চাকরিচ্যুতির প্রতিবাদ, ন্যায্য মজুরি ও রমজান মাসে কর্মঘণ্টা কমানোসহ নানা দাবিতে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন ডায়নামিক সোয়েটার কারখানার শ্রমিকরা। গতকাল সোমবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে তারা সাভারের উলাইল এলাকায় মহাসড়ক অবরোধ করেন। এতে কয়েক কিলোমিটার যানজট হয়। ভোগান্তিতে পড়েন ওই সড়কে চলাচলরত যাত্রী ও পথচারীরা।

আন্দোলনকারী শ্রমিকরা পার্শ্ববর্তী আনলিমা গার্মেন্টস, আল মুসলিম গার্মেন্টসের শ্রমিকদের রাস্তায় নেমে আসার আহ্বান জানান। কিন্তু অন্য কারখানার শ্রমিকরা তাতে সাড়া না দেওয়ায় বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা আনলিমা গার্মেন্টস লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল ছোড়েন। খবর পেয়ে সাভার মডেল থানা পুলিশ, শিল্পাঞ্চল পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে যান। এক পর্যায়ে শ্রমিকরা মহাসড়কের মূল লেন ছেড়ে ঢাকামুখী সার্ভিস লেনে অবস্থান নেন।

বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা জানান, গত ডিসেম্বরে পিসরেটে মজুরি বৃদ্ধির জন্য আন্দোলন করলে মালিকপক্ষ আশ্বাস দিয়েছিল, মজুরি বাড়াবে। কিন্তু মজুরি বাড়েনি। ওভারটাইমও বাড়ায়নি। এ নিয়ে রোববার শ্রমিকরা কারখানার মালিকপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করতে যান। কিন্তু মালিকপক্ষ আলোচনা করতে অস্বীকার করে এবং উল্টো সোমবার কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে নোটিশ টানিয়ে দেয়। এর প্রতিবাদে শ্রমিকরা সড়কে বিক্ষোভ করেন।

তাদের দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে– বেতন ৯ শতাংশ হারে বাড়ানো, রমজানে ইফতারির বিল বাড়ানো, বন্ধের দিন কাজ করালে ওভারটাইমের হারে বিল দেওয়া, ঈদ বোনাস বেতনের সমহারে প্রদান, ওভারটাইমের বকেয়া পরিশোধ, রমজান মাসে কর্মঘণ্টা কমানো এবং কয়েক স্টাফকে চাকরিচ্যুত করা।

রাসেল নামে এক শ্রমিক বলেন, ‘দুই মাস আগে আমরা ১৩ দফা দাবিতে আন্দোলন করি। সে সময় কারখানার কর্তৃপক্ষ সব দাবি মেনে নিয়েছে বলে জানায়। কিন্তু তারা দুটি দাবি মেনেছে।’

এদিকে দুই মাসের বকেয়া বেতনের দাবিতে রোববার রাতে প্রতীক অ্যাপারেলস লিমিটেডের শ্রমিকরা রাত ৮টা থেকে ১১টা পর্যন্ত ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের একই এলাকা অবরোধ করেন।

ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সাভার সার্কেল) শাহীনুল কবির বলেন, সোমবার সকালে ডায়নামিক সোয়েটার কারখানার শ্রমিকরা বিভিন্ন দাবি-দাওয়া নিয়ে রাস্তা অবরোধ করেন। এ সময় তারা পাশের একটি কারখানা ভাঙচুর করেন। আমরা পুলিশসহ সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে তাদের বুঝিয়ে সড়ক থেকে সরিয়ে দিই।

গাজীপুরে শ্রমিকের মৃত্যুর ঘটনায় বিক্ষোভ
গাজীপুর মহানগরের ভোগড়া বাইপাস এলাকায় পোশাক কারখানার এক নারী শ্রমিকের মৃত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা মহাসড়কে বিক্ষোভ করেছেন। এ সময় শ্রমিকরা কারখানায় ভাঙচুর ও কয়েকটি গাড়িতে আগুন দেন। বিক্ষোভের কারণে সোমবার সকাল ৮টা থেকে প্রায় দুই ঘণ্টা ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ ছিল। বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা কারখানার ভেতর থেকে চারটি মোটরসাইকেল এনে আগুন ধরিয়ে দেন। একই সঙ্গে কারখানার কর্মকর্তাদের ব্যবহৃত একটি প্রাইভেটকার পুড়িয়ে ফেলেন। কারখানার ভেতর দফায় দফায় ভাঙচুর চালানো হয়। পরে সেনাবাহিনী ও পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে দুপুরের আগেই আশপাশের অর্ধশতাধিক কারখানা ছুটি ঘোষণা করা হয়।

পুলিশ ও কারখানা কর্তৃপক্ষ বলছে, গত রোববার দুপুরে প্যানারোমা অ্যাপারেলস লিমিটেড নামের কারখানার সাততলা ভবনের ছাদ থেকে লাফ দিয়ে আফসানা আক্তার লাবণী আত্মহত্যা করেন। তিনি সুইং অপারেটর হিসেবে কর্মরত ছিলেন। বিষয়টি জানাজানি হলে সকাল সাড়ে ৮টার দিকে ওই কারখানার শ্রমিকরা বিক্ষোভ শুরু করেন। বিক্ষোভের এক পর্যায়ে তারা ভোগরা বাইপাস এলাকায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে অবরোধ সৃষ্টি করেন।

গাজীপুর শিল্পাঞ্চল-২ এর এসপি এ কে এম জহিরুল ইসলাম বলেন, পারিবারিক কলহের জেরে কারখানার ছাদ থেকে লাফ দিয়ে আত্মহত্যা করেন আফসানা। সোমবার শ্রমিকদের মধ্য থেকে হঠাৎ করে একজন গুজব ছড়ান, আফসানাকে ছুটি না দেওয়ায় আত্মহত্যা করেছেন। কিছু না বুঝেই শ্রমিকরা এ গুজবে কান দিয়ে তাণ্ডব চালান।

বাসন থানার ওসি কায়সার আহমেদ বলেন, আফসানার আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগে রোববারই তাঁর স্বামী হৃদয়কে গ্রেপ্তার করা হয়। এ ঘটনায় থানায় মামলাও হয়েছে। শ্রমিকরা গুজবে সাড়া দিয়ে বিক্ষোভ করেছেন।

কেয়া গ্রুপের শ্রমিকদের বিক্ষোভ
ছাঁটাইয়ের প্রতিবাদে গাজীপুরে বিক্ষোভ করেছেন কেয়া গ্রুপের শ্রমিকরা। গতকাল সকালে মহানগরের জরুন এলাকায় কারখানার সামনে তারা বিক্ষোভ করেন। কেয়া গ্রুপের চারটি কারখানা আগামী ১ মে থেকে স্থায়ী বন্ধ ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ। বাজার অস্থিতিশীলতা, ব্যাংকের সঙ্গে হিসাবের অমিল, কাঁচামাল অপর্যাপ্ততার কারণ দেখিয়ে কারখানা কর্তৃপক্ষ গত ২ জানুয়ারি এ ঘোষণা দেয়।

শ্রমিকরা জানান, বেতনসহ শ্রম আইন অনুযায়ী সব পাওনা মে মাসে পরিশোধের কথা ছিল। তবে হঠাৎ করে সোমবার সকালে এক নোটিশে ৬ হাজারের মধ্যে ২ হাজার ২০৩ শ্রমিককে ছাঁটাই করা হয়। ঈদের আগে এত শ্রমিক একসঙ্গে ছাঁটাই করায় তারা বিক্ষোভ শুরু করেন।

খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে শ্রমিকদের বুঝিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করেন বলে জানান কানাবাড়ী থানার ওসি নজরুল ইসলাম।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব ক ষ ভ কর ছ ন এল ক য় আফস ন

এছাড়াও পড়ুন:

২২ ক্যাডার নিয়ে চলতেন স্বেচ্ছাসেবক দলের জিতু

বগুড়ায় মেয়েকে উত্ত্যক্ত ও বাবাকে খুনে অভিযুক্ত জিতু ইসলাম দলীয় প্রভাবে বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। কথায় কথায় যাকে-তাকে অহেতুক মারধর করতেন। চলতেন ২২ জনের ক্যাডার বাহিনী নিয়ে। তারা সবাই নানা অপকর্মে জড়িত এবং একাধিক মামলার আসামি। তাঁর আয় চাঁদাবাজি ও মাদক ব্যবসা থেকে। গতকাল রোববার এলাকায় গিয়ে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
জানা যায়, জিতু ফুলবাড়ী কারিগরপাড়ার মৃত সেকেন্দার আলীর ছেলে। ২০০৩ সালে এলাকায় বালু ব্যবসা নিয়ে প্রতিপক্ষ রবিউল ইসলামকে খুন করেন। সেই মামলায় তাঁর ১৪ বছর সাজা হয়। সাজা খেটে তিন বছর আগে বের হন। এর পর এলাকায় গড়ে তোলেন সন্ত্রাসী বাহিনী। তাঁর বাহিনীতে যে ২২ জন সদস্য, তারা কেউ রাজনৈতিক দলের পদ-পদবিতে নেই। হত্যা মামলা ছাড়াও জিতুর বিরুদ্ধে একটি মাদক ও একটি ডাকাতির মামলা রয়েছে।

ফুলবাড়ীর এক মুদি দোকানি বলেন, জিতু মাঝেমধ্যে তাঁর দোকান থেকে বাকি নিতেন। দু’বছরে বাকির পরিমাণ প্রায় ৪৮ হাজার টাকা হয়। তখন একদিন টাকা চান। এ কারণে জিতু তাঁকে মারধর করে নাকে খত নেন।
বৃন্দাবন এলাকার আরেক ব্যবসায়ী বলেন, মাঝেমধ্যে জিতু তাঁর বাহিনী নিয়ে হাজির হতেন। মোটা অঙ্কের চাঁদা চাইতেন। চাঁদার কমপক্ষে অর্ধেক দিয়ে তবে নিস্তার পাওয়া যেত। এ ছাড়া ঈদে সেলামির নামে মোটা অঙ্কের চাঁদা দিতে হতো তাঁকে।

স্থানীয় ব্যবসায়ী জানান, তাঁর কাছে মোটা অঙ্কের চাঁদা চান জিতু। না দেওয়ায় দোকানে ককটেল হামলা করেন। বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকায় আগস্টের পর জিতু বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। এলাকার একাধিক আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীর কাছ থেকে মোটা অঙ্কের চাঁদা নিয়ে আশ্রয় দেওয়ার অভিযোগ আছে তাঁর বিরুদ্ধে। ছোট ভাই মিতুলও তাঁর বাহিনীর সদস্য।

জিতু গত ১৯ ফেব্রুয়ারি জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের ১০১ সদস্যবিশিষ্ট কমিটির সহসাধারণ সম্পাদকের পদ পান। সন্ত্রাসী হয়ে দলের পদ পাওয়ায় এলাকায় তাঁকে নিয়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। পদ পেয়ে তিনি আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠেন।

এলাকার এক ভুক্তভোগী বলেন, ‘জিতুর কারণে আমরা মুখ খুলতে পারি না। সে চাঁদাবাজি ও মাদক ব্যবসার মাধ্যমে এলাকা অতিষ্ঠ করে তুলেছে। বিশেষ করে রাজনৈতিক দলের পদ-পদবি পেয়ে ভয়ংকর হয়ে ওঠে। তার নির্যাতনের শিকার অর্ধশতের কম হবে না। তার বখাটেপনার কারণে কেউ মেয়ে বিয়ে দিতে রাজি হতো না।’
এক বছর আগে থেকে ফুলবাড়ির পাশেই শহরের শিববাটি এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে বসবাস করতে থাকেন জিতু। সেই এলাকার বাসিন্দা রিকশাচালক শাকিল হোসেন। শাকিলের মেয়ে স্থানীয় ভান্ডারী সিটি বালিকা বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে। এক মাস আগে ৫২ বছর বয়সী জিতু বিয়ের প্রস্তাব দেন শাকিলের মেয়েকে। বিষয়টি শাকিল জেনে রাগ করেন। জিতুর ওপর চড়াও হন। কিছুতে রাজি না হলে নানাভাবে নির্যাতন করতে থাকেন জিতু। তাঁর মেয়েকেও উত্ত্যক্ত করতেন। এরই এক পর্যায়ে শনিবার বিকেলে শাকিলকে পিটিয়ে খুন করেন জিতু ও তাঁর বাহিনী।
এ হত্যার ঘটনায় জিতুকে এক নম্বর আসামি করে ১৭ জনের নাম উল্লেখ করে গতকাল রোববার বগুড়া সদর থানায় হত্যা মামলা করেছেন শাকিলের স্ত্রী মালেকা খাতুন। পুলিশ শনিবার রাতেই জিতু ও তাঁর সহযোগী মতি এবং বিপ্লবকে আটক করে।

সন্ত্রাসীকে দলের পদ দেওয়ার বিষয়ে জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি সরকার মুকুল বলেন, ‘আমি জানতাম না, সে দলের নাম ভাঙিয়ে এসব অপকর্ম করছে। আমরা তাকে দল থেকে বহিষ্কার করেছি।’ শনিবার রাতে স্বেচ্ছাসেবক দল কেন্দ্রীয় সভাপতি এস এম জিলানী ও সাধারণ সম্পাদক রাজিব আহসানের সই করা বিবৃতিতে জিতু ইসলামকে বহিষ্কার করা হয়। সেই সঙ্গে তাঁর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে অনুরোধ জানানো হয়।

বগুড়া সদর থানার ওসি হাসান বাসির বলেন, ‘এ মামলার অন্য আসামিদেরও গ্রেপ্তার করা হবে।’
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও ফুলবাড়ী পুলিশ ফাঁড়ির উপপরিদর্শক জোবায়ের খান জানান, গতকাল জিতুসহ তিন আসামিকে আদালতে হাজির করা হয়। সাত দিনের রিমান্ড চাওয়া হয়। সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. মেহেদী হাসান পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এদিকে হত্যার প্রতিবাদ ও দোষীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে মানববন্ধন ও সমাবেশ করেছে সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরাম জেলা শাখা। গতকাল বিকেলে শহরের সাতমাথায় সংগঠনের সভাপতি অ্যাডভোকেট দিলরুবা নূরী এতে সভাপতিত্ব করেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ