ফাগুন শুরুর মধ্য দিয়ে প্রকৃতিতে এসেছে বসন্ত। শীতের আড়ষ্টতা কেটে প্রকৃতি সতেজ হতে শুরু করেছে, বিদায়ের সময় হয়েছে কুহেলিকার। ষড়ঋতুর বৈচিত্র্যময় এ দেশে ঋতুরাজের আগমনে নৈসর্গিক সৌন্দর্য্য ফুটে উঠেছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি)। যেন বসন্তের হাওয়ায় ফুলের সুবাসে দুলছে ক্যাম্পাস।

বাংলায় ফাল্গুন ও চৈত্র এ দুমাসে বসন্তকাল। শীতের বৈরিতায় সবাই যখন জবুথুবু, তখনই স্নিগ্ধ রোদের প্রশান্তির বাতাস ও প্রকৃতিতে বর্ণিল সাজ নিয়ে হাজির হয় ঋতুরাজ। পাতা ঝরা শীতের পর নতুন নতুন পাতায় গাছগুলো পুনরায় সজীব-সবুজ হতে শুরু করে। মায়াবী কণ্ঠে ডাকে কোকিল। কোকিলের কুহু ডাক নিশ্চিত করে, এটা বসন্ত। প্রজাপতি উঠে বেড়ায়, মৌমাছিরা ব্যস্ত হয়ে পড়ে মধু আহরণে। 

বসন্ত উপলক্ষে রং-বেরঙের ফুলে রঙিন হয়ে উঠেছে ক্যাম্পাস। লাল, সবুজ, হলুদ, কমলা, বেগুনিসহ নানা রঙ ঝিকিমিকি করছে চারদিক। প্রজাপতিও রঙিন ডানা নিয়ে উড়ে বেড়াচ্ছে এদিক-ওদিক। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ জায়গাগুলোতে ফোটা বাহারি ফুলের মেলা শিক্ষার্থী, দর্শনার্থীসহ সবার নজর কেড়েছে। 

সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের বোটানিক্যাল গার্ডেন, ফরেস্ট্রি ইনস্টিটিউট, আবাসিক এলাকা, কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি, জাদুঘর, মেডিকেল সেন্টার, ফরেস্টি এলাকা, প্রশাসনিক ভবন, চবি উদ্যান, বিভিন্ন আবাসিক হল এবং অনুষদ প্রাঙ্গণে ফুটেছে নানা প্রজাতির ফুল।

এর মধ্যে গোলাপ, গাঁদা, টগর, সূর্যমুখী, ডালিয়া, চন্দ্রমল্লিকা, কসমস ও ক্যালোন্ডুলাস অন্যতম। এসব ফুলের সৌরভ মাতিয়ে রেখেছে চারিদিক। বিশেষ করে নতুন কলা ও মানববিদ্যা অনুষদ প্রাঙ্গণে ফুলের সাজগোজ এবার সবচেয়ে বেশি আলোচনায়। সেখানের বাহারি ফুলের সৌন্দর্য যে কাউকে মুগ্ধ করবেই।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের আরবি সাহিত্য বিভাগের শিক্ষার্থী সাকিব উল্লাহ বলেন, “বসন্তকাল প্রকৃতির সৌন্দর্যের এক বিশেষ সময়। বসন্তকে বলা হয় ঋতুর রাজা। চবি ক্যাম্পাসটি পাহাড়, সবুজ গাছপালা ও প্রাকৃতিক জলাধার দ্বারা বেষ্টিত। বসন্তের আগমনে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের সৌন্দর্য যেন আরো নতুন মাত্রা পায়।”

তিনি বলেন, “ক্যাম্পাস জুড়ে রঙিন ফুলের সমারোহ, সবুজ প্রকৃতির সতেজতা, আর পাখির কলতান এক অনন্য পরিবেশ তৈরি করে। বিশেষ করে জারুল, কৃষ্ণচূড়া, পলাশ, শিমুল এবং টগর ফুলের রঙিন আভা পুরো ক্যাম্পাসকে মোহনীয় করে তুলেছে। বোটানিক্যাল গার্ডেন ও ঝর্ণাগুলো বসন্তকালে আরও আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে। বসন্তের সময় ফরেস্টি এলাকার সৌন্দর্যের কথা আলাদা করে না বললেই নয়।”

বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী সাবিহা ইয়াসমিন বলেন, “বসন্তে ক্যাম্পাসের আবহাওয়া খুবই মনোরম থাকে। হালকা ঠান্ডা বাতাস এবং রোদের মিষ্টি আলো ক্যাম্পাসের পরিবেশকে আরো আকর্ষণীয় করে তোলে। এ সময়ে এখানের পাহাড়ি পথ ধরে হাঁটলে প্রকৃতির সঙ্গে একাত্ম হওয়ার অনুভূতি পাওয়া যায়।”

তিনি বলেন, “নতুন ঋতুতে ক্যাম্পাসের নতুন রূপ ভীষণ মুগ্ধ করে। বসন্তের আগমনের সঙ্গে সঙ্গে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন পয়েন্টে ফোটা ফুল দেখলে মন ভালো হয়ে যায়। আর এমনিতেও ফুল মানুষের যান্ত্রিকতার তিক্ততা দূর করে আনন্দ দেয়। প্রকৃতির মত মানুষের জীবনেও লাগুক বসন্তের হাওয়া, সজিব হয়ে উঠুক প্রতিটি প্রাণ।”

ঢাকা/মেহেদী

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র স ন দর য বসন ত র

এছাড়াও পড়ুন:

আমিরাতকে হারিয়ে সুপার ফোরে পাকিস্তান

এশিয়া কাপ-২০২৫ এর সুপার ফোরে জায়গা করে নিলো আনপ্রেডিক্টেবল পাকিস্তান। বুধবার দিবাগত রাতে ‘এ’ গ্রুপে নিজেদের শেষ ম্যাচে স্বাগতিক আরব আমিরাতকে ৪১ রানের ব্যবধানে হারিয়ে ভারতের সঙ্গী হলো সালমান-শাহীনরা।

দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামের আলো-ঝলমলে রাতে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে পাকিস্তান সংগ্রহ করে ৯ উইকেটে ১৪৯ রান। লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ১৭.৪ ওভার পর্যন্ত টিকেছিল আমিরাত। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ১০৫ রানেই গুটিয়ে যায় তাদের ইনিংস। সেই সুবাদে সহজ জয় নিয়ে শেষ চারে জায়গা নিশ্চিত করে পাকিস্তান।

আরো পড়ুন:

আরব আমিরাতকে ১৪৭ রানের টার্গেট দিল পাকিস্তান

বেথেলের ইতিহাস গড়া দিনে ইংল্যান্ডের দাপুটে জয়

এই জয়ের নায়ক নিঃসন্দেহে শাহীন শাহ আফ্রিদি। বিপদের মুহূর্তে নামতে হয় তাকে ব্যাট হাতে। সেখানে ১৪ বলে ৩টি চার ও ২টি ছক্কার ঝড়ে অপরাজিত ২৯ রানের ইনিংস খেলেন তিনি, যা পাকিস্তানের সংগ্রহকে দাঁড় করায় লড়াইযোগ্য অবস্থানে। শুধু ব্যাটেই নয়, বল হাতেও ছিলেন সমান কার্যকর। ৩ ওভারে মাত্র ১৬ রান খরচ করে তুলে নেন ২টি গুরুত্বপূর্ণ উইকেট। এমন সর্বাঙ্গীন পারফরম্যান্সে স্বাভাবিকভাবেই ম্যাচসেরার পুরস্কার উঠে যায় তার ঝুলিতে।

তবু শুরুটা বেশ আশাব্যঞ্জক ছিল আমিরাতের। ১৩.৫ ওভার পর্যন্ত তারা প্রতিযোগিতায় টিকে ছিল দারুণভাবে। তিন উইকেট হারিয়ে সংগ্রহ করেছিল ৮৫ রান। কিন্তু এরপর যেন ধস নামে। মাত্র ২০ রানের ব্যবধানে বাকি সাত উইকেট হারিয়ে পুরো দল অলআউট হয়ে যায় ১০৫ রানে। দলের হয়ে সর্বোচ্চ ৩৫ রান করেন রাহুল চোপড়া, যার ইনিংসে ছিল ১টি চার ও ১টি ছক্কা। ধ্রুব পারাশার যোগ করেন ২০, মুহাম্মদ ওয়াসিম ১৪ এবং আলিশান শারাফু করেন ১২ রান।

পাকিস্তানের বোলিং আক্রমণে শাহীনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে দুটি করে উইকেট নেন হারিস রউফ ও আবরার আহমেদ।

এর আগে ব্যাট হাতে পাকিস্তানও ভুগেছে। চারজন ছাড়া কেউ দুই অঙ্কে পৌঁছাতে পারেননি। ফখর জামান খেলেন ৩৬ বলে ৫০ রানের দৃষ্টিনন্দন ইনিংস, যেখানে ছিল ২টি চার ও ৩টি ছক্কা। শাহীন আফ্রিদির অপরাজিত ২৯ রান ছাড়া অধিনায়ক সালমান আলি আগা ২০ এবং মোহাম্মদ হারিস যোগ করেন ১৮ রান।

আমিরাতের হয়ে দুর্দান্ত বোলিং করেন জুনায়েদ সিদ্দিকী। তিনি ৪ ওভারে মাত্র ১৮ রান দিয়ে তুলে নেন ৪টি উইকেট। সিমরানজিত সিংয়ের বোলিং ফিগারও কম চমকপ্রদ নয়, ৪ ওভারে ২৬ রান খরচ করে শিকার করেন ৩ উইকেট।

এই জয়ে পাকিস্তান-ভারত দ্বৈরথের আরেকটি অধ্যায় লেখার সুযোগ তৈরি হলো। শুধু তাই নয়, ভাগ্য যদি সহায় হয়, তবে দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীর ফাইনাল লড়াইও দেখা যেতে পারে এবারের এশিয়া কাপে।

ঢাকা/আমিনুল

সম্পর্কিত নিবন্ধ