বিচার বিভাগের ওপর জনগণের আস্থা বজায় রাখার জন্য প্রধান বিচারপতি নিয়োগের বিষয়টি নির্বাহী কর্তৃপক্ষের প্রভাবমুক্ত রাখা প্রয়োজন বলে মনে করে বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন। এ লক্ষ্যে সংবিধানে এমন বিধান থাকা প্রয়োজন যে আপিল বিভাগের কর্মে প্রবীণতম বিচারককেই প্রধান বিচারপতি নিয়োগ করবেন রাষ্ট্রপতি।

প্রধান বিচারপতি নিয়োগের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতির স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতা প্রয়োগ বা অন্য কোনো বিকল্প পদ্ধতি রাখার পক্ষে নয় কমিশন। কাজটি করতে পারলে প্রধান বিচারপতি নিয়োগে রাজনৈতিক বিবেচনা প্রয়োগের সুযোগ বহুলাংশে কমবে বলেও মনে করে কমিশন। সে লক্ষ্যে সংবিধানে প্রয়োজনীয় সংশোধনের প্রস্তাব করেছে কমিশন।

আপিল বিভাগের বিচারকদের মধ্য থেকে মেয়াদের ভিত্তিতে জ্যেষ্ঠতম বিচারককে প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগের সুপারিশ করেছে সংবিধান সংস্কার কমিশনও। তাদের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বর্তমান সংবিধান অনুসারে প্রধান বিচারপতি নিয়োগ দেন রাষ্ট্রপতি। এ প্রক্রিয়া ক্ষমতাসীনদের রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের শিকার হয়েছে। জ্যেষ্ঠতা বা মেধার ভিত্তির বিপরীতে রাজনৈতিক পক্ষপাতিত্ব এবং আনুগত্যের বিবেচনায় বিভিন্ন সময়ে প্রধান বিচারপতি নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

জ্যেষ্ঠতম বিচারককে প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার সুপারিশের যৌক্তিকতা তুলে ধরে সংবিধান সংস্কার কমিশন তাদের প্রতিবেদনে বলেছে, ‘এটি রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের স্বার্থে কনিষ্ঠ বিচারক কর্তৃক উপেক্ষার মাধ্যমে প্রধান বিচারপতির নিয়োগে নির্বাহী/রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ রোধ করবে।’

প্রধান বিচারপতি ছাড়া অন্যান্য বিচারক নিয়োগের (আপিল বিভাগ, হাইকোর্ট বিভাগের স্থায়ী ও অতিরিক্ত বিচারক) জন্য কমিশন গঠনেরও প্রস্তাব করেছে বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন।

বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনসহ ছয়টি সংস্কার কমিশনের চূড়ান্ত প্রতিবেদন গত ৮ ফেব্রুয়ারি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়। আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি শাহ আবু নাঈম মোমিনুর রহমানকে প্রধান করে আট সদস্যের এ কমিশন গঠন করা হয়েছিল গত বছরের ৩ অক্টোবর। ৩৫২ পৃষ্ঠার প্রতিবেদনে ৩১টি অধ্যায়ে বিচার বিভাগ সংস্কার নিয়ে বিভিন্ন সুপারিশ ও প্রস্তাব তুলে ধরা হয়েছে।

প্রবেশে ৪৮ বছর, অবসরে ৭০ করার প্রস্তাব

বিদ্যমান সংবিধান অনুযায়ী, কেউ রাষ্ট্রপতি হতে চাইলে তাঁর বয়স হতে হবে ন্যূনতম ৩৫ বছর। সংসদ সদস্যের ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন বয়স ২৫ বছর। তবে সুপ্রিম কোর্টের বিচারক নিয়োগের ক্ষেত্রে ন্যূনতম বয়স বা শর্তের বিষয়টি উল্লেখ নেই সংবিধানে। বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন মনে করে, হাইকোর্টের অতিরিক্ত বিচারক হিসেবে নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় অভিজ্ঞতা ও প্রজ্ঞার বিবেচনায় একজন প্রার্থীর বয়স ন্যূনতম ৪৮ বছর নির্ধারণ করা সমীচীন হবে।

সংস্কার কমিশন বলেছে, হাইকোর্টের অতিরিক্ত বিচারক হিসেবে নিয়োগের ক্ষেত্রে একজন প্রার্থীর বয়স হতে হবে কমপক্ষে ৪৮ বছর। ন্যূনতম বয়স নির্ধারণের আলোকে প্রধান বিচারপতি এবং অন্য বিচারকদের অবসরের বয়সসীমা ৭০ বছর করার প্রস্তাব করছে কমিশন। তবে অবসরের নতুন এই বয়সসীমা প্রস্তাবিত সংশোধনীর আগে নিয়োগপ্রাপ্ত বিচারকদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না।

অতিরিক্ত বিচারক হিসেবে নিয়োগের ক্ষেত্রে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী হিসেবে অন্যূন ১৫ বছরের সক্রিয় আইন পেশার অভিজ্ঞতা (কেবল আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্তিই যথেষ্ট নয়) অথবা জেলা জজ হিসেবে অন্যূন ৩ বছর বিচার বিভাগীয় পদে চাকরিসহ বিচার বিভাগে অন্যূন ১৫ বছরের চাকরির অভিজ্ঞতা থাকার প্রস্তাব করেছে কমিশন।

আদালত অবমাননার ধারণা স্পষ্ট করা

সুপ্রিম কোর্টের আদেশ-নির্দেশ অমান্য বা বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় সহায়তা না করা কিংবা চলমান কোনো বিচারিক কার্যধারাকে বাধাগ্রস্ত করার বিষয়টি আদালত অবমাননা বলে গণ্য হবে। আদালত অবমাননার ধারণা স্পষ্ট করা এবং এ–সংক্রান্ত বিধান সুনির্দিষ্ট করার লক্ষ্যে এমন প্রস্তাব করেছে বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন। এ জন্য সংবিধানের ১০৮ অনুচ্ছেদ সংশোধনের কথা কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

বিদ্যমান সংবিধানের ১০৮ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, সুপ্রিম কোর্ট হবে একটি ‘কোর্ট অব রেকর্ড’। এ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, সুপ্রিম কোর্ট অবমাননার জন্য তদন্তের আদেশদান বা দণ্ডাদেশদানের ক্ষমতাসহ আইন সাপেক্ষে অনুরূপ আদালতের সব ক্ষমতার অধিকারী থাকবেন।

সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে ‘বিচার বিভাগ সংশ্লিষ্ট সংবিধান-সংশোধনী’ অধ্যায়ে সংবিধানের ১০৮ অনুচ্ছেদের পাশাপাশি বেশ কয়েকটি অনুচ্ছেদে উল্লেখিত বিদ্যমান বিধান এবং প্রস্তাবিত সংশোধনী তুলে ধরা হয়েছে। প্রতিবেদনে ১০৮ অনুচ্ছেদে দফা যুক্ত করার প্রস্তাব রয়েছে। এতে বলা হয়েছে, সুপ্রিম কোর্টের ঘোষিত আইন বা সিদ্ধান্ত, আদেশ বা নির্দেশ অমান্য করা বা বাস্তবায়ন না করা বা বাস্তবায়নে বাধা সৃষ্টি করা বা বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় সহায়তা না করা অথবা সুপ্রিম কোর্টে চলমান কোনো বিচারিক কার্যধারাকে বাধাগ্রস্ত করা সুপ্রিম কোর্টের অবমাননা বলে গণ্য হবে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র ষ ট রপত র জন ত ক ন য নতম অন য ন ক ষমত র বয়স

এছাড়াও পড়ুন:

মাঠ নিয়ে শ্রাবণের আফসোস

আলোচনা-সমালোচনার মধ্যেও বসুন্ধরা কিংসের গোলরক্ষক মেহেদী হাসান শ্রাবণ নিজের সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। ফেডারেশন কাপের ফাইনালে আবাহনীর বিপক্ষে টাইব্রেকারে কিংসের জয়ের নায়ক ক্যারিয়ার নিয়ে কথা বলেছেন সমকালের সঙ্গে। শুনেছেন সাখাওয়াত হোসেন জয়

সমকাল: দু’দিনের ফাইনালের অভিজ্ঞতাটা কেমন হলো?
শ্রাবণ: (হাসি) না, এটা খুব কঠিন ছিল। আমরা সম্পূর্ণ প্রস্তুতি নিয়েছি এক দিন ফাইনাল খেলব, জিতব এবং উদযাপন করব। কিন্তু প্রাকৃতিক কারণে খেলা অনেকক্ষণ বন্ধ ছিল। বাকি ১৫ মিনিট আরেক দিন। এটা একটা নতুন অভিজ্ঞতা। একই চাপ দু’বার নিতে হলো।

সমকাল: এই মাঠের সমস্যার কারণেই কি এমনটা হয়েছে?
শ্রাবণ: অবশ্যই। এত বড় একটা টুর্নামেন্টের ফাইনাল খেলা যে মাঠে, সেখানে ফ্লাডলাইট নেই। যদি ফ্লাডলাইটের সুবিধা থাকত, ওই দিনই খেলাটা শেষ করা যেত। আমার মনে হয়, দেশের ফুটবলের কিছু পরিবর্তন করা উচিত। বিশেষ করে আমরা যখন জাতীয় দলের হয়ে বিদেশে খেলতে যাই, তখন দেখি অন্যান্য দেশের মাঠ খুব গতিশীল। আমাদের দেশের মাঠগুলো আন্তর্জাতিক পর্যায়ের না। প্রায় সময়ই সমস্যা হয়। আমরা স্লো মাঠে খেলি। বিদেশে গতিশীল মাঠে খেলতে গিয়ে সমস্যায় পড়তে হয়। আমাদের লিগটা যদি আন্তর্জাতিক মানের মাঠে হতো।

সমকাল: পেনাল্টি শুটআউটের সময় কী পরিকল্পনা ছিল আপনার?
শ্রাবণ: আমি আগেও বলেছি যে অনুশীলনের সময় আগের ম্যাচের টাইব্রেকার নিয়ে কাজ করেছি। কে কোন দিকে মারে, সেগুলো ট্রেনিংয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন কোচ। কোচের দিকনির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করছি এবং সফল হয়েছি।

সমকাল: এমেকার শট ঠেকানোর পর মার্টিনেজের মতো উদযাপন করেছেন। এটি কি আগে থেকেই পরিকল্পনা ছিল?
শ্রাবণ: না, সেভ দেওয়ার পর মাথায় এলো। তাই এমি মার্টিনেজের মতো উদযাপন করেছি। বলতে পারেন, এটি কোনো পরিকল্পনা ছিল না। তৎক্ষণাৎ মাথায় এলো।

সমকাল: জাতীয় দল আর ক্লাব– দুটোর অভিজ্ঞতা যদি একটু বলতেন।
শ্রাবণ: ক্লাব আর জাতীয় দল– দুটো ভিন্ন বিষয়। ক্লাব হচ্ছে শুধু একটা ক্লাবকে প্রতিনিধিত্ব করা। আর জাতীয় দল তো পুরো বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করা। যারা ক্লাবে ভালো পারফরম্যান্স করে, তাদেরই জাতীয় দলে ডাকে। আর জাতীয় দলে ডাক পাওয়াটা একজন প্লেয়ারের সবচেয়ে বড় অর্জন।

সমকাল: আপনি একটি সেভ করেছেন। কিন্তু আবাহনীর মিতুল মারমা পারেননি। জাতীয় দলে বেস্ট ইলেভেনে থাকতে পারবেন?
শ্রাবণ: না না, ব্যাপারটা এমন না। ও (মিতুল) সেভ করতে পারেনি আর আমি পারছি– এটি কিন্তু বড় বিষয় না। ও কিন্তু সেমিফাইনালে সেভ করে দলকে ফাইনালে এনেছে। বরং অনুশীলনে কোচ যাঁকে ভালো মনে করেন, তাঁকেই শুরুর একাদশে রাখেন।

সমকাল: একজন গোলরক্ষক হিসেবে নিজেকে কোথায় দেখতে চান?
শ্রাবণ: আমি চাই দেশসেরা গোলরক্ষক হতে। আমার স্বপ্ন আছে, বিদেশে লিগে খেলব।    

সম্পর্কিত নিবন্ধ