ন্যায্য মজুরিসহ কয়েক দাবিতে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে শ্রমিকরা
Published: 4th, March 2025 GMT
চাকরিচ্যুতির প্রতিবাদ, ন্যায্য মজুরি ও রমজান মাসে কর্মঘণ্টা কমানোসহ নানা দাবিতে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন ডায়নামিক সোয়েটার কারখানার শ্রমিকরা। গতকাল সোমবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে তারা সাভারের উলাইল এলাকায় মহাসড়ক অবরোধ করেন। এতে কয়েক কিলোমিটার যানজট হয়। ভোগান্তিতে পড়েন ওই সড়কে চলাচলরত যাত্রী ও পথচারীরা।
আন্দোলনকারী শ্রমিকরা পার্শ্ববর্তী আনলিমা গার্মেন্টস, আল মুসলিম গার্মেন্টসের শ্রমিকদের রাস্তায় নেমে আসার আহ্বান জানান। কিন্তু অন্য কারখানার শ্রমিকরা তাতে সাড়া না দেওয়ায় বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা আনলিমা গার্মেন্টস লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল ছোড়েন। খবর পেয়ে সাভার মডেল থানা পুলিশ, শিল্পাঞ্চল পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে যান। এক পর্যায়ে শ্রমিকরা মহাসড়কের মূল লেন ছেড়ে ঢাকামুখী সার্ভিস লেনে অবস্থান নেন।
বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা জানান, গত ডিসেম্বরে পিসরেটে মজুরি বৃদ্ধির জন্য আন্দোলন করলে মালিকপক্ষ আশ্বাস দিয়েছিল, মজুরি বাড়াবে। কিন্তু মজুরি বাড়েনি। ওভারটাইমও বাড়ায়নি। এ নিয়ে রোববার শ্রমিকরা কারখানার মালিকপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করতে যান। কিন্তু মালিকপক্ষ আলোচনা করতে অস্বীকার করে এবং উল্টো সোমবার কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে নোটিশ টানিয়ে দেয়। এর প্রতিবাদে শ্রমিকরা সড়কে বিক্ষোভ করেন।
তাদের দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে– বেতন ৯ শতাংশ হারে বাড়ানো, রমজানে ইফতারির বিল বাড়ানো, বন্ধের দিন কাজ করালে ওভারটাইমের হারে বিল দেওয়া, ঈদ বোনাস বেতনের সমহারে প্রদান, ওভারটাইমের বকেয়া পরিশোধ, রমজান মাসে কর্মঘণ্টা কমানো এবং কয়েক স্টাফকে চাকরিচ্যুত করা।
রাসেল নামে এক শ্রমিক বলেন, ‘দুই মাস আগে আমরা ১৩ দফা দাবিতে আন্দোলন করি। সে সময় কারখানার কর্তৃপক্ষ সব দাবি মেনে নিয়েছে বলে জানায়। কিন্তু তারা দুটি দাবি মেনেছে।’
এদিকে দুই মাসের বকেয়া বেতনের দাবিতে রোববার রাতে প্রতীক অ্যাপারেলস লিমিটেডের শ্রমিকরা রাত ৮টা থেকে ১১টা পর্যন্ত ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের একই এলাকা অবরোধ করেন।
ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সাভার সার্কেল) শাহীনুল কবির বলেন, সোমবার সকালে ডায়নামিক সোয়েটার কারখানার শ্রমিকরা বিভিন্ন দাবি-দাওয়া নিয়ে রাস্তা অবরোধ করেন। এ সময় তারা পাশের একটি কারখানা ভাঙচুর করেন। আমরা পুলিশসহ সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে তাদের বুঝিয়ে সড়ক থেকে সরিয়ে দিই।
গাজীপুরে শ্রমিকের মৃত্যুর ঘটনায় বিক্ষোভ
গাজীপুর মহানগরের ভোগড়া বাইপাস এলাকায় পোশাক কারখানার এক নারী শ্রমিকের মৃত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা মহাসড়কে বিক্ষোভ করেছেন। এ সময় শ্রমিকরা কারখানায় ভাঙচুর ও কয়েকটি গাড়িতে আগুন দেন। বিক্ষোভের কারণে সোমবার সকাল ৮টা থেকে প্রায় দুই ঘণ্টা ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ ছিল। বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা কারখানার ভেতর থেকে চারটি মোটরসাইকেল এনে আগুন ধরিয়ে দেন। একই সঙ্গে কারখানার কর্মকর্তাদের ব্যবহৃত একটি প্রাইভেটকার পুড়িয়ে ফেলেন। কারখানার ভেতর দফায় দফায় ভাঙচুর চালানো হয়। পরে সেনাবাহিনী ও পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে দুপুরের আগেই আশপাশের অর্ধশতাধিক কারখানা ছুটি ঘোষণা করা হয়।
পুলিশ ও কারখানা কর্তৃপক্ষ বলছে, গত রোববার দুপুরে প্যানারোমা অ্যাপারেলস লিমিটেড নামের কারখানার সাততলা ভবনের ছাদ থেকে লাফ দিয়ে আফসানা আক্তার লাবণী আত্মহত্যা করেন। তিনি সুইং অপারেটর হিসেবে কর্মরত ছিলেন। বিষয়টি জানাজানি হলে সকাল সাড়ে ৮টার দিকে ওই কারখানার শ্রমিকরা বিক্ষোভ শুরু করেন। বিক্ষোভের এক পর্যায়ে তারা ভোগরা বাইপাস এলাকায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে অবরোধ সৃষ্টি করেন।
গাজীপুর শিল্পাঞ্চল-২ এর এসপি এ কে এম জহিরুল ইসলাম বলেন, পারিবারিক কলহের জেরে কারখানার ছাদ থেকে লাফ দিয়ে আত্মহত্যা করেন আফসানা। সোমবার শ্রমিকদের মধ্য থেকে হঠাৎ করে একজন গুজব ছড়ান, আফসানাকে ছুটি না দেওয়ায় আত্মহত্যা করেছেন। কিছু না বুঝেই শ্রমিকরা এ গুজবে কান দিয়ে তাণ্ডব চালান।
বাসন থানার ওসি কায়সার আহমেদ বলেন, আফসানার আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগে রোববারই তাঁর স্বামী হৃদয়কে গ্রেপ্তার করা হয়। এ ঘটনায় থানায় মামলাও হয়েছে। শ্রমিকরা গুজবে সাড়া দিয়ে বিক্ষোভ করেছেন।
কেয়া গ্রুপের শ্রমিকদের বিক্ষোভ
ছাঁটাইয়ের প্রতিবাদে গাজীপুরে বিক্ষোভ করেছেন কেয়া গ্রুপের শ্রমিকরা। গতকাল সকালে মহানগরের জরুন এলাকায় কারখানার সামনে তারা বিক্ষোভ করেন। কেয়া গ্রুপের চারটি কারখানা আগামী ১ মে থেকে স্থায়ী বন্ধ ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ। বাজার অস্থিতিশীলতা, ব্যাংকের সঙ্গে হিসাবের অমিল, কাঁচামাল অপর্যাপ্ততার কারণ দেখিয়ে কারখানা কর্তৃপক্ষ গত ২ জানুয়ারি এ ঘোষণা দেয়।
শ্রমিকরা জানান, বেতনসহ শ্রম আইন অনুযায়ী সব পাওনা মে মাসে পরিশোধের কথা ছিল। তবে হঠাৎ করে সোমবার সকালে এক নোটিশে ৬ হাজারের মধ্যে ২ হাজার ২০৩ শ্রমিককে ছাঁটাই করা হয়। ঈদের আগে এত শ্রমিক একসঙ্গে ছাঁটাই করায় তারা বিক্ষোভ শুরু করেন।
খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে শ্রমিকদের বুঝিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করেন বলে জানান কানাবাড়ী থানার ওসি নজরুল ইসলাম।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব ক ষ ভ কর ছ ন এল ক য় আফস ন
এছাড়াও পড়ুন:
একজন চা শ্রমিকের দিনে আয় ১৭৮ টাকা
হবিগঞ্জে ছোট-বড় মিলেয়ে চা বাগানের সংখ্যা প্রায় ৪১টি। এসব বাগানের বাসিন্দা প্রায় দেড় লাখ। এর মধ্যে, স্থায়ী ও অস্থায়ী মিলে ৩২ থেকে ৩৫ হাজার মানুষ চা পাতা উত্তোলনে জড়িত।
চা বাগানে একজন শ্রমিককে প্রতিদিন ২৩ কেজি পাতা তুলতে হয়। এর বিনিময়ে মজুরি পান ১৭৮ টাকা ৫০ পয়সা। অভিযোগ রয়েছে, কোনো কোনো বাগানে নিয়মিত এই মজুরিও দেওয়া হয় না।
শ্রমিকদের দাবি, দৈনিক মজুরি ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা করতে হবে। বর্তমানে যে মজুরি পাওয়া যায় তা দিয়ে সংসার চলে না। প্রতিদিনই নিত্যপণ্যের দাম বাড়ছে। সেই সঙ্গে চা শ্রমিকদের নৈমিত্তিক ছুটির ব্যবস্থা করতে হবে।
আরো পড়ুন:
বৈষম্য কেন? নারী শ্রমিকেরা পান না সমান মজুরি
ধান কাটায় আধুনিক যন্ত্রের ব্যবহার, পেশা বদলাচ্ছেন কৃষি শ্রমিকেরা
সরেজমিনে কয়েকটি বাগান ঘুরে দেখা যায়, শ্রমিকরা ছোট্ট কুঠুরিতে গাদাগাদি করে পরিবারের সবাইকে নিয়ে বসবাস করেন। পুষ্টিকর খাবার তো দূরের কথা, দু-বেলা পেটভরে খেতে পারেন না।
শ্রমিকদের দাবির বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নৃপেন পাল বলেন, ‘‘দুই বছর অন্তর চা শ্রমিকদের বিভিন্ন দাবি ও সমস্যা নিয়ে চা বাগান মালিক পক্ষের সংগঠনের সঙ্গে চা শ্রমিক ইউনিয়ন প্রতিনিধির বৈঠক হয়। সর্বশেষ গত বছরের আগস্টে বৈঠক হয়েছে। সে সময় ৮ টাকা ৫০ পয়সা বৃদ্ধি পেয়ে মজুরি ১৭৮ টাকা ৫০ নির্ধারিত হয়েছে।’’
শ্রমিকদের কষ্টের কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, ‘‘দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে এই টাকায় চলা যায় না। দেশের কোথাও এতো সস্তা শ্রমের দাম নেই। বর্তমানে একজন কৃষিশ্রমিক দিনে ৫০০-১০০০ টাকা আয় করেন, একজন রিকশাচালকের প্রতিদিনের আয় ৭০০ থেকে ৯০০ টাকা। সেখানে একজন চা শ্রমিক পান ১৭৮ টাকা ৫০ পয়সা। এজন্য তাকে প্রতিদিন ২৩ কেজি পাতা তুলতে হয়।’’
চা শ্রমিকদের অধিকার আদায়ে নাটক ও গানের মাধ্যমে দাবি জানিয়ে আসা জেলার চুনারুঘাট উপজেলার দেউন্দি প্রতীক থিয়েটারের সভাপতি সুনীল বিশ্বাস বলেন, ‘‘দৈনিক ১৭৮ টাকা ৫০ পয়সা মজুরিতে শ্রমিকদের চলা কঠিন হয়ে পড়েছে। অচিরেই মজুরি ৬০০ টাকা নির্ধারণ করা হোক। এছাড়া, শ্রমিকদের আরো সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন।’’
ঢাকা/রাজীব