অবশেষে ৮ মাসের বেতন পেলেন সিলেটের ‘খলিল মামু’
Published: 25th, February 2025 GMT
সিলেটের কবি নজরুল অডিটরিয়ামের কেয়ারটেকার কাম নাইটগার্ড খলিল আহমদ ১৩ মাস পর অবশেষে বেতন পেলেন। গতকাল সোমবার বিকেলে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাঁর হাতে সাত মাসের বকেয়া বেতন তুলে দেওয়া হয়। অবশিষ্ট বকেয়া পর্যায়ক্রমে তাঁকে দেওয়া হবে বলেও জানানো হয়েছে।
এর আগে ১১ ফেব্রুয়ারি প্রথম আলোর অনলাইন সংস্করণে ‘১৩ মাস বেতন বন্ধ, সংসার চলে না সিলেটের খলিল মামুর’ শীর্ষক সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এরপর সিলেটের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদের নির্দেশে জেলা প্রশাসনের অধীন মাস্টাররোলে কর্মরত খলিল আহমদের বকেয়া টাকা পরিশোধের উদ্যোগ নেয় নেজারত শাখা। এরই অংশ হিসেবে গতকাল তাঁর হাতে আট মাসের বকেয়া বাবদ ১ লাখ ৯ হাজার ৩০০ টাকা তুলে দেওয়া হয়।
বকেয়া বেতন পেয়ে উচ্ছ্বসিত কণ্ঠে খলিল আহমদ মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রতি মাসে নেজারত শাখায় যোগাযোগ করেও বকেয়া বেতন পাইনি। প্রথম আলোয় সংবাদ প্রকাশের পর ডিসি স্যার আমার বেতন নিয়মিত দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। আট মাসের বকেয়া বেতন একসঙ্গে পেয়েছি।’
আরও পড়ুন১৩ মাস ধরে বেতন বন্ধ, সংসার চলে না সিলেটের ‘খলিল মামুর’১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫সিলেট জেলা প্রশাসনের পরিচালনাধীন নজরুল অডিটরিয়ামের অবস্থান নগরের রিকাবিবাজার এলাকায়। প্রায় ৭০০ আসনবিশিষ্ট এ মিলনায়তনেই মূলত শহরের সাহিত্য, সংস্কৃতি, রাজনীতিসংক্রান্ত অনুষ্ঠানগুলো হয়ে থাকে। আর এখানেই ২০২২ সালে অস্থায়ী ভিত্তিতে চাকরিতে ঢোকেন খলিল আহমদ। সাহিত্য-সংস্কৃতিকর্মীদের কাছে তিনি ‘খলিল মামু’ নামে সুপরিচিত।
জেলা প্রশাসনের একটি সূত্র জানিয়েছে, মিলনায়তন ভাড়া বাবদ জেলা প্রশাসন নিয়মিত টাকা পেলেও ‘অজানা কারণে’ খলিল আহমদের বেতন বন্ধ ছিল। এমনকি ‘ফান্ড সংকটের’ অজুহাতে মিলনায়তনের বিদ্যুৎ বিলের প্রচুর টাকাও বকেয়া রেখেছে তৎকালীন জেলা প্রশাসনের দায়িত্বরত ব্যক্তিরা।
সিলেটের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদ বলেন, ‘প্রথম আলোর অনলাইনে প্রতিবেদনটি দেখে খলিল আহমদের ব্যাপারে খোঁজখবর নিয়ে ঘটনার সত্যতা জানতে পারি। পরে তাঁর বেশির ভাগ বকেয়া পরিশোধ করা হয়। অবশিষ্ট বকেয়া দ্রুতই তাঁকে বুঝিয়ে দেওয়া হবে। এ ছাড়া এখন থেকে তিনি (খলিল) যেন নিয়মিত বেতন পান, সেটাও নিশ্চিত করা হবে।’
এ বিষয়ে সিলেটের সংস্কৃতি ও নাট্যব্যক্তিত্ব আমিরুল ইসলাম চৌধুরী (বাবু) বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে আটকে থাকা খলিল মামুর বকেয়া পরিশোধের উদ্যোগ নেওয়ায় জেলা প্রশাসককে আমরা ধন্যবাদ জানাই।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: অবশ ষ
এছাড়াও পড়ুন:
নির্বাহী বিভাগের ক্ষমতা খর্ব হলে রাষ্ট্র পরিচালনায় ভারসাম্য নষ্ট হবে: সালাহউদ্দিন
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সংলাপ থেকে কিছু সময়ের জন্য ওয়াকআউট করার পর আবারও আলোচনায় যোগ দিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ। নির্বাহী বিভাগের ক্ষমতা খর্ব করা হলে রাষ্ট্র পরিচালনায় ভারসাম্য নষ্ট হবে বলে তিনি সতর্ক করেছেন।
আজ সোমবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় পর্যায়ের আলোচনার ২০তম দিনে সালাহউদ্দিন আহমদ এ কথা বলেন।
বিএনপির এই নেতা বলেন, দেশে যেন আর কখনো স্বৈরাচার বা ফ্যাসিবাদ জন্ম নিতে না পারে, সে লক্ষ্যে সংবিধান সংশোধনের উদ্যোগে বিএনপি সর্বোচ্চ সহযোগিতা করে যাচ্ছে।
সালাহউদ্দিন আহমদ আরও বলেন, ‘আমাদের পক্ষ থেকেই প্রস্তাব ছিল, কেউ যেন ১০ বছরের বেশি প্রধানমন্ত্রী থাকতে না পারেন, সেটি গৃহীত হয়েছে। আমরা আরও প্রস্তাব দিয়েছি, নির্বাচন কমিশন গঠনে একটি স্বাধীন সার্চ কমিটি গঠন করা হোক, যেখানে সরকারি দল, বিরোধী দল ও বিচার বিভাগের প্রতিনিধি থাকবে, সেটিও গ্রহণযোগ্য হয়েছে।’
সালাহউদ্দিন আরও বলেন, ‘আমরাই প্রস্তাব করেছি যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হলে পরবর্তী সময়ে সংসদ কোনো সংশোধনী আনলে, তা রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের আগে গণভোটে যেতে হবে। এটি গৃহীত হওয়া মানে, দেশের ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য একটি বড় পদক্ষেপ।’
তবে এসব অগ্রগতির মধ্যেও নির্বাহী বিভাগের ক্ষমতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন বিএনপির এই নেতা। বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘নির্বাহী বিভাগের জবাবদিহি যেমন সংসদের কাছে, তেমনি জনগণের কাছেও রয়েছে। কিন্তু যদি কর্তৃত্ব না থাকে, কেবল দায়িত্ব আর জবাবদিহি থাকে, তাহলে তা কার্যকর রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য যথেষ্ট নয়।’
সাংবিধানিক ও সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানগুলোর নিয়োগে নির্বাহী বিভাগের হাত–পা বাঁধা হলে তা ভবিষ্যতের জন্য বাধা সৃষ্টি করতে পারে বলেও মন্তব্য করেন সালাহউদ্দিন। তিনি বলেন, ‘জনগণের প্রত্যাশা পূরণে নির্বাহী বিভাগকে শক্তিশালী হতে হবে, দুর্বল নয়।’
বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়, তারা গঠনমূলক লক্ষ্য নিয়ে সংলাপে অংশ নিচ্ছে। তবে যেখানে মৌলিক দ্বিমত রয়েছে, সেখানে অংশগ্রহণ থেকে বিরত থাকা বা মতপার্থক্য প্রকাশ করাও গণতন্ত্রের ভাষা।
সালাহউদ্দিন আহমদ আরও বলেন, ‘সব বিষয়ে ঐকমত্য হবে, এমন দাবি কেউ করেননি। দ্বিমত থাকবে, ভিন্নমত থাকবে, আর সেগুলোর মধ্য দিয়েই তো গণতন্ত্রের সংগ্রাম এগিয়ে যায়।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা মনে করি না যে নোট অব ডিসেন্ট দিয়ে কাউকে ঐকমত্যে বাধ্য করা উচিত। ঐকমত্যের অর্থই হচ্ছে সবাইকে সঙ্গে নিয়ে পথচলা। বিএনপি অংশ না নিলে কীভাবে জাতীয় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হবে, সেটি নিয়েও প্রশ্ন থেকে যায়।’
বক্তব্য শেষে সালাহউদ্দিন আহমদ জানান, সংলাপের পরবর্তী পর্যায়ে বিএনপি অংশ নেবে এবং ইতিবাচক আলোচনার জন্য প্রস্তুত থাকবে।
আরও পড়ুনঐকমত্য কমিশনের বৈঠক: ফায়ার অ্যালার্ম বেজে ওঠায় হুড়োহুড়ি করে বের হলেন সবাই৫৪ মিনিট আগেবিএনপির ওয়াকআউটকমিশনের প্রস্তাবিত সরকারি কর্ম কমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশন, মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক এবং ন্যায়পাল নিয়োগের বিধান আলোচনায় অংশ নেয়নি বিএনপি। বেলা সাড়ে ১১টার পর বিষয়টি আলোচনার জন্য উপস্থাপন করেন কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ। এ সময় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ জানান, তাঁরা আলোচনায় অংশ নেবেন না।
পরে আলী রীয়াজ বলেন, বিএনপির পক্ষে বলা হয়েছে, তারা আলোচনায় থাকবে না। একটি রাজনৈতিক দল আলোচনায় অংশ না নিলে আলোচনা করা যাবে না, তা নিয়ে সিদ্ধান্ত দিতে পারি না।
আজ আলোচনায় অংশ নিয়েছে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, এনসিপি, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), গণসংহতি আন্দোলনসহ ৩০টি রাজনৈতিক দল।
আলোচনায় সভাপতিত্ব করছেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি আলী রীয়াজ। প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দারের সঞ্চালনায় আরও উপস্থিত আছেন কমিশনের সদস্য বদিউল আলম মজুমদার, এমদাদুল হক, সফর রাজ হোসেন, ইফতেখারুজ্জামান ও আইয়ুব মিয়া।
আরও পড়ুনজাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বৈঠক থেকে বিএনপির ওয়াক আউট, পরে যোগদান২ ঘণ্টা আগে