স্বামীকে বাঁচাতে খুনিদের পা ধরেও মন গলেনি, স্ত্রীর চোখের সামনে কুপিয়ে হত্যা
Published: 22nd, February 2025 GMT
বাবার লাশ পাওয়া গিয়েছিল বিলের পানিতে। চার মাস পর শুক্রবার দুপুরে ছেলেকে তার স্ত্রীর সামনে কুপিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনা ঘটেছে ঢাকার ধামরাই উপজেলার কুল্লা ইউনিয়নের কুশিয়ারায়।
নিহত বাবুল হোসেন (৫২) কুল্লা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক সদস্য এবং মাখুলিয়া গ্রামের মৃত ইদ্রিস আলীর ছেলে। জমি নিয়ে বিরোধে এই খুন হয়ে থাকতে পারে বলে ধারণা করছেন ধামরাই থানার ওসি মনিরুল ইসলাম।
এলাকাবাসী ও নিহতের স্বজনের কাছ থেকে জানা গেছে, বাবুল ও তার স্ত্রী ইয়াসমিন বেগম শুক্রবার দুপুর ২টার দিকে বাড়ি থেকে অর্ধকিলোমিটার দূরে কুশিয়ারায় তার জমিতে সরিষা মাড়াই করছিলেন। এ সময় একই এলাকার কয়েকজন তাকে ঘিরে এলোপাতাড়ি ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপাতে থাকে। তার একটি চোখ উপড়ে ফেলা হয় ও পায়ের রগ কেটে দেওয়া হয়। এ সময় স্ত্রীর চিৎকারে এলাকাবাসী এগিয়ে গেলে হামলাকারীরা দৌড়ে পালিয়ে যায়। মুমূর্ষু অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
স্থানীয়রা জানান, আকশীরনগর হাউজিংয়ের জমি নিয়ে এলাকায় বিরোধ আছে। তিনি এর পক্ষে-বিপক্ষে অবস্থান পাল্টিয়েছেন। নিহত বাবুল বিএনপি করতেন বলে শোনা গেলেও তা নাকচ করে দিয়েছেন দলটির ইউনিয়ন কমিটির সভাপতি শাহজাহান মিঞা।
নিহতের আত্মীয় আসিফ হোসেন জানান, খুনিদের পা ধরে স্বামীর প্রাণভিক্ষা চেয়েছিলেন স্ত্রী। কিন্তু খুনিদের মন গলেনি।
নিহতের চাচাতো ভাই সাইদুর রহমান জানান, পূর্বশত্রুতার জের ধরে একই এলাকার শওকত আলী, মনির, রাজিব, আফসান, আনোয়ার হোসেন, আরশেদ, শরিফসহ কয়েকজন মিলে বাবুল হোসেনকে কুপিয়ে হত্যা করে। কী নিয়ে শত্রুতা, তা সঠিকভাবে কেউ বলতে পারেনি। চার মাস আগে একই এলাকার বিলের পানিতে ভাসমান গলিত অবস্থায় নিহত বাবুল হোসেনের বাবা ইদ্রিস আলীর লাশ পাওয়া গিয়েছিল। এর আগে তিনি ১১ দিন নিখোঁজ ছিলেন।
স্থানীয় নাসির উদ্দিন জানান, চার-পাঁচদিন আগে হামলাকারীরা বাবুলের সন্তান ইভা ও ইয়ামিনকে মারধর করতে চেয়েছিল। কী কারণে মারতে চেয়েছিল, তা সঠিকভাবে বলতে পারেননি।
ধামরাই থানার ওসি মনিরুল ইসলাম বলেন, আরশেদের সঙ্গে জমি নিয়ে বাবুলের বিরোধ ছিল। আরশেদ ও তার ছেলে শরীফ ও সৈকত মিলে তাকে হত্যা করেছে। অভিযুক্তদের ধরার জন্য পুলিশের একাধিক টিম কাজ করছে। হাসপাতাল থেকে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হচ্ছে। এ ছাড়া থানায় মামলার প্রস্তুতি চলছে।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
গভীর রাতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারের বাড়িতে ককটেল বিস্ফোরণ
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক ইফতিখারুল আমল মাসঊদের বাড়িতে ককটেল বিস্ফোরণ করেছে দুর্বৃত্তরা। গতকাল বুধবার গভীর রাতে বিনোদপুরের মণ্ডলের মোড় এলাকায় তাঁর বাড়ির দরজার সামনে এ ঘটনা ঘটে। তবে এতে কেউ আহত হয়নি।
মতিহার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল মালেক প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। সেখানে তিনটি ককটেল বিস্ফোরণ করা হয়েছে। তবে কে বা কারা এটি করেছে, সে বিষয়ে এখনো কিছু জানা যায়নি। এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগও কেউ করেনি। তাঁরা দুর্বৃত্তদের শনাক্তের চেষ্টা করছেন।
এ বিষয়ে কথা বলতে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ইফতিখারুল আমল মাসঊদের মুঠোফোন নম্বরে একাধিকবার কল করলেও তিনি সাড়া দেননি। তবে ঘটনার পর তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে একটি পোস্টে লিখেছেন, ‘ফ্যাসিবাদী অপশক্তির জুলুম-নিপীড়নের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলাম। কোনো রক্তচক্ষুর ভয়ংকর হুমকি অন্যায়ের প্রতিবাদ করা থেকে বিরত রাখতে পারেনি। তবে তারা কখনো বাড়ি পর্যন্ত আসার ঔদ্ধত্য দেখাতে পারেনি। কিন্তু আজ আমার বাড়ির দরজায় গভীর রাতের অন্ধকারে হামলার সাহস দেখিয়েছে কাপুরুষের দল! এরা কারা? এদের শিকড়সহ উৎপাটনের দাবি জানাই।’
এ ঘটনার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহউপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন খান ফেসবুকে লিখেছেন, ‘তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। ভেবেছিলাম বাড়ির গেটে কিংবা গেটের বাইরে। কিন্তু গিয়ে দেখলাম একেবারে বাড়িতে হামলা হয়েছে। গতকালই ওনার অসুস্থ বাবা হাসপাতাল থেকে রিলিজ নিয়ে বাসায় এসেছেন। জানি না শেষ কবে একজন শিক্ষকের বাড়িতে রাতের আঁধারে এভাবে সন্ত্রাসী হামলা হয়েছে। আমরা শঙ্কিত, স্তম্ভিত।’
এদিকে হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশের ডাক দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। আজ বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ শামসুজ্জোহা চত্বরে এ সমাবেশের আয়োজন চলছে।