‘চুল তার কবেকার অন্ধকার বিদিশার নিশা’– কবির এমন বাণী বলে দেয়, নারীর ঘন, কালো, লম্বা, নরম, পেলব, ঝলমলে চুল প্রশংসা কুড়িয়েছে যুগ যুগ ধরে। ঝলমলে সুকেশিনীতে সবার দৃষ্টি কাড়বে, এমন স্বপ্ন প্রায় সব বয়সী নারীর।
সুন্দর, ঝলমলে চুল সবার প্রত্যাশা হলেও সবার চুল একই রকম হয় না। কারও চুল সোজা, কারোর বা কোঁকড়ানো। কারোর নরম, কারোর রুক্ষ, শুষ্ক। কারোর ঘন কালো, কারোর রঙিন। বিভিন্ন ধরনের চুল সময়ের অভাবে, অযত্নে, আবহাওয়ার পরিবর্তনে, কেমিক্যালের প্রভাবসহ নানা কারণে হয়ে পড়ে নিষ্প্রাণ, ম্রিয়মাণ, শুষ্ক। তা দেখে তো শুধু মন খারাপ করে বসে থাকার উপায় নেই– কী করলে মিলবে সমাধান, আজ জানাব সেটিই।
চুল রুক্ষ বা শুষ্ক হয়ে গেছে সেটি বোঝার উপায় হলো চুল ফুলে থাকবে, চুলে প্রাণ থাকবে না, খসখসে দেখাবে ও ধীরে ধীরে ভেঙে পড়তে থাকবে। সহজে বুঝতে চাইলে চুল উড়তে থাকবে আর আগা ফাটতে থাকবে। চুল আঁচড়ানোর সময় প্লাস্টিকের চিরুনির আকর্ষণে ওপরের দিকে উঠে যাওয়াও শুষ্ক চুলের লক্ষণ। মূলত পুষ্টির অভাবে চুল শুষ্ক ও প্রাণহীন হয়ে পড়ে। খাদ্যাভ্যাসের তারতম্যের কারণে এমনটা হয়ে থাকে। সরাসরি সূর্যের তাপ, আবহাওয়া পরিবর্তন ও শরীরে পানির ঘাটতি হলে চুল হয়ে পড়ে ম্যাড়ম্যাড়ে। এ ছাড়া ভুলভাল শ্যাম্পুর ব্যবহারও হতে পারে শুষ্কতার কারণ। স্টাইলার, রোলার, স্ট্রেইটনার, হেয়ার সেটিং স্প্রে ইত্যাদির অতি ব্যবহারেও শখের কেশ যায় রুক্ষ হয়ে। এমনটাই জানাচ্ছিলেন বিন্দিয়া এক্সক্লুসিভ বিউটি কেয়ারের স্বত্বাধিকারী ও বিউটি কনসালট্যান্ট শারমিন কচি।
তিনি আরও জানান, শুষ্ক চুলকে সাময়িকভাবে মোলায়েম করতে চাইলে কন্ডিশনার ব্যবহার করতে হবে অথবা কন্ডিশনারযুক্ত শ্যাম্পু ব্যবহার করতে হবে। এগ প্রোটিন শ্যাম্পুর ব্যবহারেও দ্রুত চুলের শুষ্কতা দূর করা যায়। এমন চুলে যতবার শ্যাম্পু করা হবে ততবারই কন্ডিশনার ব্যবহার করা উচিত। এ ছাড়া গোসলের পর সিরাম ব্যবহার করতে হবে। স্থায়ীভাবে চুলকে রুক্ষতার হাত থেকে বাঁচাতে চাইলে স্মুদিং ট্রিটমেন্ট, ক্যারাটিন ট্রিটমেন্ট, প্রোটিন ট্রিটমেন্ট, ডিপ শাইন ইত্যাদি ভালো মানের পার্লার থেকে করালে উপকার মিলবে। এ ছাড়াও চুলের মান, গন্ধ, উপাদান বুঝে বাজারে কিনতে পাওয়া যায় এমন হেয়ার মাস্ক ব্যবহার করা যায়। এমন মাস্ক সপ্তাহে তিন দিন ব্যবহারে ভালো ফল মিলবে।
রুক্ষ চুলের ঘরোয়া যত্ন নিতে
হট অয়েল ট্রিটমেন্ট হেয়ার মাস্ক: ঘরোয়া উপায়ের মধ্যে ‘হট অয়েল ট্রিটমেন্ট হেয়ার মাস্ক’ সবচেয়ে কার্যকর পদ্ধতি। এটি করার জন্য ৩-৪ (বাদাম তেল, জলপাই তেল, নারকেল তেল, জোজোবা তেল ইত্যাদি) ধরনের তেল নিয়ে তাতে ভিটামিন ই-ক্যাপ ও অল্প পরিমাণে টক দই মিশিয়ে লোশনের মতো পাতলা মিশ্রণ তৈরি করে মাথায় ও চুলে লাগিয়ে গরম পানিতে ভেজানো তোয়ালে মাথায় ৩ মিনিট করে পেঁচিয়ে রাখতে হবে ২-৩ বার। মাস্কটি বানিয়ে সপ্তাহে দু’দিন ব্যবহারে চুল হবে মোলায়েম, সিল্কি, পেলব।
ডিম, তেল ও মধুর মাস্ক: একটি ডিমের কুসুম থেকে ডিমের সাদা অংশ আলাদা করে নিন। ১ চা চামচ মধু ও ১ টেবিল চামচ নারকেল তেল মিশিয়ে ভালো করে ফেটিয়ে নিন। ভেজা চুলে খুব ভালো করে লাগিয়ে নিন। আঙুলের ডগায় ৫ মিনিট ধরে ম্যাসাজ করুন এবং তারপর একটি গরম তোয়ালে মাথায় জড়িয়ে নিন। ২০ মিনিট রেখে দিন মাথার ত্বককে তার পুষ্টি শোষণ করে নেওয়ার জন্য। এবার ভালো করে মাথা ধুয়ে নিয়ে আলতো করে মুছে নিন।
ডিম, কলা ও মধুর হেয়ারপ্যাক: কলা চুলের জন্য ময়েশ্চারাইজার হিসেবে দারুণ কাজ করে। আবার অ্যান্টিঅক্সিডেন্টসমৃদ্ধ মধু নিয়মিত ব্যবহারে চুল দ্রুত লম্বা হয়। হেয়ারপ্যাকে মধু মিশিয়ে ব্যবহার করলে বিবর্ণ চুল হয়ে ওঠে স্বাস্থ্যোজ্জ্বল ও ঝলমলে। একটি কলা ভালোভাবে চটকে এর সঙ্গে একটা ডিম ফেটে আর খানিকটা মধু মিশিয়ে সবটা একসঙ্গে মেশাতে হবে। পুরো চুলে লাগানোর ৩০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলে শ্যাম্পু করে নিন।
এভাবে মিলবে চুলের রুক্ষতা আর শুষ্কতার সমাধান। আর দেরি কেন? এবার যত্নের ছোঁয়ায় ঝলমলে চুল হয়ে উঠবে আপনারও।
মডেল: আলভি; ছবি: মঞ্জু আলম
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: চ ল র যত ন ব যবহ র কর ট র টম ন ট র ব যবহ র
এছাড়াও পড়ুন:
প্রযুক্তি কি ডিমেনশিয়া বাড়িয়ে দিচ্ছে? ৫৭টি ভিন্ন গবেষণায় উঠে এসেছে বিস্ময়কর তথ্য
প্রযুক্তির কল্যাণে হুটহাট বড় পরিবর্তন আসা নতুন কিছু নয়। করোনা মহামারির আগে বাসা থেকেও যে অফিস করা সম্ভব, সেটা মানতে চাইতেন না অনেকে। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে হোম অফিস হয়েছে স্বাভাবিক। একই ঘটনা ঘটেছে ডিজিটাল দুনিয়ায়। একসময় যেকোনো তথ্য খুঁজে বের করার জন্য শরণাপন্ন হতে হতো সার্চ ইঞ্জিনের; এআই সেই উত্তর সবিস্তারে দিয়ে দিচ্ছে মুহূর্তেই। ফলে প্রযুক্তিগত উন্নয়ন শুধু জীবনকে সহজতর করছে না, বাঁচিয়ে দিচ্ছে সময় ও পরিশ্রমও। কিন্তু এই বেঁচে যাওয়া সময় ও পরিশ্রম মস্তিষ্কের ওপর ঠিক কীভাবে প্রভাব ফেলছে?
যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাস ও বেলোর ইউনিভার্সিটির এক যৌথ গবেষণায় দেখা গেছে, এত দিন প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে মানব মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা কমার যে গুঞ্জন ভেসে বেড়িয়েছে, তার কোনো সত্যতা নেই। ‘নেচার হিউম্যান বিহেভিয়ার’ জার্নালে প্রকাশিত এই গবেষণায় দেখা গেছে, ‘ডিজিটাল ডিমেনশিয়া’ নামে যে হাইপোথিসিস আছে, তার কোনো প্রমাণ নেই গবেষকদের কাছে। বরং পঞ্চাশোর্ধ্ব মানুষদের স্মার্টফোন, কম্পিউটার কিংবা ইন্টারনেট ব্যবহার তাঁদের স্বাভাবিক স্মৃতিভ্রম অনেকটা স্তিমিত করে।
ডিজিটাল ডিমেনশিয়া কী২০১২ সালে প্রথম ‘ডিজিটাল ডিমেনশিয়া’ তত্ত্ব নিয়ে হাজির হন জার্মান স্নায়ুবিজ্ঞানী ও মনোবিদ ম্যানফ্রেড স্পিৎজার। মূলত যে হারে প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ছে এবং মানুষ যান্ত্রিক পর্দার সামনে প্রতিদিনের বেশির ভাগ সময় কাটাচ্ছে, তাতে প্রযুক্তির ওপর নির্ভরশীলতা বাড়ছে অনেকটাই। এতে নিত্যপ্রয়োজনীয় তথ্যগুলোও মনে রাখতে ব্যর্থ হচ্ছে অনেকে। যেমন ফোন নম্বর। একসময় প্রিয়জনের ফোন নম্বর আমাদের মুখস্থ থাকত। এখন ফোন নম্বর ঠাঁই পায় মুঠোফোনের কনটাক্ট লিস্টে। ফোন নম্বর মনে রাখার চেষ্টাই করে না কেউ। আবার অনেকক্ষণ যান্ত্রিক পর্দার সামনে থাকলেও সেখান থেকে শেখার ইচ্ছা থাকে না অনেকের। চোখের সামনে যা আসছে, স্ক্রল করে চলে যাচ্ছে পরের কোনো কনটেন্টে। এতে মনোযোগ হারিয়ে যায় দ্রুত। আর প্রযুক্তির এমন অতিব্যবহার যে স্মৃতিশক্তি কমিয়ে দিচ্ছে, একেই ধরা হয় ‘ডিজিটাল ডিমেনশিয়া’ হিসেবে।
আরও পড়ুনডিজিটাল স্ক্রিন ব্যবহারের সময় ২০-২০-২০ নিয়ম মানাটা কেন জরুরি২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩গবেষণা যা বলছেপ্রায় ৪ লাখ ১১ হাজার পঞ্চাশোর্ধ্ব মানুষের ওপর চালানো ৫৭টি ভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে সম্পূর্ণ ভিন্ন চিত্র। বয়সের সঙ্গে সঙ্গে যে স্মৃতিভ্রম দেখা দেয়, তার অনেকটাই হ্রাস করে প্রযুক্তির ব্যবহার। প্রযুক্তির যথাযথ ব্যবহারের ফলে স্মৃতিশক্তি কমে আসার আশঙ্কা প্রায় ৫৮ শতাংশে নেমে আসে।
স্মৃতিশক্তি কমে যাওয়া বরং আরও কিছু সূচকের (যেমন সামাজিক, অর্থনৈতিক ও পারিবারিক অবস্থা) ওপর নির্ভর করে। মজার ব্যাপার হলো, নিয়মিত শারীরিক ব্যায়াম ও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখার থেকেও বেশি কার্যকর প্রযুক্তির ব্যবহার।
তবে এর সবকিছুই নির্ভর করছে প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহারের ওপর। পঞ্চাশোর্ধ্ব ব্যক্তিরা বেশির ভাগ সময়ই অনলাইনে কাটান ইউটিউব ভিডিও অথবা ফেসবুক স্ক্রল করে। এতে তাঁদের মস্তিষ্কের ব্যবহার হয় না বললেই চলে। মস্তিষ্ক সচল রাখতে পারে এমন কনটেন্টে তাঁদের মনোযোগ সরিয়ে নিতে পারলে আনন্দ যেমন পাবেন, তেমনই ডিজিটাল দুনিয়া সম্পর্কে তাঁদের দৃষ্টিভঙ্গিও পালটে যাবে। এ ছাড়া অনলাইনের হাজারো গুজব ও উসকানি থেকে মুক্ত থাকবেন তাঁরা।
সূত্র: রিডার্স ডাইজেস্ট
আরও পড়ুনমাত্রাতিরিক্ত স্ক্রিনটাইম যেভাবে নিয়ন্ত্রণ করবেন০১ সেপ্টেম্বর ২০২৩