এক বছর আগেও কুমিল্লার রাজনীতিতে বিএনপি ছিল কোণঠাসা। জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতি চলেছে অনেকটা ‘গোপনে’। গত বছরের ৫ আগস্ট ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর দেখা নেই আওয়ামী লীগের বেশির ভাগ নেতা–কর্মীর। মাঠে এখন সক্রিয় বিএনপি ও জামায়াত।

১৭টি উপজেলা ও ১৮টি থানা নিয়ে দেশের অন্যতম বৃহৎ জেলা কুমিল্লা। জেলার ১১টি সংসদীয় আসনে বর্তমানে বিএনপির রাজনীতি বেশ চাঙা। প্রতিটি আসনেই বিএনপির শক্ত অবস্থান। তবে কয়েকটি উপজেলা বাদে অধিকাংশ উপজেলায়ই দলের মধ্যে আছে গ্রুপিং। কুমিল্লার প্রতিটি আসনেই এখন জোরেশোরে চলছে বিএনপির নির্বাচনী প্রস্তুতি। একই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়ে চলছে দলটির প্রার্থীর সংখ্যা। দু–একটি আসন বাদে সব আসনেই মনোনয়ন চান দলটির একাধিক নেতা। সেদিক থেকে কিছুটা সুবিধাজনক অবস্থানে আছে জামায়াত। সব আসনে প্রার্থী বাছাইয়ের প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করেছে দলটি। তিনটি আসনে নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নির্বাচনী সাংগঠনিক তৎপরতা দেখা গেছে।

কুমিল্লা–১ (দাউদকান্দি ও তিতাস)

সর্বশেষ ২০১৮ সালে কুমিল্লা–১ ও কুমিল্লা–২ আসনে বিএনপির প্রার্থী ছিলেন খন্দকার মোশাররফ হোসেন। বিএনপির এই জ্যেষ্ঠ নেতা বর্তমানে শারীরিকভাবে বেশ অসুস্থ। তিনি শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে অংশ নিতে না পারলে এই আসনে বিএনপির মনোনয়ন পাচ্ছেন খন্দকার মারুফ হোসেন, এ বিষয়টি অনেকটাই নিশ্চিত। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি এলাকায় নিয়মিত সময় দিচ্ছি। বিগত প্রতিটি আন্দোলন–সংগ্রামে মাঠে ছিলাম। সবচেয়ে বড় কথা হলো, আমাদের আসনে কোনো গ্রুপিং নেই।’

এই আসনে জামায়াতের প্রার্থী সংগঠনের দাউদকান্দি উপজেলা শাখার আমির মনিরুজ্জামান বাহলুল। এখানে চোখে পড়ার মতো কোনো সাংগঠনিক তৎপরতা নেই এনসিপির। ইসলামী আন্দোলন মাঠে নিজেদের অবস্থান তৈরিতে তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে।

কুমিল্লা–২ (হোমনা ও মেঘনা)

এই আসনে বিএনপির রাজনৈতিক অবস্থান বেশ শক্ত। পাশাপাশি মাঠে সক্রিয় জামায়াত। দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক (কুমিল্লা বিভাগ) অধ্যক্ষ মো.

সেলিম ভূঁইয়া নিয়মিত সভা–সমাবেশ করছেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আসনটি বিএনপির আসন হিসেবেই পরিচিত। সাধারণ মানুষও আসনটি বিএনপিকে ফিরিয়ে দিতে চায়।’

মো. সেলিম ভূঁইয়ার বাইরে এখানে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে প্রয়াত এম কে আনোয়ারের ছেলে মাহমুদ আনোয়ার (কাইজার), খালেদা জিয়ার একসময়ের এপিএস–২ আবদুল মতিন ও হোমনা উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মো. আজিজুর রহমান মোল্লার নাম আলোচনায় আছে। জামায়াতের কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরা সদস্য নাজিম উদ্দিন মোল্লা তাদের প্রার্থী। এনসিপির তেমন সাংগঠনিক তৎপরতা নেই।

কুমিল্লা–৩ (মুরাদনগর)

আসনটি সাম্প্রতিক সময়ে রাজনৈতিক কারণে বেশ আলোচনায়। এ আলোচনা মূলত বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসাইন কায়কোবাদ ও অন্তর্বর্তী সরকারের স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়াকে ঘিরে। গুঞ্জন আছে, এ আসন থেকে এনসিপির হয়ে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ ভোটে লড়তে পারেন।

রাজনৈতিক কারণে কায়কোবাদকে দীর্ঘদিন দেশের বাইরে থাকতে হয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দেশে ফেরা কায়কোবাদের নেতৃত্বে মুরাদনগরে বেশ চাঙা হয়ে উঠেছে বিএনপি। তিনি নিয়মিত সভা-সমাবেশে অংশ নিচ্ছেন। জামায়াত দলটির কুমিল্লা উত্তর জেলা কর্মপরিষদ সদস্য ও উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ইউসুফ হাকিম সোহেলকে প্রার্থী বাছাই করেছে।

কুমিল্লা–৪ (দেবীদ্বার)

এই আসনে আলোচনায় আছে এনসিপি। এনসিপির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহর বাড়ি দেবীদ্বার উপজেলায়। তিনি এ আসন থেকে নির্বাচন করবেন, এ বিষয়টি প্রায় নিশ্চিত বলা চলে। তিনি নিয়মিত এলাকায় সভা–সমাবেশের পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ডে অংশ নিচ্ছেন।

সর্বশেষ ২০০১ সালে এই আসনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন বিএনপি নেতা মঞ্জুরুল আহসান মুন্সি। বিএনপির শক্ত অবস্থান থাকলেও এই আসনে দলের মধ্যে অন্তর্কোন্দল ও গ্রুপিং আছে। বর্তমানে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে মাঠে আছেন মঞ্জুরুল আহসান মুন্সি, কুমিল্লা উত্তর জেলা বিএনপির সদস্যসচিব এ এফ এম তারেক মুন্সি, মঞ্জুরুল আহসান মুন্সির ছেলে ও কুমিল্লা উত্তর জেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক রিজভীউল আহসান মুন্সি ও রাজধানীর গুলশান থানা বিএনপির সাবেক ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আবদুল আউয়াল খান। এ আসনে জামায়াতের কুমিল্লা উত্তর জেলার সেক্রেটারি সাইফুল ইসলাম (শহীদ) দলের প্রার্থী হচ্ছেন।

কুমিল্লা–৫ (বুড়িচং–ব্রাহ্মণপাড়া)

সর্বশেষ ২০০১ সালে এ আসনে বিএনপির সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন প্রয়াত নেতা অধ্যক্ষ মোহাম্মদ ইউনুস। বিএনপির শক্ত অবস্থান থাকলেও এই আসনে দলের মধ্যে রয়েছে গ্রুপিং। নির্বাচনের আগে কোন্দল নিরসন করা না গেলে ভোটে প্রভাব পড়তে পারে। এই আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে আলোচনায় আছেন কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি এ এস এম আলাউদ্দিন ভূঁইয়া, বুড়িচং উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক এ টি এম মিজানুর রহমান ও ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক মো. জসিম উদ্দিন। প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের ব্যক্তিগত আইনজীবী আবদুল্লাহ আল মামুন ও বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত শওকত মাহমুদও আলোচনায় আছেন। ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি মোবারক হোসেনকে এ আসনে নিজেদের প্রার্থী হিসেবে প্রাথমিকভাবে চূড়ান্ত করেছে জামায়াতে ইসলামী।

কুমিল্লা–৬ (সদর)

কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলা, সিটি করপোরেশন ও সেনানিবাস এলাকা নিয়ে গঠিত কুমিল্লা–৬ আসনটি। সর্বশেষ ২০০১ সালে বিএনপির প্রয়াত কর্নেল (অব.) আকবর হোসেন বীর প্রতীক জয় পেয়েছিলেন। ২০০৬ সালে তাঁর মৃত্যুর পর থেকে এই আসনে বিএনপির নিয়ন্ত্রণ বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক আমিন–উর রশিদ ইয়াছিনের কাছে। ২০০৮ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিএনপি আমিন–উর রশিদ ইয়াছিনের ওপর আস্থা রাখে। আগামী নির্বাচনেও বিএনপি ইয়াছিনের ওপর আস্থা রাখবে, এমনটাই মনে করেন দলের নেতা–কর্মীরা। তিনি বলেন, ‘গত ১৭ বছর দলটাকে নিজের সর্বোচ্চটুকু দিয়ে আগলে রেখেছি। তখন কিন্তু কাউকে মাঠে দেখিনি।’

দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে সিটি নির্বাচনে অংশ নিয়ে বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত মনিরুল হক (সাক্কু) প্রার্থী হতে পারেন। তিনি বলেন, ‘সংসদ বা সিটি নির্বাচন, যেটা আগে হবে, আমি সেটাতে প্রার্থী হব। দল আমাকে বহিষ্কার করলেও আমি দলকে ছেড়ে যাইনি।’

সচেতন রাজনৈতিক ফোরাম কুমিল্লার প্রধান সমন্বয়ক শাহ মো. সেলিমও আছেন বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীদের আলোচনায়। তিনি বিএনপির প্রতিষ্ঠাকালীন কুমিল্লার অন্যতম নেতা ছিলেন। বিএনপির কুমিল্লা বিভাগীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাক মিয়াও এ আসনে মনোনয়ন চাইবেন বলে জানা গেছে।

কুমিল্লা সদর আসনে জামায়াত এরই মধ্যে সংগঠনের মহানগর শাখার আমির কাজী দ্বীন মোহাম্মদকে প্রার্থী ঘোষণা করেছে। তিনি প্রতিদিনই বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগ করছেন। কুমিল্লা মহানগরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের তৎপরতা থাকলেও এনসিপির সেভাবে তৎপরতা এখনো শুরু হয়নি। ইসলামী আন্দোলন, হেফাজতে ইসলাম, এবি পার্টিসহ কয়েকটি রাজনৈতিক দলের নেতা–কর্মীরা এখানে সক্রিয়।

কুমিল্লা–৭ (চান্দিনা)

কুমিল্লা জেলার মধ্যে শুধু চান্দিনায় লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) শক্ত অবস্থান আছে। দলটির মহাসচিব রেদোয়ান আহমেদ ওই আসনে সর্বশেষ ২০০১ সালে ধানের শীষ প্রতীকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। ২০১৮ সালেও বিএনপি জোটের প্রার্থী ছিলেন তিনি। বর্তমানে রেদোয়ান আহমেদ ও উপজেলা বিএনপির সভাপতি আতিকুল আলম ওরফে শাওনের মধ্যে রাজনৈতিক বিরোধ চলছে।

এই আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে আছেন আতিকুল আলম ওরফে শাওন, স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সহ–আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান (জাহিন), জাতীয়তাবাদী ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক কাজী শাখাওয়াত হোসেন প্রমুখ। এই আসনে জামায়াত দলীয় প্রার্থী হিসেবে মাওলানা মোশাররফ হোসেনের নাম ঘোষণা করেছে।

কুমিল্লা–৮ (বরুড়া)

বরুড়ায় বর্তমানে বিএনপির বেশ শক্ত অবস্থান আছে। আগামী নির্বাচনে দলের কেন্দ্রীয় কমিটির কর্মসংস্থানবিষয়ক সম্পাদক ও কুমিল্লা দক্ষিণ জেলার আহ্বায়ক জাকারিয়া তাহের (সুমন) এই আসনে বিএনপির মনোনয়ন পাচ্ছেন, এ বিষয়টি অনেকটাই নিশ্চিত বলে দাবি দলটির নেতা–কর্মীদের। স্থানীয় বিএনপিতে দৃশ্যমান কোনো গ্রুপিং নেই। তবে যুবদলের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা মুরতাজুল করিম এ আসনে মনোনয়ন চান বলে জানা গেছে। কুমিল্লা ইবনে তাইমিয়া স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ শফিকুল আলম হেলালকে এই আসনে প্রার্থী ঘোষণা করেছে জামায়াতে ইসলামী। এই আসনে এনসিপির ছাত্রসংগঠন বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের আহ্বায়ক আবু বাকের মজুমদারের বাড়ি হলেও এনসিপির তেমন কোনো তৎপরতা শুরু হয়নি।

কুমিল্লা–৯ (লাকসাম–মনোহরগঞ্জ)

লাকসাম ও মনোহরগঞ্জ উপজেলায় বিএনপির রাজনীতিতে চলছে দীর্ঘদিনের গ্রুপিং। বর্তমানে এই আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে আলোচনায় আছেন বিএনপির শিল্পবিষয়ক সম্পাদক মো. আবুল কালাম, কেন্দ্রীয় যুবদলের সাবেক শ্রমবিষয়ক সম্পাদক ও বিজিএমইএর পরিচালক রশিদ আহমদ হোসাইনী, কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাবেক দপ্তর সম্পাদক সফিকুর রহমান, সাবেক জনপ্রশাসন সচিব এ কে এম জাহাঙ্গীরসহ কয়েকজন। এই আসনে জামায়াতের একক প্রার্থী হিসেবে মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন সংগঠনের কুমিল্লা দক্ষিণ জেলার সেক্রেটারি সৈয়দ এ কে এম সরওয়ার উদ্দিন ছিদ্দিকী। ইসলামী আন্দোলন, ইসলামিক ফ্রন্টসহ কয়েকটি দল সক্রিয় থাকলেও এখনো এনসিপির তৎপরতা শুরু হয়নি।

কুমিল্লা–১০ (নাঙ্গলকোট, কুমিল্লা সদর দক্ষিণ ও লালমাই)

সর্বশেষ ২০১৮ সালে বর্তমান কুমিল্লা–১০ আসনে বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছিলেন মনিরুল হক চৌধুরী। এবার তিনি ও আবদুল গফুর ভূঁইয়া ছাড়া এ আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে মাঠে আছেন দলের কেন্দ্রীয় সদস্য মোবাশ্বের আলম ভূঁইয়া। বিএনপির পাশাপাশি জামায়াত ও এনসিপিও বেশ সক্রিয়। এরই মধ্যে জামায়াত তাঁদের প্রার্থী হিসেবে কেন্দ্রীয় ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি মাওলানা ইয়াসিন আরাফাতের নাম ঘোষণা করেছে। এনসিপির যুগ্ম সদস্যসচিব জয়নাল আবেদীন গণসংযোগ করছেন।

কুমিল্লা জেলায় এনসিপির কার্যক্রম প্রসঙ্গে জানতে চাইলে জয়নাল আবেদীন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা রাজনৈতিক দল গঠন করার আগে যখন অনলাইনে জনমত যাচাই করেছি, তখন ঢাকার পরে সবচেয়ে বেশি সাড়া কুমিল্লায় পেয়েছি। এরই মধ্যে কুমিল্লার বেশির ভাগ উপজেলায় এনসিপির কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে।’

কুমিল্লা–১১ (চৌদ্দগ্রাম)

চারদলীয় জোটের প্রার্থী হিসেবে ২০০১ সালের নির্বাচনে চৌদ্দগ্রামের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের। সর্বশেষ ২০১৮ সালেও বিএনপি জোটের প্রার্থী ছিলেন তিনি। সবার কাছে চৌদ্দগ্রাম জামায়াতের ‘ঘাঁটি’ হিসেবে পরিচিত হলেও এবার রাজনীতির মাঠের চিত্রটা ভিন্ন। কারণ, এবার চৌদ্দগ্রামে জামায়াতের প্রতিপক্ষ বিএনপি। এরপরও জামায়াতের নেতা–কর্মীরা আত্মবিশ্বাসী নিজেদের প্রার্থী বিপুল ভোটে বিজয়ী হবেন বলে।

জামায়াতের একক প্রার্থী আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের হলেও এ আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে বেশ কয়েকজনের নাম শোনা যাচ্ছে। তাঁরা হলেন কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ও উপজেলার আহ্বায়ক কামরুল হুদা, চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও কুমিল্লা দক্ষিণ জেলার আহ্বায়ক কমিটির সদস্য গোলাম কাদের চৌধুরী ওরফে নোবেল, কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি কাজী নাসিমুল হক।

গোলাম কাদের চৌধুরী বলেন, বিগত সময় জোটের কারণে চৌদ্দগ্রামে বিএনপিকে অনেক ছাড় দিতে হয়েছে। তবে এখানে বিএনপির ভোট বেশি। আর জামায়াতের প্রার্থী আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, ‘আশা করছি, বিএনপির অনেকে আমাকে ভোট দেবেন।’

কুমিল্লায় বিএনপির রাজনীতির বিষয়ে জানতে চাইলে দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক (কুমিল্লা বিভাগ) অধ্যক্ষ মো. সেলিম ভূঁইয়া প্রথম আলোকে বলেন, বিএনপি অনেক বড় রাজনৈতিক দল। এখানে নেতৃত্ব ও মনোনয়নের প্রতিযোগিতা থাকাটাই স্বাভাবিক। তবে প্রতিটি আসনেই দল এখন চাঙা। এরই মধ্যে অধিকাংশ উপজেলায় ওয়ার্ড পর্যায় পর্যন্ত সম্মেলন শেষ হয়েছে। বর্তমান অবস্থায় কুমিল্লার ১১টি আসনেই বিএনপি জয়লাভ করবে বলে তিনি আশা করেন।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব এনপ র স ব ক স ব এনপ র র জন ত দল র ক ন দ র য় ল আহস ন ম ন স প রথম আল ক ব এনপ র প আবদ ল ল হ ব এনপ র শ ২০১৮ স ল ম হ ম মদ ও ব এনপ এনস প র য় ব এনপ উপদ ষ ট র রহম ন উপজ ল য় কর ম র থ কল ও কম ট র আসন ই এ আসন স গঠন ইসল ম র আসন দলট র

এছাড়াও পড়ুন:

কুমিল্লার ১১ আসনেই চাঙা বিএনপি, এনসিপি তৎপর ৩ আসনে

এক বছর আগেও কুমিল্লার রাজনীতিতে বিএনপি ছিল কোণঠাসা। জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতি চলেছে অনেকটা ‘গোপনে’। গত বছরের ৫ আগস্ট ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর দেখা নেই আওয়ামী লীগের বেশির ভাগ নেতা–কর্মীর। মাঠে এখন সক্রিয় বিএনপি ও জামায়াত।

১৭টি উপজেলা ও ১৮টি থানা নিয়ে দেশের অন্যতম বৃহৎ জেলা কুমিল্লা। জেলার ১১টি সংসদীয় আসনে বর্তমানে বিএনপির রাজনীতি বেশ চাঙা। প্রতিটি আসনেই বিএনপির শক্ত অবস্থান। তবে কয়েকটি উপজেলা বাদে অধিকাংশ উপজেলায়ই দলের মধ্যে আছে গ্রুপিং। কুমিল্লার প্রতিটি আসনেই এখন জোরেশোরে চলছে বিএনপির নির্বাচনী প্রস্তুতি। একই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়ে চলছে দলটির প্রার্থীর সংখ্যা। দু–একটি আসন বাদে সব আসনেই মনোনয়ন চান দলটির একাধিক নেতা। সেদিক থেকে কিছুটা সুবিধাজনক অবস্থানে আছে জামায়াত। সব আসনে প্রার্থী বাছাইয়ের প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করেছে দলটি। তিনটি আসনে নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নির্বাচনী সাংগঠনিক তৎপরতা দেখা গেছে।

কুমিল্লা–১ (দাউদকান্দি ও তিতাস)

সর্বশেষ ২০১৮ সালে কুমিল্লা–১ ও কুমিল্লা–২ আসনে বিএনপির প্রার্থী ছিলেন খন্দকার মোশাররফ হোসেন। বিএনপির এই জ্যেষ্ঠ নেতা বর্তমানে শারীরিকভাবে বেশ অসুস্থ। তিনি শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে অংশ নিতে না পারলে এই আসনে বিএনপির মনোনয়ন পাচ্ছেন খন্দকার মারুফ হোসেন, এ বিষয়টি অনেকটাই নিশ্চিত। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি এলাকায় নিয়মিত সময় দিচ্ছি। বিগত প্রতিটি আন্দোলন–সংগ্রামে মাঠে ছিলাম। সবচেয়ে বড় কথা হলো, আমাদের আসনে কোনো গ্রুপিং নেই।’

এই আসনে জামায়াতের প্রার্থী সংগঠনের দাউদকান্দি উপজেলা শাখার আমির মনিরুজ্জামান বাহলুল। এখানে চোখে পড়ার মতো কোনো সাংগঠনিক তৎপরতা নেই এনসিপির। ইসলামী আন্দোলন মাঠে নিজেদের অবস্থান তৈরিতে তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে।

কুমিল্লা–২ (হোমনা ও মেঘনা)

এই আসনে বিএনপির রাজনৈতিক অবস্থান বেশ শক্ত। পাশাপাশি মাঠে সক্রিয় জামায়াত। দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক (কুমিল্লা বিভাগ) অধ্যক্ষ মো. সেলিম ভূঁইয়া নিয়মিত সভা–সমাবেশ করছেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আসনটি বিএনপির আসন হিসেবেই পরিচিত। সাধারণ মানুষও আসনটি বিএনপিকে ফিরিয়ে দিতে চায়।’

মো. সেলিম ভূঁইয়ার বাইরে এখানে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে প্রয়াত এম কে আনোয়ারের ছেলে মাহমুদ আনোয়ার (কাইজার), খালেদা জিয়ার একসময়ের এপিএস–২ আবদুল মতিন ও হোমনা উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মো. আজিজুর রহমান মোল্লার নাম আলোচনায় আছে। জামায়াতের কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরা সদস্য নাজিম উদ্দিন মোল্লা তাদের প্রার্থী। এনসিপির তেমন সাংগঠনিক তৎপরতা নেই।

কুমিল্লা–৩ (মুরাদনগর)

আসনটি সাম্প্রতিক সময়ে রাজনৈতিক কারণে বেশ আলোচনায়। এ আলোচনা মূলত বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসাইন কায়কোবাদ ও অন্তর্বর্তী সরকারের স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়াকে ঘিরে। গুঞ্জন আছে, এ আসন থেকে এনসিপির হয়ে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ ভোটে লড়তে পারেন।

রাজনৈতিক কারণে কায়কোবাদকে দীর্ঘদিন দেশের বাইরে থাকতে হয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দেশে ফেরা কায়কোবাদের নেতৃত্বে মুরাদনগরে বেশ চাঙা হয়ে উঠেছে বিএনপি। তিনি নিয়মিত সভা-সমাবেশে অংশ নিচ্ছেন। জামায়াত দলটির কুমিল্লা উত্তর জেলা কর্মপরিষদ সদস্য ও উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ইউসুফ হাকিম সোহেলকে প্রার্থী বাছাই করেছে।

কুমিল্লা–৪ (দেবীদ্বার)

এই আসনে আলোচনায় আছে এনসিপি। এনসিপির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহর বাড়ি দেবীদ্বার উপজেলায়। তিনি এ আসন থেকে নির্বাচন করবেন, এ বিষয়টি প্রায় নিশ্চিত বলা চলে। তিনি নিয়মিত এলাকায় সভা–সমাবেশের পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ডে অংশ নিচ্ছেন।

সর্বশেষ ২০০১ সালে এই আসনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন বিএনপি নেতা মঞ্জুরুল আহসান মুন্সি। বিএনপির শক্ত অবস্থান থাকলেও এই আসনে দলের মধ্যে অন্তর্কোন্দল ও গ্রুপিং আছে। বর্তমানে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে মাঠে আছেন মঞ্জুরুল আহসান মুন্সি, কুমিল্লা উত্তর জেলা বিএনপির সদস্যসচিব এ এফ এম তারেক মুন্সি, মঞ্জুরুল আহসান মুন্সির ছেলে ও কুমিল্লা উত্তর জেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক রিজভীউল আহসান মুন্সি ও রাজধানীর গুলশান থানা বিএনপির সাবেক ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আবদুল আউয়াল খান। এ আসনে জামায়াতের কুমিল্লা উত্তর জেলার সেক্রেটারি সাইফুল ইসলাম (শহীদ) দলের প্রার্থী হচ্ছেন।

কুমিল্লা–৫ (বুড়িচং–ব্রাহ্মণপাড়া)

সর্বশেষ ২০০১ সালে এ আসনে বিএনপির সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন প্রয়াত নেতা অধ্যক্ষ মোহাম্মদ ইউনুস। বিএনপির শক্ত অবস্থান থাকলেও এই আসনে দলের মধ্যে রয়েছে গ্রুপিং। নির্বাচনের আগে কোন্দল নিরসন করা না গেলে ভোটে প্রভাব পড়তে পারে। এই আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে আলোচনায় আছেন কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি এ এস এম আলাউদ্দিন ভূঁইয়া, বুড়িচং উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক এ টি এম মিজানুর রহমান ও ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক মো. জসিম উদ্দিন। প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের ব্যক্তিগত আইনজীবী আবদুল্লাহ আল মামুন ও বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত শওকত মাহমুদও আলোচনায় আছেন। ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি মোবারক হোসেনকে এ আসনে নিজেদের প্রার্থী হিসেবে প্রাথমিকভাবে চূড়ান্ত করেছে জামায়াতে ইসলামী।

কুমিল্লা–৬ (সদর)

কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলা, সিটি করপোরেশন ও সেনানিবাস এলাকা নিয়ে গঠিত কুমিল্লা–৬ আসনটি। সর্বশেষ ২০০১ সালে বিএনপির প্রয়াত কর্নেল (অব.) আকবর হোসেন বীর প্রতীক জয় পেয়েছিলেন। ২০০৬ সালে তাঁর মৃত্যুর পর থেকে এই আসনে বিএনপির নিয়ন্ত্রণ বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক আমিন–উর রশিদ ইয়াছিনের কাছে। ২০০৮ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিএনপি আমিন–উর রশিদ ইয়াছিনের ওপর আস্থা রাখে। আগামী নির্বাচনেও বিএনপি ইয়াছিনের ওপর আস্থা রাখবে, এমনটাই মনে করেন দলের নেতা–কর্মীরা। তিনি বলেন, ‘গত ১৭ বছর দলটাকে নিজের সর্বোচ্চটুকু দিয়ে আগলে রেখেছি। তখন কিন্তু কাউকে মাঠে দেখিনি।’

দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে সিটি নির্বাচনে অংশ নিয়ে বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত মনিরুল হক (সাক্কু) প্রার্থী হতে পারেন। তিনি বলেন, ‘সংসদ বা সিটি নির্বাচন, যেটা আগে হবে, আমি সেটাতে প্রার্থী হব। দল আমাকে বহিষ্কার করলেও আমি দলকে ছেড়ে যাইনি।’

সচেতন রাজনৈতিক ফোরাম কুমিল্লার প্রধান সমন্বয়ক শাহ মো. সেলিমও আছেন বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীদের আলোচনায়। তিনি বিএনপির প্রতিষ্ঠাকালীন কুমিল্লার অন্যতম নেতা ছিলেন। বিএনপির কুমিল্লা বিভাগীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাক মিয়াও এ আসনে মনোনয়ন চাইবেন বলে জানা গেছে।

কুমিল্লা সদর আসনে জামায়াত এরই মধ্যে সংগঠনের মহানগর শাখার আমির কাজী দ্বীন মোহাম্মদকে প্রার্থী ঘোষণা করেছে। তিনি প্রতিদিনই বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগ করছেন। কুমিল্লা মহানগরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের তৎপরতা থাকলেও এনসিপির সেভাবে তৎপরতা এখনো শুরু হয়নি। ইসলামী আন্দোলন, হেফাজতে ইসলাম, এবি পার্টিসহ কয়েকটি রাজনৈতিক দলের নেতা–কর্মীরা এখানে সক্রিয়।

কুমিল্লা–৭ (চান্দিনা)

কুমিল্লা জেলার মধ্যে শুধু চান্দিনায় লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) শক্ত অবস্থান আছে। দলটির মহাসচিব রেদোয়ান আহমেদ ওই আসনে সর্বশেষ ২০০১ সালে ধানের শীষ প্রতীকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। ২০১৮ সালেও বিএনপি জোটের প্রার্থী ছিলেন তিনি। বর্তমানে রেদোয়ান আহমেদ ও উপজেলা বিএনপির সভাপতি আতিকুল আলম ওরফে শাওনের মধ্যে রাজনৈতিক বিরোধ চলছে।

এই আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে আছেন আতিকুল আলম ওরফে শাওন, স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সহ–আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান (জাহিন), জাতীয়তাবাদী ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক কাজী শাখাওয়াত হোসেন প্রমুখ। এই আসনে জামায়াত দলীয় প্রার্থী হিসেবে মাওলানা মোশাররফ হোসেনের নাম ঘোষণা করেছে।

কুমিল্লা–৮ (বরুড়া)

বরুড়ায় বর্তমানে বিএনপির বেশ শক্ত অবস্থান আছে। আগামী নির্বাচনে দলের কেন্দ্রীয় কমিটির কর্মসংস্থানবিষয়ক সম্পাদক ও কুমিল্লা দক্ষিণ জেলার আহ্বায়ক জাকারিয়া তাহের (সুমন) এই আসনে বিএনপির মনোনয়ন পাচ্ছেন, এ বিষয়টি অনেকটাই নিশ্চিত বলে দাবি দলটির নেতা–কর্মীদের। স্থানীয় বিএনপিতে দৃশ্যমান কোনো গ্রুপিং নেই। তবে যুবদলের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা মুরতাজুল করিম এ আসনে মনোনয়ন চান বলে জানা গেছে। কুমিল্লা ইবনে তাইমিয়া স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ শফিকুল আলম হেলালকে এই আসনে প্রার্থী ঘোষণা করেছে জামায়াতে ইসলামী। এই আসনে এনসিপির ছাত্রসংগঠন বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের আহ্বায়ক আবু বাকের মজুমদারের বাড়ি হলেও এনসিপির তেমন কোনো তৎপরতা শুরু হয়নি।

কুমিল্লা–৯ (লাকসাম–মনোহরগঞ্জ)

লাকসাম ও মনোহরগঞ্জ উপজেলায় বিএনপির রাজনীতিতে চলছে দীর্ঘদিনের গ্রুপিং। বর্তমানে এই আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে আলোচনায় আছেন বিএনপির শিল্পবিষয়ক সম্পাদক মো. আবুল কালাম, কেন্দ্রীয় যুবদলের সাবেক শ্রমবিষয়ক সম্পাদক ও বিজিএমইএর পরিচালক রশিদ আহমদ হোসাইনী, কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাবেক দপ্তর সম্পাদক সফিকুর রহমান, সাবেক জনপ্রশাসন সচিব এ কে এম জাহাঙ্গীরসহ কয়েকজন। এই আসনে জামায়াতের একক প্রার্থী হিসেবে মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন সংগঠনের কুমিল্লা দক্ষিণ জেলার সেক্রেটারি সৈয়দ এ কে এম সরওয়ার উদ্দিন ছিদ্দিকী। ইসলামী আন্দোলন, ইসলামিক ফ্রন্টসহ কয়েকটি দল সক্রিয় থাকলেও এখনো এনসিপির তৎপরতা শুরু হয়নি।

কুমিল্লা–১০ (নাঙ্গলকোট, কুমিল্লা সদর দক্ষিণ ও লালমাই)

সর্বশেষ ২০১৮ সালে বর্তমান কুমিল্লা–১০ আসনে বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছিলেন মনিরুল হক চৌধুরী। এবার তিনি ও আবদুল গফুর ভূঁইয়া ছাড়া এ আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে মাঠে আছেন দলের কেন্দ্রীয় সদস্য মোবাশ্বের আলম ভূঁইয়া। বিএনপির পাশাপাশি জামায়াত ও এনসিপিও বেশ সক্রিয়। এরই মধ্যে জামায়াত তাঁদের প্রার্থী হিসেবে কেন্দ্রীয় ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি মাওলানা ইয়াসিন আরাফাতের নাম ঘোষণা করেছে। এনসিপির যুগ্ম সদস্যসচিব জয়নাল আবেদীন গণসংযোগ করছেন।

কুমিল্লা জেলায় এনসিপির কার্যক্রম প্রসঙ্গে জানতে চাইলে জয়নাল আবেদীন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা রাজনৈতিক দল গঠন করার আগে যখন অনলাইনে জনমত যাচাই করেছি, তখন ঢাকার পরে সবচেয়ে বেশি সাড়া কুমিল্লায় পেয়েছি। এরই মধ্যে কুমিল্লার বেশির ভাগ উপজেলায় এনসিপির কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে।’

কুমিল্লা–১১ (চৌদ্দগ্রাম)

চারদলীয় জোটের প্রার্থী হিসেবে ২০০১ সালের নির্বাচনে চৌদ্দগ্রামের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের। সর্বশেষ ২০১৮ সালেও বিএনপি জোটের প্রার্থী ছিলেন তিনি। সবার কাছে চৌদ্দগ্রাম জামায়াতের ‘ঘাঁটি’ হিসেবে পরিচিত হলেও এবার রাজনীতির মাঠের চিত্রটা ভিন্ন। কারণ, এবার চৌদ্দগ্রামে জামায়াতের প্রতিপক্ষ বিএনপি। এরপরও জামায়াতের নেতা–কর্মীরা আত্মবিশ্বাসী নিজেদের প্রার্থী বিপুল ভোটে বিজয়ী হবেন বলে।

জামায়াতের একক প্রার্থী আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের হলেও এ আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে বেশ কয়েকজনের নাম শোনা যাচ্ছে। তাঁরা হলেন কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ও উপজেলার আহ্বায়ক কামরুল হুদা, চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও কুমিল্লা দক্ষিণ জেলার আহ্বায়ক কমিটির সদস্য গোলাম কাদের চৌধুরী ওরফে নোবেল, কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি কাজী নাসিমুল হক।

গোলাম কাদের চৌধুরী বলেন, বিগত সময় জোটের কারণে চৌদ্দগ্রামে বিএনপিকে অনেক ছাড় দিতে হয়েছে। তবে এখানে বিএনপির ভোট বেশি। আর জামায়াতের প্রার্থী আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, ‘আশা করছি, বিএনপির অনেকে আমাকে ভোট দেবেন।’

কুমিল্লায় বিএনপির রাজনীতির বিষয়ে জানতে চাইলে দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক (কুমিল্লা বিভাগ) অধ্যক্ষ মো. সেলিম ভূঁইয়া প্রথম আলোকে বলেন, বিএনপি অনেক বড় রাজনৈতিক দল। এখানে নেতৃত্ব ও মনোনয়নের প্রতিযোগিতা থাকাটাই স্বাভাবিক। তবে প্রতিটি আসনেই দল এখন চাঙা। এরই মধ্যে অধিকাংশ উপজেলায় ওয়ার্ড পর্যায় পর্যন্ত সম্মেলন শেষ হয়েছে। বর্তমান অবস্থায় কুমিল্লার ১১টি আসনেই বিএনপি জয়লাভ করবে বলে তিনি আশা করেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ