Prothomalo:
2025-05-01@09:54:58 GMT

একুশের মহাফেজখানা

Published: 21st, February 2025 GMT

শহীদুল্লা কায়সার (১৬ ফেব্রুয়ারি ১৯২৭—১৪ ডিসেম্বর ১৯৭১)। ভাষা আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক; প্রগতিশীল লেখক। লেখাটি ছাপা হয় পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের প্রতিধ্বনি পত্রিকায়, ১৯৬৪ সালে।

প্রবন্ধ: একুশে ফেব্রুয়ারি

একুশে ফেব্রুয়ারি আমাদের জাতীয় জীবনে অপরিসীম গুরুত্বের সঙ্গে প্রতিষ্ঠিত। সে শুধু অবাধ, শুধু আবেগজাত নয়—যুক্তি ও বিচারের মাপকাঠিতেও তার তারতম্য হয়।

বাংলা ভাষাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষায় পরিণত করার কর্মসূচি ছিল একুশে ফেব্রুয়ারির একমাত্র লক্ষ্য। এমন কর্মসূচিভিত্তিক আন্দোলনের একটি দিন একটি জাতির ইতিহাসে যুগান্তরের কাল বলে বিবেচিত হলো কেন? তার কারণ এই, ভাষা আন্দোলনের কর্মসূচির সঙ্গে জড়িত ছিল কতগুলো মূলনীতির প্রশ্ন। সেই মূলনীতিগুলোই আমাদের জাতীয় জীবনে তরঙ্গ তুলছে বারবার, প্রশ্ন তুলেছে, সমাধান খুঁজেছে, মীমাংসা পেয়েছে।

ভাষাগত আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকারের দাবিতে এ আন্দোলন শুরু হয়েছিল। তার সঙ্গে তাই জড়িত ছিল সাংস্কৃতিক চেতনা, রাজনৈতিক আদর্শ এবং গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য ত্যাগ স্বীকারের প্রবৃত্তি। এই দৃষ্টিভঙ্গি তাই কর্মসূচি অতিক্রম করে এ আন্দোলনকে বিশিষ্ট গৌরব দান করেছে।

একুশে ফেব্রুয়ারি একই সঙ্গে সংস্কৃতিচেতনার প্রকাশ ও বিকাশের দিন। তাই ১৯৫২ সালের পর বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির বিরুদ্ধে যেকোনো চক্রান্তই ব্যর্থ হয়েছে। বাংলা ভাষার জন্য আরবি ও রোমান হরফের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যাত হয়েছে, হরফ সংস্কারের প্রচেষ্টাও সাধারণের সমর্থন পায়নি। অন্যদিকে সংস্কৃতিক্ষেত্রে সাম্প্রদায়িক মনোভাবের বিরুদ্ধে দেশবাসী সচেতন হয়েছেন। ভাষা ও সাহিত্যের ঐতিহ্য সম্পর্কে এই সদা জাগ্রত মনোভাবই রবীন্দ্রবিরোধী সকল কর্মকৌশলকে পযু‌র্দস্ত করেছে।

রাজনৈতিক ক্ষেত্রেও একুশে ফেব্রুয়ারির বিশেষ ভূমিকা আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকারের প্রশ্নকে সামনে তুলে ধরা। ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে দলগত সাফল্য-ব্যর্থতার হিসাব-নিকাশ না করেও বলা যায় যে স্বায়ত্তশাসনের প্রস্তাবই এ নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী জনসাধারণের সর্বসম্মত দাবি ছিল। এই সঙ্গে অর্থনৈতিক আত্মনিয়ন্ত্রণের প্রশ্নটিও দেখা দিয়েছে। তা-ও হলো ১৯৫২ সালের চেতনার ফল।

অবশ্য এ কথা স্মরণ রাখা দরকার, ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনের সাফল্যের মূলে যা ক্রিয়াশীল ছিল, তা শুধু সাংস্কৃতিক চেতনা নয়, রাজনৈতিক বিক্ষোভ ও অর্থনৈতিক হতাশা। এ জন্যই ১৯৪৮ সালে যে আন্দোলন নিতান্ত সীমাবদ্ধ ছিল, ১৯৫২ সালে তা অমন সর্বব্যাপী হতে পেরেছিল।

কিন্তু এ কথাও সত্য যে একুশে ফেব্রুয়ারিই সেই চেতনা, বিক্ষোভ ও হতাশাকে একটা ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য রূপ দিয়েছিল। এদিনের পরীক্ষায় উন্নীত হবার পরই ব্যাকুল জিজ্ঞাসা, অস্পষ্ট উপলব্ধি ও সচেতন দাবিদাওয়া একটা সুস্পষ্টরূপ লাভ করেছিল, জমাট বেঁধেছিল। জনসাধারণের শক্তির পরিচয় যেমন সেদিন পাওয়া গিয়েছিল, তেমনি আত্মবিশ্বাস ফিরে এসেছিল সকলের মনে। নেতাদের দ্বিধা ও জড়তাকে পায়ে দলে জনসাধারণ অগ্রসর হয়েছিল সেদিন এবং জেনেছিল যে
অধিকার অর্জনের অনন্ত সম্ভাবনা তার মধ্যেই নিহিত ছিল।

১৯৬৯ সালের ২১ ফেব্রুয়ারিতে এসব কথা নতুন করে মনে পড়ছে। সেই অনন্ত সম্ভাবনাকে দেশের মানুষ আবার কাজে লাগিয়েছে। নেতৃত্বের দ্বিধা, জড়তা ও অনৈক্যকে পশ্চাতে ফেলে দেশবাসী আবার এগিয়ে গেছে। যে মানুষের ভাষার অধিকার দাবি করে একুশে ফেব্রুয়ারি দেখা দিয়েছিল ১৯৫২ সালে, এখন সেই মানুষের অধিকারের দাবিতে সংগ্রাম সূচিত হয়েছে। সেই আত্মনিয়ন্ত্রণের দাবি—ভাষা, সংস্কৃতি, রাজনীতি ও অর্থনীতির ক্ষেত্রে আবার দেখা দিয়েছে। এ সংগ্রামের ব্যাপকতা ও বিস্তার বিস্ময়কর। জনশক্তির এই প্রচণ্ড অভ্যুত্থান, তার সর্বব্যাপী চেতনা, তার সংগ্রামী চরিত্র—এসবের বিশ্লেষণে এ কথা মনে না হয়ে পারে না যে এই আন্দোলনের মূল নিহিত ছিল ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারিতেই। ১৭ বছরে তা ব্যাপক, বিস্তৃত ও সর্বপরিপ্লাবী হয়েছে। কিন্তু এর মূলনীতি রচিত হয়েছিল সেই কালান্তরের দিনে।

এ জন্যই মনে হয় একুশে ফেব্রুয়ারি শুধু কর্মসূচিভিত্তিক আন্দোলনের দিন নয়—তা আমাদের আত্মজিজ্ঞাসার দিন, আত্মসাক্ষাৎকারের দিন, আত্মবিশ্বাসের দিন। একুশে ফেব্রুয়ারি সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলনের শুভসূচনার দিন, জনশক্তির বিজয়যাত্রার দিন। একুশে ফেব্রুয়ারি আমাদের জাতীয় ইতিহাসের অবিস্মরণীয় রক্তবর্ণ দিন।

আনিসুজ্জামান.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ১৯৫২ স ল র জন ত আম দ র

এছাড়াও পড়ুন:

নড়াইলে সরকারি গাছ বিক্রির অভিযোগে চেয়ারম্যানসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা

নড়াইল সদর উপজেলার শাহাবাদ ইউনিয়নে সড়কের পাশে সরকারি গাছ চুরি করে বিক্রির অভিযোগে মামলা হয়েছে। গতকাল বুধবার রাতে শাহবাদ ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা মশিউর রহমান বাদী হয়ে সদর থানায় মামলাটি করেন।

মামলায় ওই ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমানসহ ১৩ জন আসামি করা হয়েছে। অন্য আসামিরা হলেন প্রশিকা নড়াইল উন্নয়ন এলাকা ব্যবস্থাপক শাহাব উদ্দিন ও প্রশিকার গঠিত সংগঠন প্রভাতী যুব সংঘের সভাপতি নড়াইল সদর উপজেলার তুজরডাঙ্গা এলাকার মুজিবুর রহমান, সদস্য একই এলাকার জরিনা বেগম, রজব আলী, মো. আজিবর, মো. ইলিয়াছ, ইমান আলী, মো. ওমর, মো. হায়দার, আবু সাঈদ, মো. এনামুল ও মো. শরিফুল।

এ বিষয়ে আজ বৃহস্পতিবার সকালে নড়াইল সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাজেদুল ইসলাম বলেন, ‘সরকারি গাছ চুরি করে বিক্রির অভিযোগে একটি মামলা হয়েছে। ঘটনার তদন্ত করে দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

মামলার এজহারে বাদী অভিযোগ করেছেন, গত ২৯ এপ্রিল নড়াইল সদর উপজেলার শাহাবাদ বাজার থেকে হাজির বটতলা পর্যন্ত সরকারি রাস্তার জায়গা থেকে গাছ কাটা ও চুরি করে বিক্রির সংবাদ পেয়ে তিনি ঘটনাস্থলে যান। উপস্থিত হয়ে দেখেন, কাটা গাছবোঝাই একটি ট্রাক এবং নছিমন জব্দ করেছেন নড়াইল সদর উপজেলা ভূমি অফিসের সহকারী কমিশনার দেবাশীষ অধিকারী। তখন ঘটনাস্থলে শ্রমিকদের জিজ্ঞাসাবাদ ও খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, মামলার আসামিরা কোনো ধরনের অনুমতি ছাড়াই খাসজমি থেকে গাছ কেটে বিক্রি করেছেন। এর আগেও একবার তাঁরা ওই জমি থেকে গাছ বিক্রি করেছিলেন। জব্দ করা গাছের লগ, ডালপালা এবং আগে কাটা গাছের অবশিষ্ট ভূমিসংলগ্ন গুঁড়ি পর্যবেক্ষণ করে বোঝা গেছে, ওই স্থান থেকে আনুমানিক পাঁচ লাখ টাকার অধিক গাছ চুরি করে কাটা ও বিক্রি হয়েছে।  

প্রশিকা নড়াইল উন্নয়ন এলাকার ব্যবস্থাপক শাহাব উদ্দিন বলেন, ২০০৯ সালে প্রশিকা, ইউনিয়ন পরিষদ ও প্রভাতী যুব সংঘের যৌথ উদ্যোগে একটি চুক্তির মাধ্যমে সড়কের পাশে গাছগুলো রোপণ করেছিল। সে সময় সড়কটি খাস খতিয়ানভুক্ত ছিল না। বর্তমানে তা সরকারের আওতায় পড়ায় গাছ কাটার অনুমতি চেয়ে ইউএনওর কাছে আবেদন করা হয়েছিল, তবে প্রশাসন কোনো সিদ্ধান্ত দেয়নি।  কিছুদিন আগে ইউপি সদস্য ইব্রাহিম তাঁকে ফোনে জানান, বিদ্যুৎ বিভাগের কাটা ডালপালা বিক্রি করতে চান চেয়ারম্যান। বিদ্যুৎ বিভাগের কাটা ডালপালাগুলো পড়ে থেকে নষ্ট হবে ভেবে তিনি বিক্রিতে সম্মতি দেন। পরে গাছ কীভাবে বা কারা কেটেছে, তা তিনি জানেন না।

মামলা করার আগে অবৈধভাবে গাছ কাটার অভিযোগের ব্যাপার জানতে চাইলে ইউপি চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমান বলেছিলেন, প্রশিকার সঙ্গে চুক্তির একটি পক্ষ ছিল ইউনিয়ন পরিষদ। সেই হিসেবে গাছ কাটার অনুমতি নিতে ইউএনও বরাবর প্রশিকার আবেদন তিনি চেয়ারম্যান হিসেবে সুপারিশ করেছিলেন। তবে গাছ কেটেছে প্রশিকা আর তাদের সংগঠন। এখানে চেয়ারম্যান-মেম্বরের কিছু নেই।

নড়াইল সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) দেবাশীষ অধিকারী বলেন, প্রশিকার চুক্তির সময় সড়কটি ব্যক্তিমালিকানাধীন জমিতে ছিল, পরে ২০১৫ সালে এটি খাস খতিয়ানভুক্ত হয়। খাসজমি থেকে গাছ কাটা বেআইনি। এ কারণে তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ