ছাত্রদল-শিবির-বামপন্থীসহ ছাত্রসংগঠনের সঙ্গে ছাত্রসংসদের পরিচিতি সভা
Published: 1st, March 2025 GMT
জুলাই–আগস্ট আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্রদের নবগঠিত সংগঠন বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অন্য সংগঠনগুলোর সঙ্গে আজ শনিবার পরিচিতি সভা করেছে। এসময় বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি বন্ধ বা বিরাজনীতিকরণ কোনো সমস্যার সমাধান নয়। শিক্ষার্থীদের অধিকার রক্ষায় ও দেশের কল্যাণে ছাত্ররাজনীতি থাকতে হবে। তারা ক্যাম্পাসে সহাবস্থান এবং ডাকসু নির্বাচনের দাবি তুলেছেন।
বিকেলে মধুর ক্যান্টিনে এই পরিচিতি সভার আয়োজন করে গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা। সভায় ছাত্রসংসদের ঢাবি শাখার সভাপতি আব্দুল কাদের, ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক মানসুরা আলম, ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের ঢাবি শাখার সভাপতি ইয়াসিন আরাফাত, ঢাবি ছাত্র শিবিরের সেক্রেটারি মহিউদ্দীন খান, বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর সাধারণ সম্পাদক জাবির আহমেদ জুবেল, ছাত্রফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক সৈকত আরিফ, বাংলাদেশ ছাত্রপক্ষের খালেদ সাইফুল্লাহ, ছাত্র ইউনিয়ন ঢাবি শাখার সভাপতি মেঘমল্লার বসু বক্তব্য দেন।
ছাত্রদলের মানসুরা আলম বলেন, ছাত্রসংসদের নেতারা ফ্যাসিবাদী শেখ হাসিনার রাজত্বের অবসানে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। আমরাও (ছাত্রদল) একই সঙ্গে মাঠে ছিলাম। ক্যাম্পাসে সকল ক্রিয়াশীল সংগঠনকে নিয়ে শিক্ষার্থীদের কল্যাণে রাজনীতি করতে হবে।
ছাত্রশিবিরের মহিউদ্দীন খান বলেন, ক্যাম্পাসগুলোতে দীর্ঘসময় রাজনৈতিক সহাবস্থান ছিল না। সহাবস্থান রাখতে হবে। তিনি আশা করেন ছাত্রসংসদের নেতারা যেভাবে জুলাইয়ে অবদান রেখেছেন, আগামী দিনে ক্যাম্পাসে এবং দেশ বিনির্মাণে তারা একইভাবে কাজ করবেন।
ছাত্রইউনিয়ন মেঘমল্লার বসু বলেন, ক্যাম্পাসে বিরাজনীতিকরণ কোনো সমাধান নয়। অতীতে অনেকে বিরাজনীতির কথা বলেছেন। এটি সঠিক পথ হতে পারে না।
ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের ইয়াসিন আরাফাত বলেন, একাত্তরকে আওয়ামী লীগ এককেন্দ্রিক করে তুলেছিল। জুলাই যাতে একদলের কেন্দ্রীভূত বিষয় না হয়। বাস্তবতা মেনে রাজনীতি করতে হবে।
সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের সভাপতি সালমান সিদ্দিকী বলেন, শিক্ষার্থীদের অধিকার নিয়ে কথা বলাই হলো ছাত্ররাজনীতি। দখলদারিত্ব-সন্ত্রাসের রাজনীতি আমরা চাই না। বিরাজনীতি সমাধান নয়, সমাধান হলো- আমরা একটি আদর্শভিত্তিক রাজনীতি চাই, যে রাজনীতির মধ্য দিয়ে ছাত্রদের অধিকার নিশ্চিত হবে, যে রাজনীতির মধ্যে গণতন্ত্রের পক্ষে লড়তে পারব। সামনের দিনে একটি সোহার্দ্যপূর্ণ গণতান্ত্রিক পরিবেশে আমরা মতামত চর্চা করব।
স্বাধীন বাংলাদেশ ছাত্রসংসদের আহ্বায়ক জামালুদ্দীন খালিদ বলেন, দিন দিন ক্যাম্পাসের পরিবেশের উন্নতি হচ্ছে। ডাকসু নির্বাচনের দিকে আমাদের যেতে হবে।
ছাত্রফেডারেশনের সৈকত আরিফ বলেন, ছাত্রসংসদে যারা দায়িত্ব নিয়েছেন, তাদেরকে আমরা জুলাইয়ে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় দেখেছি। দেশে আগামীতে হয়তো আরও অনেক ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে হবে। আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।
বিপ্লবী ছাত্রমৈত্রীর সাধারণ সম্পাদক জাবির আহমেদ জুবেল বলেন, জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচার এবং আহতদের পুনর্বাসনে আমাদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
আব্দুল কাদের বলেন, অপরাজনীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সকল ছাত্রসংগঠন একত্র হতে পেরেছি। আমরা বিভাজনের রাজনীতি ভুলে গিয়ে ঐক্যের ডাক দিতে চাই। আমরা ক্যাম্পাসে সুস্থ রাজনীতির পরিসর বিনির্মাণ করতে চাই। সবার রাজনৈতিক সহাবস্থান যেন বজায় থাকে।
ঢাবি শাখা ছাত্রসংসদের মুখ্য সংগঠক হাসিব আল ইসলাম এবং মুখপাত্র রাফিইয়া রেহনুমা হৃদির সঞ্চালনায় সভায় ছাত্রসংসদ ঢাবির শাখার সদস্যসচিব মহির আলম সমাপনী বক্তব্য দেন।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ছ ত রদল র জন ত র র জন ত ক ব র জন ত ছ ত রদল স গঠন
এছাড়াও পড়ুন:
চাকরি খেয়ে ফেলব, কারারক্ষীকে কারাবন্দী আ’লীগ নেতা
‘চাকরি খেয়ে ফেলব, দেখে নেব তোমাকে, চেন আমি কে?’ কারবন্দী কুড়িগ্রাম জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান সাজু (৪৯) মঙ্গলবার বিকেল ৪টার দিকে ২ কারারক্ষীকে এভাবে হুমকি দেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
জানা যায়, কুড়িগ্রাম জেলা কারাগারে জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান সাজুকে দেখতে যান তার কয়েকজন স্বজন। কারা নিয়মানুযায়ী সাক্ষাৎ কক্ষে বেঁধে দেওয়া সময়ে কথা শেষ করার কথা থাকলেও তিনি তার মানতে রাজি নন। তিনি দীর্ঘ সময় কথা বলতে চাইলে সাক্ষাৎ কক্ষে দায়িত্বরত মহিলা কারারক্ষী পপি রানী কারাবন্দী নেতার স্বজনদের সময়ের মধ্যে কথা শেষ করতে বলেন। এতে ক্ষিপ্ত হন আওয়ামী লীগ নেতা সাজু। তখন তিনি বলেন, ‘এই আপনি কে? ডিস্টার্ব করছেন কেন? চিনেন আমাকে? চাকরি খেয়ে ফেলব।’
এ সময় সাক্ষাৎ কক্ষে সাজুর স্বজনরাও পপি রানীর সঙ্গেও আক্রমণাত্মক আচরণ করেন। পপি রানীকে নিরাপদ করতে সুমন নামের আরেকজন কারারক্ষী এগিয়ে এলে তাকে লাথি দিয়ে বের করে দেওয়ার হুমকি দেন সাজু। উত্তেজনার একপর্যায়ে ঘটনাস্থলে দ্রুত উপস্থিত হন প্রধান কারারক্ষী আব্দুর রাজ্জাক। তিনি সাজুর স্বজনদের সাক্ষাৎ কক্ষ থেকে চলে যেতে বলেন। তারাও চলে যাওয়ার সময়ে কারারক্ষীদের গালিগালাজ করেন।
এ ব্যাপারে কারারক্ষী পপি রানী বলেন, ‘আমি ডিউটিরত অবস্থায় তিনি আমাকে প্রভাব দেখিয়ে চাকরি খাওয়ার হুমকি দেন ও গালিগালাজ করেন। আমি জেলার স্যারের কাছে বিচার প্রার্থনা করছি।’
প্রত্যক্ষদর্শী কারারক্ষী মো. সুমন বলেন, ‘আমরা তো ছোট পদে চাকরি করি, আমাদের নানান নির্যাতন সহ্য করতে হয়। আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া আর কিছু বলতে পারব না।’
প্রধান কারারক্ষী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘সাক্ষাৎ কক্ষের ভেতরে পুলিশ সদস্যকে গালিগালাজ করা হয়। পরে আমি গিয়ে পরিবেশ শান্ত করি।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কুড়িগ্রাম কারাগারের জেলার এ জি মো. মামুদ বলেন, ‘বিষয়টি আমি শুনেছি। বন্দীরা আমাদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করলেও আমরা মানবিকতা প্রদর্শন করি। কেউ অতিরিক্ত কিছু করলে জেলের নিয়ম অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
উল্লেখ্য, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান সাজুকে গত ৩ ফেব্রুয়ারি বিকেলে রংপুর শহরের সড়ক ও জনপথ কার্যালয়ের কাছ থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)। তার বিরুদ্ধে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে ছাত্র-জনতার ওপর হামলা ও শিক্ষার্থী আশিক হত্যা মামলাসহ একাধিক মামলা রয়েছে।