সমগীতের ‘ভাষাবৈচিত্র্যের গান’-এ বাংলার সঙ্গে অন্যান্য ভাষাগোষ্ঠীর পরিবেশনা
Published: 26th, February 2025 GMT
বৈষম্যহীন সংস্কৃতির জমিন তৈরির প্রত্যাশা নিয়ে অনুষ্ঠিত হলো সমগীত সংস্কৃত প্রাঙ্গণের আয়োজন ‘ভাষাবৈচিত্র্যের গান’ কনসার্ট। বুধবার বিকেলে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির নন্দন মঞ্চে অনুষ্ঠিত এ আয়োজনে অংশ নিয়েছেন দেশের প্রখ্যাত শিল্পীরা ছাড়াও বিভিন্ন ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর শিল্পীরা। বম, মান্দি, মারমা, ত্রিপুরা ভাষার সাংস্কৃতিক পরিবেশনার পাশাপাশি ছিল চা–বাগানের শ্রমিকদের গান, ছিল ফয়েজ আহমদ ফয়েজের উর্দু কবিতা পাঠ।
‘ওরা আমার মুখের ভাষা কাইড়া নিতে চায়, ওরা কথায় কথায় শিকল পরায় আমার হাতে পায়’ এবং ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’ পরিবেশনা দিয়ে শুরু হয় সমগীত সাংস্কৃতিক সংগঠনের এ আয়োজন। সমগীতের পক্ষ থেকে প্রথম দুটি পরিবেশনা ছিল এ গান দুটি।
শিল্পী সায়ান নিজের গান শুরুর আগে বললেন, ‘এই বহুভাষার সঙ্গে আরেকটি ভাষা আছে, যে বিষয় নিয়ে আমরা কথা কম বলি। সেটি প্রেম।’ সায়ান তাঁর কথায় ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীকে ‘উপজাতি’ সম্বোধনের প্রতিবাদ জানান। তিনি পরিবেশন করেন দুটি গান।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সমগীত সংস্কৃত প্রাঙ্গণের সভাপ্রধান দীনা তাজরিন ও সহসভাপ্রধান রেবেকা নীলা। তাঁরা বলেন, এই দেশের প্রতিটি আন্দোলনে দেশের সব জাতিগোষ্ঠীর ভাষার মানুষ অংশগ্রহণ করেছেন। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন এই বাংলায় শতফুল ফোটাবারই আন্দোলন। ২০২৪–এর শিক্ষার্থী-জনতার জুলাই অভ্যুত্থান নতুন আশার জন্ম দিয়েছে বাংলাদেশে বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠার অগ্রযাত্রার। তারই অংশ হিসেবে এই আয়োজন।
সমগীত সংস্কৃত প্রাঙ্গণের আয়োজিত ‘ভাষাবৈচিত্র্যের গান’ কনসার্টে সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। বুধবার বিকেলে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির নন্দন মঞ্চে.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: সমগ ত স
এছাড়াও পড়ুন:
খাদি কাপড়ের জিআই স্বীকৃতিতে আনন্দে ভাসছেন কুমিল্লাবাসী
কুমিল্লার ঐতিহ্যের স্মারক খাদি কাপড় ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্যের স্বীকৃতি পাওয়ায় আনন্দিত জেলার মানুষ। দীর্ঘদিন ধরে তাঁরা দাবি জানিয়ে আসছিলেন, অবশেষে পেয়েছেন সেই সুখবর। গতকাল বুধবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে স্বীকৃতির এই সনদ দেওয়া হয়।
কুমিল্লা নগরের কান্দিরপাড় এলাকার রামঘাটলা থেকে শুরু করে রাজগঞ্জ পর্যন্ত অন্তত ৩০০ খাদি পোশাকের দোকান। কান্দিরপাড়ের খাদি বসুন্ধরা দোকানের স্বত্বাধিকারী জয়নাল আবেদীন ভূঁইয়া প্রথম আলোকে বলেন, শৈল্পিক ছোঁয়ায় কুমিল্লার খাদি এখন দেশ-বিদেশে বেশ সমাদৃত। ঐতিহ্যের খাদিতে এখন লেগেছে আধুনিকতা ও নান্দনিকতার ছোঁয়া। শত বছরের বেশি পুরোনো খাদির আরও অনেক আগেই জিআই পণ্যের স্বীকৃতি পাওয়া উচিত ছিল। অবশেষে স্বীকৃতি মিলেছে, এতেই আনন্দিত সবাই।
একই এলাকার খাদি জ্যোৎস্না স্টোরের মালিক তপন পাল বলেন, ‘কুমিল্লার প্রতিটি মানুষ খাদির এমন স্বীকৃতিতে আনন্দিত। শত বছর পার হলেও এখনো দেশ-বিদেশে খাদি কাপড়ের ব্যাপক চাহিদা।’
কুমিল্লার ইতিহাস গবেষক আহসানুল কবীর প্রথম আলোকে বলেন, ১৯২১ সালে মহাত্মা গান্ধীর ডাকে সমগ্র ভারতবর্ষে অসহযোগ আন্দোলনের সময় কুমিল্লায় খাদিশিল্প প্রতিষ্ঠা লাভ করে। ওই সময় বিদেশি পণ্য বর্জন করার জন্য আওয়াজ ওঠে। সর্বত্র এক আওয়াজ ‘মোটা কাপড়-মোটা ভাত’। সে সময় ভারতবর্ষের মানুষ দেশপ্রেমে উজ্জীবিত হয়ে খাদি পোশাক ব্যবহার শুরু করেছিলেন। খাদের (গর্তে) চরকায় বসে এ কাপড় তৈরি করা হয় বলে এর নামকরণ হয় ‘খাদি’। শুরুতে মহাত্মা গান্ধী নিজেও কুমিল্লায় এসে খাদের চরকায় বসে খাদি কাপড় তৈরিতে উৎসাহ দেন।
এই গবেষক আরও বলেন, ১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর ভারত পৃষ্ঠপোষকতা প্রত্যাহার করে নিলে কুমিল্লার খাদিশিল্প সংকটে পড়ে। এই শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে হাল ধরেন বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন একাডেমির (বার্ড) প্রতিষ্ঠাতা আখতার হামিদ খান।
কুমিল্লার জেলা প্রশাসক মো. আমিরুল কায়ছার বলেন, জেলা প্রশাসনের দীর্ঘ প্রচেষ্টায় গত বছর কুমিল্লার রসমালাই জিআই তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। কুমিল্লার খাদি ও বিজয়পুরের মৃৎশিল্পের জিআই স্বীকৃতির জন্য তখন থেকেই কাজ শুরু হয়। কুমিল্লার ‘ব্র্যান্ড’ হিসেবে পরিচিত তিনটি পণ্যের মধ্যে দুটি জিআই পণ্যের স্বীকৃতি পেয়েছে। যে একটি বাকি আছে, সেটিও দ্রুত সময়ের মধ্যে স্বীকৃতি পাবে বলে তিনি আশাবাদী।