মাত্র ২৪ জনের হাতে সোয়া ৩ লাখ কোটি ডলার
Published: 3rd, March 2025 GMT
বিশ্বে ধনীদের সম্পদ বাড়ছে তো বাড়ছেই। এতে তৈরি হচ্ছে অতিধনীদের গোষ্ঠীতন্ত্র। এ রকম বিলিয়নিয়ার বা শতকোটিপতিদের খবর বিশ্বের সংবাদমাধ্যমগুলো ফলাও করে প্রচার করছে। এই শতকোটিপতিদের মধ্যে আরেকটি শ্রেণি হলো সুপার বিলিয়নিয়ার, যাঁরা পাঁচ হাজার কোটি ডলার বা তার চেয়ে বেশি সম্পদের মালিক, তাঁরা এই শ্রেণিভুক্ত।
বাস্তবতা হলো, বিশ্বের অর্থনৈতিক কার্যক্রম এখন এই সুপার বিলিয়নিয়ারদের হাতে সীমাবদ্ধ হয়ে পড়ছে বলে ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল-এর এক সংবাদে বলা হয়েছে। তাঁদের হাতে যেমন সম্পদ বেশি জড়ো হচ্ছে, তেমনি বিশ্বের অর্থনৈতিক কার্যক্রমের গতিপ্রকৃতিও এখন তাঁরাই নির্ধারণ করছেন। উদ্ভাবনী কাজের নেতৃত্বও দিচ্ছেন তাঁরা। এক কথায়, বিশ্ববাজারের রাশ তাঁদের হাতে।
আগে দেখে নেওয়া যাক, এই সুপার বিলিয়নিয়ারদের হাতে কী পরিমাণ অর্থ আছে। এঁদের সংখ্যা মাত্র ২৪। বিশ্বের শতকোটিপতিদের হাতে যে পরিমাণ সম্পদ আছে, তার ১৬ শতাংশই তাঁদের হাতে, যা ২০১৪ সালে ছিল ৪ শতাংশ।
এই ২৪ জনের সম্মিলিত সম্পদের পরিমাণ ৩ দশমিক ৩ ট্রিলিয়ন বা ৩ লাখ ৩০ হাজার কোটি মার্কিন ডলার। এটা প্রায় ফ্রান্সের জিডিপি বা মোট দেশজ উৎপাদনের সমপরিমাণ। তার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, এই তালিকায় কারা কারা আছেন এবং বিশ্বে তাঁরা কত ক্ষমতাধর।
শীর্ষে ইলন মাস্ক: বর্তমানে বিশ্বের অতিধনীদের তালিকায় শীর্ষস্থানে অধিষ্ঠিত আছেন ইলন মাস্ক, যিনি বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাবান মানুষ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ডান হাত। ট্রাম্প প্রশাসন যেসব পরিবর্তনে হাত দিয়েছে, তার অনেকগুলোরই সূত্রধর ইলন মাস্ক। ফলে তাঁর গুরুত্ব সম্পর্কে আর কিছু বলার প্রয়োজন হয় না।
বিশ্ব অর্থনীতির অন্যতম প্রধান খাত এখন বৈদ্যুতিক গাড়ি। সেই বৈদ্যুতিক গাড়ির বাজারের নেতৃত্ব দিচ্ছে ইলন মাস্কের কোম্পানি টেসলা। একই সঙ্গে তিনি স্টার লিঙ্ক ও এক্সের (সাবেক টুইটার) মতো বৈশ্বিক প্রতিষ্ঠানের মালিক। এক্স হাতে আসার পর অনেক ক্ষেত্রেই নিয়মকানুন শিথিল করেছেন ইলন মাস্ক। বিশেষ করে পোস্টের সত্যাসত্য নির্ধারণে। তার প্রভাব এখন অন্যান্য সামাজিক মাধ্যমেও পড়েছে, যেমন ফেসবুকও সম্প্রতি নিয়মকানুন শিথিল করেছে।
এখন প্রযুক্তির দুনিয়ার সবচেয়ে আকর্ষণীয় ও সম্ভাবনাময় খাত হচ্ছে এআই বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। ওপেন এআই চ্যাটজিপিটি বিশ্ববাজারকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে। ওপেনআইতে ইলন মাস্ক ছিলেন। কিন্তু চ্যাটজিপিটি বাজারে আসার আগে তিনি কোম্পানিটি ছেড়ে যান। এখন তিনি নিজেই একটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কোম্পানি চালু করেছেন।
তবে চ্যাটজিপিটিতে বিনিয়োগ আছে প্রযুক্তি খাতের আরেক মহিরুহ কোম্পানি মাইক্রোসফটের। বাস্তবতা হলো, এখন বিশ্বের সব প্রযুক্তি কোম্পানি এআই খাতে বিনিয়োগ করতে প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়েছে। কারণ হিসেবে তারা মনে করছে, ভবিষ্যৎ এখন এআইয়ের হাতে। ফলে কেউ আর এআইয়ের প্রতিযোগিতা থেকে দূরে থাকতে চায় না।
এখন দেখে নেওয়া যাক, এই সুপার বিলিয়নিয়ারদের ব্যবসা-বাণিজ্য প্রধানত কোন কোন খাতে বিস্তৃত। প্রযুক্তি থেকে শুরু করে বিলাসবহুল পণ্য, মহাকাশ গবেষণা, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও আর্থিক খাত—এমন অনেক খাতেই তাঁদের ব্যবসা আছে।
জেফ বেজোস: বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ ধনী ও সুপার বিলিয়নিয়ার গোষ্ঠীর অন্যতম আরেকজন হলেন প্রযুক্তিভিত্তিক বৈশ্বিক ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান অ্যামাজনের প্রধান নির্বাহী জেফ বেজোস। মূলত অনলাইনে বই বিক্রির মাধ্যমে তিনি অ্যামাজনের ব্যবসা শুরু করেছিলেন। এখন দুনিয়াজুড়ে এমন কোনো পণ্য নেই, যা এই অ্যামাজনে পাওয়া যায় না। বিশ্বের প্রায় সবখানেই তারা সেবা দিয়ে থাকে। বর্তমানে অনলাইনে পণ্য বিক্রি সারা বিশ্বেই তুমুল জনপ্রিয়। সাশ্রয়ী মূল্যে পণ্য পাওয়ার পাশাপাশি এসব অনলাইন থেকে মানুষ ভোগান্তি ছাড়াই ঘরে বসে কেনাকাটা করতে পারে। ফলে আধুনিক পৃথিবীতে ই-কমার্স ব্যবসার গুরুত্ব বাড়ছে।
এবার দেখে নেওয়া যাক, এই সুপার বিলিয়নারদের মধ্যে কারা কারা আছেন এবং তাঁদের সম্পদের পরিমাণই বা কত। এই তালিকায় সবার ওপরে আছেন ইলন মাস্ক; তাঁর সম্পদমূল্য ৪১৯.
মার্ক জাকারবার্গ: সম্পদমূল্যে পঞ্চম স্থানে আছেন ফেসবুকের সহপ্রতিষ্ঠাতা মার্ক জাকারবার্গ; তাঁর সম্পদমূল্য ২২০ দশমিক ৮ বিলিয়ন বা ২২ হাজার ৮০ কোটি ডলার।
সুপার বিলিয়নিয়ারদের তালিকায় ষষ্ঠ স্থানে আছেন সের্জেই ব্রিন; তাঁর সম্পদমূল্য ১৬০ দশমিক ৫ বিলিয়ন বা ১৬ হাজার ৫০ কোটি ডলার। সপ্তম স্থানে থাকা স্টিভ বালমারের সম্পদমূল্য ১৫৭ দশমিক ৪ বিলিয়ন বা ১৫ হাজার ৭৪০ কোটি ডলার।
ওয়ারেন বাফেট: ১৫৪ দশমিক ২ বিলিয়ন বা ১৫ হাজার ৪২০ কোটি ডলার নিয়ে অষ্টম স্থানে আছেন ‘বিনিয়োগ গুরু’ খ্যাত ওয়ারেন বাফেট। নবম স্থানে রয়েছেন জেমস ওয়ালটন; তাঁর সম্পদমূল্য ১১৭.৫ বিলিয়ন বা ১১ হাজার ৭৫০ কোটি ডলার। দশম স্থানে থাকা স্যামুয়েল ওয়ালটনের সম্পদমূল্য ১১৪ দশমিক ৪ বিলিয়ন বা ১১ হাজার ৪৪০ কোটি ডলার।
তালিকায় ১১তম স্থানে আছেন আমানিকো ওর্তেগা; তাঁর সম্পদমূল্য ১১৩ বিলিয়ন বা ১১ হাজার ৩০০ কোটি ডলার। ১১০ বিলিয়ন বা ১১ হাজার কোটি ডলার নিয়ে ১২তম স্থানে এলিস ওয়ালটন। ১৩তম স্থানে থাকা জেনসেন হুয়ানের সম্পদমূল্য ১০৮ দশমিক ৪০ বিলিয়ন বা ১০ হাজার ৮৪০ ডলার।
বিল গেটস: ১০৬ বিলিয়ন বা ১০ হাজার ৬০০ কোটি ডলার মূল্যের সম্পদ নিয়ে ১৪তম স্থানে আছেন বিল গেটস। ১৫তম স্থানে থাকা মাইকেল ব্লুমবার্গের সম্পদের মূল্য ১০৩ দশমিক ৪ বিলিয়ন বা ১০ হাজার ৩৪০ কোটি ডলার। ১০০ দশমিক ৯ বিলিয়ন বা ১০ হাজার ৯০ কোটি ডলারের সম্পদের মালিক লরেন্স পেইজ আছেন ১৬তম স্থানে।
মুকেশ আম্বানি: তালিকায় ১৭তম স্থানে আছেন ভারতের মুকেশ আম্বানি; তাঁর সম্পদমূল্য ৯০ দশমিক ৬ বিলিয়ন বা ৯ হাজার ৬০ কোটি টাকা ডলার। ১৮তম স্থানে থাকা চার্লস কোচের সম্পদমূল্য ৬৭ দশমিক ৪ বিলিয়ন বা ৬ হাজার ৭৪০ কোটি ডলার। ১৯তম স্থানে আছেন জুলিয়া কোচ; তাঁর সম্পদের মূল্য ৬৫ দশমিক ১ বিলিয়ন বা ৬ হাজার ৫১০ কোটি ডলার।
সুপার বিলিয়নিয়ারদের মধ্যে ২০তম স্থানে আছেন ফ্রাঁসোয়া মেয়ার্স; যাঁর সম্পদমূল্য ৬১ দশমিক ৯ বিলিয়ন বা ৬ হাজার ১৯০ কোটি ডলার।
গৌতম আদানি: ২১তম স্থানে থাকা ভারতের গৌতম আদানির সম্পদের মূল্য ৬০ দশমিক ৬ বিলিয়ন বা ৬ হাজার ৬০ কোটি ডলার। ৫৯ দশমিক ৮ বিলিয়ন বা ৫ হাজার ৯৮০ কোটি ডলার নিয়ে ২২তম স্থানে আছেন মাইকেল ডেল। ২৩তম স্থানে থাকা ঝং শ্যানশ্যানের সম্পদমূল্য ৫৭ দশমিক ৭ বিলিয়ন বা ৫ হাজার ৭৭০ কোটি ডলার। ৫৫ দশমিক ৪ বিলিয়ন বা ৫ হাজার ৫৪০ কোটি ডলার নিয়ে ২৪তম স্থানে আছেন প্রোজোগো পাংগেতসু।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: দশম ক ৪ ব ল য ন ব এই স প র ব ল ইলন ম স ক ১১ হ জ র ১০ হ জ র অ য ম জন পর ম ণ ব যবস
এছাড়াও পড়ুন:
ইউটিউবে ভুয়া ‘টক শো’র ছড়াছড়ি, বিভ্রান্ত মানুষ
এক পাশে বেগম খালেদা জিয়া, অন্য পাশে শেখ হাসিনা, মাঝখানে খালেদ মুহিউদ্দীন—ইউটিউবে একটি ‘টক শো’তে তিনজনকে এভাবেই দেখা যায়। যদিও বিষয়টি পুরোটাই ভুয়া।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া ও জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়া শেখ হাসিনা কখনোই সুপরিচিত উপস্থাপক খালেদ মুহিউদ্দীনের টক শোতে (আলোচনা অনুষ্ঠান) যাননি; কিন্তু ইউটিউবে কারসাজি করে ভুয়া টক শো তৈরি করা হয়েছে। ব্যবহার করা হয়েছে খণ্ড খণ্ড ভিডিও চিত্র (ক্লিপ)। মনে হয়, যেন টক শোর অতিথিরাই কথা বলছেন।
সুপরিচিত নবীন ও প্রবীণ রাজনীতিবিদ, আলোচিত ব্যক্তিত্ব, জনপ্রিয় বিশ্লেষক, সাংবাদিক, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ‘ইনফ্লুয়েন্সার’দের নিয়ে এ ধরনের ভুয়া টক শো তৈরি করা হচ্ছে। তথ্যব্যবস্থায় প্রযুক্তির প্রভাব নিয়ে গবেষণাকারী প্রতিষ্ঠান ডিজিটালি রাইটের তথ্য যাচাইয়ের উদ্যোগ ডিসমিসল্যাব বিশ্লেষণ করে দেখিয়েছে, ইউটিউবে এমন ভুয়া টক শো অনেক রয়েছে।
ইউটিউবে কারসাজি করে ভুয়া টক শো তৈরি করা হয়েছে। ব্যবহার করা হয়েছে খণ্ড খণ্ড ভিডিও চিত্র (ক্লিপ)। মনে হয়, যেন টক শোর অতিথিরাই কথা বলছেন।ডিসমিসল্যাব ২৮৮টি ভিডিও পর্যালোচনা করেছে। তারা বলছে, অধিকাংশ ভিডিওতে মূল সাক্ষাৎকারগুলোকে প্রাসঙ্গিকতার বাইরে গিয়ে কাটাছেঁড়া করে এমনভাবে বানানো হয়েছে, যা আদতে ঘটেনি। এসব ভিডিও গড়ে ১২ হাজারবার দেখা হয়েছে।
‘ভুয়া টক শোকে উসকে দিচ্ছে ইউটিউব, যেখানে আসল কনটেন্ট জায়গা হারাচ্ছে’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন গতকাল বুধবার প্রকাশ করে ডিসমিসল্যাব। এতে বলা হয়, ভুয়া টক শোতে বিজ্ঞাপন প্রদর্শিত হয়। অর্থাৎ সেখান থেকে অর্থ আয়ের সুযোগের সম্ভাবনাও রয়েছে। ইউটিউবের নিজস্ব নীতিমালা ভঙ্গ করে বানানো এ ধরনের ভিডিও প্রচার করে ইউটিউব নিজেও লাভবান হচ্ছে।
ডিজিটালি রাইটের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মিরাজ আহমেদ চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, এ ধরনের ভুয়া টক শো অনেকে বিশ্বাস করেন, যার ফলে সমাজে বিভাজন তৈরি হয় এবং রাজনীতি ও গণতন্ত্রের ওপর প্রভাব পড়ে।
খালেদা জিয়া ও শেখ হাসিনাকে জড়িয়ে বানানো ভিডিওটি পর্যালোচনা করে ডিসমিসল্যাব বলেছে, ভিডিওতে দেখা যায়, ক্যামেরার দিকে মুখ করে দুই নেত্রী অনলাইনে নিজ নিজ অবস্থান থেকে ‘ভার্চু৵য়াল টক শো’তে অংশ নিয়েছেন। যেখানে সঞ্চালক খালেদ মুহিউদ্দীন শেখ হাসিনাকে আমন্ত্রণ জানান, ২০২৪ সালের আগস্টে তাঁকে ক্ষমতাচ্যুত করার বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানাতে; কিন্তু কিছুক্ষণ যেতেই দর্শক বুঝবেন, ভিডিওটি ভুয়া। খালেদা জিয়ার নড়াচড়া স্বাভাবিক না। শেখ হাসিনার কণ্ঠস্বর তাঁর মুখভঙ্গির সঙ্গে মিলছিল না। খালেদার ভিডিও ফুটেজ বিকৃত বা টেনে লম্বা করা হয়েছে। উপস্থাপকের হাতের অঙ্গভঙ্গি বারবার একই রকম দেখা যাচ্ছিল। বিভিন্ন উৎস থেকে ক্লিপ কেটে জোড়া লাগিয়ে কথোপকথন তৈরি করে এই ভুয়া টক শো বানানো হয়েছে।
এ ধরনের ভুয়া টক শো অনেকে বিশ্বাস করেন, যার ফলে সমাজে বিভাজন তৈরি হয় এবং রাজনীতি ও গণতন্ত্রের ওপর প্রভাব পড়ে।ডিজিটালি রাইটের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মিরাজ আহমেদ চৌধুরীডিসমিসল্যাব জানায়, ভুয়া টক শোটি চলতি মাসের শেষ নাগাদ ফেসবুকে দুই লাখের বেশিবার দেখা হয়েছে। ভিডিওটির ওপর একটি লোগো ছিল ‘টক শো ফার্স্ট নিউজ’ নামে, যা একই নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে মিলে যায়। সেখানে একই ভিডিওটি আরও ১ লাখ ৩৫ হাজারবার দেখা হয়েছে। ওই চ্যানেলে এমন বেশ কিছু ক্লিপ ছিল, যা একইভাবে বিকৃত বা সাজানো হয়েছিল।
প্রবাসী সাংবাদিক খালেদ মুহিউদ্দীন ইউটিউবে ‘ঠিকানায় খালেদ মুহিউদ্দীন’ নামে একটি চ্যানেলে টক শো উপস্থাপনা করেন। সম্প্রতি তাঁর ছবি, ফুটেজ ব্যবহার করে বিভিন্ন ক্লিপ যুক্ত করে প্রচুর ভুয়া টক শো তৈরি করে প্রচার করা হয়েছে। ডিসমিসল্যাব এ বিষয়ে গবেষণা করেছে। তারা ইউটিউবে ‘খালেদ মুহিউদ্দীন টক শো’ লিখে খোঁজ করে অন্তত ৫০টি চ্যানেল চিহ্নিত করেছে। খালেদ মুহিউদ্দীন ছাড়াও এসব চ্যানেলে অন্যান্য উপস্থাপক ও রাজনৈতিক বক্তাদের বিভিন্ন বক্তব্যের ক্লিপ জুড়ে দিয়ে ভুয়া টক শো তৈরি করা হয়েছে। গত ২৫ মার্চ থেকে ৩১ মার্চে খুঁজে পাওয়া এসব চ্যানেলের মধ্যে ২৯টি চ্যানেল অন্তত একটি বিকৃত টক শো প্রচার করেছে।
ডিসমিসল্যাব বলছে, চিহ্নিত ২৯টির মধ্যে ২০টি চ্যানেল তৈরি হয়েছে ২০২৪ সালের আগস্টে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর। বাকি চ্যানেলগুলো ২০২১ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে তৈরি। পর্যালোচনার আওতায় আসা ভিডিওগুলোর মধ্যে অন্তত ৫৮ জন রাজনীতিবিদ, সাংবাদিক ও টক শো উপস্থাপকের ছবি, ফুটেজ বা বক্তব্য বিকৃত করা হয়েছে।
জাতীয় নাগরিক পার্টিকে (এনসিপি) সমালোচনা করে তৈরি করা হয়েছে ২০ শতাংশ ভুয়া টক শো। বিএনপি ও আওয়ামী লীগকে নিয়ে সমালোচনামূলক বক্তব্য রয়েছে ১০ শতাংশ করে ভুয়া টক শোতে।পর্যালোচনা করা ভিডিওগুলোতে ‘ব্যাকগ্রাউন্ড’ (নেপথ্যের দৃশ্য) বদলানো, ফুটেজ কাটাছেঁড়া বা জুম করা এবং মূল প্রসঙ্গ বিকৃত করা হয়েছে। অধিকাংশ ভিডিও ইউটিউব, টেলিভিশন শো, ফেসবুক লাইভ এবং অডিও রেকর্ডিং থেকে ক্লিপ জোড়া লাগিয়ে তৈরি। অনেক ক্ষেত্রে, মূল বক্তার ফুটেজে এমন ভয়েসওভার (কথা) জুড়ে দেওয়া হয়েছে, যা ভিন্ন প্রেক্ষাপট থেকে নেওয়া এবং যার সঙ্গে কথোপকথনের কোনো সম্পর্ক নেই; কিন্তু বাস্তব ও বিশ্বাসযোগ্যভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে।
ডিসমিসল্যাবের প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২৫ সালের ২৭ মার্চ প্রকাশিত একটি ভিডিওর শিরোনাম ছিল, ‘ড. ইউনূস চীন সফরের পরপরই পদত্যাগ করলেন’। যেখানে যমুনা টিভির লোগো ব্যবহার করা হয়। যমুনা টিভির সঙ্গে ডিসমিসল্যাব যোগাযোগ করে জানতে পারে যে তাদের অনুমতি ছাড়া লোগো ব্যবহার করা হয়েছে। ভিডিওটিতে উপস্থাপক খালেদ মুহিউদ্দীন এবং রাজনীতিবিদ গোলাম মাওলা রনির আলাদা আলাদা ফুটেজ জোড়া লাগানো হয়েছে।
ডিসমিসল্যাব বলছে, রাজনীতিবিদদের মধ্যে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, দলের নেতা ফজলুর রহমান, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জেড আই খান পান্না, এনসিপির মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলমের ফুটেজও এসব ভুয়া টক শোতে ব্যবহার করা হয়েছে।
পর্যালোচনার আওতায় আসা ভিডিওগুলোর মধ্যে অন্তত ৫৮ জন রাজনীতিবিদ, সাংবাদিক ও টক শো উপস্থাপকের ছবি, ফুটেজ বা বক্তব্য বিকৃত করা হয়েছে।ভুয়া টক শোর বিষয়ে ডিসমিসল্যাবকে খালেদ মুহিউদ্দীন বলেন, তিনি দর্শকদের তাঁর ভেরিফায়েড ইউটিউব চ্যানেলের আধেয়র ওপর আস্থা রাখার আহ্বান জানান।
ডিসমিসল্যাব বলেছে, ভুয়া টক শোগুলোতে বক্তব্য তুলে ধরা হয় মূলত রাজনৈতিক দল ও সরকারকে নিয়ে। ভুয়া টক শোগুলোর ৪০ শতাংশেই অন্তর্বর্তী সরকারের সমালোচনামূলক বক্তব্য রয়েছে। জাতীয় নাগরিক পার্টিকে (এনসিপি) সমালোচনা করে তৈরি করা হয়েছে ২০ শতাংশ ভুয়া টক শো। বিএনপি ও আওয়ামী লীগকে নিয়ে সমালোচনামূলক বক্তব্য রয়েছে ১০ শতাংশ করে ভুয়া টক শোতে।
বেশিবার দেখা হয়েছে, এমন পাঁচটি ভুয়া টক শো খুঁজে বের করেছে। এসব টক শোতে প্রচার করা হয়েছে অশনিবার্তা, আলোর রাজনীতি ও রাজনৈতিক আলোচনা নামের ইউটিউব চ্যানেল থেকে। পাঁচটি টক শো দুই থেকে ছয় লাখ বার দেখা হয়েছে।
নিজের নিয়মই মানছে না ইউটিউবইউটিউবের স্প্যাম ও প্রতারণামূলক আচরণ নীতিমালায় বলা হয়েছে, এমন শিরোনাম, থাম্বনেইল বা বিবরণ ব্যবহার করা যাবে না, যার সঙ্গে ভিডিওর প্রকৃত বিষয়বস্তুর মিল নেই এবং যা দর্শকদের বিভ্রান্ত করে। এসব ভুয়া টক শোতে এ নীতি মানা হয়নি।
ইউটিউবের ছদ্মবেশ ধারণ নিষেধাজ্ঞা নীতিমালায় বলা আছে, অন্য কারও আসল নাম, ব্যবহারকারী নাম, ছবি, ব্র্যান্ড, লোগো বা ব্যক্তিগত কোনো তথ্য ব্যবহার করে মানুষকে বিভ্রান্ত করা যাবে না। ডিসমিসল্যাবের প্রতিবেদনে বলা হয়, অনুমতি ছাড়া সাংবাদিক, টক শো উপস্থাপক ও কনটেন্ট (আধেয়) নির্মাতাদের ফুটেজ ব্যবহার করায় এগুলো ইউটিউবের কপিরাইট নীতিমালাও লঙ্ঘন করতে পারে।
ডিজিটাল মিডিয়া–বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, নিজস্ব নীতিমালা থাকলেও ইউটিউব এ ধরনের ভুয়া ভিডিওকে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়তে দিচ্ছে। এতে গুণগত সাংবাদিকতা পিছিয়ে পড়ে।
২০২২ সালে একটি খোলাচিঠিতে ইন্টারন্যাশনাল ফ্যাক্টচেকিং নেটওয়ার্ক অভিযোগ করেছিল, ইউটিউব তাদের প্ল্যাটফর্মকে অপব্যবহারের সুযোগ দিচ্ছে—যেখানে অসাধু ব্যক্তি ও গোষ্ঠী বিভ্রান্তি ছড়ানো, মানুষকে প্রতারিত করা, এমনকি সংগঠিত হয়ে অর্থ সংগ্রহ পর্যন্ত করছে।
মিরাজ আহমেদ চৌধুরী বলেন, এ ধরনের ভুয়া কনটেন্ট বা আধেয় বন্ধ করতে প্ল্যাটফর্মগুলোর নিজস্ব নীতি মনে করিয়ে দিয়ে তাদের ওপর চাপ তৈরি করতে হবে। নির্বাচনের সময় নির্বাচন কমিশনসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে উদ্যোগী হতে হবে।