১ নং প্রকল্প চর গোপালপুর ওয়াবদা রাস্তা থেকে পাতিলঝাপা অনন্ত বৈদ্যর বাড়ি হয়ে ভেন্নাবাড়ি বৈদ্যবাড়ি পর্যন্ত মাটির রাস্তা নির্মাণ ও প্যালাসাইডিং করণ কাজটি কাবিখা-কাবিটা নীতিমালার আওতায় শ্রমিক দ্বারা করানো হয়েছে মর্মে দেখানো হয়।
 
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত বছরের জুন মাসের ৩ তারিখ থেকে একই মাসের ১২ জুন পর্যন্ত ২ হাজার ১৬০ জন শ্রমিক দিয়ে কাজ করিয়ে মাস্টার রোল সম্পন্ন করে ১ কোটি ৩৭ লাখ ২৫ হাজার টাকা বিল উত্তোলন করা হয়। এরপর ২০২৪ সালের ১৩ জুন হতে ১৭ জুন পর্যন্ত ২ হাজার ১৬০ জন শ্রমিক দিয়ে কাজ করিয়ে মাস্টার রোল সম্পন্ন করে দ্বিতীয় বিল বাবদ মোট ৬৮ লাখ ৬২ হাজার ৫০০ টাকা উত্তোলন করা হয়। ১৮ জুনের পর আরো পাঁচ দিন ৫৯০ জন শ্রমিক দিয়ে কাজ সম্পন্ন হয়েছে দেখিয়ে মাস্টার রোল সম্পন্ন করে ওই বছরেরই ২৪ জুন তৃতীয় ও চূড়ান্ত বিল বাবদ মোট ৬৮ লাখ ৬২ হাজার ৫০০ টাকাসহ সর্বমোট তিন দফায় ২ কোটি ৭৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা উত্তোলন করা হয়। টাকা উত্তোলন করা হলেও ৫০ লাখ টাকার প্যালাসাইডিং কাজের মধ্যে ৩৪ লাখ ৩১ হাজার ২৫০ টাকার কাজ না করায় উক্ত টাকা ২০২৪ সালের অক্টোবরে ৩০ তারিখ সোনালী ব্যাংকে চালানের মাধ্যমে ১-৪৯০১-০০০১-২৬৭১ কোডে জমা করা হয়। ২৪ জুন বরাদ্দকৃত সমুদয় ২ কোটি ৭৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা উত্তোলন করা হয়। 

এরপর মাস্টার রোলের সঙ্গে সমন্বয় করে গত অক্টোবরের ৩০ তারিখ ৩৪ লাখ ৩১ হাজার ২৫০ টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দেওয়া হয়। অর্থাৎ কাজ না করেও বিল উত্তোলন করে প্রায় চার মাসে ৩৪ লাখ ৩১ হাজার ২৫০ টাকা সাময়িক আত্মসাৎ করা হয়েছিল মর্মে রেকর্ডপত্র পর্যালোচনায় প্রতীয়মান হয়।রেকর্ডপত্র পর্যালোচনায় দেখা যায় যে, ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কার (কাবিখা-কাবিটা) কর্মসূচির আওতায় বিশেষ বরাদ্দ দ্বারা বাস্তবায়িত ২৬ প্রকল্পের মধ্যে ৪৭ লাখ ২২ হাজার টাকা ব্যয়ে ২৩ নং প্রকল্প ‘পাকুরতিয়া পান্না শেখ এর বাড়ি হতে ছোট ডুমুরিয়া দেবেন মণ্ডলের বাড়ির কাছে এইচবিবি রোড পর্যন্ত মাটির রাস্তা নির্মাণ ও প্যালাসাইডিং করণ কাজটি কাবিখা-কাবিটা নীতিমালার আওতায় শ্রমিক দ্বারা করানো হয়েছে মর্মে দেখানো হয়। ২০২৪ সালের ৩ জুন থেকে ১২ জুন পর্যন্ত ২৫০ জন শ্রমিক দিয়ে কাজ করিয়ে মাস্টার রোল সম্পন্ন করে প্রথম বিল বাবদ ২৩ লাখ ৬১ হাজার টাকা ও ২৪ জুন চূড়ান্ত বিল বাবদ ১১ লাখ ৮০ হাজার ৫০০ টাকাসহ মোট ৪৭ লাখ ২২ হাজার টাকার বিল উত্তোলন করা হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়, প্রকল্প দুইটি সরেজমিন পরিমাপ গ্রহণ করা হলে দেখা যায়, ড্রেজার দিয়ে বালু ফেলে রাস্তা তৈরি করায় সাধারণ মানুষের ব্যবহার উপযোগী নেই। অর্থাৎ রাস্তায় বালির পরিমাণ বেশি ও মাটির পরিমাণ অত্যাধিক কম। ড্রেজার দিয়ে বালু পরিবহন করায় দূরে থেকে শ্রমিক দিয়ে মাটি আনার খরচ লাগেনি। কিন্তু উক্ত খাতে বিল বাবদ অর্থ উত্তোলন করা হয়েছে। অতিরিক্ত লিড, ম্যানুয়েল কম্পেকশন, লেভেলিং, ড্রেসিং, ক্যাম্বারিং, পার্শ্ব ঢাল ঠিক করণ, শক্ত, কাদা, বালি মাটির জন্য অতিরিক্ত ব্যয় বাবদ বিল উত্তোলন করা হলেও রাস্তায় উক্ত কাজসমূহ করার তথ্য পাওয়া যায়নি। অর্থাৎ প্রকল্প বাস্তবায়নকারী বর্ণিত আসামিগণ অসৎ উদ্দেশ্যে পরস্পর যোগসাজশে প্রতারণা ও জালিয়াতির মাধ্যমে স্পেসিফিকেশন অনুযায়ী কাজ না করে ভুয়া মাস্টাররোল প্রস্তুতপূর্বক দাখিলের মাধ্যমে ক্ষমতার অপব্যবহার করত: অর্থ উত্তোলন করে শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন।

ঢাকা/বাদল/মাসুদ

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র আওত য়

এছাড়াও পড়ুন:

সুদ পরিশোধে ব্যয় বাড়ছে

সুদ পরিশোধে সরকারের ব্যয় বাড়ছে। এ ব্যয় বহন করতে রীতিমত হিমশিম খেতে হচ্ছে। বাজেটে সরকারের সুদ পরিশোধ সংক্রান্ত পূর্বাভাসে দেখা যাচ্ছে, আগামী বছরগুলোতে সুদ ব্যয় ক্রমাগত বৃদ্ধি পাবে।

পরিচালন ও উন্নয়ন বাজেটের প্রায় ১৫ ভাগ অর্থই সুদ খাতে খরচ করতে হচ্ছে এখন। এ পরিস্থিতিতে আগামী তিন অর্থবছরে সুদ খাতেই ব্যয় করতে হবে চার লাখ ১০ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। পাঁচ অর্থবছরের ব্যবধানে সুদ ব্যয় বাড়ছে ৩৩ শতাংশ। এর মধ্যে শতাংশের হিসাবে বৈদেশিক ঋণের সুদ ব্যয় সবচেয়ে বেশি বাড়বে।

অর্থ বিভাগের করা ‘মধ্যমেয়াদি সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতি বিবৃতি-২০২৫-২০২৬ থেকে ২০২৭-২০২৮’ এ তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে।

পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে সুদ খাতে ব্যয় হয়েছিল এক লাখ  ১৪ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে অভ্যন্তরীণ খাতে সুদ ব্যয় ছিল ৯৯ হাজার ৬০০ কোটি টাকা এবং বিদেশি ঋণের সুদ ব্যয় গেছে ১৫ হাজার ১০০ কোটি টাকা।

চলতি ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে (যা চলতি জুনের ৩০ তারিখে শেষ হয়ে যাবে) মূল বাজেটে সুদ খাতে ব্যয় বরাদ্দ ছিল এক লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু বছর শেষে এই সীমায় সুদ ব্যয় ধরে রাখা সম্ভব হয়নি। ফলে সংশোধিত বাজেটে এ খাতে ব্যয় বাড়িয়ে ধরা হয়েছে এক লাখ ২১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এ হিসাবের মধ্যে ছিল অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদ ব্যয় ৯৯ হাজার ৫০০ কোটি টাকা এবং বিদেশী ঋণের ২২ হাজার কোটি টাকা।

একইভাবে আগামী তিন অর্থবছরে সুদ খাতে ব্যয়েরও একটি প্রক্ষেপণ করেছে অর্থ বিভাগ। এই হিসেবে দেখা যায় আগামী ১ জুলাই থেকে শুরু হওয়া ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরে সুদ খাতে ব্যয় হবে এক লাখ ২২ হাজার কোটি টাকা (অভ্যন্তরীণ এক লাখ কোটি টাকা , বিদেশি ঋণের সুদ ব্যয় ২২ হাজার কোটি টাকা)। একইভাবে এর পরের অর্থবছর ২০২৬-২০২৭ অর্থবছরে একলাখ ৩৬ হাজার ২০০ কোটি টাকা(অভ্যন্তরীণ এক লাখ ১২ হাজার কোটি টাকা এবং বিদেশি ঋণের ২৪ হাজার ২০০ কোটি টাকা) এবং ২০২৭-২০২৮ অর্থবছরে সুদ খাতে ব্যয়ের  প্রক্ষেপণ করা হয়েছে ১ লাখ ৫২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। 

অর্থ বিভাগ থেকে বলা হয়েছে,  মোট সুদ ব্যয়ের সিংহভাগই অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদ পরিশোধ। অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদ পরিশোধ ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে  ৯৯ হাজার ৬০০ কোটি টাকা থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ২০২৭-২০২৮ অর্থবছরে এক লাখ ২৫ হাজার ৫০০ কোটি টাকা গিয়ে পৌঁছাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কিন্তু মোট বাজেটের অনুপাতে অভ্যন্তরীণ সুদ পরিশোধের হার ২০২৩ -২০২৪ অর্থবছরে ১৬ দশমিক ২৯ শতাংশ থেকে কমে ২০২৭-২০২৮ অর্থবছরে ১২ দশমিক ৭৫ শতাংশে হ্রাস পাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। যদিও বৈদেশিক ঋণের সুদ পরিশোধ মোট সুদ ব্যয়ের তুলনায় কম, তবে এটি উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পাবে বলে অনুমান করা হচ্ছে। ফলে এটি ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে ১৫ হাজার ১০০ কোটি টাকা থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ২০২৭-২০২৮ অর্থবছরে ২৭ হাজার ১০০ কোটি টাকায় উন্নীত হতে পারে। মোট বাজেটের অনুপাতে বৈদেশিক ঋণের সুদ পরিশোধ এ সময়কালে ২ দশমিক ৪৭ শতাংশ থেকে বেড়ে ২ দশমিক ৭৬ শতাংশে উন্নীত হতে পারে।

বিদেশি ঋণের সুদ ব্যয় নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে অর্থ বিভাগ থেকে বলা হয়েছে, বৈদেশিক ঋণের সুদ পরিশোধের কার্যকর ব্যবস্থাপনা শুধু আর্থিক শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্যই নয়, বরং এটি সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ রক্ষা, টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করা, আন্তর্জাতিক ঋণমান বজায় রাখা এবং ভবিষ্যতের উন্নয়ন সম্ভাবনা সুরক্ষিত রাখার জন্য অপরিহার্য।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • খেলাপি ঋণ ৪ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে
  • সুদ পরিশোধে ব্যয় বাড়ছে
  • সংশোধিত সাইবার অধ্যাদেশও আন্তর্জাতিক মানের হয়নি
  • জার্মানির ১০টি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিনা মূল্যে পড়াশোনা, জেনে নিন সব তথ্য
  • ২০২৪ সালে মেটার কাছে ৩৭৭১ অ্যাকাউন্টের তথ্য চেয়েছে সরকার
  • কয়েক দশকের ছায়াযুদ্ধ থেকে এবার প্রকাশ্য সংঘাতে ইরান-ইসরায়েল
  • তিন চ্যাম্পিয়ন দলসহ যেসব তারকাকে দেখা যাবে না ক্লাব বিশ্বকাপে
  • ৫ বছরে ঋণের স্থিতি বাড়বে ৫৩.৭৭ শতাংশ: অর্থবিভাগ