রোদের তাপ বাড়ছে দিন দিন। গরমের দিনগুলোতে খাবারদাবারের ব্যাপারে যেমন সতর্ক থাকা প্রয়োজন, তেমনি পোশাক বাছাইয়ের ক্ষেত্রেও চাই বিশেষ নজর। সে ক্ষেত্রে সুতি বা এ ধরনের কোনো হালকা পোশাক পরলে ভালো। তবে শুধু ফ্যাব্রিক নয়, পোশাকের রঙের ওপরেও নির্ভর করে শারীরিক অস্বস্তির বিষয়টি। বিস্তারিত জানাচ্ছেন আশিকা নিগার
গরমের কারণে হাঁসফাঁস করা দিনগুলোয় আরামদায়ক পোশাক পরা শুধু বিলাসিতা নয়, এটি প্রয়োজন। আরাম মানে স্টাইল থেকে পিছিয়ে পড়া, তা কিন্তু নয়। গরমে আরামদায়ক পোশাক নির্বাচন করার অর্থ নিজের ত্বক ও মনের যত্ন নেওয়া, আবার একই সঙ্গে স্টাইল বজায় রাখা।
ফ্যাশন বিশেষজ্ঞদের মতে, গরমে প্রাকৃতিক আঁশ থেকে তৈরি কাপড় যেমন সুতি, মসলিন, লিনেন কিংবা রেয়ন আদর্শ। পোশাকে হালকা রং থাকলে সূর্যের তাপ প্রতিফলিত হয়, যা অতিরিক্ত গরম লাগা থেকে ত্বককে রক্ষা করে। ঢিলেঢালা কাটের শার্ট, কামিজ, পালাজ্জো, কুর্তি বা ওভারসাইজ শার্ট এখনকার ট্রেন্ডেও আছে, আবার শরীরকেও রাখে আরামদায়ক।
প্রাকৃতিক কাপড়ের গুণ
এই সময়ে পোশাক পরিধানের ক্ষেত্রে আগে কাপড়ের দিকে খেয়াল রাখতে হবে। সুতির কাপড় গরমের জন্য সেরা।
হালকা ও ঠান্ডা রাখার বৈশিষ্ট্যের কারণে আরও কিছু কাপড়ের জনপ্রিয়তা আছে। এগুলো সিন্থেটিক কাপড়ের মতো গরম জমিয়ে রাখে না, বরং শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। গরমে আরামের জন্য হালকা, শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে পারে এমন ফেব্রিক বেছে নেওয়া সবচেয়ে ভালো।
কটন
এটি সাধারণত হালকা, নরম এবং আরামদায়ক হয়। গরমে ঘাম শোষণ করে, ফলে শরীর ঠান্ডা থাকে। তাছাড়া ত্বকের জন্য উপযোগী, অ্যালার্জি নেই। দামে সাশ্রয়ী। এ ছাড়া ধোয়া ও যত্ন নেওয়া সহজ বলে দৈনন্দিন ব্যবহারের উপযোগী।
লিনেন
ফ্ল্যাক্স উদ্ভিদের তন্তু থেকে তৈরি এই লিনেন কাপড়; যা খুব হালকা ও বাতাস চলাচলে সহায়ক বলে গরমে শরীর থেকে দ্রুত ঘাম শুষে নেয়। এ কাপড় তাপ শোষণ কম করে। তাছাড়া ফ্যাশনেবল ও প্রিমিয়াম লুকও দেয়।
রেয়ন
এটি সেলুলোজ (গাছের তন্তু) থেকে তৈরি আধা-কৃত্রিম কাপড়, যা দেখতে অনেকটা সিল্কের মতো ঝকঝকে এবং গরমে শীতল অনুভূতি দেয়। এটি নরম, হালকা এবং ঢিলেঢালা হওয়ায় গরমে আরামদায়ক হয়। এই কাপড় গরমের জন্য উপযোগী, অনেক ডিজাইন ও রঙে পাওয়া যায় ।
চামব্রে
এ কাপড় দেখতে ডেনিমের মতো হলেও পাতলা ও হালকা থাকে; যা সাধারণত কটনের তৈরি। সহজে বায়ু চলাচল করতে পারে বলে ডেনিম লুক থাকলেও গরমে পরার উপযুক্ত এই কাপড়। তাছাড়া ক্যাজুয়াল ও স্টাইলিশ ।
রং ও কাটিংয়ের গুরুত্ব
গ্রীষ্মে গাঢ় রঙের পোশাক গরম শোষণ করে; ফলে বেশি ঘাম হয়। এর বিপরীতে হালকা রং যেমন সাদা, অফ হোয়াইট, প্যাস্টেল শেড ইত্যাদি সূর্যের আলো প্রতিফলিত করে এবং আরামদায়ক অনুভব হয়। এ জন্য পোশাক নির্বাচনে রঙের ব্যাপারটাও মাথায় রাখতে হবে। ঢিলেঢালা কাটের শার্ট, কামিজ, কুর্তি, পালাজ্জো, ম্যাক্সি ড্রেস, ওভারসাইজ শার্ট, কাইমোনো ইত্যাদি পোশাক যেমন আরামদায়ক তেমনি ট্রেন্ডি।
নকশায় হোক স্বাচ্ছন্দ্যের ছোঁয়া
গরমে ফ্যাশন মানে শুধুই জাঁকজমক নয়, বরং হালকা এবং প্রাকৃতিক নকশার প্রতিফলন। ফুলেল প্রিন্ট, হ্যান্ড ব্লক বা টাই-ডাই ডিজাইন, মিনিমাল কাট এবং আরামদায়ক ফিট এখনকার ফ্যাশনে আধিপত্য বিস্তার করছে।
কোথায় পাবেন
এ সময়টায় দেশীয় ফ্যাশন হাউসগুলোয় পেয়ে যাবেন গরমের বাহারি পোশাক কালেকশন। ফ্যাশন হাউস কে ক্রাফট, দেশাল, সাদা-কালো, রঙ বাংলাদেশ, লা রিভ, বিসর্গ, দেশীদশসহ দেশের সব ফ্যাশন হাউসে রয়েছে সামার কালেকশনের ভরপুর কেনাবেচা। বিভিন্ন অনলাইন পেজ তো রয়েছেই। তাছাড়া যারা একটু স্বল্প দামের মধ্যে কেনাকাটা করতে চান তারা নিউমার্কেট, নুরজাহান মার্কেট, উত্তরার রাজলক্ষ্মীসহ আরও বিভিন্ন মার্কেটেও পেয়ে যাবেন আপনার পছন্দের পোশাক।
তবে কেনাকাটার সময় শুধু স্টাইলের কথা চিন্তা না করে আরামের কথাও মাথায় রাখা উচিত।
কী ধরনের পোশাক পরবেন
গরমকালে আপনি কী ধরনের পোশাক পরবেন, সেটি নির্ভর করে আপনি কোথায় যাচ্ছেন তার ওপর। যেমন–বাড়িতে, অফিসে, বাইরে, পার্টিতে অর্থাৎ স্থানভেদে পোশাক নির্বাচন।
ছেলেদের পোশাক
বাড়িতে বা ক্যাজুয়াল আউটফিটে সুতির হাফহাতা টি-শার্টের সঙ্গে হালকা রঙের স্লিম বা লুজ ফিট প্যান্ট/চিনো, কটন হাফ প্যান্ট পরতে পারেন। ফরমাল পরিবেশে হালকা রঙের কটন শার্ট, কটন বা লিনেন ট্রাউজার, স্লিম ফিট কুর্তা-পায়জামা (সেমি-ফরমাল দিনে) পরা যায়। বাইরে ঘোরাফেরা বা আউটিংয়ের সময় হাফহাতা কটন শার্ট বা পলো টি-শার্ট, লুজ ফিট প্যান্ট, চিনো বা হাফ প্যান্ট পরতে পারেন।
মেয়েদের পোশাক
বাড়িতে বা ক্যাজুয়াল আউটফিটে কটন সালোয়ার-কামিজ কিংবা লুজ ফিট কুর্তির সঙ্গে নরম-পাতলা কটন টপ ও পায়জামা অথবা পালাজ্জো। হালকা ফ্রক বা ম্যাক্সি ড্রেস পরে স্বস্তি বোধ করতে পারেন।
অফিস বা ফরমাল পরিবেশে কটন কুর্তি ও পালাজ্জো-সালোয়ার অথবা হালকা রঙের কটন শাড়িতে আরামদায়ক এবং স্টাইলিশ দুটোই লাগবে। বাইরে ঘোরাফেরা বা আউটিংয়ের ক্ষেত্রে লুজ কটন টপ ও জিনস বা স্কার্ট অথবা ক্যাজুয়াল কুর্তি ও লেগিংস পরতে পারেন; যা আপনাকে দেখতেও স্মার্ট দেখাবে।
কে ক্রাফট-এর স্বত্বাধিকারী খালিদ মাহমুদ বলেন, ‘গরমে স্বস্তি দেবে এমন আরামের পোশাক বাছাইয়ের ক্ষেত্রে কাট/ প্যাটার্ন, রঙের বিন্যাস এবং ফেব্রিকের ব্যবহারটাও গুরুত্বপূর্ণ। এই গরমে স্বস্তির জন্য প্যাস্টাল শেডে সুদিং কালার কম্বিনেশনে কটন বা ভিসকস মিক্স কাপড়ে কুর্তি, মিডি বা সিঙ্গেল কামিজ বেছে নিতে পারেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘অলংকরণ বা কারুকাজের বাহুল্য এড়িয়ে, কমফোর্টেবল ফিটিং-এর প্যাটার্নবেজড পোশাক এ সময়ের জন্য সবচেয়ে উপযোগী।’
গরমের পোশাক নিয়ে লা রিভের ডিজাইনার মারুফা শিল্পী বলেন, ‘গরমের জন্য একটু ঢিলেঢালা পোশাক, আরামদায়ক কাপড়ে সবাই স্বস্তি খোঁজে। যেমন কুর্তি বা টিউনিক যেগুলোর প্যাটার্ন একটু ঢিলেঢালা ফিটিং, ফ্লেয়ারেড করা, প্লেট সেট করা থাকে। স্লিভের ক্ষেত্রে লুজ প্যাটার্ন বা শর্ট, কোয়ার্টার স্লিভ– এ ধরনের পোশাকগুলো বেশি মানানসই। ফেব্রিকের ক্ষেত্রে আমরা ভিসকস বা কটনকে বেশি প্রাধান্য দিই, যা পরার জন্য আরামদায়ক হবে। অতিরিক্ত গরমে যাতে অস্বস্তি না হয় ।’
রং নির্বাচনের ক্ষেত্রে মারুফা বলেন, ‘প্যাস্টেল রংগুলো গরমের জন্য বেশি উপযোগী। যেমন হালকা পিংক, আকাশি, সবুজ, হলুদ– এ রংগুলোকে আমরা রাখছি।’ প্রিন্টের ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘কিছু স্টাইপ বা ডটের প্রিন্টগুলো আমরা গরমের জন্য রাখি আর কিছু ফ্লোরাল প্রিন্টও থাকবে।’
মডেল: ভাষা জাহাঙ্গীর; মেকওভার: পারসোনা; পোশাক: কে ক্রাফট; ছবি: ফয়সাল সিদ্দিক কাব্য
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ম র জন য প শ ক পর উপয গ ধরন র
এছাড়াও পড়ুন:
সার্চ দুনিয়ার নতুন দিগন্ত জিইও: দেশের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো কী প্
ইন্টারনেট সার্চ দুনিয়ায় চলছে নীরব এক বিপ্লব। তথ্য খোঁজার ধরন বদলে যাচ্ছে আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে দ্রুত। আগে যেখানে গুগলে উচ্চ র্যাংকিং মানেই ছিল সাফল্য, এখন সেই জায়গা নিচ্ছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই)-নির্ভর সার্চ টুল।
সার্চ জগতের নতুন চ্যালেঞ্জ
চ্যাটজিপিটি, গুগল জেমিনি, মাইক্রোসফট কপিলট কিংবা পারপ্লেক্সিটি এআই-এগুলো আর শুধু সার্চ ইঞ্জিন নয়, বরং উত্তর তৈরিকারক ইঞ্জিন। ব্যবহারকারী এখন শুধু ‘লিংক’ নয়, বরং সরাসরি উত্তর পেতে চায়। আর এই পরিবর্তনের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার জন্যই এসেছে নতুন এক কৌশল- জিইও বা জেনারেটিভ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন।
জিইও কী?
জিইও (জেনারেটিভ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন) হলো এমন একটি প্রক্রিয়া, যেখানে আপনার ওয়েবসাইট ও কনটেন্ট এমনভাবে সাজানো হয় যাতে এআই-চালিত সার্চ ইঞ্জিন সহজেই আপনার তথ্য চিনতে, বুঝতে এবং ব্যবহারকারীর প্রশ্নের উত্তরে সেটি অন্তর্ভুক্ত করতে পারে।
আগে ব্র্যান্ডগুলোর ফোকাস ছিল গুগলের প্রথম পাতায় জায়গা করে নেওয়া। কিন্তু এখন গুরুত্ব পাচ্ছে- চ্যাটজিপিটি বা জেমিনি-এর উত্তরে আপনার ব্র্যান্ডের নাম আসছে কি না!
এসইও বনাম জিইও: সার্চ দুনিয়ার নতুন যুগের পালাবদল
অনেকেই এসইও (সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন) এবং জিইও (জেনারেটিভ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন) এক মনে করেন, কিন্তু এদের মধ্যে মূলত লক্ষ্য ও কৌশল ভিন্ন। এসইও হচ্ছে পুরোনো পদ্ধতি, অন্যদিকে জিইও হচ্ছে নতুন পদ্ধতি।
* মূল লক্ষ্য
এসইও: সার্চ ইঞ্জিনে র্যাংক বাড়ানো
জিইও: এআই সার্চের উত্তরে দৃশ্যমান হওয়া
* কাজের ধরন
এসইও: কিওয়ার্ড ও ব্যাকলিংক ভিত্তিক
জিইও: কনটেক্সট, প্রাসঙ্গিকতা ও ব্র্যান্ড অথরিটি নির্ভর
* ফলাফল
এসইও: ক্লিক ও ট্রাফিক বৃদ্ধি
জিইও: ব্র্যান্ড উল্লেখ ও আস্থা বৃদ্ধি
* প্ল্যাটফর্ম
এসইও: গুগল, বিং ইত্যাদি সার্চ ইঞ্জিন
জিইও: চ্যাটজিপিটি, জেমিনি, পারপ্লেক্সিটি, এসজিই ইত্যাদি এআই সার্চ
এসইও এখনও গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু ভবিষ্যতের সার্চ ইকোসিস্টেমে জিইও সমান অপরিহার্য হয়ে উঠছে।
বাংলাদেশি ব্যবসার জন্য জিইও-এর গুরুত্ব
বাংলাদেশে ডিজিটাল মার্কেটের ক্রমবর্ধমান প্রবৃদ্ধি স্পষ্টভাবে লক্ষ্য করা যাচ্ছে। শিক্ষা, ট্রাভেল, স্বাস্থ্যসেবা, ই-কমার্স, রিয়েল এস্টেট- প্রায় প্রতিটি খাতেই ব্যবসা অনলাইনে আরো দৃশ্যমান হতে চাচ্ছে। কিন্তু বদলেছে মানুষের সার্চ করার ধরন। এখন তারা শুধু গুগলে সার্চ করেই সন্তুষ্ট থাকছে না, তারা এআই-চালিত সার্চ টুলগুলো যেমন চ্যাটজিপিটি, জেমিনি বা পারপ্লেক্সিটি-এর মাধ্যমে সরাসরি উত্তর খুঁজছে।
গার্টনারের এক গবেষণা অনুযায়ী, ২০২৬ সালের মধ্যে প্রচলিত সার্চ ইঞ্জিনে সার্চ ভলিউম প্রায় ২৫ শতাংশ কমে যাবে- কারণ ব্যবহারকারীরা দ্রুতই এআই-চালিত সার্চ ও চ্যাটবটের দিকে ঝুঁকছে। (তথ্যসূত্র: Gartner, “Search Engine Volume Will Drop 25% by 2026, Due to AI Chatbots and Other Virtual Agents)
তবে এই পরিবর্তনের প্রভাব ব্যবসার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। ধরুন, কেউ চ্যাটজিপিটি-তে লিখল, ‘ঢাকায় সেরা অ্যাকাউন্টিং ফার্ম কোনটি?’ যদি আপনার কোম্পানির নাম বা কনটেন্ট এআই-এর তৈরি উত্তরে না আসে, তাহলে সম্ভাব্য ক্লায়েন্ট ও ব্যবসার সুযোগ হাতছাড়া হচ্ছে।
মূলত এখানেই জিইও-এর গুরুত্ব উঠে আসে। জিইও ব্যবহার করে কনটেন্ট এমনভাবে সাজানো যায় যাতে এআই সার্চ সিস্টেম আপনার ব্র্যান্ডকে সহজেই চিনতে পারে, বুঝতে পারে এবং ব্যবহারকারীর প্রশ্নের উত্তরে উল্লেখ করে। অর্থাৎ, বাংলাদেশের প্রতিটি ব্যবসা যদি এআই-এর দুনিয়ায় দৃশ্যমান থাকতে চায়, জিইও’র সঙ্গে খাপ খাওয়ানো এখন আর বিকল্প নয়- এটি একান্ত প্রয়োজন।
জিইও’র জন্য কীভাবে প্রস্তুতি নেবেন?
জেনারেটিভ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন (জিইও) কোনো একদিনে শেখার মতো বিষয় না- এটি একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া, যেখানে ব্যবসাগুলোকে নিজেদের কনটেন্ট, উপস্থিতি ও বিশ্বাসযোগ্যতা এআই-বান্ধব করে গড়ে তুলতে হয়। নিচে ধাপে ধাপে দেখা যাক, কীভাবে আপনি জিইও’র পথে প্রস্তুত হতে পারবেন।
১. অনলাইন উপস্থিতি যাচাই করুন
জিইও’র প্রথম ধাপ হলো আপনার ব্যবসা বা ব্র্যান্ডের বর্তমান অনলাইন উপস্থিতি যাচাই করা। চ্যাটজিপিটি বা পারপ্লেক্সিটি-এর মতো এআই-চালিত সার্চ টুলে সার্চ দিন ‘বাংলাদেশে সেরা (আপনার ইন্ডাস্ট্রি)-এর কোম্পানিগুলো কোনগুলো?’
যদি সার্চের উত্তরে আপনার নাম না আসে, বোঝা যাবে যে আপনার এআই-দৃশ্যমানতা এখনও সীমিত। এই ক্ষেত্রে আপনাকে জিইও অনুযায়ী কনটেন্ট ও অনলাইন উপস্থিতি বাড়াতে কাজ শুরু করতে হবে।
২. বিশ্বাসযোগ্যতা তৈরি করুন
জেনারেটিভ এআই সার্চ সিস্টেম সেই উৎসকেই অগ্রাধিকার দেয়, যা নির্ভরযোগ্য ও যাচাইযোগ্য। তাই আপনার ওয়েবসাইটে ব্র্যান্ড, টিম, যোগাযোগ ও রিভিউসহ সব তথ্য সম্পূর্ণ ও স্বচ্ছ রাখুন।
গুগল বিজনেস প্রোফাইল নিয়মিত আপডেট করুন- ঠিকানা, সময়, পোস্ট ও রিভিউসহ।
বিশ্বস্ত সংবাদমাধ্যম ও ব্লগে ব্র্যান্ডের উল্লেখ বাড়ান।
E-E-A-T (Experience, Expertise, Authoritativeness, Trustworthiness) বজায় রাখুন।
এভাবেই এআই ও ব্যবহারকারীর কাছে আপনার ব্র্যান্ড একটি বিশ্বাসযোগ্য সোর্স হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে- যা জিইও সাফল্যের মূল চাবিকাঠি।
৩. কনভারসেশনাল কনটেন্ট লিখুন
এআই সার্চ এখন ব্যবহারকারীর প্রশ্নভিত্তিক অনুসন্ধানকে গুরুত্ব দেয়। তাই আপনার কনটেন্ট তৈরি করুন এমনভাবে যেন এটি প্রাকৃতিক প্রশ্ন ও কথোপকথনের মতো শোনায়। উদাহরণ: ‘Where can I find a trusted IELTS coaching center in Dhaka?’ ‘Where can I apply for a blue-collar job?’ এ ধরনের কনটেন্ট এআই-এর চোখে আরো সহজে বোঝার মতো হয় এবং ব্যবহারকারীর প্রশ্নের উত্তর হিসেবে উল্লেখযোগ্য।
৪. বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে সক্রিয় থাকুন
এআই শুধু ওয়েবসাইট থেকে তথ্য সংগ্রহ করে না। এটি ফেসবুক, ইউটিউব, লিংকডইন, কোরা এবং অন্যান্য সোশ্যাল প্ল্যাটফর্ম থেকেও তথ্য সংগ্রহ করে। তাই বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে আপনার উপস্থিতি নিশ্চিত করা জিইও-এর জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
৫. এসইও এবং জিইও একসাথে ব্যবহার করুন
ডিজিটাল দুনিয়ায় এখন শুধু সার্চ র্যাংকই যথেষ্ট নয়। এসইও যেমন গুগল সার্চে আপনার কনটেন্টকে শীর্ষে নিয়ে আসে, তেমনি নতুন যুগের জিইও (জেনারেটিভ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন) আপনার ব্র্যান্ডকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক সার্চে আরো দৃশ্যমান করে তোলে।
এসইও মূলত গুগল ও অন্যান্য সার্চ ইঞ্জিনে ওয়েবসাইটের অবস্থান উন্নত করে, আর জিইও শেখায়- কীভাবে এআই মডেলগুলো আপনার ব্র্যান্ডকে চিনবে, উল্লেখ করবে এবং বিশ্বাস করবে।
দুটি কৌশল একসাথে প্রয়োগ করলে অনলাইন উপস্থিতি অনেক বেশি শক্তিশালী হয়। একদিকে সার্চে দৃশ্যমানতা বাড়ে, অন্যদিকে এআই-নির্ভর প্ল্যাটফর্মগুলোতেও আপনার ব্র্যান্ডের নাম উঠে আসে স্বতঃস্ফূর্তভাবে।
ভবিষ্যতের সার্চ জগতে টিকে থাকতে হলে এখনই সময়- এসইও এবং জিইও-কে একসাথে কাজে লাগানোর।
বাংলাদেশের ব্যবসার জন্য জিইও’র নতুন সম্ভাবনা
জিইও বাংলাদেশের ব্যবসাগুলোর জন্য হতে পারে এক গেম চেঞ্জার। আগে যেখানে অনলাইন দৃশ্যমানতা মানেই ছিল গুগলে র্যাংক করা, এখন সেটি ধীরে ধীরে স্থান ছেড়ে দিচ্ছে এআই সার্চ ভিজিবিলিটি–কে।
আজ যদি কোনো ব্যবহারকারী চ্যাটজিপিটি বা জেমিনি-তে জিজ্ঞেস করে-
‘বাংলাদেশে নির্ভরযোগ্য অনলাইন বই বিক্রির সাইট কোনটা?’
অথবা, ‘ঢাকায় সেরা ডিজিটাল মার্কেটিং এজেন্সি কারা?’
যদি আপনার ব্র্যান্ডের নাম সেই উত্তরে উঠে আসে, সেটিই হবে প্রকৃত দৃশ্যমানতা- শুধু ক্লিক নয়, বরং আস্থা, প্রভাব ও ব্র্যান্ড অথরিটি–এর প্রতিফলন।
বাংলাদেশে এখন প্রতিদিন শত শত নতুন অনলাইন ব্যবসা শুরু হচ্ছে- ই–কমার্স, এডুকেশন, হেলথটেক, রিয়েল এস্টেট, ফাইন্যান্স, এমনকি ছোট স্টার্টআপরাও দ্রুত ডিজিটাল হচ্ছে। কিন্তু একইসঙ্গে প্রতিযোগিতাও বেড়ে যাচ্ছে বহুগুণে।
এই প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে শুধু এসইও নয়, জিইও–কেন্দ্রিক কৌশলও অপরিহার্য।
জিইও’র ভবিষ্যৎ
খুব শিগগিরই এআই সার্চ টেক্সটের বাইরে গিয়ে ভয়েস, ভিডিও ও ইমেজ কনটেন্ট থেকেও উত্তর তৈরি করবে। তখন জিইও কেবল ওয়েবসাইট নয়, বরং ভিডিও, পডকাস্ট, সোশ্যাল প্রোফাইল, নিউজ রিপোর্ট- সবকিছুর মধ্যেই প্রভাব ফেলবে।
তাই এখন থেকেই যারা জিইও-কেন্দ্রিক কৌশল গ্রহণ করবে, ভবিষ্যতের সার্চ রেভোলিউশনে নেতৃত্ব দেবে তারাই।
উপসংহার
জেনারেটিভ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন (জিইও) শুধু নতুন ট্রেন্ড নয়- এটি ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের পরবর্তী অধ্যায়।
এসইও যেমন আপনাকে সার্চ রেজাল্টে নিয়ে যায়, জিইও তেমনি আপনাকে নিয়ে যাবে এআই–এর উত্তরে।
‘ভবিষ্যতের সার্চে র্যাংক নয়, ব্র্যান্ডের বিশ্বাসযোগ্যতাই হবে সাফল্যের আসল মাপকাঠি।’
লেখক: হেড অব ওয়েব অ্যানালাইসিস অ্যান্ড এসইও ডিরেক্টর, ইন্টেলেক আইটি এলএলসি (ইউএসএ অ্যান্ড বাংলাদেশ)
ঢাকা/ফিরোজ