রোদের তাপ বাড়ছে দিন দিন। গরমের দিনগুলোতে খাবারদাবারের ব্যাপারে যেমন সতর্ক থাকা প্রয়োজন, তেমনি পোশাক বাছাইয়ের ক্ষেত্রেও চাই বিশেষ নজর। সে ক্ষেত্রে সুতি বা এ ধরনের কোনো হালকা পোশাক পরলে ভালো। তবে শুধু ফ্যাব্রিক নয়, পোশাকের রঙের ওপরেও নির্ভর করে শারীরিক অস্বস্তির বিষয়টি। বিস্তারিত জানাচ্ছেন আশিকা নিগার
গরমের কারণে হাঁসফাঁস করা দিনগুলোয় আরামদায়ক পোশাক পরা শুধু বিলাসিতা নয়, এটি প্রয়োজন। আরাম মানে স্টাইল থেকে পিছিয়ে পড়া, তা কিন্তু নয়। গরমে আরামদায়ক পোশাক নির্বাচন করার অর্থ নিজের ত্বক ও মনের যত্ন নেওয়া, আবার একই সঙ্গে স্টাইল বজায় রাখা।
ফ্যাশন বিশেষজ্ঞদের মতে, গরমে প্রাকৃতিক আঁশ থেকে তৈরি কাপড় যেমন সুতি, মসলিন, লিনেন কিংবা রেয়ন আদর্শ। পোশাকে হালকা রং থাকলে সূর্যের তাপ প্রতিফলিত হয়, যা অতিরিক্ত গরম লাগা থেকে ত্বককে রক্ষা করে। ঢিলেঢালা কাটের শার্ট, কামিজ, পালাজ্জো, কুর্তি বা ওভারসাইজ শার্ট এখনকার ট্রেন্ডেও আছে, আবার শরীরকেও রাখে আরামদায়ক।
প্রাকৃতিক কাপড়ের গুণ
এই সময়ে পোশাক পরিধানের ক্ষেত্রে আগে কাপড়ের দিকে খেয়াল রাখতে হবে। সুতির কাপড় গরমের জন্য সেরা।
হালকা ও ঠান্ডা রাখার বৈশিষ্ট্যের কারণে আরও কিছু কাপড়ের জনপ্রিয়তা আছে। এগুলো সিন্থেটিক কাপড়ের মতো গরম জমিয়ে রাখে না, বরং শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। গরমে আরামের জন্য হালকা, শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে পারে এমন ফেব্রিক বেছে নেওয়া সবচেয়ে ভালো।
কটন
এটি সাধারণত হালকা, নরম এবং আরামদায়ক হয়। গরমে ঘাম শোষণ করে, ফলে শরীর ঠান্ডা থাকে। তাছাড়া ত্বকের জন্য উপযোগী, অ্যালার্জি নেই। দামে সাশ্রয়ী। এ ছাড়া ধোয়া ও যত্ন নেওয়া সহজ বলে দৈনন্দিন ব্যবহারের উপযোগী।
লিনেন
ফ্ল্যাক্স উদ্ভিদের তন্তু থেকে তৈরি এই লিনেন কাপড়; যা খুব হালকা ও বাতাস চলাচলে সহায়ক বলে গরমে শরীর থেকে দ্রুত ঘাম শুষে নেয়। এ কাপড় তাপ শোষণ কম করে। তাছাড়া ফ্যাশনেবল ও প্রিমিয়াম লুকও দেয়।
রেয়ন
এটি সেলুলোজ (গাছের তন্তু) থেকে তৈরি আধা-কৃত্রিম কাপড়, যা দেখতে অনেকটা সিল্কের মতো ঝকঝকে এবং গরমে শীতল অনুভূতি দেয়। এটি নরম, হালকা এবং ঢিলেঢালা হওয়ায় গরমে আরামদায়ক হয়। এই কাপড় গরমের জন্য উপযোগী, অনেক ডিজাইন ও রঙে পাওয়া যায় ।
চামব্রে
এ কাপড় দেখতে ডেনিমের মতো হলেও পাতলা ও হালকা থাকে; যা সাধারণত কটনের তৈরি। সহজে বায়ু চলাচল করতে পারে বলে ডেনিম লুক থাকলেও গরমে পরার উপযুক্ত এই কাপড়। তাছাড়া ক্যাজুয়াল ও স্টাইলিশ ।
রং ও কাটিংয়ের গুরুত্ব
গ্রীষ্মে গাঢ় রঙের পোশাক গরম শোষণ করে; ফলে বেশি ঘাম হয়। এর বিপরীতে হালকা রং যেমন সাদা, অফ হোয়াইট, প্যাস্টেল শেড ইত্যাদি সূর্যের আলো প্রতিফলিত করে এবং আরামদায়ক অনুভব হয়। এ জন্য পোশাক নির্বাচনে রঙের ব্যাপারটাও মাথায় রাখতে হবে। ঢিলেঢালা কাটের শার্ট, কামিজ, কুর্তি, পালাজ্জো, ম্যাক্সি ড্রেস, ওভারসাইজ শার্ট, কাইমোনো ইত্যাদি পোশাক যেমন আরামদায়ক তেমনি ট্রেন্ডি।
নকশায় হোক স্বাচ্ছন্দ্যের ছোঁয়া
গরমে ফ্যাশন মানে শুধুই জাঁকজমক নয়, বরং হালকা এবং প্রাকৃতিক নকশার প্রতিফলন। ফুলেল প্রিন্ট, হ্যান্ড ব্লক বা টাই-ডাই ডিজাইন, মিনিমাল কাট এবং আরামদায়ক ফিট এখনকার ফ্যাশনে আধিপত্য বিস্তার করছে।
কোথায় পাবেন
এ সময়টায় দেশীয় ফ্যাশন হাউসগুলোয় পেয়ে যাবেন গরমের বাহারি পোশাক কালেকশন। ফ্যাশন হাউস কে ক্রাফট, দেশাল, সাদা-কালো, রঙ বাংলাদেশ, লা রিভ, বিসর্গ, দেশীদশসহ দেশের সব ফ্যাশন হাউসে রয়েছে সামার কালেকশনের ভরপুর কেনাবেচা। বিভিন্ন অনলাইন পেজ তো রয়েছেই। তাছাড়া যারা একটু স্বল্প দামের মধ্যে কেনাকাটা করতে চান তারা নিউমার্কেট, নুরজাহান মার্কেট, উত্তরার রাজলক্ষ্মীসহ আরও বিভিন্ন মার্কেটেও পেয়ে যাবেন আপনার পছন্দের পোশাক।
তবে কেনাকাটার সময় শুধু স্টাইলের কথা চিন্তা না করে আরামের কথাও মাথায় রাখা উচিত।
কী ধরনের পোশাক পরবেন
গরমকালে আপনি কী ধরনের পোশাক পরবেন, সেটি নির্ভর করে আপনি কোথায় যাচ্ছেন তার ওপর। যেমন–বাড়িতে, অফিসে, বাইরে, পার্টিতে অর্থাৎ স্থানভেদে পোশাক নির্বাচন।
ছেলেদের পোশাক
বাড়িতে বা ক্যাজুয়াল আউটফিটে সুতির হাফহাতা টি-শার্টের সঙ্গে হালকা রঙের স্লিম বা লুজ ফিট প্যান্ট/চিনো, কটন হাফ প্যান্ট পরতে পারেন। ফরমাল পরিবেশে হালকা রঙের কটন শার্ট, কটন বা লিনেন ট্রাউজার, স্লিম ফিট কুর্তা-পায়জামা (সেমি-ফরমাল দিনে) পরা যায়। বাইরে ঘোরাফেরা বা আউটিংয়ের সময় হাফহাতা কটন শার্ট বা পলো টি-শার্ট, লুজ ফিট প্যান্ট, চিনো বা হাফ প্যান্ট পরতে পারেন।
মেয়েদের পোশাক
বাড়িতে বা ক্যাজুয়াল আউটফিটে কটন সালোয়ার-কামিজ কিংবা লুজ ফিট কুর্তির সঙ্গে নরম-পাতলা কটন টপ ও পায়জামা অথবা পালাজ্জো। হালকা ফ্রক বা ম্যাক্সি ড্রেস পরে স্বস্তি বোধ করতে পারেন।
অফিস বা ফরমাল পরিবেশে কটন কুর্তি ও পালাজ্জো-সালোয়ার অথবা হালকা রঙের কটন শাড়িতে আরামদায়ক এবং স্টাইলিশ দুটোই লাগবে। বাইরে ঘোরাফেরা বা আউটিংয়ের ক্ষেত্রে লুজ কটন টপ ও জিনস বা স্কার্ট অথবা ক্যাজুয়াল কুর্তি ও লেগিংস পরতে পারেন; যা আপনাকে দেখতেও স্মার্ট দেখাবে।
কে ক্রাফট-এর স্বত্বাধিকারী খালিদ মাহমুদ বলেন, ‘গরমে স্বস্তি দেবে এমন আরামের পোশাক বাছাইয়ের ক্ষেত্রে কাট/ প্যাটার্ন, রঙের বিন্যাস এবং ফেব্রিকের ব্যবহারটাও গুরুত্বপূর্ণ। এই গরমে স্বস্তির জন্য প্যাস্টাল শেডে সুদিং কালার কম্বিনেশনে কটন বা ভিসকস মিক্স কাপড়ে কুর্তি, মিডি বা সিঙ্গেল কামিজ বেছে নিতে পারেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘অলংকরণ বা কারুকাজের বাহুল্য এড়িয়ে, কমফোর্টেবল ফিটিং-এর প্যাটার্নবেজড পোশাক এ সময়ের জন্য সবচেয়ে উপযোগী।’
গরমের পোশাক নিয়ে লা রিভের ডিজাইনার মারুফা শিল্পী বলেন, ‘গরমের জন্য একটু ঢিলেঢালা পোশাক, আরামদায়ক কাপড়ে সবাই স্বস্তি খোঁজে। যেমন কুর্তি বা টিউনিক যেগুলোর প্যাটার্ন একটু ঢিলেঢালা ফিটিং, ফ্লেয়ারেড করা, প্লেট সেট করা থাকে। স্লিভের ক্ষেত্রে লুজ প্যাটার্ন বা শর্ট, কোয়ার্টার স্লিভ– এ ধরনের পোশাকগুলো বেশি মানানসই। ফেব্রিকের ক্ষেত্রে আমরা ভিসকস বা কটনকে বেশি প্রাধান্য দিই, যা পরার জন্য আরামদায়ক হবে। অতিরিক্ত গরমে যাতে অস্বস্তি না হয় ।’
রং নির্বাচনের ক্ষেত্রে মারুফা বলেন, ‘প্যাস্টেল রংগুলো গরমের জন্য বেশি উপযোগী। যেমন হালকা পিংক, আকাশি, সবুজ, হলুদ– এ রংগুলোকে আমরা রাখছি।’ প্রিন্টের ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘কিছু স্টাইপ বা ডটের প্রিন্টগুলো আমরা গরমের জন্য রাখি আর কিছু ফ্লোরাল প্রিন্টও থাকবে।’
মডেল: ভাষা জাহাঙ্গীর; মেকওভার: পারসোনা; পোশাক: কে ক্রাফট; ছবি: ফয়সাল সিদ্দিক কাব্য
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ম র জন য প শ ক পর উপয গ ধরন র
এছাড়াও পড়ুন:
গভীর রাতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারের বাড়িতে ককটেল বিস্ফোরণ
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক ইফতিখারুল আমল মাসঊদের বাড়িতে ককটেল বিস্ফোরণ করেছে দুর্বৃত্তরা। গতকাল বুধবার গভীর রাতে বিনোদপুরের মণ্ডলের মোড় এলাকায় তাঁর বাড়ির দরজার সামনে এ ঘটনা ঘটে। তবে এতে কেউ আহত হয়নি।
মতিহার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল মালেক প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। সেখানে তিনটি ককটেল বিস্ফোরণ করা হয়েছে। তবে কে বা কারা এটি করেছে, সে বিষয়ে এখনো কিছু জানা যায়নি। এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগও কেউ করেনি। তাঁরা দুর্বৃত্তদের শনাক্তের চেষ্টা করছেন।
এ বিষয়ে কথা বলতে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ইফতিখারুল আমল মাসঊদের মুঠোফোন নম্বরে একাধিকবার কল করলেও তিনি সাড়া দেননি। তবে ঘটনার পর তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে একটি পোস্টে লিখেছেন, ‘ফ্যাসিবাদী অপশক্তির জুলুম-নিপীড়নের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলাম। কোনো রক্তচক্ষুর ভয়ংকর হুমকি অন্যায়ের প্রতিবাদ করা থেকে বিরত রাখতে পারেনি। তবে তারা কখনো বাড়ি পর্যন্ত আসার ঔদ্ধত্য দেখাতে পারেনি। কিন্তু আজ আমার বাড়ির দরজায় গভীর রাতের অন্ধকারে হামলার সাহস দেখিয়েছে কাপুরুষের দল! এরা কারা? এদের শিকড়সহ উৎপাটনের দাবি জানাই।’
এ ঘটনার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহউপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন খান ফেসবুকে লিখেছেন, ‘তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। ভেবেছিলাম বাড়ির গেটে কিংবা গেটের বাইরে। কিন্তু গিয়ে দেখলাম একেবারে বাড়িতে হামলা হয়েছে। গতকালই ওনার অসুস্থ বাবা হাসপাতাল থেকে রিলিজ নিয়ে বাসায় এসেছেন। জানি না শেষ কবে একজন শিক্ষকের বাড়িতে রাতের আঁধারে এভাবে সন্ত্রাসী হামলা হয়েছে। আমরা শঙ্কিত, স্তম্ভিত।’
এদিকে হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশের ডাক দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। আজ বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ শামসুজ্জোহা চত্বরে এ সমাবেশের আয়োজন চলছে।