বিএনপির বর্ধিত সভা কী বার্তা দিল
Published: 27th, February 2025 GMT
বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর জাতীয় সম্মেলন বা তৃণমূল ও কেন্দ্রীয় নেতাদের মুখোমুখি হওয়ার মতো অনুষ্ঠানের ব্যাপারে আগ্রহ কম। আগ্রহ কেন কম, তার রাজনৈতিক ব্যাখ্যা দলগুলোর কাছে নিশ্চয় আছে। বাংলাদেশের নিকট অতীতে, বিশেষ করে বিগত দেড় দশকে একটি দলের রাজনৈতিক দৃশ্য মঞ্চায়নের ঘটনা ঘটেছে। এই সময়ে অন্য রাজনৈতিক দলগুলো হামলা-মামলা, গ্রেপ্তার কাটিয়ে কীভাবে টিকে ছিল, এটিও একটি গবেষণার বিষয়। ভবিষ্যতে বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর লড়াই-সংগ্রামের নির্দলীয় ইতিহাস রচনা হলে, সেখানে তা লিপিবদ্ধ থাকবে, আশা করি।
সাম্প্রতিক সময়ে বিএনপির কেন্দ্র থেকে তৃণমূল; প্রায় সব নেতার আলোচনায় একটি বিষয় পরিষ্কার– দলটির মনোযোগ জাতীয় নির্বাচনে। ২৭ ফেব্রুয়ারি দলের যে বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হলো, সেটিকে দলের নির্বাচনমুখী যাত্রা বললে অতিরঞ্জিত হবে না। দু’একটি মহল থেকে জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন অনুষ্ঠানের যে দাবি উঠেছিল, সেটিকেও দৃশ্যত গুরুত্ব দিচ্ছে না বিএনপি। প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দীনের বক্তব্যে বিএনপি নিজ সিদ্ধান্তে অটল থাকার মতো উপাদানও খুঁজে পেতে পারে। সিইসি বলেছেন, ‘আমাদের টার্গেট ডিসেম্বর এবং জাতীয় নির্বাচন’ (প্রথম আলো, ২৫ জানুয়ারি, ২০২৫)।
এমন পরিস্থিতিতে ঢাকায় বিএনপির বর্ধিত সভায় দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদ ও কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য এবং মহানগর ও জেলার সব থানা, উপজেলা, পৌর কমিটির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক অথবা আহ্বায়ক ও সদস্য সচিবরা অংশ নিয়েছেন। এর বাইরে ২০১৮ সালের একাদশ সংসদ নির্বাচনে দলের চূড়ান্ত মনোনয়ন পাওয়া এবং মনোনয়নের জন্য প্রাথমিক চিঠি পাওয়া নেতারাও সভায় উপস্থিত ছিলেন।
স্মরণ করা যেতে পারে, ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে টাকা আত্মসাৎ মামলার রায় ঘোষণা সামনে রেখে নির্বাহী কমিটির প্রথম বৈঠক করেছিল বিএনপি। ওই বৈঠকের সাত বছর পর আবারও বর্ধিত সভা হলো। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে সভায় অন্তত চার হাজার নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।
বৃহস্পতিবারের বর্ধিত সভায় ‘চমক’ ছিল বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ভার্চুয়াল বক্তৃতা। তিনি বলেছেন, ‘আমাদের সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। এখনও ফ্যাসিস্টদের দোসরেরা চক্রান্তে লিপ্ত। আসুন, গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ বিনির্মাণের জন্য আমাদের সর্বশক্তি নিয়োগ করি। ঐক্যকে আরও বেগবান করি’ (সমকাল অনলাইন, ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫)। তাঁর উপস্থিতি যেমন নেতাকর্মীকে উজ্জীবিত করেছে, তেমনই তাঁর বক্তব্য দেশবাসীকে দিয়েছে গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনা।
আগামী সংসদ নির্বাচনী বৈতরণী পার করতে দলীয় নেতাকর্মীকে দিকনির্দেশনা দিয়েছেন তারেক রহমানও। এর আগে ২০১৮ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি জাতীয় নির্বাহী কমিটির সভা করেছিল দলটি। রাজধানীর লা মেরিডিয়েন হোটেলে গ্রেপ্তার আতঙ্কের মধ্যেই দলের নির্বাহী কমিটির সদস্যরা উপস্থিত হয়েছিলেন। ওই সভায় নেতাদের যে কোনো প্রতিকূল পরিস্থিতিতে ঐক্যবদ্ধ এবং বিএনপির পতাকাতলে থাকার নির্দেশনা দিয়েছিলেন চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। ওই সভায় অনলাইনে যুক্ত ছিলেন তারেক রহমান। এর পাঁচ দিন পর ৮ ফেব্রুয়ারি দুদকের মামলায় সাজা নিয়ে কারাগারে যান তিনি। খালেদা জিয়া কারাগারে থাকা অবস্থায় ওই বছরের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত একাদশ সংসদ নির্বাচনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ব্যানারে অংশ নিয়েছিল বিএনপি। লা মেরিডিয়েনে অনুষ্ঠিত ওই সভাকে কেন্দ্র করে বিএনপির নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছিল আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এবার সেই প্রতিকূল পরিস্থিতিতে পড়তে হয়নি।
প্রশ্ন হচ্ছে, বিএনপির বর্ধিত সভা থেকে কী বার্তা এলো? তারেক রহমান বলেছেন, “সরকার যেখানে দেশের বাজার পরিস্থিতি কিংবা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে কাঙ্ক্ষিত সফলতা অর্জন করতে পারছে না, সেখানে জাতীয় নির্বাচনের আগে ‘স্থানীয় নির্বাচন’ অনুষ্ঠানের নামে কেন দেশের পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে করতে চাইছে– এটি জনগণের কাছে বোধগম্য নয়” (সমকাল অনলাইন, ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫)।
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে এ ধরনের সভা-সম্মেলন হয় না বললেই চলে। নেতারা পদ হারানোর ভয়ে, মন্ত্রিত্ব খোয়ানোর আশঙ্কায় সারাক্ষণ তটস্থ। দলীয় সভায় আত্মবিশ্লেষণ ও আত্মসমালোচনার সুযোগ রাখা হয় না। অনেক সুবিধাবাদী নেতা যোগ্যতরকে হিংসা করেন। এমনকি দলের নেতৃত্ব থেকে দূরে সরিয়ে রাখতে শীর্ষ নেতাকে প্রভাবিত করার খবরও আমাদের জানা। কোন নেতার জনসমর্থন কতটা; দলের প্রতি আনুগত্য কতটা; দেশের প্রতি প্রতিশ্রুতি কতটা; তার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ– শীর্ষ নেতার সঙ্গে ব্যক্তিগত সম্পর্ক কতটা। এ ধরনের সংস্কৃতি থেকে রাজনৈতিক দলগুলো বের হতে না পারলে দেশের মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন হবে না। রাজনৈতিক দলগুলো যেহেতু মানুষের ভাগ্যোন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিয়ে এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় প্রকাশ করে, তাই এ বিষয়ে অন্তত তাদের জবাবদিহি নিশ্চিত করা জরুরি।
কোনো দেশের ব্যবস্থা-অব্যবস্থা, শাসন-অপশাসনের জন্য শুধু একক সরকারকে দায়ী করা যায় না। সরকারে থাকা দল ও সরকারের বাইরে থাকা দলের নেতাদের ওপরেও এই দায় ও দায়িত্ব বর্তায়। ৫ আগস্টের পর নতুন বাস্তবতায় বাংলাদেশে বর্তমানে বৃহৎ রাজনৈতিক দল ও শক্তি হচ্ছে বিএনপি। দলটির এর আগেও রাষ্ট্র পরিচালনার অভিজ্ঞতা রয়েছে। এই দল যদি এখন বাংলাদেশে সত্যিকারের গণতান্ত্রিক সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে চায়; তাদের কর্তব্য দলের তৃণমূল থেকে শুরু করে কেন্দ্র পর্যন্ত সবার মতামতকে গুরুত্ব দেওয়া। যাতে দলের নিচের দিকের প্রতিনিধিদেরও মতপ্রকাশের সুযোগ থাকে– এটা নিশ্চিত করতে হবে।
বিএনপির বর্ধিত সভাটি যেন শুধু দলের রাজনৈতিক শক্তি প্রদর্শনের মাধ্যম না হয়ে থাকে; এটি যেন দলটির গণতন্ত্রচর্চারও উদাহরণ তৈরি করতে পারে সামনের দিনগুলোতে।
এহ্সান মাহমুদ: সহকারী সম্পাদক,
সমকাল; কথাসাহিত্যিক
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব এনপ ত র ক রহম ন র র জন ত ক র জন ত ক দ পর স থ ত ন ত কর ম উপস থ ত কম ট র অন ষ ঠ আম দ র দল র ন সদস য সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
অফিসে আপনি কি ১১ ঘণ্টার বেশি কাজ করেন
প্ল্যান ওয়ান জার্নালে প্রকাশিত একটি গবেষণা নিয়ে চলছে আলোচনা। সেখানে দুই হাজার ফুলটাইম কর্মজীবীর ওপর একটা জরিপ পরিচালনা করা হয়। পেশাগত কাজ বা চাপের সঙ্গে মানসিক স্বাস্থ্যের সম্পর্ক নিয়ে পরিচালিত গবেষণাটি থেকে পাওয়া গেছে চমকপ্রদ তথ্য।
বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, যাঁরা কর্মক্ষেত্রে ১১ ঘণ্টা বা তার বেশি কাজ করেন, তাঁদের খাদ্যাভ্যাস তুলনামূলকভাবে অস্বাস্থ্যকর, তাঁরা অন্যদের তুলনায় মানসিক চাপে ভোগেন বেশি। ঠিকমতো পানি খাওয়ার প্রবণতা কম। পরিবার, প্রকৃতি ও পোষা প্রাণীর সঙ্গে সময় কাটানোর প্রবণতাও কম। কম ঘুমান। আর যেকোনো মানসিক আঘাত থেকে সেরে ওঠার পর্যাপ্ত সময় বা সুযোগ পান না। এই মানুষেরাই বেশি হতাশায় ভোগেন।
শুধু তা-ই নয়, দ্রুত বুড়িয়ে যাওয়া এবং হৃদ্রোগ ও স্ট্রোকের মতো কার্ডিওভাস্কুলার রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিও বেশি। যাঁরা ১১ ঘণ্টা বা তার বেশি সময় অফিস করেন, তাঁদের মধ্যে কর্মক্ষেত্রে অসুস্থ হয়ে যাওয়ার সংখ্যাও অনেক।
আরও পড়ুন২৫ বছর ধরে অফিসে যাননি তিনি১৩ মার্চ ২০২৫যদি ১১ ঘণ্টা কর্মক্ষেত্রে থাকতেই হয়, তাহলে যেসব বিষয় খেয়াল রাখবেনরাতে ৮ ঘণ্টা ঘুমাতেই হবে। তাতে শরীর ও মস্তিষ্ক দিনের শারীরিক ও মানসিক পরিশ্রমের ধকল কাটিয়ে ওঠার সুযোগ পাবে।
কাজের ফাঁকে ফাঁকে বিরতি নিন। সবুজের দিকে তাকান। ডেস্কে গাছ রাখতে পারেন। উঠে একটু হাঁটুন। ব্যায়াম করুন। সহকর্মীর সঙ্গে চা খেতে খেতে গল্প করুন। গবেষণা জানাচ্ছে, ছোট ছোট বিরতি কাজে মনোযোগ পুনঃস্থাপন করতে সাহায্য করে এবং কাজের গুণমান বাড়ায়।
দুপুরে খাওয়ার পর একটা ন্যাপ নিতে পারেন।
২ লিটারের একটা বোতলে পানি রাখবেন। প্রতিদিন ১ বোতল পানি অবশ্যই শেষ করবেন। তা ছাড়া পানি, শরবত, জুস, ডাবের পানি, তরমুজ, শসা, আনারস ইত্যাদি খাবেন। হাইড্রেটেড থাকলে এনার্জি ধরে রেখে কাজ করা সহজ হয়।
প্রক্রিয়াজাত খাবার, কার্বোনেটেড ড্রিংক, চিনিযুক্ত খাবার বাদ দিন। এসব কেবল আপনার ক্লান্তি বাড়াবে।
আর সম্ভব হলে কর্মক্ষেত্রে কথা বলে আপনার কর্মঘণ্টা ৮ ঘণ্টায় নিয়ে আসতে পারলে তো কথাই নেই।
সূত্র: এনবিসি নিউজ
আরও পড়ুনঅফিসের বাড়তি কাজকে যেভাবে ‘না’ বলবেন১৩ মার্চ ২০২৫