স্বাস্থ্যহানিকর পণ্যের ওপর উচ্চ হারে কর আরোপ করা উচিত বলে মনে করেন দেশের ৭৭ শতাংশ মানুষ। নারী-পুরুষ সবারই মত প্রায় সমান। ১৮ বছরের বেশি বয়সী সব মানুষের মনোভাব মোটামুটি একই।

স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর পণ্যের ওপর কর আরোপের ব্যাপারে মানুষের এ ধরনের মতামত উঠে এসেছে স্বাস্থ্য খাত সংস্কারবিষয়ক জনমত জরিপে। কমিশনের অনুরোধে জাতীয় এই জরিপ করেছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)। বিবিএস গত সপ্তাহে জরিপের প্রাথমিক প্রতিবেদন কমিশনে জমা দিয়েছে।

স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর পণ্যের তালিকায় আছে কোমল পানীয় বা কোল্ড ড্রিংকস, শক্তি বৃদ্ধিকারী পানীয় বা এনার্জি ড্রিংকস, ফাস্ট ফুড, চিপস, নুডলস, বিড়ি-সিগারেট ও তামাক। এসব পণ্যের ওপর উচ্চ হারে কর বসানো উচিত কি না, তা ৬৪ জেলার শহর ও গ্রামের মানুষের কাছে জানতে চেয়েছিলেন বিবিএসের জরিপকারীরা।

জরিপে দেখা গেছে, উচ্চ হারে কর বসানোর পক্ষে মত দিয়েছেন ৭৭ দশমিক ৫ শতাংশ মানুষ। কর বসানোর বিপক্ষে ২০ শতাংশ মানুষ। অন্যদিকে বাকি ২ দশমিক ৫ শতাংশ মানুষ বলেছেন, তাঁরা এ বিষয়ে কিছু জানেন না।

জরিপে দেখা যাচ্ছে, ৭৭ দশমিক ৯ শতাংশ নারী ও ৭৭ শতাংশ পুরুষ মোটামুটি একই হারে কর বসানোর পক্ষে। গ্রামের মানুষের মধ্যে ৭৬ দশমিক ২ শতাংশের চেয়ে কর বসানোর মনোভাব শহরের মানুষের মধ্যে বেশি। ৮০ দশমিক ৩ শতাংশ শহরবাসী কর বসাতে চান।

তবে সব বিভাগের মানুষের মধ্যে একই মনোভাব দেখা যায়নি। উচ্চ হারে কর আরোপের পক্ষে সবচেয়ে বেশি খুলনা বিভাগের মানুষ (৮৯ দশমিক ৬ শতাংশ)। এই হার সবচেয়ে কম ঢাকা বিভাগে (৭০ দশমিক ৭ শতাংশ)। অন্য বিভাগগুলোর অবস্থান পর্যায়ক্রমে এ রকম: চট্টগ্রাম (৮৫), ময়মনসিংহ (৮০ দশমিক ৩), বরিশাল (৭৫ দশমিক ৭), রাজশাহী (৭৪ দশমিক ১), রংপুর (৭৩ দশমিক ৪০) ও সিলেট (৭৩ দশমিক ৩)।

বিড়ি-সিগারেট বা তামাক নানা ধরনের ক্যানসারের কারণ। আবার ফাস্ট ফুড বা কোমল পানীয় স্থূলতার কারণ। এসব খাবার হৃদ্‌রোগের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। সারা বিশ্বে স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর এসব পণ্য ব্যবহারের বিরুদ্ধে নানা উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে।

স্বাস্থ্য খাত সংস্কারবিষয়ক কমিশনের একাধিক সদস্য প্রথম আলোকে বলেছেন, উচ্চ হারে কর বসালে স্বাস্থ্যহানিকর কিছু পণ্যের ব্যবহার মানুষ কম করবে বলে আশা করা যায়। অন্যদিকে এসব পণ্য থেকে পাওয়া কর স্বাস্থ্য উন্নয়নে কাজে লাগানো যাবে কি না, তা নিয়েও সুপারিশ থাকবে সংস্কার কমিশন প্রতিবেদনে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: দশম ক

এছাড়াও পড়ুন:

চাকরি খেয়ে ফেলব, কারারক্ষীকে কারাবন্দী আ’লীগ নেতা

‘চাকরি খেয়ে ফেলব, দেখে নেব তোমাকে, চেন আমি কে?’ কারবন্দী কুড়িগ্রাম জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান সাজু (৪৯) মঙ্গলবার বিকেল ৪টার দিকে ২ কারারক্ষীকে এভাবে হুমকি দেন বলে অভিযোগ উঠেছে। 

জানা যায়, কুড়িগ্রাম জেলা কারাগারে জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান সাজুকে দেখতে যান তার কয়েকজন স্বজন। কারা নিয়মানুযায়ী সাক্ষাৎ কক্ষে বেঁধে দেওয়া সময়ে কথা শেষ করার কথা থাকলেও তিনি তার মানতে রাজি নন। তিনি দীর্ঘ সময় কথা বলতে চাইলে সাক্ষাৎ কক্ষে দায়িত্বরত মহিলা কারারক্ষী পপি রানী কারাবন্দী নেতার স্বজনদের সময়ের মধ্যে কথা শেষ করতে বলেন। এতে ক্ষিপ্ত হন আওয়ামী লীগ নেতা সাজু। তখন তিনি বলেন, ‘এই আপনি কে? ডিস্টার্ব করছেন কেন? চিনেন আমাকে? চাকরি খেয়ে ফেলব।’

এ সময় সাক্ষাৎ কক্ষে সাজুর স্বজনরাও পপি রানীর সঙ্গেও আক্রমণাত্মক আচরণ করেন। পপি রানীকে নিরাপদ করতে সুমন নামের আরেকজন কারারক্ষী এগিয়ে এলে তাকে লাথি দিয়ে বের করে দেওয়ার হুমকি দেন সাজু। উত্তেজনার একপর্যায়ে ঘটনাস্থলে দ্রুত উপস্থিত হন প্রধান কারারক্ষী আব্দুর রাজ্জাক। তিনি সাজুর স্বজনদের সাক্ষাৎ কক্ষ থেকে চলে যেতে বলেন। তারাও চলে যাওয়ার সময়ে কারারক্ষীদের গালিগালাজ করেন। 

এ ব্যাপারে কারারক্ষী পপি রানী  বলেন, ‘আমি ডিউটিরত অবস্থায় তিনি আমাকে প্রভাব দেখিয়ে চাকরি খাওয়ার হুমকি দেন ও গালিগালাজ করেন। আমি জেলার স্যারের কাছে বিচার প্রার্থনা করছি।’

প্রত্যক্ষদর্শী কারারক্ষী মো. সুমন বলেন, ‘আমরা তো ছোট পদে চাকরি করি, আমাদের নানান নির্যাতন সহ্য করতে হয়। আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া আর কিছু বলতে পারব না।’

প্রধান কারারক্ষী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘সাক্ষাৎ কক্ষের ভেতরে পুলিশ সদস্যকে গালিগালাজ করা হয়। পরে আমি গিয়ে পরিবেশ শান্ত করি।’ 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কুড়িগ্রাম কারাগারের জেলার এ জি মো. মামুদ বলেন, ‘বিষয়টি আমি শুনেছি। বন্দীরা আমাদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করলেও আমরা মানবিকতা প্রদর্শন করি। কেউ অতিরিক্ত কিছু করলে জেলের নিয়ম অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

উল্লেখ্য, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান সাজুকে গত ৩ ফেব্রুয়ারি বিকেলে রংপুর শহরের সড়ক ও জনপথ কার্যালয়ের কাছ থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)। তার বিরুদ্ধে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে ছাত্র-জনতার ওপর হামলা ও শিক্ষার্থী আশিক হত্যা মামলাসহ একাধিক মামলা রয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ