বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর জাতীয় সম্মেলন বা তৃণমূল ও কেন্দ্রীয় নেতাদের মুখোমুখি হওয়ার মতো অনুষ্ঠানের ব্যাপারে আগ্রহ কম। আগ্রহ কেন কম, তার রাজনৈতিক ব্যাখ্যা দলগুলোর কাছে নিশ্চয় আছে। বাংলাদেশের নিকট অতীতে, বিশেষ করে বিগত দেড় দশকে একটি দলের রাজনৈতিক দৃশ্য মঞ্চায়নের ঘটনা ঘটেছে। এই সময়ে অন্য রাজনৈতিক দলগুলো হামলা-মামলা, গ্রেপ্তার কাটিয়ে কীভাবে টিকে ছিল, এটিও একটি গবেষণার বিষয়। ভবিষ্যতে বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর লড়াই-সংগ্রামের নির্দলীয় ইতিহাস রচনা হলে, সেখানে তা লিপিবদ্ধ থাকবে, আশা করি। 

সাম্প্রতিক সময়ে বিএনপির কেন্দ্র থেকে তৃণমূল; প্রায় সব নেতার আলোচনায় একটি বিষয় পরিষ্কার– দলটির মনোযোগ জাতীয় নির্বাচনে। ২৭ ফেব্রুয়ারি দলের যে বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হলো, সেটিকে দলের নির্বাচনমুখী যাত্রা বললে অতিরঞ্জিত হবে না। দু’একটি মহল থেকে জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন অনুষ্ঠানের যে দাবি উঠেছিল, সেটিকেও দৃশ্যত গুরুত্ব দিচ্ছে না বিএনপি। প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দীনের বক্তব্যে বিএনপি নিজ সিদ্ধান্তে অটল থাকার মতো উপাদানও খুঁজে পেতে পারে। সিইসি বলেছেন, ‘আমাদের টার্গেট ডিসেম্বর এবং জাতীয় নির্বাচন’ (প্রথম আলো, ২৫ জানুয়ারি, ২০২৫)। 

এমন পরিস্থিতিতে ঢাকায় বিএনপির বর্ধিত সভায় দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদ ও কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য এবং মহানগর ও জেলার সব থানা, উপজেলা, পৌর কমিটির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক অথবা আহ্বায়ক ও সদস্য সচিবরা অংশ নিয়েছেন। এর বাইরে ২০১৮ সালের একাদশ সংসদ নির্বাচনে দলের চূড়ান্ত মনোনয়ন পাওয়া এবং মনোনয়নের জন্য প্রাথমিক চিঠি পাওয়া নেতারাও সভায় উপস্থিত ছিলেন। 

স্মরণ করা যেতে পারে, ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে টাকা আত্মসাৎ মামলার রায় ঘোষণা সামনে রেখে নির্বাহী কমিটির প্রথম বৈঠক করেছিল বিএনপি। ওই বৈঠকের সাত বছর পর আবারও বর্ধিত সভা হলো। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে সভায় অন্তত চার হাজার নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।
বৃহস্পতিবারের বর্ধিত সভায় ‘চমক’ ছিল বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ভার্চুয়াল বক্তৃতা। তিনি বলেছেন, ‘আমাদের সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। এখনও ফ্যাসিস্টদের দোসরেরা চক্রান্তে লিপ্ত। আসুন, গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ বিনির্মাণের জন্য আমাদের সর্বশক্তি নিয়োগ করি। ঐক্যকে আরও বেগবান করি’ (সমকাল অনলাইন, ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫)। তাঁর উপস্থিতি যেমন নেতাকর্মীকে উজ্জীবিত করেছে, তেমনই তাঁর বক্তব্য দেশবাসীকে দিয়েছে গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনা। 

আগামী সংসদ নির্বাচনী বৈতরণী পার করতে দলীয় নেতাকর্মীকে দিকনির্দেশনা দিয়েছেন তারেক রহমানও। এর আগে ২০১৮ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি জাতীয় নির্বাহী কমিটির সভা করেছিল দলটি। রাজধানীর লা মেরিডিয়েন হোটেলে গ্রেপ্তার আতঙ্কের মধ্যেই দলের নির্বাহী কমিটির সদস্যরা উপস্থিত হয়েছিলেন। ওই সভায় নেতাদের যে কোনো প্রতিকূল পরিস্থিতিতে ঐক্যবদ্ধ এবং বিএনপির পতাকাতলে থাকার নির্দেশনা দিয়েছিলেন চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। ওই সভায় অনলাইনে যুক্ত ছিলেন তারেক রহমান। এর পাঁচ দিন পর ৮ ফেব্রুয়ারি দুদকের মামলায় সাজা নিয়ে কারাগারে যান তিনি। খালেদা জিয়া কারাগারে থাকা অবস্থায় ওই বছরের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত একাদশ সংসদ নির্বাচনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ব্যানারে অংশ নিয়েছিল বিএনপি। লা মেরিডিয়েনে অনুষ্ঠিত ওই সভাকে কেন্দ্র করে বিএনপির নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছিল আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এবার সেই প্রতিকূল পরিস্থিতিতে পড়তে হয়নি।

প্রশ্ন হচ্ছে, বিএনপির বর্ধিত সভা থেকে কী বার্তা এলো? তারেক রহমান বলেছেন, “সরকার যেখানে দেশের বাজার পরিস্থিতি কিংবা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে কাঙ্ক্ষিত সফলতা অর্জন করতে পারছে না, সেখানে জাতীয় নির্বাচনের আগে ‘স্থানীয় নির্বাচন’ অনুষ্ঠানের নামে কেন দেশের পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে করতে চাইছে– এটি জনগণের কাছে বোধগম্য নয়” (সমকাল অনলাইন, ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫)। 
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে এ ধরনের সভা-সম্মেলন হয় না বললেই চলে। নেতারা পদ হারানোর ভয়ে, মন্ত্রিত্ব খোয়ানোর আশঙ্কায় সারাক্ষণ তটস্থ। দলীয় সভায় আত্মবিশ্লেষণ ও আত্মসমালোচনার সুযোগ রাখা হয় না। অনেক সুবিধাবাদী নেতা যোগ্যতরকে হিংসা করেন। এমনকি দলের নেতৃত্ব থেকে দূরে সরিয়ে রাখতে শীর্ষ নেতাকে প্রভাবিত করার খবরও আমাদের জানা। কোন নেতার জনসমর্থন কতটা; দলের প্রতি আনুগত্য কতটা; দেশের প্রতি প্রতিশ্রুতি কতটা; তার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ– শীর্ষ নেতার সঙ্গে ব্যক্তিগত সম্পর্ক কতটা। এ ধরনের সংস্কৃতি থেকে রাজনৈতিক দলগুলো বের হতে না পারলে দেশের মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন হবে না। রাজনৈতিক দলগুলো যেহেতু মানুষের ভাগ্যোন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিয়ে এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় প্রকাশ করে, তাই এ বিষয়ে অন্তত তাদের জবাবদিহি নিশ্চিত করা জরুরি। 

কোনো দেশের ব্যবস্থা-অব্যবস্থা, শাসন-অপশাসনের জন্য শুধু একক সরকারকে দায়ী করা যায় না। সরকারে থাকা দল ও সরকারের বাইরে থাকা দলের নেতাদের ওপরেও এই দায় ও দায়িত্ব বর্তায়। ৫ আগস্টের পর নতুন বাস্তবতায় বাংলাদেশে বর্তমানে বৃহৎ রাজনৈতিক দল ও শক্তি হচ্ছে বিএনপি। দলটির এর আগেও রাষ্ট্র পরিচালনার অভিজ্ঞতা রয়েছে। এই দল যদি এখন বাংলাদেশে সত্যিকারের গণতান্ত্রিক সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে চায়; তাদের কর্তব্য দলের তৃণমূল থেকে শুরু করে কেন্দ্র পর্যন্ত সবার মতামতকে গুরুত্ব দেওয়া। যাতে দলের নিচের দিকের প্রতিনিধিদেরও মতপ্রকাশের সুযোগ থাকে– এটা নিশ্চিত করতে হবে। 
বিএনপির বর্ধিত সভাটি যেন শুধু দলের রাজনৈতিক শক্তি প্রদর্শনের মাধ্যম না হয়ে থাকে; এটি যেন দলটির গণতন্ত্রচর্চারও উদাহরণ তৈরি করতে পারে সামনের দিনগুলোতে। 

এহ্‌সান মাহমুদ: সহকারী সম্পাদক, 
সমকাল; কথাসাহিত্যিক

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব এনপ ত র ক রহম ন র র জন ত ক র জন ত ক দ পর স থ ত ন ত কর ম উপস থ ত কম ট র অন ষ ঠ আম দ র দল র ন সদস য সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

‘আমার তো একেবারেই গন্ডারের চামড়া’

ভারতীয় বাংলা সিনেমার জনপ্রিয় অভিনেত্রী শ্রীনন্দা শঙ্কর। সৃজিত মুখার্জির ‘এক যে ছিল রাজা’, সুমন ঘোষের ‘বসুপরিবার’-এর মতো সিনেমায় অভিনয় করেছেন এই তারকা। বলা যায়, টলিউডের প্রথম সারির সব নির্মাতার সঙ্গেই কাজ করেছেন এই নৃত্যশিল্পী। 

গত কয়েক বছর ধরে কলকাতা ছেড়ে মুম্বাইয়ে বসবাস করছেন শ্রীনন্দা। সেখানে সংসার, কাজ নিয়ে সময় কাটছে তার। তবে অভিনয়ে নেই। অভিনয় থেকে দূরে থাকার কারণ কী? ফের কী অভিনয়ে ফিরবেন না শ্রীনন্দা?  

ভারতীয় একটি গণমাধ্যমে আলাপকালে এসব প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন শ্রীনন্দা। এ অভিনেত্রী বলেন, “টলিউডে যাদের সঙ্গেই কাজ করেছি, তাদের সঙ্গে এখনো আমার খুব ভালো সম্পর্ক। ভীষণ ভালো অভিজ্ঞতাও বলা চলে। মুশকিল হলো, বাংলা সিনেমায় তেমন বাজেট থাকে না। সত্যিই যদি খুব ভালো সিনেমা হয় বা এমন কোনো পরিচালক আমাকে অফার দেন যেখানে কোনো ভাবেই ‘না’ করব না। আমি নিশ্চয়ই আবার অভিনয়ে ফিরব।”

আরো পড়ুন:

কলকাতায় গ্রেপ্তার বাংলাদেশি অভিনেত্রী

পরিচালকের আপত্তিকর মন্তব্য নিয়ে মুখ খুললেন শোলাঙ্কি

কিছু কিছু লোকের সঙ্গে কাজ করতে গিয়েও মাঝপথে থেমে গিয়েছেন শ্রীনন্দা। কারণ, তাদের সঙ্গে মানসিকভাবে মেলেনি। তার ভাষায়—“মুম্বাই, কলকাতা বা সাউথ ইন্ডাস্ট্রি যেখানেই হোক না কেন, আমি ভালো মানুষের সঙ্গে কাজ করতে চাই। কেউ এমন চরিত্রে সুযোগ দেন, যেখানে প্রয়োজনে টাকাটা ভুলে গিয়ে শুধু পরিচালকের নাম দেখেই কাজটা করব।”

কিছুটা ইঙ্গিপূর্ণভাবে শ্রীনন্দা বলেন, “কাজের পাশাপাশি আমার সংসারও রয়েছে। কর্মক্ষেত্রে এমন কোনো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় অবশ্যই পেতে হবে, যার জন্য সংসারটা ইগনোর করার কথা ভাবব। অর্থাৎ মনে হবে সংসার ফেলে এই সিনেমাটা আমাকে করতেই হবে। এই বয়েসে একটু কফি খেতে যাবেন? কাজ দেবেন? এগুলো করতে পারব না। সবাই তো চেনেই আমাকে। কাজ দিতে হলে দেবেন।”

সোশ্যাল মিডিয়ায় সরব শ্রীনন্দা। অনেকে ভেবেছিলেন, এ মাধ্যমে কাজ করে টাকা আয় করে থাকেন। তাদের উদ্দেশে শ্রীনন্দা বলেন, “অনেকেরই ভ্রান্ত ধারণা এটাও আমার পেশা। এখান থেকে অনেক টাকা উপার্জন করা যায়। আমি নিজেও আগে বিষয়টা জানতাম না। পোস্ট করতে করতে বুঝেছি। আমি এখন মুম্বাইয়ে মায়ের সঙ্গে পুরোদমে নাচের স্কুল চালাচ্ছি। এখন মোট ছয়টা ব্রাঞ্চ এবং ছাত্রছাত্রীর সংখ্যাও নেহাতই কম নয়। সব মিলিয়ে ভালো আছি।”

সোশ্যাল মিডিয়ায় ট্রলের শিকার হন শ্রীনন্দা। এ বিষয়ে তিনি বলেন, “আমার তো একেবারেই গন্ডারের চামড়া হয়ে গিয়েছে। কয়েকদিন আগে আমাকে একজন বলেছিলেন, ‘রিল মামনি’। আমি আর মা এটা শুনে হেসে গড়িয়ে পড়েছি। মাঝেমধ্যে এসব বেশ মজাও লাগে। তবে যে পরিমাণ ভালোবাসা পাচ্ছি, সেটা খুব মন থেকেই ভক্তরা দিচ্ছেন বলে আমার বিশ্বাস। আমি মনে করি, এটা আমার জীবনে আশীর্বাদ।”

ঢাকা/শান্ত

সম্পর্কিত নিবন্ধ