বার্ধক্য ঠেকানোর নতুন কৌশল আবিষ্কার করেছেন বিজ্ঞানীরা
Published: 28th, February 2025 GMT
বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মানুষের শরীরের বিভিন্ন কোষের কার্যকারিতা কমতে থাকে। ফলে ধীরে ধীরে শরীরের চামড়া কুঁচকে যাওয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গের কাজের গতি কমে যায়। আর তাই মানুষের শরীরে বার্ধক্য আসা ঠেকাতে দীর্ঘদিন ধরেই গবেষণা করছেন বিজ্ঞানীরা। এবার জাপানের ওসাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল বিজ্ঞানী মানুষের শরীরে থাকা এমন এক প্রোটিন আবিষ্কার করেছেন, যা শরীরে বার্ধক্য আসা ঠেকানোর পাশাপাশি বার্ধক্যজনিত বিভিন্ন ক্ষতি মেরামত করতে পারে।
বিজ্ঞানীদের দাবি, এপি২এ১ নামের প্রোটিন শরীরের জৈবিক ঘড়িকে পেছন দিকে নিয়ে যেতে পারে। এর ফলে বার্ধক্যজনিত বিভিন্ন ক্ষতি মেরামত করে পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে আনা সম্ভব। আর তাই এই প্রোটিনের মাধ্যমে মানুষের বার্ধক্য ঠেকানোর পাশাপাশি বয়স কমিয়ে আনার সুযোগ তৈরি হতে পারে।
সাধারণভাবে মানবদেহের বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কোষ পুরোনো হতে থাকে। বিজ্ঞানীরা এসব কোষকে সেনসেন্ট কোষ বলেন। এরা বিভাজন ও নিজেদের কাজ ধীরে ধীরে বন্ধ করে দেয়। এসব কোষকে জম্বি কোষও বলা হয়। কোষগুলো ধ্বংস হয় না; বরং বৃদ্ধি পেতে থাকে। বিভিন্ন প্রদাহজনক রাসায়নিক তৈরি করে বয়স-সম্পর্কিত রোগের বিকাশ ঘটনায়। তবে এপি২এ১ প্রোটিনের পরিমাণ কমিয়ে কেবল সেনসেন্ট কোষকে তরুণ ও সুস্থ কোষে পরিণত করা সম্ভব। তাত্ত্বিকভাবে বিজ্ঞানীরা সেলুলার স্তরে বার্ধক্যের প্রক্রিয়াকে বিপরীত করে আলঝেইমার বা আর্থ্রাইটিসের মতো বয়স-সম্পর্কিত রোগের প্রতিকার করতে চান।
এ বিষয়ে ওসাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানী পিরাওয়ান চান্টাচোটিকুল জানিয়েছেন, আমরা এখনো জানি না বিভিন্ন সেনসেন্ট কোষ তাদের বিশাল আকার কীভাবে বজায় রাখতে পারে। এসব কোষ থেকে প্রোটিন সরিয়ে কোষকে সক্রিয় করার সুযোগ আছে। এই প্রোটিনের পরিমাণ হ্রাস করা হলে কোষ তাদের স্বাভাবিক আকারে ফিরে আসে, আবার বিভক্ত হতে শুরু করে ও তারুণ্যের লক্ষণ দেখায়।
সূত্র: ডেইলি মেইল
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
গান-কবিতায় ময়মনসিংহ সাহিত্য সংসদের মুক্তমঞ্চ গুঁড়িয়ে দেওয়ার প্রতিবাদ
ময়মনসিংহ নগরের জয়নুল আবেদিন উদ্যান এলাকায় সাহিত্য সংসদের মুক্তমঞ্চ গুঁড়িয়ে দেওয়ার প্রতিবাদ জানিয়েছেন লেখক, শিল্পী ও সংস্কৃতিকর্মীরা। আজ বৃহস্পতিবার বেলা ১১টা থেকে দুই ঘণ্টা ব্যাপি জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের নিচে গান, কবিতা ও কথায় এ কর্মসূচি পালিত হয়।
প্রায় চার দশক আগে প্রতিষ্ঠিত ময়মনসিংহ সাহিত্য সংসদের মুক্তমঞ্চ গতকাল বুধবার দুপুরে ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। জেলা প্রশাসন ও সিটি করপোরেশন সেখানে উচ্ছেদ অভিযান চালায়।
এর প্রতিবাদে আজ ‘ময়মনসিংহের সচেতন নাগরিক ও শিল্পী সমাজ’–এর ব্যানারে প্রতিবাদ জানানো হয়। বেলা ১১টার দিকে প্রতিবাদী কর্মসূচি শুরু হয়। এ সময় পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) একটি দল এসে মাইকবিহীন কর্মসূচি করতে বলেন আন্দোলনকর্মীদের। কিন্তু প্রতিবাদী কর্মসূচি চলতে থাকে, দাঁড়িয়ে থাকে ডিবি পুলিশের দল। প্রতিবাদী কথা, গান ও কবিতা পড়তে থাকেন কবি ও সংস্কৃতিকর্মীরা। আগামীকাল শুক্রবার সকাল ১০টার মধ্যে সাহিত্য সংসদের মুক্তমঞ্চ পুনর্নির্মাণের দাবি জানান তাঁরা।
বীক্ষণ আসরের প্রথম আহ্বায়ক কথাশিল্পী সালিম হাসান বলেন, ‘ফ্যাসিস্টের অন্যতম হাতিয়ার হচ্ছে মানুষের কথা বলার মঞ্চ গুঁড়িয়ে দেওয়া। বিগত সরকার আমলে দীর্ঘ সময় আমাদের বুকে জগদ্দল পাথর চাপিয়ে আমাদের কণ্ঠ রুদ্ধ করার চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু নতুন বাংলাদেশে গতকাল প্রশাসনের ভূমিকা আমাদের আশাহত করেছে এবং প্রতিবাদে উজ্জীবিত করেছে। দম্ভের কারণে হাসিনা সরকারের পতন হয়েছে। কিন্তু বর্তমান প্রশাসনে যাঁরা আছেন, তাঁরাও দাম্ভিকতা দেখালে পরিণাম ভালো হবে না।’
প্রতিবাদী কথার ফাঁকে ফাঁকে চলে প্রতিবাদী গান। শিল্পী হিরক সিঙ্গার, মিজান বাউলা, শাহনাজ সাথী বিদ্রোহী গান পরিবেশন করেন। কবি সাঈদ ইসলামের সঞ্চালনায় কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন কবি শামসুল ফয়েজ, নাফিসা মাহজাবিন, কামরুল হাসান ও শরৎ সেলিম, সংস্কৃতিকর্মী মাহমুদুল হাসান, সংগীতশিল্পী অঞ্জনা সরকার, আবুল কালাম আল আজাদ, চিত্রশিল্পী হোসাইন ফারুক, নাগরিক নেতা তৌহিদুজ্জামান ছোটন, আন্দোলনকর্মী আরিফুল হাসান, আজিত দাস, আবদুল্লাহ আল নাকীব প্রমুখ।
আশরাফ মীর বলেন, ‘অত্যন্ত দুঃখজনকভাবে বিনা নোটিশে আমাদের মুক্তমঞ্চ গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, যা আমারের অন্তরে আঘাত দিয়েছে। কেন মুক্তমঞ্চ বিনা নোটিশে ভেঙে দেওয়া হলো? যার ইঙ্গিতে এই মুক্তমঞ্চ ভেঙে দেওয়া হলো, তিনি অনুতপ্ত হবেন এবং মঞ্চটি পুনরায় নির্মাণ করে দেবেন, এই আশা করি। আমরা জীবন ও বেদনার কথা বলি কবিতায়। আমরা শান্তি চাই, কোনো বিশৃঙ্খলা চাই না।’
স্থানীয় সংস্কৃতিকর্মীরা জানান, ১৯৮০ সালের ২১ মে ময়মনসিংহে কবি, সাহিত্যিক, শিল্পী ও সংস্কৃতিকর্মীদের সমন্বয়ে সাহিত্য সংসদ গঠিত হয়। ১৯৮৩ সাল থেকে নিয়মিত পাঠচক্র বীক্ষণ আসর শুরু হয়। আগামীকাল শুক্রবার ছিল বীক্ষণের ২১৪৬তম আসর। শুরু থেকে বিরতিহীন প্রতি শুক্রবার আসরটি বসে, যা বাংলা সাহিত্যের দীর্ঘতম পাঠচক্রের আসর। একটি মুক্তমঞ্চে কবি-সাহিত্যিক ও সাংস্কৃতিকর্মীরা সমসাময়িক বিষয় নিয়ে কবিতা, গান, আলোচনা করে থাকেন। দেশের বিখ্যাত কবি–সাহিত্যিক এখানের মুক্তমঞ্চে সাহিত্যায়োজনে কবিতা পড়েছেন, সাহিত্য আলোচনা করে গেছেন।
পুনরায় মুক্তমঞ্চ নির্মাণের দাবিতে কর্মসূচি ঘোষণা করেন সাঈদ ইসলাম। তিনি বলেন, ‘আগামীকাল গুঁড়িয়ে দেওয়া মঞ্চের সামনে বীক্ষণের নিয়মিত আসর পালন করা হবে। এরপর শনি ও রোববার প্রশাসনকে সময় বেঁধে দেওয়া হবে। এ সময়ের মধ্যে বিষয়টি সমাধান না করলে সোমবার ময়মনসিংহসহ সারা দেশে কর্মসূচি দেওয়া হবে।’
সাহিত্য সংসদের সভাপতি কবি ফরিদ আহমদ দুলাল প্রথম আলোকে বলেন, নগরের জয়নাল আবেদিন উদ্যান এলাকায় ১৯৯৩ সালের দিকে তৎকালীন জেলা প্রশাসন সাড়ে ৬ শতক জমি সাহিত্য সংসদকে বরাদ্দ দেয়। সেই জমিতেই প্রশাসনই মুক্তমঞ্চের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করে। এখন সেই মুক্তমঞ্চ ভেঙে দেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের সচিব সুমনা আল মজিদ গতকাল জানিয়েছিলেন, ‘কাগজপত্রে সাহিত্য সংসদ বলতে সেখানে কিছু নেই। অবৈধভাবে কোনো জায়গা দখল করলে তো হবে না। সাহিত্য সংসদ আমাদের কাছে আবেদন করলে আমরা অন্য জায়গায় ব্যবস্থা করে দেব।’
আরও পড়ুনময়মনসিংহ সাহিত্য সংসদের মুক্তমঞ্চ গুঁড়িয়ে দিল প্রশাসন, সংস্কৃতিকর্মীদের প্রতিবাদ১৫ ঘণ্টা আগে