ভোটসন্ত্রাস ব্যক্তি-দল কারও জন্য ভালো নয়: সিইসি
Published: 2nd, March 2025 GMT
ভোটসন্ত্রাস ব্যক্তি-দল কারও জন্য ভালো নয় বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন। তিনি বলেন, ভোটাসন্ত্রাস করে আপাতদৃষ্টিতে জয় পাওয়া যায়। কিন্তু আখেরে নিজের বা দল কারও জন্য ভালো হয় না। এজন্য আমি বলতে চাই, কেউ এ ধরনের কাজ করবেন না।
আজ রোববার নির্বাচন ভবনের অডিটোরিয়ামে জাতীয় ভোটার দিবস উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, ভোটার তালিকা আইন অনুযায়ী, ২ মার্চ ভোটার তালিকা চূড়ান্ত করতে হয়। এরমধ্যে আমাদের আবার বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটার তালিকা হালনাগাদ করতে হচ্ছে। এ কার্যক্রম শেষ হলে আগামী জুনের মধ্যে আরেকটা ভোটার তালিকা প্রস্তুত হয়ে যাবে।
মানুষ নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখছে উল্লেখ করে সিইসি বলেন, যদি এ স্বপ্ন বাস্তবায়ন না হয়, তাহলে যারা আহত ও শহীদ হলেন তাদের রক্তের সঙ্গে বেইমানি করা হবে। ভোটকেন্দ্রে ভোট দেওয়া শুধু এখন আর অধিকার নয়, এটা একটা দায়িত্বও। আমাদের ওপর মানুষের প্রত্যাশা অনেক বেশি। অন্য কোনো ইসির ওপর এতো প্রত্যাশা ছিল না।
এ এম এম নাসির উদ্দিন বলেন, রাজনৈতিক দলগুলো যার যার দৃষ্টিকোণ থেকে বক্তব্য দেবে। এটা ভিন্ন ভিন্ন হবে। এটাই গণতন্ত্রের সৌন্দর্য। আমাদের এখানে অনেকেই আছেন, যারা মনে করেন, আমার দলই দেশপ্রেমিক আর কোনো দল নয়। এট ঠিক না। মানুষ কিন্তু জন্মগতভাবেই দেশপ্রেমিক। দেশপ্রেমটা কারও মনোপলি (একক অধিকার) নয়, পারিপার্শ্বিক অবস্থার কারণে কম-বেশি হয়।
তিনি আরও বলেন, আমি যত মানুষের সঙ্গে কথা বলেছি, এমন কোনো ব্যক্তি পাইনি, যে সুন্দর-গ্রহণযোগ্য নির্বাচন চায়নি। সবাই সুন্দর-গ্রহণযোগ্য নির্বাচন চায়। যে রাজনৈতিক দলের সঙ্গেই কথা হয়েছে; সবাই সুন্দর ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন চেয়েছে। আমরা জাতির কাছে ওয়াদা দিয়েছি, আমাদের এজেন্ডা বাংলাদেশের এজেন্ডা, ১৮ কোটি বাংলাদেশির এজেন্ডা। সুষ্ঠু, সুন্দর ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আমাদের এজেন্ডা। এর বাইরে আমাদের কোনো এজেন্ডা নেই।
অনুষ্ঠানে নির্বাচন কমিশনার আব্দুর রহমানেল মাছউদ বলেন, জনগণের অংশগ্রহণই হলো অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন। একটি নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণ তাদের শাসক নির্বাচন করে। ভোটারদের মতামতের তখনই প্রতিফলন হবে, যদি ভোটার সঠিকভাবে ভোট দিতে পারে।
নির্বাচন কমিশনার তাহমিদা আহমদ বলেন, আমরা চারদিকে দেখছি, সংস্কার আর সংস্কার। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, ইসির কি সংস্কার হবে না? আমি চাই, খোলা মাঠে নির্বাচনটা হোক। স্কুল-কলেজের খোলা মাঠে নির্বাচন করা কি সম্ভব নয়। আমরা চাই ট্রান্সপারেন্ট। কিন্তু এজন্য সবার সহযোগিতা করলে এটা করা সম্ভব।
নির্বাচন কমিশনার মো.
তিনি বলেন, আমাদের ভাবতে হবে, আমরা কঠিন পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছি। আমরা ভেঙে যাবো, কিন্তু মচকাবো না। নির্বাচন কমিশনের একার পক্ষে ভালো নির্বাচন করা সম্ভব নয়। সামাজিকভাবে বিশ্বাস অর্জনের জন্য যা যা করার প্রয়োজন, তা করতে হবে। প্রথম পরীক্ষাই হবে আমাদের একটা ভালো নির্বাচন করা।
নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেন, আজকের ভোটার দিবস সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও অর্থবহ। ৩০ জুনের মধ্যে আরও একটি ভোটার তালিকা চূড়ান্ত করা হবে। ভঙ্গুর নির্বাচনব্যবস্থা পুনরুদ্ধার করতে হবে। একটি স্বচ্ছ ও গ্রহণযোগ্য ভোটার তালিকা করতে হবে। আমরা কোনো রক্তাক্ত, হানাহানি ও চুরি দেখতে চাই না। এসব প্রতিরোধ করতে নির্বাচন কমিশনের একার পক্ষে কোনো কিছু করা সম্ভব নয়।
ইসি সচিব আখতার আহমেদের সভাপতিত্বে সভায় অন্যদের মধ্যে সংস্থাটির অতিরিক্ত সচিব, জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন (এনআইডি) অনুবিভাগের মহাপরিচালক, নির্বাচনী প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালকসহ সব পর্যায়ের কর্মকর্তা ও কর্মচারী উপস্থিত ছিলেন।
এ সময় এনআইডি মহাপরিচালক জানান, বাড়ি বাড়ি হালনাগাদ কার্যক্রমে ভোটার তালিকা থেকে ১৯ লাখ মৃত ভোটার কর্তন করা হয়েছে। সারাদেশে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে ৫৩ লাখ ৩৩ হাজার ৫৬৩ জনের।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
অন্তর্বর্তী সরকার একতরফা নির্বাচন করতে উঠেপড়ে লেগেছে: জি এম কাদের
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের বলেছেন, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার একতরফা নির্বাচন করতে উঠে পড়ে লেগেছে। শেখ হাসিনা স্টাইলে একতরফা নির্বাচন করে এই সরকারও পার পাবে না। দেশের ৫০ শতাংশ মানুষের প্রতিনিধিত্বকারী রাজনৈতিক শক্তিগুলোকে বাইরে রেখে কোনো নির্বাচনই দেশ-বিদেশে গ্রহণযোগ্যতা পাবে না। বৃহস্পতিবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
এতে বলা হয়, এমন নির্বাচন কখনই অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হিসেবে গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ, এ ধরনের নির্বাচনে বৃহৎ জনগোষ্ঠী ভোট দানে আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। ফলে বাস্তবে বেশি ভোট গ্রহণ করা সম্ভব হয় না। আবার, অনুপস্থিত ভোটারদের ভোট- অর্থ, পেশি শক্তি ও সরকারি কর্তাদের প্রভাবে জাল ভোট হিসেবে প্রার্থীদের বিজয়ে ব্যবহার করা হয়। এ ধরনের নির্বাচন করে দেশ বিদেশে গ্রহণযোগ্যতা পাওয়া যাবে না। ফলে বর্তমান প্রেক্ষাপটে কাঙ্খিত বৈধ সরকার ও তার মাধ্যমে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা সম্ভব হবে না। তাই দেশের বিদ্যমান অর্থনৈতিক সংকট ও আইনশৃঙ্খলার ক্রমাবনতি রোধ হবে না। দেশ চরম বিপর্যয়ের দিকে চলমান থাকবে।
জাতীয় পার্টি মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নুরর সভাপতিত্বে সভায় অন্যদের মধ্যে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী, আলমগীর শিকদার লোটন, লিয়াকত হোসেন খোকা, জহুরুল ইসলাম জহির, মনিরুল ইসলাম মিলন, জসীমউদ্দিন ভূঁইয়া, আরিফুর রহমান খান, চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা খলিলুর রহমান খলিল, ইঞ্জিনিয়ার মইনুল রাব্বি চৌধুরী রুম্মন, ভাইস চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ রাজু, জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান এর প্রেস সচিব খন্দকার দেলোয়ার জালালী, প্রচার সম্পাদক মাসুদুর রহমান মাসুম, যুগ্ম দফ্তর সম্পাদক সমরেশ মন্ডল মানিক, মুন্সিগঞ্জ জেলা জাতীয় পার্টির আহবায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. জামাল হোসেন, সদস্যসচিব এ এফ এম আরিফুজ্জামান দিদার, যুগ্ম আহ্বায়ক জানে আলমসহ বিভিন্ন উপজেলা ও থানার সভাপতি সাধারণ সম্পাদকরা সভায় উপস্থিত ছিলেন।