বইমেলায় প্রকাশিত হয়েছে জোবায়ের মিলনের গল্পগ্রন্থ
Published: 20th, February 2025 GMT
অমর একুশে বইমেলায় প্রকাশিত হয়েছে জোবায়ের মিলনের গল্পগ্রন্থ ‘মাথাহীন মানুষের দেশে’। বইটির প্রচ্ছদ করেছেন ধ্রুব এষ। এটি প্রকাশ করেছে বিদ্যাপ্রকাশ। বইটিতে মোট ১২টি গল্প রয়েছে।
এই বইয়ের গল্পগুলোর পটভূমি সম্পর্কে লেখক জানিয়েছেন, জীবন এবং যাপনের বহুতরো যন্ত্রণা, নিঃসঙ্গতার কাঁটাতার, আমাদের মেরুদণ্ডহীনতা, মগজের মৃত্যু, সাম্প্রদায়িক-অসাম্প্রদায়িক-প্রগোতিশীলতার চির দ্বন্দ্ব, শাসকের অন্যায্য কর্মকাণ্ড, শোষকের অট্টহাসি, গর্বিত মানুষের ক্রমবর্ধিষ্ণু অহমিকা, অব্যক্ত দীর্ঘশত্রুতা, বহতায় বাধা, পদের ঔদ্ধত্য অসহনীয় হয়ে উঠলে ঘোর বৃত্তাবর্তে যে গর্তের সৃষ্টি হয়—হয় যে অভিঘাতজনিত অতি ক্রিয়া.
বইয়ের ফ্ল্যাপে সরকার আব্দুল মান্নান লিখেছেন, বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতিচর্চার যে ইতিহাসের সঙ্গে আমাদের পরিচয় আছে, সেই ইতিহাসে সংঘাতের স্বরূপচারিত্র্য নতুন কোনো বিষয় নয়। বরং এই দ্বন্দ্ব চির পুরাতন এবং চির নতুন। কেউ যদি বলে, এই সব বিষয় নিয়ে তো অনেক গল্প-উপন্যাস-নাটক রচিত হয়েছে, আর কেন? তাহলে সেই ভাবনা সঠিক নয়। কেননা, একজন সৃষ্টিশীল মানুষ নতুন কোনো ঘটনা লেখেন না। তিনি নতুন গল্প বানান না। তিনি সৃষ্টি করেন নতুন আখ্যান, সৃষ্টি করেন নতুন এক বিন্যাস, নতুন এক জীবন শৈলী। যিনি নতুন পটভূমির আলেক্ষ্যে নতুন কোনো জীবনাকাঙ্ক্ষা সৃষ্টি করতে পারেন, তিনি মহৎশিল্পী। এখানে গল্প বা ঘটনা কোনো বিষয় নয়—বিষয় হলো জীবনতৃষ্ণা এবং তৃষ্ণার জল কীভাবে পরিবেশিত হলো। মিলন এই পরিবেশষনায় যত্নের পরিচয় দিয়েছেন। যে যত্নটুকু, মমতাটুকু কথাসাহিত্য নির্মাণে গুরুত্বপূর্ণ।
আরো পড়ুন:
বইমেলায় প্রকাশিত হয়েছে গাজী মুনছুর আজিজের ভ্রমণগ্রন্থ পাখির খোঁজে বাংলাজুড়ে’
জাহিদ সোহাগের কবিতার বই ‘চেয়ারের মুখোমুখি’
‘মাথাহীন মানুষের দেশে’ গল্পগ্রন্থটি বইমেলায় পাওয়া যাবে বিদ্যাপ্রকাশের ১২৯,১৩০,১৩১,১৩২ নম্বর স্টলে। বইটির মূল্য রাখা হয়েছে ২৮০ টাকা।
ঢাকা/লিপি
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর বইম ল য় প ত হয় ছ
এছাড়াও পড়ুন:
শালবনে ছেচরা কই ও পাটখই
বিভতিভূষণের আরণ্যক উপন্যাসে একজন যুগলপ্রসাদ ছিলেন, যিনি লবটুলিয়ার জঙ্গলে সরস্বতী কুন্ডের পাড়ে নানা জায়গা থেকে নানা প্রজাতির গাছপালা এনে লাগাতেন। সেসব গাছে ফুল ফুটলে আনন্দে তিনি আত্মহারা হয়ে যেতেন। আমারও একজন যুগলপ্রসাদ ছিলেন, নাম আজাহার। প্রায় আমারই সমবয়সী।
টাঙ্গাইলের সখীপুরে বিভিন্ন শালবনে ঘুরতে গেলে মাঝেমধ্যে তিনি আমার সাথি হতেন। শালবনে কত গাছ! তেমন কিছুই চিনি না। কিন্তু সেই শালবনের কোলে জন্ম নেওয়া ও বেড়ে ওঠা আজাহার ঠিকই সেসব গাছ চিনতেন, আর জিজ্ঞেস করলে টপাটপ নাম বলে দিতেন। কিন্তু গোলমাল বাধত সেসব নাম শুনে। কেননা সেসব নাম বলতেন, তাঁদের স্থানীয় ভাষায়। বইয়ে সেসব নাম খুঁজে পাওয়া যেত না।
একদিন শালবনের মধ্যে একটা ছোট গাছ দেখলাম, গাছের গুঁড়ির চারদিকে তীক্ষ্ণসরু ও সোজা প্রচুর কাঁটা বেরিয়েছে। পাতাগুলো দেখতে কিছুট পেয়ারাপাতার মতো। প্রচুর ডালপালায় গাছটার মাথা ঝাঁকড়া হয়ে আছে। ডালের আগায় শিষের মতো মঞ্জরিতে প্রচুর ঘিয়া ও সাদাটে রঙের খুদে ফুল ফুটেছে। চিনি না। তাই আজাহারকে জিজ্ঞেস করলাম, নাম কী? চট করেই বলে দিলেন, ছেচরা কই। মাছের নাম কই হয় জানি, কিন্তু কোনো গাছের নাম কই হতে পারে? অগত্যা ছবি তুলে ওই নামকেই মনে গেঁথে ফিরে এলাম ঢাকায়।
আজাহার বললেন, এখন ফুল দেখছেন। কদিন পরেই ওসব ফুল থেকে ছোট ছোট গুলির মতো প্রচুর ফল ধরবে। ছোটবেলায় আমরা সেসব কাঁচা ফল নিয়ে বাঁশের কঞ্চি দিয়ে ফটকা বানিয়ে তার চোঙে একটা একটা করে ফল দিয়ে বন্দুকের মতো গুলি গুলি খেলতাম। চোঙের ভেতরে একটা সরু কাঠি ঢুকিয়ে চাপ দিয়ে সেসব ফল গুলির মতো ফাটাতাম। ফটাস করে শব্দ হতো। এ সময় মাসখানেকের জন্য আমরা এ গাছের ফল, পরে জালি খেজুর নিয়ে যুদ্ধ যুদ্ধ খেলতাম। শালবনে সে সময় এ গাছের অভাব ছিল না। এখন তো দেখতে হলে খুঁজে বের করতে হয়।
ফিরে এসে সে ছবি পাঠালাম জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যানের সাবেক বোটানিস্ট সামসুল হক ভাইয়ের কাছে। দুই দিন পরেই তিনি জানালেন, গাছটার স্থানীয় নাম ছেচরা কই, উদ্ভিদতাত্ত্বিক নাম Bridelia retusa, গোত্র ফাইলেনথেসি। বইপত্রে এ গাছের চারটি বাংলা নাম পেলাম—কাঁটাকই, কাঁটাকুশি, কামকই, আকদানা। বাংলাদেশ ছাড়াও এ গাছ আছে নেপাল, ভারত, শ্রীলঙ্কা, চীন, থাইল্যান্ড প্রভৃতি দেশে। সাধারণত উঁচু ও শুষ্ক বনাঞ্চলে এ গাছ দেখা যায়। ছোট বৃক্ষজাতীয় গাছ, প্রায় ১০ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়, দ্রুত বাড়ে। এ গাছের কাঁটা থাকায় বন্য প্রাণীরা এদের ধারে ঘেঁষে না, এমনকি এর বাকল দিয়েও বিষ তৈরি করা হয় বলে শুনেছি।
ফল গোলাকার, ছোট, কাঁচা ফল ময়লা সবুজ, পাকলে খোসায় লাল রং ধরে। ছেচরা কইগাছের কাঠ মাঝারি শক্ত থেকে শক্ত, কাঠের রং ময়লা লাল। রঙে ও গুণে কাঠ উৎকৃষ্ট। নির্মাণকাজ ও গরুর গাড়ির চাকা বানাতে ব্যবহার করা হয়। জ্বালানি কাঠ হিসেবে ব্যবহৃত হলেও শুষ্ক তৃণভূমিতে যদি কোনো গাছ থাকে, তবে সেসব ঘাসে আগুন দিলে এ গাছ পোড়ে না বলে কথিত রয়েছে। বীজ দ্বারা সহজে বংশবৃদ্ধি বা চারা হয়।
পূর্বাচল উপশহরের শালবনে দেখা পাটখই ফল