আট বছর পর আয়োজিত চ্যাম্পিয়নস ট্রফির উদ্বোধনী ম্যাচে যে উত্তেজনা ছড়ানোর কথা ছিল তা কি পেরেছে? নিশ্চয়ই না।
২০১৭ সালের পর আয়োজিত এই আসর এবার বসেছে পাকিস্তানে। পাকিস্তান এই আসরে স্বাগতিক। আবার সবশেষ আসরে তারা চ্যাম্পিয়ন। ১৯৯৬ সালের পর ২৯ বছর পর তাদের মাটিতে আইসিসি ইভেন্ট। কত কত উপলক্ষ্য পাকিস্তানিদের জন্য এই ম্যাচকে ঘিরে। এই আসরকে ঘিরে।
অথচ ২২ গজে স্রেফ অসহায় আত্মসমর্পণে সব উৎসবে পানি ঢেলে দিলো মোহাম্মদ রিজওয়ানের দল। চ্যাম্পিয়নদের করাচির মাটিতে ধাক্কা দিয়ে প্রতিযোগিতা দারুণভাবে শুরু করলো নিউ জিল্যান্ড। আগে ব্যাটিং করতে নেমে নিউ জিল্যান্ড উইল ইয়ং ও টম লাথামের জোড়া সেঞ্চুরিতে ৫ উইকেটে ৩২০ রান করে। জবাবে পাকিস্তানের ইনিংস আটকে যায় মাত্র ২৬০ রানে। ৬০ রানের বিশাল জয়ে মিনি বিশ্বকাপ খ্যাত চ্যাম্পিয়নস ট্রফির আসর শুরু করল কিউইরা।
আরো পড়ুন:
রোহিতের ২০ মিনিটের সংবাদ সম্মেলনে কোথাও নেই ‘বাংলাদেশ’
গ্লেন ‘জন্টি’ ফিলিপস
ম্যাচটা পাকিস্তান হেরেছে নিউ জিল্যান্ডের তিন বিভাগের দারুণ পারফরম্যান্সে। ব্যাটিংয়ে পাহাড়সমান রানের পর তাদের বোলিং ছিল দুর্দান্ত। ফিল্ডিং নিউ জিল্যান্ডের বরাবরই বাড়তি পাওয়া। তিন বিভাগের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় করাচিতে বিজয়ের পতাকা উড়াতে সক্ষম হয় চ্যাম্পিয়নস ট্রফির সাবেক চ্যাম্পিয়নরা।
লাথাম ও ইয়ংয়ের চ্যাম্পিয়নস ট্রফির পথচলা শুরু হয় এই ম্যাচ দিয়ে। প্রথম সুযোগেই তারা বাজিমাত করেন। আসরের প্রথম সেঞ্চুরি আসে ইয়ংয়ের ব্যাট থেকে। শুরুতে ডেভন কনওয়ে (১০) ও কেন উইলিয়ামসন (১) আউট হয়ে গেলেও বিচলিত হননি ইয়ং। ড্যারিল মিচেলকে সঙ্গে নিয়ে পরিস্থিতি সামলে নিয়ে এগিয়ে যান খুব দ্রুত। এরপর লাথাম যোগ দেওয়ার পর তার ইনিংস গতি পায়।
৫৬ বলে ফিফটি তুলে নেওয়ার পর ১০৭ বলে পৌঁছান ক্যারিয়ারের চতুর্থ সেঞ্চুরিতে। অন্যদিকে লাথাম ইনিংসের শেষ পর্যন্ত টিকে থেকে দলের রান নিয়ে যান চূঁড়ায়। তার ১১৮ রানের ইনিংসটি সাজানো ছিল ১০৪ বলে, ১০ চার ও ৩ ছক্কায়। ইয়ংকে ১০৭ রানে থামান নাসিম শাহ। কিন্তু ক্রিজে এসে চড়া ব্যাটে পাকিস্তানিদের জবাব দেন গ্লেন ফিলিপস। তাতে শেষের আক্রমণ একেবারে নির্বিষ হয়ে যায় স্বাগতিকদের বোলিং। ষষ্ঠ উইকেট জুটিতে লাথাম ও ফিলিপস ৭৪ বলে ১২৫ রান করেন। ৩৯ বলে ৩ চার ও ৪ ছক্কায় ৬১ রান আসে ফিলিপসের ব্যাট থেকে।
পাকিস্তানের হয়ে বল হাতে ২টি করে উইকেট নেন নাসিম শাহ ও হারিস রউফ।
কিছুদিন আগেই পাকিস্তান এই মাঠে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ৩৫৩ রান তাড়া করে ম্যাচ জিতেছিল। সেই আত্মবিশ্বাস ছিল দলের ক্রিকেটারদের। কিন্তু ২২ গজে তাদের ধীরগতির ব্যাটিং সব ওলট-পালট করে দিয়েছে। প্রথম ১০ ওভারে পাকিস্তানের রান ২ উইকেটে ২২। পরের ১০ ওভারে কোনো উইকেট না হারালেও স্কোরবোর্ডে যোগ হয় মাত্র ৪৪ রান। ইনিংসের অর্ধেক ওভারে স্কোরবোর্ডের চিত্র এরকম, ৩ উইকেটে ৮৩।
টপ অর্ডারে যে মন্থর ব্যাটিং চালু হয়েছিল সেই গতি ছিল মিডল অর্ডারেও। তাতে পরাজয় নিশ্চিত হয়ে যায় ইনিংসের মাঝপথেই। ওপেনিংয়ে সৌদ সাকিল ১৯ বলে ৬ রান করেন। ফিলিপসের দুর্দান্ত ক্যাচে পরিণত হওয়ার আগে রিজওয়ান করেন ১৪ বলে ৩ রান। দৃষ্টিকটু ফিফটি তুলে সাজঘরে ফেরা বাবর ৯০ বলে করেন ৬৪ রান। চোট নিয়ে ব্যাটিং করা ফখর পারেননি মান রাখতে। ৪১ বলে করেন ২৪ রান।
প্রচুর ডট বল ও রান তুলতে না পারায় যে চাপ বেড়েছিল তা পুষিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন সালমান আগা ও খুশদীল শাহ। দুজন আক্রমণাত্মক ব্যাটিং করে পাল্টা জবাব দিচ্ছিলেন। কিন্তু বাড়তি ঝুঁকি নিয়ে রান তুলতে গিয়ে তারাও হারান নিজেদের উইকেট। ফিফটি পাওয়া খুশদিল ১০ চার ও ১ ছক্কায় ৪৯ বলে ৬৯ রান করেন। সালমানের ব্যাট থেকে আসে ২৮ বলে ৪২ রান। শেষ দিকে হারিস রউফ ও নাসিম শাহ চার ছক্কার সমারোহে উপস্থিত দর্শকদের আনন্দে ভাসান। সঙ্গে পরাজয়ের ব্যবধান কমিয়ে আনেন।
ম্যাচ সেরা নির্বাচিত হয়েছেন টম লাথাম।
বড় হার দিয়ে চ্যাম্পিয়নস ট্রফির যাত্রা শুরু করা পাকিস্তানের পরের প্রতিপক্ষ ভারত। ২৩ ফেব্রুয়ারি দুবাইয়ে ভারতের মুখোমুখি হবে তারা। নিউ জিল্যান্ডের পরের প্রতিপক্ষ বাংলাদেশ। রাওয়ালপিন্ডিতে দুই দলের ম্যাচ ২৪ ফেব্রুয়ারি।
ঢাকা/ইয়াসিন/আমিনুল
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র ন কর ন কর ন উইক ট
এছাড়াও পড়ুন:
ইরানের হামলায় ২০ ইসরায়েলি নিহত
ইসরায়েলের সঙ্গে ইরানের পাল্টাপাল্টি হামলা চারদিন ধরে চলছে। এসব হামলায় উভয় দেশের মধ্যে নিহতের সংখ্যা বেড়েই চলছে। ইসরায়েলের জাতীয় পরিষেবা জানিয়েছে, আজ সোমবার ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইসরায়েলে পাঁচজন নিহত হয়েছেন। এ নিয়ে গত শুক্রবার থেকে আজ সোমবার পর্যন্ত ইসরায়েলে নিহতের সংখ্যা ২০ জনে পৌঁছুল। আজ সোমবার এ তথ্য জানিয়েছে বিবিসি।
অন্যদিকে আল-জাজিরা বলছে, ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরায়েলি বিমান হামলায় রোববার পর্যন্ত ইরানে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ২২৪ জনে পৌঁছেছে।
ইসরায়েলের জাতীয় জরুরি পরিষেবার প্রধান ম্যাগেন ডেভিড অ্যাডমের বরাত দিয়ে বিবিসি জানায়, মধ্য ইসরায়েলজুড়ে ইরানের হামলায় চারজন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে দুইজন নারী।
এর আগে সিএনএন ইসরায়েলের ১৫ জন নিহত হওয়ার খবর দেয়। ইসরায়েলের সরকারি সম্প্রচারমাধ্যম কানের খবর বলছে, বন্দরনগরী হাইফায় অন্তত দুইজন আহত হয়েছেন। এছাড়া, তিনজন নিখোঁজ রয়েছেন।
রোববার ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) জানায়, ইরান থেকে নতুন করে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা শুরু হয়েছে। একাধিক ক্ষেপণাস্ত্র শনাক্ত করেছে ইসরায়েল। বর্তমানে হামলা প্রতিহত করার কাজ চলছে বলে জানিয়েছে আইডিএফ।
আজ সিএনএনের এক খবরে বলা হয়েছে, তেল আবিব ও জেরুজালেমসহ ইসরায়েলের বিভিন্ন শহরে জরুরি সতর্ক সংকেত (সাইরেন) বাজতে শুরু করেছে। আইডিএফ সতর্ক করে বলেছে, তাদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা পুরোপুরি অভেদ্য নয়।
সিএনএনের একজন প্রযোজক জেরুজালেমে সাইরেন এবং একাধিক বিস্ফোরণের শব্দ শুনেছেন। তার তোলা ভিডিওতে আকাশে বহু ক্ষেপণাস্ত্র ছুটে যেতে দেখা গেছে।
ইসরায়েলের জরুরি পরিষেবা সংস্থা ম্যাগেন ডেভিড আদোম জানিয়েছে, তাদের দলগুলো আক্রান্ত এলাকার দিকে রওনা দিয়েছে।
সারা দেশের নাগরিকদের আশ্রয়কেন্দ্রে ঢুকতে এবং পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সেখানে থাকার আহ্বান জানিয়েছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী।
বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসরায়েলি সেনাবাহিনী এক্সে দেওয়া এক পোস্টে বলেছে, বর্তমানে বিমানবাহিনী হামলা প্রতিহত করার পাশাপাশি পাল্টা হামলা চালানোর কাজ করছে।
ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম ওয়াইনেট নিউজ জানিয়েছে, মধ্য ইসরায়েলের পেতাহ টিকভা শহরের একটি ভবনে একটি ইসরায়েলি ক্ষেপণাস্ত্র সরাসরি আঘাত হেনেছে। হামলার ফলে ওই স্থানে আগুন ধরে যায়। তবে এ ঘটনায় তাৎক্ষণিকভাবে কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।
এদিকে মধ্য ইরানে একাধিক বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। দেশটির সেনাবাহিনী এ তথ্য জানিয়েছে। আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সেনাবাহিনীর দাবি, বিভিন্ন ক্ষেপণাস্ত্র স্থাপনা লক্ষ্য করে এসব হামলা চালানো হয়েছে।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘ইসরায়েলি বিমানবাহিনী সফলভাবে মধ্য ইরানে অবস্থিত একাধিক স্থাপনায় আঘাত হেনেছে। আমাদের গোয়েন্দা তথ্য বলছে, এসব স্থাপনা থেকে ইসরায়েলের দিকে ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হচ্ছিল।’
তবে ইসরায়েলের এই হামলার প্রতিক্রিয়ায় ইরান এখনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেয়নি।
এদিকে ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরায়েলি বিমান হামলায় রোববার পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা বেড়ে ২২৪ জনে পৌঁছেছে।
বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের (এপি) এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নিহতদের মধ্যে ৯০ শতাংশেরও বেশি বেসামরিক নাগরিক। হামলায় ১ হাজার ২৭০ জনেরও বেশি মানুষ আহত হয়েছেন।
এপির প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, গত ১৩ জুন ইরানে বিমান হামলা শুরু করে ইসরায়েল। ওই হামলায় ইরানের নাতাঞ্জ ও ইসফাহান অঞ্চলের পারমাণবিক স্থাপনা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বেশ কয়েকজন উচ্চপদস্থ সামরিক কর্মকর্তা ও পারমাণবিক বিজ্ঞানী নিহত হন। ইরানে বর্তমানে মসজিদ ও মেট্রো স্টেশনগুলোকে অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।
ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইসরায়েলের তিন শিশুসহ অন্তত ১৫ জন নিহত হয়েছেন। রোববার ইসরায়েল সরকারের বরাতে এ তথ্য জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম সিএনএন।
ইসরায়েল কর্তৃপক্ষ বলেছে, এছাড়া ইরানের হামলায় কমপক্ষে ৩৮৫ জন আহত হয়েছেন, যার মধ্যে সাত জনের অবস্থা গুরুতর।
এদিকে ইসরায়েলি পুলিশের বরাতে আল জাজিরা জানিয়েছে, তেল আবিবের দক্ষিণে অবস্থিত বাত ইয়াম শহরে ৬ জন নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে দুই শিশু রয়েছে। এছাড়া সাতজন এখনও নিখোঁজ। ধ্বংসস্তূপের মধ্যে উদ্ধার অভিযান চালাচ্ছেন জরুরি সেবাদানকারীরা।