ক্ষমতায় যাওয়া নিয়ে রাজনীতিবিদদের মঝে সৃষ্ট বিভেদ নিরসন না হলে সামনের দিনগুলো আগের চেয়েও খারাপ হতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন দৈনিক সংগ্রামের সাবেক সম্পাদক আবুল আসাদ।

তিনি বলেন, “চব্বিশের গণঅভ্যুত্থান প্রমাণ করে এ দেশের তরুণ প্রজন্ম দেশ ও জাতির সার্থে নিঃস্বার্থভাবে কাজ করতে পারে। যেটা রাজনীতিবিদদের মধ্যে দেখতে পাই না। তাদের কাছে বড় হলো ক্ষমতায় যাওয়া। অথচ স্বেচ্ছাচারিতা ও স্বৈরাচারিতা থেকে দেশকে রক্ষা করা তাদের দায়িত্ব ছিল। যেটা করতে তারা ব্যর্থ হয়েছেন। তরুণ প্রজন্ম তা করে দেখিয়ে দিয়েছেন।”

শনিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) আশুলিয়ায় মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ২০২৫ উদযাপন উপলক্ষে আলোচনা সভা ও দোয়া অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

তিনি বলেন, “একুশে ফেব্রুয়ারিকে আমাদের জাতীয় জীবনে এক গৌরবময় ও তাৎপর্যপূর্ণ দিন। যে জাতির অতীত ইতিহাস সামনে থাকে না, সে দেশ টিকতে পারে না। যে মূল্যবোধ থেকে ভাষা আন্দোলন হয়েছিল, তা এখন আর নেই। এখন পশ্চিমবঙ্গের লোকজনের ও আমাদের ভাষা, পোশাক ও চিন্তা-চেতনায় কোন স্বকীয়তা নেই। এ কারণেই পশ্চিমবঙ্গের লোকজন দুই দেশের মাঝে কোন সীমান্ত খুঁজে না পাওয়ার কথা বলে আমাদের কটাক্ষ করছে।”

“সেকুলারিজমের নামে আমাদের দেশের কিছু লোক গাছের ডালে বসে গোড়া কাটার মতো কাণ্ড ঘটাচ্ছে। তাদের কারণেই ভাষার সঠিক ইতিহাস এখনো তৈরি হয়নি। সামনেও এ অবস্থার পরিবর্তন হবে কিনা আমরা নিশ্চিত নই,” যুক্ত করেন আবুল আসাদ।

প্রকৌশল, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি  অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড.

মো. মিজানুর রহমানের সভাপতিত্বে ও ছাত্রবিষয়ক বিভাগের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক আব্দুল মতিনের সঞ্চালনায় এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আবদুর রব।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আবদুর রব বলেন, “আজো কোর্ট-কাচারি, অফিস-আদালত ও শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে ইংরেজি প্রাধান্য পাচ্ছে। এমনকি বিসিএস পরীক্ষায়ও যিনি বাংলায় দক্ষ, তাকে বাদ দিয়ে ইংরেজিতে ভালো জানা ব্যক্তির চাকরি হচ্ছে। এটা আমাদের জন্য লজ্জার বিষয়। মাতৃভাষার মর্যাদা সমুন্নত করতে বাংলা ভাষায় টেক্সট বই ও পত্র-পত্রিকা রচনায় বর্তমান বিপ্লোত্তর সরকারকে অনুদান দেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।

সভা শেষে বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের শহীদদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে দোয়া ও মোনাজাত করা হয়।

ঢাকা/মেহেদী

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর আম দ র

এছাড়াও পড়ুন:

সমান কাজ করেও কম মজুরি পান আদিবাসী নারীরা

দিন যায়, আসে নতুন দিন। প্রযুক্তি আর আধুনিকতার ছোঁয়ায় বদলে যায় অনেক কিছুই। শুধু বদল হয় না সমাজের পিছিয়ে পড়া কিছু জনগোষ্ঠীর ভাগ্য। বিশেষ করে, আদিবাসী নারী শ্রমিকরা বঞ্চিত হচ্ছেন যুগ যুগ ধরে।

সমালোচনার মুখে ও সময়ের প্রয়োজনে অনেক ক্ষেত্রেই লিঙ্গ বৈষম্য কমেছে। নারী-পুরুষের মজুরি বৈষম্য দিনে দিনে কমছে। কিন্তু, গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার সাঁওতাল পল্লীর নারী শ্রমিকরা ন্যায্য মজুরি থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন আগের মতোই।

দিনাজপুর-ঢাকা আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশে গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার কাটামোড় এলাকার সাঁওতাল পল্লী জয়পুর পাড়া। সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, গ্রামটি দেখতে বেশ সুন্দর। নিরিবিলি পরিবেশ, চারদিকে সবুজের সমারোহ। সবুজ ধানক্ষেত আর কিছু দূর পর পর সাঁওতালদের বাড়ি। কোথাও কোথাও উঁচু টিলার মাঝে বড় বড় পুকুর। পুকুর পাড়ে কিছু সাঁওতাল ঘর বেঁধে থাকছেন। পাশের বড় মাঠে খেলা করছে কিছু আদিবাসী শিশু। 

আরো পড়ুন:

গাজীপুরে পেশা বদলাচ্ছেন অনেক শ্রমিক 

ছোট্ট হাতে সংসারের হাল

পল্লীতে গিয়ে দেখা যায়, নারীদের পাশাপাশি পুরুষদের কেউ কেউ বাঁশের চটা তুলছেন, কেউ রান্নার জন্য গাছের ডাল কাটছেন। বাড়িতে পালন গরু-ছাগল দেখভাল করছেন পুরুষ ও নারী উভয়ই। নারীদের অধিকাংশই গরু-ছাগল চড়ানোসহ বিভিন্ন  কাজে বাড়ির বাইরে। যদিও ধান কাটা ও মাড়াই শুরু হয়নি তেমন। 

কয়েকজন সাঁওতাল নারীকে কাজের ফাঁকে বিশ্রাম নিতে দেখা যায়। তারদের সঙ্গে কথা হয় এ প্রতিবেদকের। তারা রাইজিংবিডি ডটকমকে বলেন, “আমরাও পুরুষের মতো জমিতে বীজ বপন, চারা উত্তোলন, রোপণ, সার দেওয়া, নিড়ানি ও ধান কেটে ঘরে তোলা পর্যন্ত সব কাজ করি। কিন্তু, এখনো সেই আগের মতোই মজুরি বৈষম্যের শিকার হচ্ছি আমরা।” 

গোবিন্দগঞ্জের সাপমারা ইউনিয়নের জয়পুর পাড়া গ্রামের কর্মজীবী সাঁওতাল নারী মমতা হেমব্রম। তিনি বলেন, “পুরুষরা কাজ করে মজুরি পান ৫০০ টাকা আর আমাদেরকে দেওয়া হয় ৪৫০ টাকা। ক্ষেত-খামারের কাজ অনেক কঠিন। পুরুষ-নারী তো সমান কাজ করি। আমরা সমান মজুরি চাই, কিন্তু চাইলেও তো তারা দেন না।” 

একই গ্রামের সাবিনা হাসদা। তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, “এই অঞ্চলে অধিকাংশ পুরুষ ও নারী ধান-আখ ও মাছ চাষ ও গরু-ছাগল লালনপালন করেন। কাজ একই হলেও আমাদের মজুরি পুরুষের চেয়ে কম। আমরা সমান মজুরি চাই।”

সুরুজ মনি টুডু নামের আরেক নারী বলেন, “আমরা পুরুষের সমান কাজ করি, তাই আমরা এই মে দিবস থেকেই সমান মজুরি চাই। আপনার মাধ্যমে সংশ্লিষ্টদের কাছে সমান মজুরি নিশ্চিত করার দাবি করছি।” 

সাপমারা গ্রামের দেলু মারমা বলেন, “আমাদের সব কাজই কৃষিনির্ভর। সে কারণে পুরুষের পাশাপাশি নারীদের কাজ করতে হয়। তা না হলে সংসার চলে না। আমরাও চাই, পুরুষ এবং নারী যেন সমান মজুরি পান।”

পুকুর পাড়েই বাস করেন অমেদা হাজদা। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, “সব জায়গায় পুরুষের দাম বেশি, নারীদের দাম কম। সে কারণে তাদের মজুরি বেশি, আমাদের কম। আমাদেরকেও পুরুষের সমান দাম দেবে, সমান মজুরি দেবে, এটাই আমাদের দাবি।”

সাহেবগঞ্জ-বাগদা ফার্ম ভূমি উদ্ধার সংগ্রাম কমিটির সভাপতি ফিলিমন বাস্কে রাইজিংবিডিকে বলেন, “এই এলাকার অধিকাংশ নারী তাদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন নন। কর্মপরিবেশ, কর্মঘণ্টা বিষয়ে তাদের ধারণাই নেই। অনেকে জানলেও কাজ হারানোর ভয়ে ন্যায্য মজুরির বিষয়ে মুখ খুলতে চান না। সংগঠনের পক্ষ থেকে আমরা সমঅধিকারের জন্য আন্দোলন করে যাচ্ছি।”

বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ গাইবান্ধার সাধারণ সম্পাদক রিকতু প্রসাদ বলেন, “গাইবান্ধার নারীরা আজও মজুরি বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। বিশেষ করে, গোবিন্দগঞ্জের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর নারীরা। নারী-পুরুষ সবাই শ্রমিক, বৈষম্য করতেই তাদের আলাদা চোখে দেখা হয়। মে দিবসে মুখে যতই বলি না কেন, পুরুষশাসিত সমাজে এখনো পরিবর্তন আসেনি। সমাজ থেকে মজুরি বৈষম্য দূর করার জোর দাবি জানাই।”

বাংলাদেশ নারী মুক্তি কেন্দ্রের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নিলুফার ইয়াসমিন শিল্পী রাইজিংবিডিকে বলেন, সব ক্ষেত্রেই নারীরা অবহেলিত এবং বঞ্চিত। মুখে সবাই নারীর অধিকার নিয়ে কথা বলেন, কিন্তু বাস্তবে দেখা যায় উল্টো। সাঁওতাল তথা আদিবাসী নারীদের সমান মজুরি পাওয়া সাংবিধানিক অধিকার। তারা এ দেশেরই নাগরিক। তাদের সমান মজুরি নিশ্চিত করতে করা প্রয়োজন।

ঢাকা/মাসুম/রফিক

সম্পর্কিত নিবন্ধ