১১ হাজার কোটি টাকা সাশ্রয়ের পরিকল্পনা
Published: 4th, June 2025 GMT
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মূলত কৌশলগত পণ্য। এসব পণ্যের দাম বাড়লে জিনিসপত্রের দামও বাড়ে। তাই বিদ্যমান উচ্চ মূল্যস্ফীতি বিবেচনায় বিদ্যুতের দাম আপাতত না বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। বরং শুল্ক-কর কমিয়ে খরচ কমানোর পথে হাঁটছে সরকার। ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে কয়েকটি খাতে শুল্ক-কর কমানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। এতে কয়েক হাজার কোটি টাকা সাশ্রয় হতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে।
গত সোমবার আগামী অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাব করেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ। তাতে তিনি বলেন, বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকি কমাতে বিদ্যুৎ উৎপাদন খরচ ১০ শতাংশ কমানোর পরিকল্পনা করা হয়েছে। এই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে ১১ হাজার কোটি টাকা সাশ্রয় হবে।
চড়া দামে আমদানি করে কম দামে বিক্রি করায় গ্যাস খাতে লোকসান করছে বাংলাদেশ তেল, গ্যাস, খনিজ সম্পদ করপোরেশন (পেট্রোবাংলা)। অথচ একই গ্যাসে পেট্রোবাংলার কাছ থেকে দুবার শুল্ক-কর নিচ্ছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। প্রস্তাবিত বাজেটে আমদানি পর্যায়ে ১৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) প্রত্যাহারের প্রস্তাব করা হয়েছে। এতে পেট্রোবাংলার সাশ্রয় হতে পারে ৬ হাজার থেকে ৮ হাজার কোটি টাকা। এতে পেট্রোবাংলার ভর্তুকি চাহিদা কমে যাবে।
আমদানি পর্যায়ে ভ্যাট প্রত্যাহারের পাশাপাশি গ্যাস বিতরণ সংস্থার উৎসে কর ২ শতাংশ কমিয়ে শূন্য দশমিক ৬ শতাংশ করা হয়েছে। এতে উৎসে কর কমেছে ৬৬ শতাংশ। ফলে তিতাস ও বাখরাবাদের মতো গ্যাস বিতরণ কোম্পানির খরচ কমে যাবে। পরিকল্পনা অনুসারে কারিগরি ক্ষতি কমাতে পারলে শিগগিরই মুনাফায় ফিরতে পারে তারা।
পেট্রোবাংলার পরিচালক (অর্থ) এ কে এম মিজানুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, এলএনজি আমদানি খরচ কমে গেলে আরও বেশি হারে কার্গো আমদানি করা যাবে। এতে গ্যাসের সরবরাহ বাড়বে এবং শিল্পের গ্যাস-সংকট কেটে যাবে।
সরকারকে সবচেয়ে বেশি ভর্তুকি দিতে হয় বিদ্যুৎ উৎপাদন খাতে। এ জন্য বিদ্যুৎ উৎপাদন খরচ কমাতে সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। এবারের প্রস্তাবিত বাজেটে বিদ্যুৎ কেনার বিল পরিশোধের সময় উৎসে কর ৬ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৪ শতাংশ করা হয়েছে। এতে পিডিবির বিদ্যুৎ উৎপাদন খরচ কমবে। বছরে পিডিবির সাশ্রয় হতে পারে ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা। যদিও এটি পুরোপুরি প্রত্যাহারের কথা বলেছিল পিডিবি। উৎসে কর পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেলে বছরে ৩ হাজার কোটি টাকার বেশি সাশ্রয় হতো বলে জানিয়েছে পিডিবি।
বর্তমানে যে দামেই আমদানি করুক, নির্ধারিত মূল্যের (ট্যারিফ ভ্যালু) ওপর শুল্ক দেয় বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি)। জ্বালানি তেলের কেনা দামের ওপর (ইনভয়েস ভ্যালু) আমদানি শুল্ক আদায়ের প্রস্তাব করা হয়েছে প্রস্তাবিত বাজেটে। এতে বিপিসির খরচ বেড়ে যাওয়ার কথা। তবে জ্বালানি তেল আমদানি শুল্কহার কমানো হয়েছে। অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের আমদানি শুল্ক ৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১ শতাংশ ও পরিশোধিত বিভিন্ন জ্বালানি তেলের শুল্ক ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৩ শতাংশ প্রস্তাব করা হয়েছে। এতে সব মিলে শুল্ক আদায় একই রকম থাকতে পারে। তাতে বিপিসির খরচে তেমন প্রভাব পড়বে না।
তবে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, বিপিসির জ্বালানি তেল আমদানি খরচ একই রকম থাকলেও বেসরকারি খাতে আমদানি খরচ কমবে। বেসরকারি খাত আগে থেকেই কেনা দামে শুল্ক দেয়। তাই শুল্কহার কমায় তাদের আমদানি খরচ কমবে। এ ছাড়া এলপিজির সিলিন্ডার স্থানীয় উৎপাদন পর্যায়ে বিদ্যমান ভ্যাট অব্যাহতি সুবিধা কিছুটা কমিয়ে অব্যাহতির মেয়াদ ৩০ জুন ২০২৭ পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়েছে।
জ্বালানির বরাদ্দ দ্বিগুণ, কমেছে বিদ্যুতে
কয়েক বছর ধরে দেশের জ্বালানি সরবরাহ নিয়ে সংকট চলছে। কিন্তু সব সময় বাজেট বরাদ্দে উপেক্ষিত থেকেছে জ্বালানি খাত। অনুসন্ধান ও উৎপাদনে জোর না দিয়ে আমদানির দিকে ঝুঁকেছে গত সরকার। এবার দেশীয় গ্যাস উৎপাদন বাড়ানোয় জোর দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। তাই প্রস্তাবিত বাজেটে জ্বালানি খাতের বরাদ্দ বাড়িয়ে দ্বিগুণ করা হয়েছে। কমানো হয়েছে বিদ্যুৎ খাতের বরাদ্দ।
প্রস্তাবিত বাজেটে বলা হয়, চলতি অর্থবছরে ১ হাজার ৮৭ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হলেও সংশোধিত বাজেটে এটি কমে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৫৩ কোটি টাকায়। আর জ্বালানি খাতে এবার ২ হাজার ১৭৮ কোটি টাকার বরাদ্দ প্রস্তাব করা হয়েছে। এর মধ্যে উন্নয়ন বরাদ্দ ২ হাজার ৮৬ কোটি টাকা। তবে বিদ্যুৎ খাতে আগের চেয়ে বরাদ্দ কমানো হলেও জ্বালানির তুলনায় বিদ্যুৎ খাতে বরাদ্দ অনেক বেশি। চলতি বাজেটে বিদ্যুৎ খাতে বরাদ্দ ছিল ২৯ হাজার ২৩০ কোটি টাকা। সংশোধিত বাজেটে এটি কমে হয়েছে ২১ হাজার ৬৫১ কোটি টাকা। প্রস্তাবিত বাজেটে এ খাতে ২০ হাজার ৩৪২ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। তার মানে সংশোধিত বাজেটের চেয়ে বরাদ্দ কমানো হয়েছে বিদ্যুৎ খাতে।
ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানি উপদেষ্টা এম শামসুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, সরকার দীর্ঘদিন ধরে বাড়তি শুল্ক-কর নিয়ে তার দায় ভোক্তার ওপর চাপিয়ে দিত। বিদ্যুতের দাম না বাড়ানো ও এলএনজির শুল্ক প্রত্যাহার ইতিবাচক। জ্বালানি তেল থেকেও রাজস্ব আদায় যাতে না বাড়ে, সেটি নিশ্চিত করতে হবে। জ্বালানি খাতে বরাদ্দ বাড়ানো হলেও তা প্রকল্প বাস্তবায়নে অপ্রতুল। জ্বালানি সুবিচার নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে বাজেটে দিকনির্দেশনা নেই।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প রস ত ব ত ব জ ট র প রস ত ব শ ল ক কর র বর দ দ খরচ কম সরক র আমদ ন
এছাড়াও পড়ুন:
পণ্য রপ্তানি বেড়েছে সাড়ে ১১ শতাংশ
গ্যাস-বিদ্যুতের সংকট ও ট্রাম্পের পাল্টা শুল্ক আরোপসহ বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের মধ্যেও দেশের পণ্য রপ্তানি ইতিবাচক ধারায় আছে। গত মাসে ৪৭৪ কোটি মার্কিন ডলারের পণ্য রপ্তানিতে সেই প্রমাণই মেলে। এই রপ্তানি গত বছরের একই মাসের তুলনায় ১১ দশমিক ৪৫ শতাংশ বেশি।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) আজ মঙ্গলবার পণ্য রপ্তানি আয়ের এই হালনাগাদ পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছে। এতে দেখা যায়, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জুলাই-মে পর্যন্ত ১১ মাসে মোট ৪ হাজার ৪৯৫ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে, যা এর আগের ২০২৩-২৪ অর্থবছরের একই সময়ের সময়ের তুলনায় ১০ শতাংশ বেশি।
ইপিবির তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, সদ্য সমাপ্ত মে মাসে তৈরি পোশাক, চামড়া ও চামড়াপণ্য, হোম টেক্সটাইল, পাট ও পাটজাত পণ্য, চামড়াবিহীন জুতা, হিমায়িত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য ও প্রকৌশল পণ্যের রপ্তানি বেড়েছে। অন্যদিকে কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্যের রপ্তানি কমেছে।
ইপিবির তথ্যানুযায়ী, গত মে মাসে ৩৯২ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে। এই রপ্তানি গত বছরের মে মাসের তুলনায় ১১ দশমিক ৮৫ শতাংশ বেশি। চলতি অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে ৩ হাজার ৬৫৬ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ১০ দশমিক ২০ শতাংশ বেশি।