৩৫ বছর পর রাকসু তফসিল নিয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মিশ্র প্রতিক্রিয়
Published: 28th, July 2025 GMT
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচনের দীর্ঘ ৩৫ বছরের অচলাবস্থা কাটিয়ে অবশেষে তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে।
উপাচার্য অধ্যাপক ড. সালেহ্ হাসান নকীবের গত সেপ্টেম্বরের প্রতিশ্রুতির প্রায় ১০ মাস পর আগামী ১৫ সেপ্টেম্বর বহু প্রতীক্ষিত এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।
এই ঘোষণাকে শিক্ষার্থীরা মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানালেও, মূলত স্বস্তি ও নতুন প্রত্যাশার জন্ম দিয়েছে। তারা এই তফসিল ঘোষণাকে একটি ঐতিহাসিক ও ইতিবাচক পদক্ষেপ হিসেবে দেখছেন।
আরো পড়ুন:
প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকের বেতন ১০ম গ্রেডে উন্নীত হচ্ছে
হবিগঞ্জ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেট ঘোষণা
শিক্ষার্থী সমাজকর্ম বিভাগের ২০-২১ সেশনের শিক্ষার্থী আলফাজ উদ্দিন টনিক বলেন, “৩৫ বছর পর রাকসু নির্বাচনের তফসিল ঘোষণাকে আমি একটি ঐতিহাসিক ও ইতিবাচক পদক্ষেপ হিসেবে দেখি। এটি শিক্ষার্থীদের গণতান্ত্রিক অধিকার চর্চার পথ খুলে দিয়েছে।”
তিনি নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু ও সহিংসতামুক্ত করার দাবি জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নিরপেক্ষ ভূমিকা এবং সকল ছাত্র সংগঠনের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার উপর জোর দেন। তার মতে, “নির্বাচন যেন কেবল আনুষ্ঠানিকতা না হয়, বরং বাস্তব কার্যকারিতাও থাকে। যাতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের স্বার্থে প্রতিনিধিত্বশীল নেতৃত্ব গড়ে ওঠে।” তিনি বিভেদ নয়, একতা ও দায়িত্বশীলতার রাজনীতির আহ্বান জানিয়েছেন।
সাবেক সমন্বয়ক মেহেদী সাজিব এই ঘোষণাকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের দীর্ঘদিনের আকাঙ্ক্ষা ও গণতান্ত্রিক চর্চার সূচনা হিসেবে একটি মাইলফলক হিসেবে অভিহিত করেছেন।
তিনি মনে করেন, “এই ধারা অব্যাহত থাকলে জাতীয়ভাবে রাবির গ্রহণযোগ্যতা বাড়বে। রাকসুর প্রতিনিধিরা শিক্ষার্থীদের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত হয়ে তাদের কাছে দায়বদ্ধ থাকবেন। নির্বাচন কমিশন তফসিল অনুযায়ী সবকিছু আয়োজন করবে এবং সব সংগঠন প্রশাসনকে সহযোগিতা করবে।”
শিক্ষার্থীদের অধিকার ভিত্তিক সংগঠন ‘সোচ্চার স্টুডেন্ট নেটওয়ার্ক’ এর সভাপতি সালমান সাব্বির তফসিল ঘোষণাকে একদিকে আনন্দের এবং অন্যদিকে জুলাই বিপ্লবের ছাত্র সংসদ কার্যকরের অন্যতম দাবি বাস্তবায়নের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছানো হিসেবে দেখছেন।
তিনি বলেন, “নির্বাচন কমিশন সময় ও বাস্তবতা বিবেচনা করেই প্রতিটি তারিখ নির্ধারণ করেছে। আমার প্রত্যাশা, নির্বাচন কমিশন যেন তাদের দেওয়া প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ১৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যেই সব স্টেকহোল্ডারের অংশগ্রহণে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজন করে।”
তফসিল ঘোষণার পর বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের পক্ষ থেকেও মিশ্র প্রতিক্রিয়া ও দাবি উঠে এসেছে।
রাবি শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক সুলতান আহমেদ রাহী এই তফসিল ঘোষণাকে ‘সংঘবদ্ধ ষড়যন্ত্রের নতুন অধ্যায়’ এবং ‘ছাত্র রাজনীতির ইতিহাসে আরেকটি কলঙ্কজনক মুহূর্ত’ হিসেবে অভিহিত করেছেন।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, “এনসিপি-শিবির ছাড়া অন্য কোনো ছাত্র সংগঠনের দাবি-প্রস্তাবনা প্রতি বিন্দুমাত্র সম্মান না করে তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে। রাবি প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশন এনসিপি-শিবিরের গোপন কাগজপত্র ছাড়া কোনো কিছু দেখতেই রাজি নয়। এটি ফরমায়েশি তফসিল।”
সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের আহ্বায়ক ফুয়াদ রাতুল আবাসিক হলে ভোট কেন্দ্র না করার দাবি জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “আবাসিক হলে ভোট কেন্দ্র হলে একদলীয় আধিপত্য বাড়বে, যার প্রমাণ বিগত ডাকসু নির্বাচন। তিনি হল কেন্দ্রিক ভোটারদের বিভ্রান্ত করা, ভয়ভীতি প্রদর্শন, অর্থ ছড়ানোসহ সমস্যা দেখা দিতে পারে।”
কিছু হল প্রাধ্যক্ষের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, “প্রশাসন ‘ক্যাম্পাসে সন্ত্রাসের অভিযোগে অভিযুক্ত ছাত্রশিবির’ ব্যতীত আর কারোর দাবি দাওয়াই কর্ণপাত করছে না, যা একটি স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ রাকসু আয়োজনের অন্তরায়। অবিলম্বে রাকসুর ভোট কেন্দ্র একাডেমিক ভবনে স্থাপন করতে হবে।”
তবে ছাত্রশিবিরের প্রচার ও মিডিয়া সম্পাদক নওসাজ্জামান তফসিল ঘোষণাকে রাবি শিক্ষার্থীদের অনেকদিনের আকাঙ্ক্ষিত রাকসুর কার্যক্রম অর্ধধাপ এগিয়ে গেছে বলে মনে করছেন।
তিনি বলেন, “এর মাধ্যমে রাবি শিক্ষার্থীরা তাদের যোগ্য নেতৃত্ব বাছাইয়ের মাধ্যমে একটি সুন্দর ক্যাম্পাস উপহার পাবে।” তিনি জুলাইয়ের অন্যতম দফা বাস্তবায়নে সফল হওয়ায় সকল শিক্ষার্থী এবং রাবি প্রশাসনকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন।
রাকসু প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক ড.
এই নির্বাচনের মাধ্যমে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে আবারও গণতান্ত্রিক পরিবেশ ফিরে আসবে এবং শিক্ষার্থীরা তাদের অধিকার আদায়ের জন্য একটি শক্তিশালী প্ল্যাটফর্ম পাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
রাবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. সালেহ্ হাসান নকীব বলেন, “বেটার লেইট দেন নেভার। সবার সহযোগিতা প্রয়োজন হবে। আশা করি, তিন যুগ পর এই বিশ্ববিদ্যালয় একটি ভালো নির্বাচনের মাধ্যমে একটা চমৎকার ছাত্র সংসদ পাবে।”
দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর রাকসু নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মনে নতুন উদ্দীপনা সৃষ্টি করেছে। এখন সকলের দৃষ্টি আগামী ১৫ সেপ্টেম্বরের দিকে, যখন নতুন নেতৃত্ব নির্বাচিত হওয়ার মাধ্যমে ক্যাম্পাসে গণতান্ত্রিক চর্চা আবারো প্রাণবন্ত হয়ে উঠবে।
ঢাকা/মেহেদী
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর গণত ন ত র ক স প ট ম বর স গঠন
এছাড়াও পড়ুন:
সব দলের সঙ্গে আলোচনা না করে নির্বাচন দিলে তা গ্রহণযোগ্য হবে না: এনসিপি
জুলাই সনদ বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে সরকারকে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার দিকে যেতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্যসচিব আখতার হোসেন। তিনি বলেন, সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা না করে সরকার নির্বাচনের দিকে যদি অগ্রসর হয়, সেটা যে গ্রহণযোগ্য হবে না।
রোববার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় দফার ১৯তম দিনের আলোচনা শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এনসিপির সদস্যসচিব এ কথাগুলো বলেন।
রাজনৈতিক দলগুলো যদি দলীয় স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে সামগ্রিক রাষ্ট্রীয় স্বার্থ এবং বাংলাদেশের জনগণের পক্ষে যায়, তাহলে জুলাইয়ের মধ্যে জুলাই সনদ প্রণয়ন করা সম্ভব বলেও মনে করেন আখতার হোসেন। তিনি বলেন, ‘সে ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলোর সদিচ্ছা সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখবে বলে আমরা মনে করি।’
এনসিপির এই নেতা বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে নির্বাচন হতে পারে, এ রকম একটা টাইমলাইন অনেক আগেই বলছে। আমরা মনে করি, নির্বাচনের আগে বিচার-সংস্কারকে দৃশ্যমান পর্যায়ে উন্নীত করা, জুলাই সনদ ও জুলাই ঘোষণাপত্র প্রণয়ন করা, নির্বাচনের জন্য মাঠ প্রশাসনের নিরপেক্ষতা এবং একই সঙ্গে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড (সবার জন্য সমান সুযোগ) নিশ্চিত করার মধ্য দিয়ে নির্বাচনের ঘোষণার দিকে যেতে হবে। অবশ্যই জুলাই সনদ এবং জুলাই ঘোষণাপত্র বাস্তবায়নের পরে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা যেতে পারে।’
আখতার হোসেন বলেন, ‘এর আগে প্রধান উপদেষ্টা লন্ডনে বসে যখন একটি বিবৃতি দিয়েছিলেন, তখন আমরা তার প্রতিবাদ করেছিলাম। যদি সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা না করে সরকার নির্বাচনের দিকে অগ্রসর হয়, সেটা যে গ্রহণযোগ্য হবে না, তা বলার অবকাশ রাখে না।’
এনসিপির সদস্যসচিব বলেন, ‘যাঁরা বাংলাদেশের ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন, যাঁরা বাংলাদেশের মানুষের প্রতিনিধিত্ব করেছেন, এই ফ্যাসিবাদবিরোধী পক্ষগুলোর সঙ্গে আলোচনা ছাড়াই যদি সরকার নির্বাচনের মতো বিষয়কে খোলাসা ও সুনির্দিষ্ট করতে শুরু করে, তাহলে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার বিষয়টি আমরা পুনর্বিবেচনা করব।’
রোববারের আলোচনায় অংশ নেয় বিএনপি, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, গণসংহতি আন্দোলনসহ ৩০টি রাজনৈতিক দল।
আলোচনায় সভাপতিত্ব করেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ। উপস্থিত ছিলেন কমিশনের সদস্য সফর রাজ হোসেন, বিচারপতি এমদাদুল হক, বদিউল আলম মজুমদার, ইফতেখারুজ্জামান, মো. আইয়ুব মিয়া। সঞ্চালনা করেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (জাতীয় ঐকমত্য কমিশন) মনির হায়দার।