চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি কাভার করতে এসেছি শুনেই দুবাইয়ের পাকিস্তানি ট্যাক্সি ড্রাইভার আলাপ জমানোর চেষ্টা করলেন। জানালেন, ১৫০০ দিরহামে‌ও পাকিস্তান-ভারত ম্যাচের টিকিট মিলছে না। দাম শুনে চক্ষু চড়ক গাছ! সাধারণ গ্যালারির টিকিট এত! আরব আমিরাতের ১ দিরহাম সমান বাংলাদেশের ৩৩.০৯ টাকা। সে হিসাবে গ্যালারির টিকিটের দাম আসে বাংলাদেশি মুদ্রায় ৪৯ হাজার ৬৩৫ টাকা। পেট্রো ডলারের ঝনঝনানিতে থাকা দুবাইবাসীর কাছে অবশ্য এটা কোনো অর্থই নয়। এখানে রেসের ঘোড়া কিংবা শখের উট বা ঈগলের জন্য যে অর্থ খরচ করা হয়, সেটা তৃতীয় বিশ্বের কারও কারও জন্য কল্পনার অতীত।

টিকিট নিয়ে এই কাড়াকাড়ি মূলত দুবাইয়ে বসবাসরত ভারত ও পাকিস্তানের উচ্চবিত্ত কমিউনিটিতে। ২৫ হাজার ধারণক্ষমতার দুবাই আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে ভারত-পাকিস্তান লড়াই দেখার সুযোগ তারা কোনোভাবেই হাতছাড়া করতে চান না। বৈশ্বিক ইভেন্ট ছাড়া তো এ দু’দলের লড়াই এখন দেখা যায় না। দু’দল সর্বশেষ মুখোমুখি হয়েছিল গত বছর যুক্তরাষ্ট্রে টি২০ বিশ্বকাপে। লো স্কোরিং ওই ম্যাচে ৬ রানে জিতেছিল ভারত। তাই এ ম্যাচ নিয়ে এত উন্মাদনা। 

তবে দুবাইয়ের বাংলাদেশি অধ্যুষিত দেরা অঞ্চলের ‘ঢাকা দরবার’ রেস্টুরেন্টের ম্যানেজারের কথায় পাওয়া গেল ভিন্ন আমেজ। অন্য সময় ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ থাকলে তাদের রেস্টুরেন্টে নাকি লোক উপচে পড়ে, কিন্তু এবার তেমন ভিড় নেই। এর কারণ হিসেবে আরব আমিরাত কর্তৃপক্ষের ভিজিট ভিসা প্রায় বন্ধ রাখা এবং দেশটির ইমিগ্রেশন পুলিশের কড়াকড়ির কথা বললেন তিনি। তবে ওই দুই দেশের বসবাসকারী এখানে নেহায়েত কম নয়।
 
স্মরণীয় এ লড়াইয়ের আগে দুই প্রবল প্রতিপক্ষ সম্পূর্ণ ভিন্ন অবস্থায় রয়েছে। প্রথম ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের কাছে হেরে কিছুটা ব্যাকফুটে চলে গেছে পাকিস্তান। সেমির আশা বাঁচিয়ে রাখতে হলে অবশ্যই ভারতকে হারাতে হবে। দুবাইয়ে গতকাল ফ্লাডলাইটে অনুশীলন করেছে পাকিস্তান দল। এর মধ্যেই নিজ দেশের কয়েকটি গণমাধ্যমের সঙ্গে ভারতকে হারানোর ব্যাপারে আত্মবিশ্বাস দেখিয়েছেন খুশদিল শাহ ও হারিস রউফ। 

খুশদিল ভারতকে রীতিমতো সতর্কবার্তাই দিয়েছেন, ‘ভারত শক্তিশালী দল। তবে আমাদের‌ও হিসাবের বাইরে রাখা যাবে না। নিজেদের সেরা খেলাটা খেলতে পারলে অবশ্যই আমরা ভারতকে হারাতে পারব। দলের মধ্যে সে বিশ্বাস রয়েছে।’ 

বৈশ্বিক ইভেন্টগুলোর মধ্যে কেবল চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে ভারতের বিপক্ষে তাদের সফলতা সমানে সমান বলেও মনে করিয়ে দিয়েছেন তিনি। প্রথম ম্যাচে হেরে গেলেও ভারতের বিপক্ষে তারা চাপে নেই বলে মনে করছেন পেসার হারিস রউফ। তবে প্রথম ম্যাচে ওপেনার ফখর জামানের ছিটকে যাওয়াটা তাদের জন্য বড় ধাক্কা বলেও মেনে নিচ্ছেন তিনি। আরেক ওপেনার সাইম আইয়ুব তো টুর্নামেন্টের অনেক আগেই ছিটকে গেছেন। অবশ্য সাবেক পাকিস্তান অধিনায়ক শহীদ আফ্রিদি কিন্তু ভরসা পাচ্ছেন না। পাকিস্তানের তুলনায় যে ভারতে ম্যাচ উইনার বেশি, সেটা তিনি অকপটে স্বীকার করে নিয়েছেন।

সেদিক থেকে বাংলাদেশের বিপক্ষে ৬ উইকেটের জয়ে ফুরফুরে মেজাজে রয়েছে ভারত। চোট থেকে সেরে ‌ওঠা পেসার মোহাম্মদ শামি ৫ উইকেট পাওয়ায় চিন্তা অনেকটা কমে গেছে রোহিত শর্মার। জাসপ্রিত বুমরাহর অভাব কিছুটা হলেও তিনি পূরণ করতে পারবেন বলে বিশ্বাস তাঁর। বাংলাদেশের বিপক্ষে জিতলেও বিরাট কোহলি রানে ফিরতে না পারায় কিছুটা অস্বস্তিতে আছেন তারা। গতকাল ভারত অনুশীলন করেনি। বৃহস্পতিবার বাংলাদেশের বিপক্ষে ম্যাচ খেলায় গতকাল বিশ্রামে কাটিয়েছে তারা।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: অবশ য ভ রতক

এছাড়াও পড়ুন:

ইরানের হামলায় ২০ ইসরায়েলি নিহত

ইসরায়েলের সঙ্গে ইরানের পাল্টাপাল্টি হামলা চারদিন ধরে চলছে। এসব হামলায় উভয় দেশের মধ্যে নিহতের সংখ্যা বেড়েই চলছে। ইসরায়েলের জাতীয় পরিষেবা জানিয়েছে, আজ সোমবার ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইসরায়েলে পাঁচজন নিহত হয়েছেন। এ নিয়ে গত শুক্রবার থেকে আজ সোমবার পর্যন্ত ইসরায়েলে নিহতের সংখ্যা  ২০ জনে পৌঁছুল। আজ সোমবার এ তথ্য জানিয়েছে বিবিসি।

অন্যদিকে আল-জাজিরা বলছে, ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরায়েলি বিমান হামলায় রোববার পর্যন্ত ইরানে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ২২৪ জনে পৌঁছেছে।

ইসরায়েলের জাতীয় জরুরি পরিষেবার প্রধান ম্যাগেন ডেভিড অ্যাডমের বরাত দিয়ে বিবিসি জানায়, মধ্য ইসরায়েলজুড়ে ইরানের হামলায় চারজন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে দুইজন নারী। 

এর আগে সিএনএন ইসরায়েলের ১৫ জন নিহত হওয়ার খবর দেয়। ইসরায়েলের সরকারি সম্প্রচারমাধ্যম কানের খবর বলছে, বন্দরনগরী হাইফায় অন্তত দুইজন আহত হয়েছেন। এছাড়া, তিনজন নিখোঁজ রয়েছেন।

রোববার ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) জানায়, ইরান থেকে নতুন করে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা শুরু হয়েছে। একাধিক ক্ষেপণাস্ত্র শনাক্ত করেছে ইসরায়েল। বর্তমানে হামলা প্রতিহত করার কাজ চলছে বলে জানিয়েছে আইডিএফ।

আজ সিএনএনের এক খবরে বলা হয়েছে, তেল আবিব ও জেরুজালেমসহ ইসরায়েলের বিভিন্ন শহরে জরুরি সতর্ক সংকেত (সাইরেন) বাজতে শুরু করেছে। আইডিএফ সতর্ক করে বলেছে, তাদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা পুরোপুরি অভেদ্য নয়।

সিএনএনের একজন প্রযোজক জেরুজালেমে সাইরেন এবং একাধিক বিস্ফোরণের শব্দ শুনেছেন। তার তোলা ভিডিওতে আকাশে বহু ক্ষেপণাস্ত্র ছুটে যেতে দেখা গেছে।

ইসরায়েলের জরুরি পরিষেবা সংস্থা ম্যাগেন ডেভিড আদোম জানিয়েছে, তাদের দলগুলো আক্রান্ত এলাকার দিকে রওনা দিয়েছে।

সারা দেশের নাগরিকদের আশ্রয়কেন্দ্রে ঢুকতে এবং পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সেখানে থাকার আহ্বান জানিয়েছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী।

বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসরায়েলি সেনাবাহিনী এক্সে দেওয়া এক পোস্টে বলেছে, বর্তমানে বিমানবাহিনী হামলা প্রতিহত করার পাশাপাশি পাল্টা হামলা চালানোর কাজ করছে।

ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম ওয়াইনেট নিউজ জানিয়েছে, মধ্য ইসরায়েলের পেতাহ টিকভা শহরের একটি ভবনে একটি ইসরায়েলি ক্ষেপণাস্ত্র সরাসরি আঘাত হেনেছে। হামলার ফলে ওই স্থানে আগুন ধরে যায়। তবে এ ঘটনায় তাৎক্ষণিকভাবে কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।

এদিকে মধ্য ইরানে একাধিক বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। দেশটির সেনাবাহিনী এ তথ্য জানিয়েছে। আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সেনাবাহিনীর দাবি, বিভিন্ন ক্ষেপণাস্ত্র স্থাপনা লক্ষ্য করে এসব হামলা চালানো হয়েছে।

ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘ইসরায়েলি বিমানবাহিনী সফলভাবে মধ্য ইরানে অবস্থিত একাধিক স্থাপনায় আঘাত হেনেছে। আমাদের গোয়েন্দা তথ্য বলছে, এসব স্থাপনা থেকে ইসরায়েলের দিকে ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হচ্ছিল।’

তবে ইসরায়েলের এই হামলার প্রতিক্রিয়ায় ইরান এখনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেয়নি।

এদিকে ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরায়েলি বিমান হামলায় রোববার পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা বেড়ে ২২৪ জনে পৌঁছেছে।

বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের (এপি) এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নিহতদের মধ্যে ৯০ শতাংশেরও বেশি বেসামরিক নাগরিক। হামলায় ১ হাজার ২৭০ জনেরও বেশি মানুষ আহত হয়েছেন।

এপির প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, গত ১৩ জুন ইরানে বিমান হামলা শুরু করে ইসরায়েল। ওই হামলায় ইরানের নাতাঞ্জ ও ইসফাহান অঞ্চলের পারমাণবিক স্থাপনা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বেশ কয়েকজন উচ্চপদস্থ সামরিক কর্মকর্তা ও পারমাণবিক বিজ্ঞানী নিহত হন। ইরানে বর্তমানে মসজিদ ও মেট্রো স্টেশনগুলোকে অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।

ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইসরায়েলের তিন শিশুসহ অন্তত ১৫ জন নিহত হয়েছেন। রোববার ইসরায়েল সরকারের বরাতে এ তথ্য জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম সিএনএন।

ইসরায়েল কর্তৃপক্ষ বলেছে, এছাড়া ইরানের হামলায় কমপক্ষে ৩৮৫ জন আহত হয়েছেন, যার মধ্যে সাত জনের অবস্থা গুরুতর।

এদিকে ইসরায়েলি পুলিশের বরাতে আল জাজিরা জানিয়েছে, তেল আবিবের দক্ষিণে অবস্থিত বাত ইয়াম শহরে ৬ জন নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে দুই শিশু রয়েছে। এছাড়া সাতজন এখনও নিখোঁজ। ধ্বংসস্তূপের মধ্যে উদ্ধার অভিযান চালাচ্ছেন জরুরি সেবাদানকারীরা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ