ছাত্রদলের মধ্যে ছাত্রলীগের প্রতিচ্ছবি দেখা যাচ্ছে: শিবির
Published: 23rd, February 2025 GMT
ছাত্রশিবির বলেছে, শিক্ষাঙ্গনে সন্ত্রাসে ছাত্রদলের মধ্যে ছাত্রলীগের প্রতিচ্ছবি দেখা যাচ্ছে। সারাদেশে চাঁদাবাজি দখলদারির হাতবদল হয়েছে, চলমান আইনশৃঙ্খলা অবনতির সামাল দিতে না পারলে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে পদত্যাগের আহ্বান জানান তারা। রোববার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তারা। এ দিকে ছাত্রশিবিরের মধুর ক্যান্টিনে সংবাদ সম্মেলন করায় প্রতিবাদ জানিয়েছে ছাত্রদল।
সংবাদ সম্মেলনে ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি জাহিদুল ইসলাম, সেক্রেটারি নূরুল ইসলাম সাদ্দাম, ঢাবি শিবিরের সাবেক সভাপতি সাদিক কায়েমসহ অন্যান্য নেতারা অংশ নেন। সংবাদ সম্মেলনে বিভিন্ন ক্যাম্পাসে সংঘর্ষের ঘটনায় ব্যাখ্যাও দিয়েছেন তারা।
ছাত্রদলকে ইঙ্গিত করে জাহিদুল ইসলাম বলেন, ছাত্ররাজনীতি নিয়ে যে জন–আকাঙ্ক্ষা তৈরি হয়েছিল, তা কিছু ছাত্রসংগঠনের আধিপত্যনীতি, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড, চাঁদাবাজি, ট্যাগিংয়ের ফলে নষ্ট হচ্ছে। নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ বিতাড়িত হলেও দুর্ভাগ্যজনকভাবে ছাত্রদলকে তাদের পথ অনুসরণ করতে দেখা যাচ্ছে। ক্যাম্পাসগুলোতে ছাত্রদল অন্যান্য ছাত্রসংগঠনকে অন্যায়ভাবে দমনের চেষ্টা করছে।
তিনি বলেন, নিজেরা সন্ত্রাসী কায়দায় শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করে তার দায় উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ছাত্রশিবিরের ওপর চাপিয়ে দিচ্ছে। যার প্রবক্তা ছিল নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগ।
জাহিদুল বলেন, তারা ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে ‘শিবির কোপানো জায়েজ আগেও ছিল এবং ভবিষ্যতেও থাকবে’ এমন বীভৎস ঘোষণা দিচ্ছে। খুলনার শিববাড়ীতে তাদের মিছিলে ‘একটা একটা শিবির ধর, ধইরা ধইরা জবাই কর’ স্লোগান দেওয়া হয়েছে। এমন ভয়ংকর স্লোগান আমরা ছাত্রলীগের মুখে শুনতাম। ছাত্রদলের মধ্যে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের প্রতিচ্ছবি আমরা দেখতে পাচ্ছি।
শিবির সভাপতি বলেন, দেশব্যাপী চাঁদাবাজি, দখলদারি দেখে বোঝার উপায় নেই যে, দেশে কোনো পরিবর্তন হয়েছে। অপরাধীদের হাত বদল হয়েছে ঠিকই, কিন্তু অপরাধ আগের মতোই চলছে। ২২ ফেব্রুয়ারি যশোরে চাঁদা না দেওয়ায় সম্রাট নামের এক মাছা ব্যবসায়ীর চোখ উপড়ে ফেলে ছাত্রদলের সন্ত্রাসীরা। গাজীপুরে মাইকে ঘোষণা দিয়ে প্রকাশ্য দিবালোকে চাঁদা আদায় করার ঘটনা আপনারা দেখেছেন।
বিভিন্ন স্থানে ধর্ষণ ও আইনশৃঙ্খলা অবনতির বিষয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে সক্রিয় হওয়ার আহ্বান জানিয়ে শিবির সভাপতি আরও বলেন, আইনশৃঙ্খলা ফেরাতে না পারলে ব্যর্থতার দায় স্বীকার করে জাতির কাছে ক্ষমা চান অথবা পদত্যাগ করুন।
তিনি আরও বলেন, জুলাই গণহত্যায় জড়িত ৭২৩ জনকে জামিন দেওয়া হয়েছে, অথচ বিগত ১৫ বছরের করা মামলার আসামিদেরকে মুক্তি দেওয়া হচ্ছে না। আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রশিবিরের প্রতিষ্ঠাকালীন সভাপতি এটিএম আজহারুল ইসলামসহ সব মজলুমদের দ্রুত মুক্তির দাবি করছি।
সাম্প্রতিক সময়ে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট), সিলেটে এমসি কলেজ এবং তামীরুল মিল্লাত কামিল মাদরাসায় হামলার ঘটনায় নিজেদের অবস্থান ব্যাখ্যা করেন শিবির সভাপতি।
তিনি বলেন, কুয়েটে সাধারণ ছাত্রদের ওপর ছাত্রদল-যুবদলের বহিরাগত সন্ত্রাসীদের প্রকাশ্য দিবালোকে সশস্ত্র হামলা পরিচালনা করে। এতে অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী মারাত্মক আহত হয়। কিন্তু ছাত্রদল সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের দায় ছাত্রশিবিরের ওপর চাপিয়ে দেয়।
এমসি কলেজের ঘটনা নিয়ে শিবির সভাপতি বলেন, এমসি কলেজে আনযুমানে তালমীযে ইসলামিয়ার কর্মী মিজানুর রহমান রিয়াদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের হাতাহাতির ঘটে। এতে জাহিদুল ইসলাম হৃদয় ও রিয়াদ নামে দুইজন আহত হয়। এটির দায় ছাত্রদল শিবিরের ওপর চাপায়। পরে কলেজ অধ্যক্ষের বক্তব্যে ছাত্রশিবির যে ঘটনার সঙ্গে জড়িত নয় তা প্রমাণিত হয়।
শিবির সভাপতি আরও বলেন, তামীরুল মিল্লাত মাদ্রাসায় ছাত্রশিবিরের ওয়ার্ড সভাপতি ফজলে রাব্বি সিফাতকে হত্যার উদ্দেশ্যে ছাত্রদলের সন্ত্রাসীরা কুপিয়ে জখম করে। আসামিকে ছিনিয়ে নিয়ে ছাত্রশিবিরের বিরুদ্ধে বক্তব্য নিতে ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা থানার সামনে ‘মব’ তৈরি করার চেষ্টা করে। আমরা এ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির নিশ্চিত করতে প্রশাসনের কাছে দাবি পেশ করছি। ছাত্রদলকেও সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান তিনি।
মধুর ক্যান্টিনে শিবিরের উপস্থিতি মুক্তিযুদ্ধকে কলঙ্কিত করে: ছাত্রদল
এদিকে মধুর ক্যান্টিনে ছাত্রশিবিরের সংবাদ সম্মেলন করায় নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে ছাত্রদল। ছাত্রদলের দপ্তর সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলমের পাঠানো বার্তায় বলা হয়, মধুর ক্যান্টিনের প্রতিষ্ঠাতা স্বত্বাধিকারী মধুসুদন দে ১৯৭১ সালের ২৫ শে মার্চ পাক হানাদার বাহিনীর হাতে শহীদ হন। স্বাধীনতাবিরোধী সংগঠন জামায়াতে ইসলামীর ছাত্রসংগঠন ছাত্রশিবিরের মধুর ক্যান্টিনে সংবাদ সম্মেলন শহীদ মধুদার প্রতি এবং তার পরিবারের প্রতি অসম্মানজনক। ছাত্রদল সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব এবং সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছির বিবৃতিতে বলেন, অনুতাপ এবং বিবেকবোধ থেকেই ছাত্রশিবির এর মধুর ক্যান্টিনে আসা উচিত নয়।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ছ ত রদল ব এনপ ছ ত রদল র ল ইসল ম স গঠন র ঘটন র ওপর
এছাড়াও পড়ুন:
নির্বাচনের দিন অমোচনীয় কালি সরবরাহ না হলে ভোট গ্রহণ বন্ধ থাকবে: ছাত্রদল
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জকসু) নির্বাচনে অমোচনীয় কালি সরবরাহ না করলে ভোট গ্রহণ বন্ধ থাকবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের নেতারা। এ ছাড়া এমফিল কোর্সে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের ভোটার ও প্রার্থী হওয়ার যোগ্যতা না দিয়ে ইচ্ছাকৃতভাবে ছাত্রদলকে ভোট প্রক্রিয়া থেকে বাদ দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেছেন তাঁরা।
রোববার উপাচার্যের সভাকক্ষে রাজনৈতিক ও সক্রিয় সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত জকসু ও হল সংসদ নির্বাচন ২০২৫–এর আচরণবিধিবিষয়ক এক মতবিনিময় সভায় ছাত্রদলের নেতারা এমন মন্তব্য করেন।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সদস্যসচিব শামসুল আরেফিন বলেন, ‘নির্বাচনে যদি কোনো ধরনের অনিয়মের ঘটনা ঘটে, তাহলে আমরা একচুল ছাড় দেব না। আমি প্রতিজ্ঞা করছি, যদি কোনো ধরনের অনিয়ম হয়— কোনো ছাড় হবে না। নির্বাচনের সময় অমোচনীয় কালি ব্যবহার করতে হবে। যদি নির্বাচন কমিশন অমোচনীয় কালি ব্যবহার করতে ব্যর্থ হয়, তাহলে ভোট গ্রহণ বন্ধ থাকবে।’
ভোটের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে ‘ম্যানুয়ালি’ ভোট গণনার দাবি জানিয়ে শামসুল আরেফিন বলেন, ‘কত ব্যালট ছাপানো হলো, কত ভোট গণনা হলো, কত ব্যালট নষ্ট হলো—এসব তথ্য স্বচ্ছতার সঙ্গে প্রকাশ করতে হবে। কারণ, আমরা ডাকসুতে ব্যালট কেলেঙ্কারির অভিযোগ সম্পর্কে জানি।’
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক মেহেদী হাসান অভিযোগ করেন, কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ বিধিমালায় এমফিল শিক্ষার্থীদের ভোটার ও প্রার্থী হওয়ার যোগ্যতা না দিয়ে ছাত্রদলকে ‘মাইনাস’ করার একটি মাস্টারপ্ল্যান করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘জকসু গঠন ও পরিচালনা বিধিমালায় বলা হয়েছে, তফসিল ঘোষণার পর নিয়মিত শিক্ষার্থী ভোটার কিংবা প্রার্থী ছাড়া কেউ বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ করতে পারবে না। অন্যদিকে এমফিল শিক্ষার্থীদের ভোটার ও প্রার্থীর যোগ্যতা না দিয়ে আমাদের মাইনাস করা ছিল মাস্টারপ্ল্যান—আর সেই মাস্টারপ্ল্যান সফল হয়েছে।’
প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক মোস্তফা হাসানের সভাপতিত্বে এ মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে উপস্থিত ছিলেন উপাচার্য রেজাউল করিম, প্রক্টর, সিন্ডিকেটের সদস্য, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ ও হল শিক্ষার্থী সংসদ নির্বাচন ২০২৫-এর নির্বাচন কমিশনার এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে সক্রিয় বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা।