এবারের বাজেট নিয়ে জনমনে অনেক প্রশ্ন। একদিকে বাজেটের আকার কমানো হয়েছে, অন্যদিকে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা বাড়ানো হয়েছে, যা স্ববিরোধী মনে হচ্ছে। তার ওপর সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসারে সহায়ক নয়। এমন পরিস্থিতিতে রাজস্ব আয় বৃদ্ধি কীভাবে সম্ভব, তা বোধগম্য হচ্ছে না। সরকার যখন এক লাখ কোটি টাকার বেশি ব্যাংকঋণ নেওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করে, তখন স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন আসে, বেসরকারি খাত অর্থায়ন পাবে কোথা থেকে। কারণ, গত কয়েক বছরে ব্যাংক খাতে আমানতের প্রবৃদ্ধি ১০ শতাংশ থেকে অনেক কমে গেছে। এ পরিস্থিতিতে সরকার ব্যাংক থেকে বেশি ঋণ নিলে বেসরকারি বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হবে। তাতে শেষ পর্যন্ত সরকারের রাজস্ব আদায় ক্ষতিগ্রস্ত হবে, অর্থাৎ সরকারের বর্তমান রাজস্বনীতি বাস্তবায়ন করা কঠিন হবে।

সাধারণ মানুষ আশা করে বাজেট মূল্যস্ফীতি কমাবে, কিন্তু বর্তমান প্রেক্ষাপটে সেই সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। বিনিয়োগ সহায়ক পরিবেশ বা অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে প্রগতিশীলতা আনার সুযোগও সীমিত। ফলে একদিকে যেমন রাজস্ব আদায় ব্যাহত হবে, তেমনি মূল্যস্ফীতি কমার সম্ভাবনাও কম। গত আট মাসে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টির কোনো উল্লেখযোগ্য উদ্যোগ চোখে পড়েনি। সরকারি প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৪ সাল শেষে দেশে মোট বেকার জনগোষ্ঠীর সংখ্যা বেড়ে ২৬ লাখ ২০ হাজারে উন্নীত হয়েছে। এক বছরে বেকারের সংখ্যা বেড়েছে ১ লাখ ৬০ হাজারের বেশি। এ ধারা চলতে থাকলে দেশে বেকারত্বের হার আরও বাড়বে। যদি অর্থায়নপ্রক্রিয়া সহজ না হয়, তাহলে অনেক কারখানা বন্ধ হয়ে যাবে, যা সামাজিক বিশৃঙ্খলা ও রাজনৈতিক অস্থিরতা তৈরি করবে। ইতিমধ্যে অনেক কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে।

আমরা দেখছি, কৃষি খাতে প্রবৃদ্ধি ৩ দশমিক ৯৭ শতাংশ থেকে কমে ১ শতাংশে নেমে এসেছে। এ খাত বহু মানুষের কর্মসংস্থানের উৎস। এভাবে যদি সব খাত সংকুচিত হতে থাকে, তাহলে চাকরির বাজার ধ্বংস হয়ে যাবে। নতুন করে আরও অনেক মানুষ বেকার হবে।

ব্যাংক খাতের যে ক্ষতি হয়েছে, সেটি কাটিয়ে উঠতে সময় লাগবে। ব্যাংক খাত মেরামতের জন্য নানা উদ্যোগ নেওয়া হলেও, সেগুলোর বাস্তবায়ন নিয়ে জনমনে প্রশ্ন রয়েছে। যতক্ষণ পর্যন্ত দেশের রাজনীতি ঠিক হচ্ছে এবং জনগণের কাছে জবাবদিহিমূলক সরকার প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে, ততক্ষণ অর্থনীতির উন্নতি সম্ভব নয়। রাজনীতি ও অর্থনীতিকে অনেকে আলাদা করে দেখেন; কিন্তু আমার চোখে রাজনীতিই অর্থনীতিকে নিয়ন্ত্রণ করে।

আওয়ামী লীগ সরকার রাজনৈতিক সুবিধাভোগী ব্যক্তিদের মাধ্যমে পরিচালিত ছিল। তারা ব্যবসা না করে দালালিতে লিপ্ত ছিল এবং এমন একটি স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী তৈরি করেছিল, যারা প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে নিজেদের কবজায় নিয়ে ধ্বংস করে দিয়েছে। জনগণের কাছে দায়বদ্ধ সরকার থাকলে এ সর্বনাশ হতো না। তাই আমি মনে করি, গণতান্ত্রিক রাজনীতি ফিরে না আসা পর্যন্ত অর্থনীতি ঠিক হবে না। এ মুহূর্তে অর্থনীতির স্বার্থে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করে একটি নির্বাচিত সরকার গঠন করা জরুরি। অবাধ নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত সরকার জনগণের কাছে দায়বদ্ধ থাকবে। এ দায়বদ্ধতা আসে নির্বাচনের আগে জনগণের কাছে দেওয়া প্রতিশ্রুতি পূরণের মাধ্যমে।

আবদুল আউয়াল মিন্টু: সাবেক সভাপতি, এফবিসিসিআই 

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: জনগণ র ক ছ র জন ত সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

জুলাই সনদ জনগণের নয়, কিছু উপদেষ্টার প্রয়োজন: হাফিজ

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেছেন, ‘‘জুলাই সনদ নিয়ে অনেক কথাবার্তা হচ্ছে। আমি মনে করি—জুলাই সনদ দেশের জনগণের প্রয়োজন নেই। কিছু ব্যক্তি যারা উপদেষ্টা হয়েছেন, যারা ভবিষ্যতে বাংলাদেশে বসবাস করতে গেলে বিভিন্ন প্রশ্নের মুখে পড়বেন; তাদের জন্য হয়তো প্রয়োজন আছে।’’

শনিবার (১ নভেম্বর) ঢাকায় জাতীয় প্রেস ক্লাবে জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের আয়োজনে ‘স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও গণতন্ত্র রক্ষায় আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন অপরিহার্য’ শীর্ষক মুক্তিযোদ্ধা সমাবেশে তিনি এই কথা বলেন।

আরো পড়ুন:

রাজশাহী মহানগর বিএনপির সভাপতি মামুন, সম্পাদক রিটন

একাত্তরের গণহত্যার জন্য জামায়াত নিষিদ্ধ চান আলাল

হাফিজ উদ্দিন আহমদ বলেন, ‘‘এই ধরনের সনদের আমাদের প্রয়োজন নেই। আমাদের প্রয়োজন–একটা পার্লামেন্ট। যেখানে আগামী দিনের ভাগ্য নির্ধারণ করবে। যেই পার্লামেন্ট এই সনদকে বাস্তবায়িত করবে এবং আগামী গণতন্ত্রকে পরিপূর্ণভাবে বিকশিত করতে সক্ষম হবে।’’

তিনি বলেন, ‘‘বাংলাদেশে প্রয়োজন একটি নির্বাচন। যেখানে জনগণ প্রতিনিধিদের নির্বাচিত করতে পারবে। আমরা আশা করব, আগামীতে একটি জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পাদিত হবে। এই নির্বাচনে যারা বিজয়ী হবেন, জনগণের প্রতিনিধি হবেন; তারাই জুলাই সনদকে সমর্থন করবেন।’’

‘‘আমার দল বিএনপি জুলাই সনদকে সমর্থন করে, আমরাও এটি সমর্থন করতে বাধ্য। কিন্তু, এটার মধ্যে এমন জিনিস ঢোকাবেন না, যেটি নিয়ে আগে ঐকমত্য কমিশনের মিটিংয়ে আলোচনা হয়নি।’’- যোগ করেন তিনি।

বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘‘পিআর নিয়ে কথা হচ্ছে। দেশের জনগণকে জিজ্ঞেস করেন, কেউ পিআর চিনেও না। পিআর কেউ চায়ও না। আমরা শত বছর ধরে একজন ব্যক্তিকে নির্বাচিত করে আসছি। তারা (পিআর দাবি করা দলগুলো) ব্যক্তির কাছ থেকে, ভোটারের কাছ থেকে ক্ষমতা তুলে নিয়ে একটা রাজনৈতিক দলের কাছে সমর্পণ করতে চায়। আমরা চাই, বর্তমান যে ব্যবস্থায় নির্বাচন হচ্ছে, সেই ব্যবস্থার মাধ্যমে যাতে নির্বাচন হয়।’’

হাফিজ উদ্দিন আরো বলেন, ‘‘আমাদের একটা প্রতিবেশী রাষ্ট্র আছে, যারা চায় না বাংলাদেশ স্বনির্ভর হোক। নিজের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব অক্ষত থাকুক, এটা তারা চায় না। তারা আশ্রয় দিয়েছে মাফিয়া শেখ হাসিনাকে। শেখ হাসিনা সেখানে বসে কীভাবে বাংলাদেশে নাশকতা করা যায়, সে বিষয়ে নানা ধরনের ষড়যন্ত্র করছেন। কলকাতায় তারা অফিস খুলেছেন। আমি তাদেরকে একটা পরামর্শ দেব। শুধু কলকাতা নয়, ভারতের প্রত্যেকটা প্রদেশে আপনারা একটা করে অফিস খুলেন। ভারতের কাছ থেকে সনদ নেন। তারপরে ভারতের রাজনীতিতে আপনারা মিশে যান। বাংলাদেশে আপনাদের কোনো প্রয়োজন নেই।’’

ঢাকা/রায়হান/রাজীব

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • জুলাই সনদ জনগণের নয়, কিছু উপদেষ্টার প্রয়োজন: হাফিজ
  • জ্বালানি সুবিচার নিশ্চিতে সংগ্রাম, শপথ যুব সংসদের সদস্যদের
  • বন্দরে বিএনপি নেতা তাওলাদের উপর হামলাকারীদের গ্রেপ্তারে আল্টিমেটাম
  • বিএনপি ও জামায়াত কে কোন ফ্যাক্টরে এগিয়ে
  • অজ্ঞাতনামা লাশ আর কারা হেফাজতে মৃত্যু বেড়েছে, শৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকায় জনমনে সন্দেহ: এমএসএফ
  • অন্তর্বর্তী সরকার জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করেছে: ফখরুল
  • সরকার নিরপেক্ষতা হারালে জনগণ মাঠে নামবে: তাহের
  • সংস্কার ইস্যুতে সব দল ঐক্যবদ্ধ থাকলেও বিএনপি অবস্থান পরিবর্তন করে
  • বিএনপি-জামায়াত দেশকে অন্য এক সংকটের দিকে নিয়ে যাচ্ছে: নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী
  • জনগণের সঙ্গে এটা প্রতারণা: মির্জা ফখরুল