অভ্যুত্থানের প্লাটফর্ম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ছাত্রসংগঠন গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের কমিটিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আধিপত্যের অভিযোগ তুলে কমিটিকে প্রত্যাখ্যান করেছেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থী। তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদও জানান। তবে তারা আলোচনার পথ খোলা রেখেছেন বলে জানান। 

বৃহস্পতিবার রাতে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান তারা।

এর আগে বিকেলে মধুর ক্যান্টিনে গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের পূর্ণাঙ্গ কমিটি দেওয়া হয়। সেখানে বুধবারের সংঘর্ষের ঘটনায় তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি করা হয়। সেই কমিটিকেও বিক্ষোভ থেকে প্রত্যাখ্যান করা হয়। পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে বেসরকারি ইস্টওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের নাঈম আবেদীনকে সিনিয়র সংগঠক করা হয়েছে। তাকে তদন্ত কমিটিতে রাখা হয়েছে। এ ছাড়াও পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ৩০ জন কমিটিতে স্থান পেয়েছেন। 

বিক্ষোভে এশিয়ান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের ছাত্র মাহাদী জাহিন বলেন, ১৭ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা হল ছেড়ে গেলে আমরা গুলির সামনে দাঁড়িয়েছি। রামপুরা বাড্ডায় শত লাশ পড়লেও কখনও রাজপথ ছাড়িনি। অথচ প্রাইভেটকে উপেক্ষা করে নতুন রাজনৈতিক সংগঠনের ঘোষণা আসে মধুর ক্যান্টিন থেকে, সেখানে সরকার পতনের কিছুই হয়নি। যেখানে সরকার পতন আন্দোলনের কিছুই হয়নি। মধুর ক্যান্টিন থেকে ঢাবি কেন্দ্রীক যে দল আসবে সে দলের কবর ঢাবিতেই রচিত হবে। একাত্তর কারো বাপের না, চব্বিশ ঢাবির না। 

নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির ছাত্র মাসরুফ আহসান বলেন, শেখ হাসিনা ঢাকা ইউনিভার্সিটিকে সেন্ট্রালাইজ করে পুরো বাংলাদেশের ছাত্রসমাজকে কন্ট্রোল করার চেষ্টা করেছে। সেই বৈষম্য স্বৈরাচারী মনোভাব তাদের থেকে যায়নি। নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনে কলেজ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে প্রাইভেটের শিক্ষার্থীরা নেমে এসেছিল। তার ধারাবাহিকতায় প্রাইভেট চব্বিশের আন্দোলনে পুরো বিজয় ছিনিয়ে এনেছে। ১৬ তারিখে ঢাকা ইউনিভার্সিটির স্বেচ্ছায় অর্ধেক পোলাপান পালিয়ে গেছে। ঢাবি সিন্ডিকেট জনগণের বিরুদ্ধে গিয়ে স্বার্থ হাসিল করতে পারবে না। আমরা নতুন বাংলাদেশ গড়ব।

তিনি বলেন, ঢাকা ইউনিভার্সিটির তারা যে মব করেছে, তারা আবার নিজেরা কমিটি করেছে। এই কমিটি আমরা মানি না। যারা এমন বৈষম্য করে, তাদের সঙ্গে আমরা থাকবো না।

ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটির শাহেল শেখ সেলিম বলেন, মধুর ক্যান্টিনে যা হইছে অভ্যুত্থানের পরে বড় ন্যাক্কারজনক ঘটনা। এমন কর্মকাণ্ড অব্যাহত রাখলে একসঙ্গে কাজ করার সুযোগ হবে না। যারা যারা প্রাইভেটের নাম ধরে ডিউর কাছে লেজুড়বৃত্তি রাজনীতি করেন, আমরা কঠোরভাবে বলি আমরা তাদেরকেও অবাঞ্ছিত করব। আমরা রাজুতে শাহবাগ যাচ্ছি না। আপনারা বসুন্ধরা আসেন, উত্তরা বিএনএস যাত্রাবাড়ীর বিপ্লবীদের বাদ দিয়ে কমিটি আমরা মানি না, এটা আমরা প্রত্যাখ্যান করলাম।

বিক্ষোভে অংশ নেওয়া এ শিক্ষার্থী আরও বলেন, হামলার ব্যাপারে তাদেরকে নিঃশর্ত ক্ষমা চাইতে হবে। তারা যদি বাংলাদেশে সর্বজনীন দল গঠন করে, সংস্কার চায়-দেশে পরিবর্তন চায়, লেজুড়বৃত্তিক দল থেকে মুক্তি চায় তাহলে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়সহ সকল ছাত্রসংগঠনের সঙ্গে বসতে হবে। তারা যদি ঐক্য ভঙ্গ করে তাহলে আমাদের ধরে নিতে হবে বিপ্লব শেষ হয়নি। সর্বজনীন দল করতে চাইলে প্রতিটা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধি কেন্দ্রীয় কমিটিতে নিশ্চিত করে সবাইকে সমান অধিকার দিয়ে তারপর সার্বজনীন রাজনীতিতে নামতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে তারা ‘ঢাবির দালালেরা হুশিয়ার সাবধান, দালালের কালো হাত গুড়িয়ে দাও, ঢাবির কালো হাত জ্বালিয়ে দাও পুড়িয়ে দাও’—ইত্যাদি স্লোগান দেন।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: কম ট ইউন ভ র স ট র ব সরক র কম ট ত

এছাড়াও পড়ুন:

প্রেম ছিল না তবু কেন মধুবালাকে বিয়ে করেছিলেন কিশোর কুমার

দিলীপ কুমারের সঙ্গে বিচ্ছেদের কিছুদিন পরই কিশোর কুমারকে বিয়ে করেন অভিনেত্রী মধুবালা। তবে তখন তিনি ছিলেন অসুস্থ। কিশোর কুমার জানিয়েছিলেন, ভালোবাসা থেকে নয়, বরং কথা রাখতেই তিনি এ বিয়ে করেছিলেন।
মধুবালা ও দিলীপ কুমারের প্রেম নিয়ে একসময় মুখর ছিল মুম্বাই ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি। কিন্তু অভিনেত্রীর বাবার বাধার কারণে সে সম্পর্কে ফাটল ধরে এবং দুজনের বিচ্ছেদ ঘটে। কিছুদিন পরেই কিশোর কুমারকে বিয়ে করেন মধুবালা। তাঁদের এই বিয়ে অনেককে চমকে দিয়েছিল। কারণ, তাঁদের প্রেমের কথা তখনো গোপন ছিল। তবে মধুবালার শরীর তখন ভালো যাচ্ছিল না। বলা হয়, দীর্ঘ রোগভোগের সময় কিশোর কুমার তাঁকে মায়ের বাড়িতে রেখেই চলে যান।

দ্য ইলাস্ট্রেটেড উইকলি অব ইন্ডিয়াকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে কিশোর কুমার বলেছিলেন, ‘বিয়ের আগেই জানতাম, ও খুব অসুস্থ। কিন্তু কথা তো দিয়েছিলাম। তাই সে কথা রেখেই ওকে ঘরে এনেছিলাম স্ত্রী হিসেবে। জানতাম, ওর জন্মগত হৃদ্‌রোগ আছে। তবু ৯ বছর ধরে সেবা করেছি। চোখের সামনেই ওকে মরতে দেখেছি। কেউ বুঝবে না এর যন্ত্রণা, না ভুগলে। ও অসম্ভব সুন্দরী ছিল। আর কত যন্ত্রণায় মারা গেছে, সেটা চোখে না দেখলে বিশ্বাস হবে না। হতাশায় চিৎকার করত, কান্নাকাটি করত। এত প্রাণোচ্ছল মানুষ নয়টা বছর বিছানায় শুয়ে থাকবে—এ কল্পনাই করা যায় না। ডাক্তার বলেছিল, ওকে হাসিখুশি রাখতে হবে। আমি তা–ই করেছি—ওর শেষনিশ্বাস পর্যন্ত। কখনো হেসেছি, কখনো কেঁদেছি ওর সঙ্গে।’

তবে কিশোর কুমারের এই বক্তব্য নিয়ে সংশয় তৈরি হয়। কারণ, পরে ফিল্মফেয়ার সাময়িকীতে দেওয়া সাক্ষাৎকারে একেবারে ভিন্ন কথা বলেন তিনি। সেই সাক্ষাৎকারে কিশোর কুমার বলেন, ‘মধুবালার সঙ্গে আমি প্রেমে পড়িনি কখনো। বরং ওর প্রেমিক ছিল আমার বন্ধু দিলীপ কুমার। আমি তো শুধু ওদের বার্তা পৌঁছে দিতাম। বিয়ের প্রস্তাবটা দিয়েছিল মধুবালাই। এমনকি, যখন আমার প্রথম স্ত্রী রুমা তখনো আমার সঙ্গে ছিল, তখনো মধু বলত, “ওকে কখনো ছেড়ো না, না হলে আমি তোমার হয়ে যাব।”’

আরও পড়ুনকিশোর কুমার কি সত্যিই ঘরে কঙ্কাল আর মাথার খুলি নিয়ে ঘুমাতেন২৭ মে ২০২৫

মধুবালার পরিবারের ভাষ্য অনুযায়ী, চিকিৎসকেরা তখন বলেছিলেন, অভিনেত্রীর পক্ষে শারীরিক সম্পর্ক কিংবা সন্তানধারণ কোনো কিছুই সম্ভব নয়। সেই বাস্তবতা হয়তো প্রভাব ফেলেছিল কিশোরের সিদ্ধান্তে। এক ঘনিষ্ঠজন বলেন, ‘আমরা বলছি না কিশোরদা ভুল করেছিলেন। ডাক্তার তো স্পষ্ট বলেছিল—শারীরিক সম্পর্ক বা সন্তান কোনোটাই সম্ভব নয়। তবে একজন নারীর তো মানসিক সঙ্গীও দরকার হয়।’
ওই ঘনিষ্ঠজন আরও জানান, কিশোর কুমার তিন মাসে একবার আসতেন মাত্র। বলতেন, ‘আমি এলে তুমি কাঁদবে, আর এতে তোমার হৃদ্‌যন্ত্রের ক্ষতি হবে। তুমি বিষণ্ন হয়ে পড়বে।’ সে সময় মধু অনেক ছোট ছিলেন, ঈর্ষাও ছিল স্বাভাবিক। হয়তো এ দূরত্বই ধীরে ধীরে তাঁকে শেষ করে দিয়েছিল।
১৯৬৯ সালে মাত্র ৩৬ বছর বয়সে না ফেরার দেশে পাড়ি জমান বলিউড অভিনেত্রী মধুবালা

সম্পর্কিত নিবন্ধ