গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের কমিটি প্রত্যাখ্যান বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের একাংশের
Published: 28th, February 2025 GMT
অভ্যুত্থানের প্লাটফর্ম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ছাত্রসংগঠন গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের কমিটিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আধিপত্যের অভিযোগ তুলে কমিটিকে প্রত্যাখ্যান করেছেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থী। তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদও জানান। তবে তারা আলোচনার পথ খোলা রেখেছেন বলে জানান।
বৃহস্পতিবার রাতে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান তারা।
এর আগে বিকেলে মধুর ক্যান্টিনে গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের পূর্ণাঙ্গ কমিটি দেওয়া হয়। সেখানে বুধবারের সংঘর্ষের ঘটনায় তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি করা হয়। সেই কমিটিকেও বিক্ষোভ থেকে প্রত্যাখ্যান করা হয়। পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে বেসরকারি ইস্টওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের নাঈম আবেদীনকে সিনিয়র সংগঠক করা হয়েছে। তাকে তদন্ত কমিটিতে রাখা হয়েছে। এ ছাড়াও পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ৩০ জন কমিটিতে স্থান পেয়েছেন।
বিক্ষোভে এশিয়ান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের ছাত্র মাহাদী জাহিন বলেন, ১৭ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা হল ছেড়ে গেলে আমরা গুলির সামনে দাঁড়িয়েছি। রামপুরা বাড্ডায় শত লাশ পড়লেও কখনও রাজপথ ছাড়িনি। অথচ প্রাইভেটকে উপেক্ষা করে নতুন রাজনৈতিক সংগঠনের ঘোষণা আসে মধুর ক্যান্টিন থেকে, সেখানে সরকার পতনের কিছুই হয়নি। যেখানে সরকার পতন আন্দোলনের কিছুই হয়নি। মধুর ক্যান্টিন থেকে ঢাবি কেন্দ্রীক যে দল আসবে সে দলের কবর ঢাবিতেই রচিত হবে। একাত্তর কারো বাপের না, চব্বিশ ঢাবির না।
নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির ছাত্র মাসরুফ আহসান বলেন, শেখ হাসিনা ঢাকা ইউনিভার্সিটিকে সেন্ট্রালাইজ করে পুরো বাংলাদেশের ছাত্রসমাজকে কন্ট্রোল করার চেষ্টা করেছে। সেই বৈষম্য স্বৈরাচারী মনোভাব তাদের থেকে যায়নি। নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনে কলেজ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে প্রাইভেটের শিক্ষার্থীরা নেমে এসেছিল। তার ধারাবাহিকতায় প্রাইভেট চব্বিশের আন্দোলনে পুরো বিজয় ছিনিয়ে এনেছে। ১৬ তারিখে ঢাকা ইউনিভার্সিটির স্বেচ্ছায় অর্ধেক পোলাপান পালিয়ে গেছে। ঢাবি সিন্ডিকেট জনগণের বিরুদ্ধে গিয়ে স্বার্থ হাসিল করতে পারবে না। আমরা নতুন বাংলাদেশ গড়ব।
তিনি বলেন, ঢাকা ইউনিভার্সিটির তারা যে মব করেছে, তারা আবার নিজেরা কমিটি করেছে। এই কমিটি আমরা মানি না। যারা এমন বৈষম্য করে, তাদের সঙ্গে আমরা থাকবো না।
ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটির শাহেল শেখ সেলিম বলেন, মধুর ক্যান্টিনে যা হইছে অভ্যুত্থানের পরে বড় ন্যাক্কারজনক ঘটনা। এমন কর্মকাণ্ড অব্যাহত রাখলে একসঙ্গে কাজ করার সুযোগ হবে না। যারা যারা প্রাইভেটের নাম ধরে ডিউর কাছে লেজুড়বৃত্তি রাজনীতি করেন, আমরা কঠোরভাবে বলি আমরা তাদেরকেও অবাঞ্ছিত করব। আমরা রাজুতে শাহবাগ যাচ্ছি না। আপনারা বসুন্ধরা আসেন, উত্তরা বিএনএস যাত্রাবাড়ীর বিপ্লবীদের বাদ দিয়ে কমিটি আমরা মানি না, এটা আমরা প্রত্যাখ্যান করলাম।
বিক্ষোভে অংশ নেওয়া এ শিক্ষার্থী আরও বলেন, হামলার ব্যাপারে তাদেরকে নিঃশর্ত ক্ষমা চাইতে হবে। তারা যদি বাংলাদেশে সর্বজনীন দল গঠন করে, সংস্কার চায়-দেশে পরিবর্তন চায়, লেজুড়বৃত্তিক দল থেকে মুক্তি চায় তাহলে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়সহ সকল ছাত্রসংগঠনের সঙ্গে বসতে হবে। তারা যদি ঐক্য ভঙ্গ করে তাহলে আমাদের ধরে নিতে হবে বিপ্লব শেষ হয়নি। সর্বজনীন দল করতে চাইলে প্রতিটা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধি কেন্দ্রীয় কমিটিতে নিশ্চিত করে সবাইকে সমান অধিকার দিয়ে তারপর সার্বজনীন রাজনীতিতে নামতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে তারা ‘ঢাবির দালালেরা হুশিয়ার সাবধান, দালালের কালো হাত গুড়িয়ে দাও, ঢাবির কালো হাত জ্বালিয়ে দাও পুড়িয়ে দাও’—ইত্যাদি স্লোগান দেন।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: কম ট ইউন ভ র স ট র ব সরক র কম ট ত
এছাড়াও পড়ুন:
নড়াইলে সরকারি গাছ বিক্রির অভিযোগে চেয়ারম্যানসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা
নড়াইল সদর উপজেলার শাহাবাদ ইউনিয়নে সড়কের পাশে সরকারি গাছ চুরি করে বিক্রির অভিযোগে মামলা হয়েছে। গতকাল বুধবার রাতে শাহবাদ ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা মশিউর রহমান বাদী হয়ে সদর থানায় মামলাটি করেন।
মামলায় ওই ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমানসহ ১৩ জন আসামি করা হয়েছে। অন্য আসামিরা হলেন প্রশিকা নড়াইল উন্নয়ন এলাকা ব্যবস্থাপক শাহাব উদ্দিন ও প্রশিকার গঠিত সংগঠন প্রভাতী যুব সংঘের সভাপতি নড়াইল সদর উপজেলার তুজরডাঙ্গা এলাকার মুজিবুর রহমান, সদস্য একই এলাকার জরিনা বেগম, রজব আলী, মো. আজিবর, মো. ইলিয়াছ, ইমান আলী, মো. ওমর, মো. হায়দার, আবু সাঈদ, মো. এনামুল ও মো. শরিফুল।
এ বিষয়ে আজ বৃহস্পতিবার সকালে নড়াইল সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাজেদুল ইসলাম বলেন, ‘সরকারি গাছ চুরি করে বিক্রির অভিযোগে একটি মামলা হয়েছে। ঘটনার তদন্ত করে দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
মামলার এজহারে বাদী অভিযোগ করেছেন, গত ২৯ এপ্রিল নড়াইল সদর উপজেলার শাহাবাদ বাজার থেকে হাজির বটতলা পর্যন্ত সরকারি রাস্তার জায়গা থেকে গাছ কাটা ও চুরি করে বিক্রির সংবাদ পেয়ে তিনি ঘটনাস্থলে যান। উপস্থিত হয়ে দেখেন, কাটা গাছবোঝাই একটি ট্রাক এবং নছিমন জব্দ করেছেন নড়াইল সদর উপজেলা ভূমি অফিসের সহকারী কমিশনার দেবাশীষ অধিকারী। তখন ঘটনাস্থলে শ্রমিকদের জিজ্ঞাসাবাদ ও খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, মামলার আসামিরা কোনো ধরনের অনুমতি ছাড়াই খাসজমি থেকে গাছ কেটে বিক্রি করেছেন। এর আগেও একবার তাঁরা ওই জমি থেকে গাছ বিক্রি করেছিলেন। জব্দ করা গাছের লগ, ডালপালা এবং আগে কাটা গাছের অবশিষ্ট ভূমিসংলগ্ন গুঁড়ি পর্যবেক্ষণ করে বোঝা গেছে, ওই স্থান থেকে আনুমানিক পাঁচ লাখ টাকার অধিক গাছ চুরি করে কাটা ও বিক্রি হয়েছে।
প্রশিকা নড়াইল উন্নয়ন এলাকার ব্যবস্থাপক শাহাব উদ্দিন বলেন, ২০০৯ সালে প্রশিকা, ইউনিয়ন পরিষদ ও প্রভাতী যুব সংঘের যৌথ উদ্যোগে একটি চুক্তির মাধ্যমে সড়কের পাশে গাছগুলো রোপণ করেছিল। সে সময় সড়কটি খাস খতিয়ানভুক্ত ছিল না। বর্তমানে তা সরকারের আওতায় পড়ায় গাছ কাটার অনুমতি চেয়ে ইউএনওর কাছে আবেদন করা হয়েছিল, তবে প্রশাসন কোনো সিদ্ধান্ত দেয়নি। কিছুদিন আগে ইউপি সদস্য ইব্রাহিম তাঁকে ফোনে জানান, বিদ্যুৎ বিভাগের কাটা ডালপালা বিক্রি করতে চান চেয়ারম্যান। বিদ্যুৎ বিভাগের কাটা ডালপালাগুলো পড়ে থেকে নষ্ট হবে ভেবে তিনি বিক্রিতে সম্মতি দেন। পরে গাছ কীভাবে বা কারা কেটেছে, তা তিনি জানেন না।
মামলা করার আগে অবৈধভাবে গাছ কাটার অভিযোগের ব্যাপার জানতে চাইলে ইউপি চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমান বলেছিলেন, প্রশিকার সঙ্গে চুক্তির একটি পক্ষ ছিল ইউনিয়ন পরিষদ। সেই হিসেবে গাছ কাটার অনুমতি নিতে ইউএনও বরাবর প্রশিকার আবেদন তিনি চেয়ারম্যান হিসেবে সুপারিশ করেছিলেন। তবে গাছ কেটেছে প্রশিকা আর তাদের সংগঠন। এখানে চেয়ারম্যান-মেম্বরের কিছু নেই।
নড়াইল সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) দেবাশীষ অধিকারী বলেন, প্রশিকার চুক্তির সময় সড়কটি ব্যক্তিমালিকানাধীন জমিতে ছিল, পরে ২০১৫ সালে এটি খাস খতিয়ানভুক্ত হয়। খাসজমি থেকে গাছ কাটা বেআইনি। এ কারণে তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।