Samakal:
2025-11-03@11:02:04 GMT

ফলন ও দামে খুশি সরিষা চাষি

Published: 24th, February 2025 GMT

ফলন ও দামে খুশি সরিষা চাষি

কেউ জমি থেকে সরিষা গাছ টেনে তুলছেন। কেউ মাটিতে জাল বিছিয়ে সরিষা গাছ স্তূপ করছেন। কেউ মেশিনের সাহায্যে মাড়াই করছেন। মাড়াই শেষে সরিষা বস্তা ভরে বাড়ি নিয়ে যাচ্ছেন। এ দৃশ্য কুষ্টিয়ার কুমারখালীর জগন্নাথপুর ইউনিয়নের চর জগন্নাথপুর গ্রামের। সরিষার ভালো ফলন ও দামে খুশি গ্রামের কৃষক। 
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ও কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চর জগন্নাথপুর গ্রামে চলতি মৌসুমে ১ হাজার ১১৯ বিঘা জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় প্রতি বিঘা জমিতে সরিষার উৎপাদন হয়েছে সাড়ে ছয় থেকে আট মণ। এতে ওই গ্রামে ৮-৯ হাজার মণ সরিষা ফলেছে। প্রতি মণ সরিষা বিক্রি হচ্ছে তিন হাজার টাকা। এতে চরে এবার প্রায় আড়াই কোটি টাকার সরিষার উৎপাদন হবে। ভালো ফলন ও দামে চাষিরা বেজায় খুশি।
চরের কৃষক পিয়ার উদ্দিন মণ্ডল বলেন, জমি বাদে বীজ, সার, ওষুধ ও পরিচর্যা বাবদ বিঘাপ্রতি তিন-চার হাজার টাকা খরচ হয়েছে। আর টাকা ঘরে এসেছে ১৮ থেকে ২৪ হাজার টাকা। সরিষা চাষে স্বল্প সময়ে অল্প খরচে অধিক লাভ বলে জানান তিনি।
স্থানীয় বাসিন্দা ষাটোর্ধ্ব কৃষক জুনাব আলী খাঁ বলেন, আট-দশ বছর আগে এই চরের বেশির ভাগ এলাকা জলমগ্ন থাকত। বছরে শুধু এক ফসল আউশ ধান হতো। এখন সরিষা, ভুট্টা, পেঁয়াজসহ অনেক কিছু হয়। তিনি এবার পাঁচ বিঘা জমিতে বারি-১৪ জাতের সরিষা আবাদ করেছেন। গাছ ও ফল খুব ভালো হয়েছে। এ বছর ভাল অর্থ পাবেন বলে তিনি আশাবাদী। 
তাঁর ভাষ্য, বর্ষা মৌসুমে পদ্মা নদীতে পানি বাড়লে চর জগন্নাথপুরের চারপাশ পানিতে টইটম্বুর। মানুষ তখন নৌকায় চলাচল করে। পানি শুকিয়ে গেলে কৃষকরা প্রথমে সরিষা, ভুট্টা, পেঁয়াজ, রসুন এবং পরে ধানের আবাদ করেন। 
মো.

হেলাল নামে অপর কৃষক জানালেন, গত বছর কয়েক দফা বৃষ্টি ও ঝড়ে সরিষা গাছের ফুল পড়ে গিয়ে ফলন কম হয়েছিল। এ বছর আবহাওয়া ভালো থাকায় বিঘাপ্রতি সাত-আট মণ ফলন হয়েছে, যা গতবারের চেয়ে দুই মণ বেশি। সরিষার ফলনে কৃষকরা খুশি। 
জগন্নাথপুর ইউনিয়নের মহেন্দ্রপুর গ্রামের কৃষক নওয়াব আলী চলতি মৌসুমে প্রায় ছয় বিঘা জমি থেকে অন্তত ৪৩ মণ সরিষা পেয়েছেন। প্রতি বিঘায় উৎপাদন খরচ পড়েছে গড়ে চার থেকে সাড়ে চার হাজার টাকা। গত শনিবার কুমারখালী হাটে তিন হাজার টাকা মণ দরে ১০ মণ সরিষা বিক্রি করেছেন। এবার সরিষা আবাদ করে তিনি প্রায় ১ লাখ টাকা মুনাফা করতে পারবেন বলে আশা করছেন। 
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে উপজেলায় প্রায় দুই হাজার ৭৫৪ হেক্টর জমিতে সরিষার চাষ হয়েছে, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে দুই হেক্টর বেশি। তার মধ্যে ১৫০ হেক্টর জমিতে (১ হাজার ১১৯ বিঘা) সরিষার আবাদ হয়েছে উপজেলার চর জগন্নাথপুর গ্রামে। 
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. রাইসুল ইসলাম বলেন, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় উপজেলার চরাঞ্চলে এবার সরিষার ভালো ফলন হয়েছে। বর্তমানে সরিষার বাজারমূল্যও ভালো। এ কারণে সরিষা আবাদে আগ্রহী হয়ে উঠছেন কৃষক। 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

মুসলিম সভ্যতায় দরিদ্রদের চিকিৎসাসেবা

মুসলিম সভ্যতার ইতিহাসে প্রায়ই বিজ্ঞান, স্থাপত্য বা শাসনব্যবস্থার কথা আলোচিত হয়। কিন্তু এর মানবিক দিক অধরা রয়ে যায়। বিশেষ করে দরিদ্রদের প্রতি দয়া ও চিকিৎসাসেবার গল্প আড়ালে রয়ে গেছে সব সময়।

মুসলিম সভ্যতায় কীভাবে দরিদ্র ও অসুস্থদের জন্য বিনা মূল্যে চিকিৎসা, আশ্রয় এবং মানসিক সান্ত্বনার ব্যবস্থা করা হয়েছিল, তা এক অপূর্ব কাহিনি।

বিমারিস্তান: দরিদ্রদের জন্য চিকিৎসার আশ্রয়

মুসলিম সভ্যতায় দরিদ্রদের চিকিৎসাসেবায় ‘বিমারিস্তান’ নামের হাসপাতাল ছিল একটি যুগান্তকারী উদ্যোগ। এগুলো শুধু চিকিৎসার জায়গা ছিল না, বরং দরিদ্রদের জন্য বিনা মূল্যে আশ্রয়, খাদ্য ও যত্নের ব্যবস্থা ছিল। বেশির ভাগ মুসলিম অধ্যুষিত নগরে, বিশেষ করে বড় রাজধানীগুলোতে বিমারিস্তান ছিল। দামেস্কে বিমারিস্তানের নাম ছিল ‘নুরি’, বাগদাদে ‘আদুদি’।

প্রতিটি অন্ধ বৃদ্ধের জন্য এমন একজন সাহায্যকারী নিয়োগ কর, যে তাকে অত্যাচার বা অবহেলা না করে।খলিফা উমর ইবন আবদুল আজিজ (রহ.)

প্রথম বিমারিস্তান প্রতিষ্ঠিত হয় উমাইয়া খলিফা ওয়ালিদ ইবন আবদুল মালিকের সময়, ৭০৭ খ্রিষ্টাব্দে। তিনি এতে চিকিৎসক নিয়োগ করেন এবং তাঁদের বেতনের ব্যবস্থা করেন। সমাজের স্বাস্থ্য রক্ষায় কুষ্ঠরোগীদের জন্য পৃথক স্থানে বিনা মূল্যে খাদ্য ও যত্ন দেওয়া হতো।

অন্ধদের জন্য রাষ্ট্রীয় ভাতা ও সাহায্যকারী নিয়োগ করা হতো। খলিফা উমর ইবন আবদুল আজিজ নির্দেশ দিয়েছিলেন, ‘প্রতিটি অন্ধ বৃদ্ধের জন্য এমন একজন সাহায্যকারী নিয়োগ কর, যে তাকে অত্যাচার বা অবহেলা না করে।’ (ইবনে আসাকির, তারিখে দিমাশক, ৪৪/১২৩, দারুল ফিকর, বৈরুত, ১৯৯৫)

আরও পড়ুন“আল্লাহ ধনী, তোমরা দরিদ্র”০১ অক্টোবর ২০২৫

ভ্রাম্যমাণ হাসপাতালও ছিল, যা যুদ্ধক্ষেত্রে সৈন্যদের চিকিৎসার জন্য গড়ে তোলা হতো। দূরবর্তী অঞ্চলে মহামারি মোকাবিলায় ৪০টি উটের কাফেলায় চিকিৎসা সরঞ্জাম নিয়ে যাওয়া হতো।

মিসরে প্রথম বিমারিস্তান প্রতিষ্ঠিত হয় আহমদ ইবন তুলুনের সময়, ৮৭২ খ্রিষ্টাব্দে, ফুসতাতে। এর নাম ছিল ‘বিমারিস্তান আতিক’।

এর জন্য ওয়াক্‌ফ তহবিল রাখা হয়েছিল, এবং শর্ত ছিল যে এটি শুধু সাধারণ মানুষের জন্য, সৈন্য বা দাসদের জন্য নয়। এর বার্ষিক খরচ ছিল ৬০ হাজার দিনার (স্বর্ণমুদ্রা)। ইবন তুলুন নিজে প্রতি সপ্তাহে এটি পরিদর্শন করতেন এবং জুমার দিনে মুসল্লিদের জন্য জরুরি সেবার ব্যবস্থা করেছিলেন। এতে ছিল ১ লাখের বেশি বইয়ের গ্রন্থাগার। (মাকরিজি, খিতাত, ২/৪০৫, দারু সাদির, কায়রো, ১৮৫৩)

সংগীতজ্ঞ ও গল্পকারেরা এখানে রোগীদের মনোবল বাড়াতেন। ঘরে সুগন্ধি গাছ রাখা হতো, রোগীদের হাতপাখা দেওয়া হতো গরম ও পোকামাকড় থেকে রক্ষার জন্য।

সালাহউদ্দিন আইয়ুবি বিমারিস্তান ‘নাসিরি’ প্রতিষ্ঠা করেন। তবে মিসর ও মুসলিম বিশ্বের সবচেয়ে সমৃদ্ধ বিমারিস্তান ছিল মনসুর কালাউনের প্রতিষ্ঠিত বিমারিস্তান, ১২৮৪ খ্রিষ্টাব্দে। এখানে নারী-পুরুষ সবার জন্য চিকিৎসার ব্যবস্থা ছিল, চিকিৎসার জন্য নির্ধারিত সময়সীমা ছিল না। এখানে মানসিক স্বাস্থ্যের প্রতি গুরুত্ব দেওয়া হতো।

সংগীতজ্ঞ ও গল্পকারেরা এখানে রোগীদের মনোবল বাড়াতেন। রাতের দীর্ঘ সময় রোগীদের জন্য কষ্টকর হতো, তাই ফজরের আজান দুই ঘণ্টা আগে দেওয়া হতো, যাতে রোগীরা সকালের আশায় উৎফুল্ল হয়। ঘরে সুগন্ধি গাছ রাখা হতো, রোগীদের হাতপাখা দেওয়া হতো গরম ও পোকামাকড় থেকে রক্ষার জন্য।

সুস্থ হওয়ার পর রোগীদের পোশাক ও কিছু টাকা দেওয়া হতো, যাতে তারা তাড়াতাড়ি কাজে ফিরতে না বাধ্য হয়। এই বিমারিস্তান ২০০ জনের বেশি দরিদ্র রোগীকে বাড়িতে চিকিৎসা দিত। (মাকরিজি, খিতাত, খণ্ড ২, পৃষ্ঠা ৪০৭)

দরিদ্রদের জন্য চিকিৎসাগ্রন্থ

মুসলিম সভ্যতার চিকিৎসকেরা লক্ষ করেন, চিকিৎসা কখনো কখনো ধনীদের কাছে ব্যবসায় পরিণত হন। তাই তাঁরা দরিদ্রদের জন্য সহজলভ্য চিকিৎসা গ্রন্থ রচনা করেন, যাতে তারা নিজেরা নিজেদের চিকিৎসা করতে পারে বা ছোট চিকিৎসকেরা তাদের সহজে চিকিৎসা দিতে পারেন। এই গ্রন্থগুলোয় স্থানীয় ও সাশ্রয়ী উপকরণ ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হতো; কারণ, ভারত বা চীন থেকে আমদানি করা ওষুধ ছিল দামি।

আরও পড়ুনইসলামে দারিদ্র্য দূরীকরণের ৮টি ব্যবহারিক উপায়০২ নভেম্বর ২০২৫

আবু বকর আর-রাজি: তিনি দরিদ্রদের প্রতি অসাধারণ দয়া দেখাতেন এবং তাদের জন্য ভাতার ব্যবস্থা করতেন। তিনি দুটি গ্রন্থ রচনা করেন: ‘বুরউ সা’আত’ (তাৎক্ষণিক চিকিৎসা) এবং ‘মান লা ইয়াহদুরুহু তাবিব’ (যার কাছে চিকিৎসক নেই), যাকে ‘তিব্বুল ফুকারা ওয়াল মাসাকিন’ (দরিদ্রদের চিকিৎসা) বলা হয়।

তিনি লিখেছেন, ‘অনেক চিকিৎসক ওষুধ ও খাবারের কথা লেখেন, যা শুধু রাজাদের ভান্ডারে পাওয়া যায়। আমি সাধারণ ও সহজলভ্য উপকরণ দিয়ে চিকিৎসার একটি সংক্ষিপ্ত গ্রন্থ লিখতে চাই, যাতে সবাই এর সুবিধা পায়।’ (আল-রাজি, মান লা ইয়াহদুরুহু তাবিব, পৃষ্ঠা ১৫, দারুল কুতুব, বৈরুত, ১৯৮৫)

মুসলিম সভ্যতা দরিদ্রদের চিকিৎসায় অসাধারণ মানবিকতা দেখিয়েছে। বিমারিস্তান ছিল দরিদ্রদের জন্য আশ্রয়, যেখানে শারীরিক ও মানসিক চিকিৎসা দেওয়া হতো।

ইবনে জাজ্জার কায়রাওয়ানি: তিনি কখনো দরিদ্রদের কাছ থেকে চিকিৎসার ফি নিতেন না। তিনি তিব্বুল ফুকারা ওয়াল মাসাকিন গ্রন্থে লিখেছেন, ‘দরিদ্ররা স্বাস্থ্য ও রোগ–সম্পর্কিত বইয়ের সুবিধা পায় না। তাই আমি এমন একটি গ্রন্থ লিখলাম, যাতে সহজলভ্য ওষুধ দিয়ে সাধারণ মানুষের চিকিৎসা করা যায়।’ (ইবনে জাজ্জার, তিব্বুল ফুকারা, পৃষ্ঠা ১০, দারুল ফিকর, কায়রো, ১৯৯০)

ইবনে আকফানি: তিনি গুনইয়াতুল লাবিব ফি গাইবাতিত তাবিব (চিকিৎসক না থাকলে জ্ঞানীর সম্পদ) গ্রন্থে জরুরি রোগের চিকিৎসা ও স্বাস্থ্য রক্ষার পরামর্শ দিয়েছেন।

জামালুদ্দিন ইউসুফ মাকদিসি: তিনি ‘তিব্বুল ফুকারা’ গ্রন্থে লিখেছেন, ‘ধনীরা সুস্বাদু খাবার খায়, তাই তাদের রোগ বেশি। দরিদ্ররা সাধারণ খাবারে সন্তুষ্ট থাকে, তাই তাদের রোগ কম। কিন্তু দরিদ্ররা অসুস্থ হলে তাদের জন্য সহজ ও সস্তা ওষুধ দরকার।’ (মাকদিসি, তিব্বুল ফুকারা, পৃষ্ঠা ৮, দারুল মারিফা, বৈরুত, ১৯৯২)

মুসলিম সভ্যতা দরিদ্রদের চিকিৎসায় অসাধারণ মানবিকতা দেখিয়েছে। বিমারিস্তান ছিল দরিদ্রদের জন্য আশ্রয়, যেখানে শারীরিক ও মানসিক চিকিৎসা দেওয়া হতো। চিকিৎসকেরা দরিদ্রদের জন্য সহজলভ্য গ্রন্থ রচনা করেছেন, যাতে তারা নিজেদের চিকিৎসা করতে পারে। এই ঐতিহ্য দেখায়, ইসলামি সভ্যতা কেবল জ্ঞান বা শক্তিতে নয়, মানবিকতা ও দয়াতেও শ্রেষ্ঠ ছিল।

আরও পড়ুনআপনার মানসিক স্বাস্থ্যের চিকিৎসা নিচ্ছেন তো২১ জুন ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ