ক্রেডিট কার্ডের সাহায্যে শুধু আর্থিক লেনদেনের সুবিধা নয়; বরং এর সাহায্যে গ্রাহক তাঁর নিজের প্রয়োজন ও জীবনযাত্রার ধরন অনুযায়ী বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা পেতে পারেন। কার্ড ব্যবহার করে আকর্ষণীয় রিওয়ার্ড পয়েন্ট, আন্তর্জাতিক ভ্রমণের সময় বাড়তি সুবিধা, ক্যাশব্যাক, মূল্যছাড়সহ নানা ধরনের সুবিধা পাওয়া যায়। তবে সব ব্যাংকের কার্ডের সুবিধা এক রকম নয়। ব্যাংকভেদে তাদের সুবিধাগুলো ভিন্ন। একইভাবে একেক গ্রাহকের চাহিদাও একেক রকম। চাহিদাভেদে সব ব্যাংকের কার্ড সবার জন্য উপকারী না-ও হতে পারে। চাহিদা অনুযায়ী কার্ড ব্যবহার করতে হলে জানতে হবে কোন ব্যাংকের কার্ডে কী ধরনের সুবিধা রয়েছে।

ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক (ইউসিবি)

ইউসিবির কার্ড নিরাপত্তা, ছাড়, ক্যাশব্যাক ও নানা বিশেষ সুবিধার সমন্বয়ে গ্রাহকদের জন্য একটি সম্পূর্ণ প্যাকেজ। তাদের বেশ কিছু কার্ডে ইস্যুয়িং ফি নেই, আর নির্দিষ্ট পরিমাণ লেনদেন করলেই বার্ষিক ফি মওকুফ করে দেয়। সেই সঙ্গে ইউসিবির সব কার্ড ইএমভি চিপ সক্ষম, যা পিসিআই-ডিএসএস সার্টিফিকেশনের মাধ্যমে লেনদেনকে নিরাপদ রাখে। এ ছাড়া ইউনেট ইন্টারনেট ব্যাংকিং ও মোবাইল অ্যাপ ব্যবহার করে গ্রাহকেরা নিজেদের কার্ড নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন। প্লাটিনাম, সিগনেচার ও ওয়ার্ল্ড ক্রেডিট কার্ডধারীদের জন্য বিশ্বের ১ হাজার ৪০০–এর বেশি এয়ারপোর্ট লাউঞ্জে অ্যাকসেস, নির্দিষ্ট রেস্টুরেন্ট, ই-কমার্স ও রিটেইল স্টোরে ১০ থেকে ২৫ শতাংশ পর্যন্ত ডিসকাউন্ট ও ক্যাশব্যাক, আর শূন্য (০) শতাংশ ইএমআই সুবিধায় সুদবিহীন কিস্তিতে কেনাকাটার সুযোগ রয়েছে।

ইস্টার্ন ব্যাংক

বিভিন্ন উৎসব উপলক্ষে ইস্টার্ন ব্যাংকের কার্ডধারীদের জন্য থাকে নির্দিষ্ট ক্লদিং ও ফুটওয়্যার ব্র্যান্ডে ডিসকাউন্ট, সিলেক্টেড গ্রোসারি মার্চেন্টে ক্যাশব্যাক, উইকেন্ড গ্রোসারি শপিংয়ে রিওয়ার্ড পয়েন্ট, হোটেল চেইনের সঙ্গে ‘বাই ওয়ান গেট ওয়ান’ অফার ও নির্দিষ্ট ইএমআই মার্চেন্টে ক্যাশব্যাকের সুবিধা। সেই সঙ্গে অতি দ্রুত চালু হতে যাচ্ছে তাদের ভার্চ্যুয়াল কার্ড, যা অনলাইন কেনাকাটা, ডিজিটাল ওয়ালেট লেনদেন ও আন্তর্জাতিক পেমেন্টের জন্য নিরাপদ ও সুবিধাজনক। কার্ড লেনদেনের নিরাপত্তায় তাদের রয়েছে ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড (ওটিপি) ও টু-ফ্যাক্টর অথেনটিকেশন, রিয়েল-টাইম ফ্রড মনিটরিং ও অ্যান্টি-স্ক্যাম অ্যালার্ট সিস্টেম। এ ছাড়া তাদের রয়েছে ডুয়েল কারেন্সি কার্ডের মাধ্যমে দেশি-বিদেশি মুদ্রায় লেনদেন, স্কাই ব্যাংকিং অ্যাপে কারেন্সি কনভারশন ও ২৪/৭ কন্ট্যাক্ট সেন্টার সাপোর্ট। ইস্টার্ন ব্যাংকের এসব আধুনিক সুবিধা গ্রাহকদের ব্যাংকিং অভিজ্ঞতাকে আরও সহজ ও উন্নত করে তুলেছে।

ঢাকা ব্যাংক

ঢাকা ব্যাংক তাদের ক্রেডিট কার্ড গ্রাহকদের জন্য নানা আকর্ষণীয় সুবিধা প্রদান করে থাকে। এর মধ্যে রয়েছে পাঁচ হাজারের বেশি মার্চেন্ট পয়েন্টে ডিসকাউন্ট সুবিধা। এ ছাড়া গ্রাহকেরা ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে কেনাকাটায় সহজ কিস্তিতে ইএমআইয়ের সুবিধা উপভোগ করতে পারেন এবং লেনদেনের ভিত্তিতে রিওয়ার্ড পয়েন্ট অর্জন করতে পারেন, যেগুলো পরে বিভিন্ন ভাউচার বা পুরস্কারের মাধ্যমে রিডিম করা যায়। ডিবিএল ‘গো অ্যাপে’র মাধ্যমে গ্রাহকেরা যেকোনো স্থানে বসে তাঁদের ক্রেডিট কার্ড বিল পরিশোধ করতে পারেন, যা সময় ও পরিশ্রম বাঁচায়। পাশাপাশি তাদের গ্রাহকদের জন্য ২৪/৭ কন্ট্যাক্ট সেন্টার সেবা ও এসএমএস এবং ই–মেইল সতর্কতা ব্যবস্থা রয়েছে, যা লেনদেনের তথ্য সুরক্ষিত রাখে।

প্রাইম ব্যাংক

প্রাইম ব্যাংকের কার্ডে রয়েছে জয়েনিং ক্যাশব্যাক, প্রায়োরিটি পাস, ইনস্যুরেন্স সুবিধা ও সহজ শর্তে তাৎক্ষণিক ঋণ। ইএমআইয়ের সুবিধা, লেনদেনের ভিত্তিতে রিওয়ার্ড পয়েন্ট ও বৈদেশিক মুদ্রায় লেনদেনের সহজ সুযোগ থাকায় তাদের কার্ডগুলো গ্রাহকদের জন্য বেশ সুবিধাজনক। পাশাপাশি তারা গ্রাহকের তথ্য ও লেনদেনের নিরাপত্তায় উন্নত প্রযুক্তি ও সার্বক্ষণিক কন্ট্যাক্ট সেন্টার সেবা নিশ্চিত করে। এ ছাড়া তাদের কার্ডে থাকে বছরজুড়ে শপিং, ডাইনিং, ট্রাভেল, হেলথ ও বিউটি কেয়ারে দেশসেরা ব্র্যান্ডের আকর্ষণীয় মূল্যছাড়।

মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক (এমটিবি)

দুটি গুরুত্বপূর্ণ সুবিধার কারণে গ্রাহকেরা অন্যান্য ব্যাংকের কার্ডের তুলনায় এমটিবি ক্রেডিট কার্ডকে বেশি পছন্দ করেন। প্রথমত, লাউঞ্জ ব্যবহারের সুবিধা। বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ লাউঞ্জ নেটওয়ার্ক নিয়ে এমটিবি কার্ডহোল্ডারদের পাশে আছে। দেশের ছয়টি বিমানবন্দরে আটটি এয়ারপোর্ট লাউঞ্জ ও বিদেশে ‘লাউঞ্জ কি’ প্রোগ্রামের মাধ্যমে ১ হাজার ৩০০টির বেশি লাউঞ্জে বিনা মূল্যে প্রবেশাধিকার পাওয়া যায়। দ্বিতীয়ত, ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এমটিবি পিক অ্যান্ড ড্রপ সার্ভিস প্রদান করে, যা ভ্রমণের সময় গ্রাহকদের জন্য একটি বিশেষ সুবিধা। এ ছাড়া এমটিবি পিসিআই–ডিএসএস স্বীকৃত একটি ব্যাংক, যা গ্রাহকদের কার্ড ব্যবহারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে।

সাউথইস্ট ব্যাংক

সাউথইস্ট ব্যাংকের কার্ডগুলোয় রয়েছে একাধিক প্রিমিয়াম ফিচার। বিশ্বের ১ হাজার ৩০০–এর বেশি আন্তর্জাতিক এয়ারপোর্ট লাউঞ্জে ‘লাউঞ্জ কি’র মাধ্যমে বিনা মূল্যে প্রবেশ, এয়ারপোর্ট পিক অ্যান্ড ড্রপ সার্ভিস এবং প্রিমিয়াম হোটেল ও রেস্তোরাঁয় ‘বাই ওয়ান গেট ওয়ান’ অফার এর মধ্যে অন্যতম। তাদের কার্ডে রয়েছে সাত ধরনের ইএমআইয়ের সুবিধা, সর্বোচ্চ ৩৬ মাস পর্যন্ত কিস্তিতে পরিশোধের সুযোগ, পার্টনার আউটলেটে আকর্ষণীয় ডিসকাউন্ট ও মেম্বারশিপ রিওয়ার্ড পয়েন্ট রিডেম্পশনের মাধ্যমে ক্যাশব্যাকের সুবিধা। এ ছাড়া সেফটি-নেট ইনস্যুরেন্স, ভিসা কুইক রিড কার্ড ও অটোডেবিট সুবিধা তাদের সবার চেয়ে আলাদা করে তুলেছে। তাদের কোনো অতিরিক্ত বা ওভার লিমিট ফি নেই।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ল নদ ন র দ র জন য গ র হক র ব যবহ র এমট ব

এছাড়াও পড়ুন:

ইসরায়েলে ইরানের নতুন হামলায় নিহত বেড়ে ৫, আহত ২৯

ইসরায়েলের মধ্যাঞ্চলে অন্তত চার জায়গায় হামলা চালিয়েছে ইরান। এ হামলায় তিনজন নিহত হয় বলে জানায় জেরুজালেম পোস্ট। বিবিসি আরও দুইজন নিহতের খবর দেয়। এরপর আরেকজনের ফলে নতুন হামলায় ইসরায়েলে নিহত বেড়ে পাঁচজনে পৌঁছাল।

আজ সোমবার আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েলের অ্যাম্বুলেন্স ও ব্লাড ব্যাংক সংস্থাগুলো বলছে, এসব হামলায় ২৯ জন আহত হয়েছেন।

বিবিসির খবরে বলা হয়, ইসরায়েলের জাতীয় জরুরি পরিষেবার প্রধান ম্যাগেন ডেভিড অ্যাডম জানান, মধ্য ইসরায়েলজুড়ে ইরানের হামলায় পাঁচজন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে দুইজন নারী, একজন পুরুষ। 

এর আগে সিএনএন ইসরায়েলের ১৫ জন নিহত হওয়ার খবর দেয়। ইসরায়েলের সরকারি সম্প্রচারমাধ্যম কানের খবর বলছে, ইসরায়েলের মধ্যাঞ্চলে হামলায় একজন গুরুতর আহত হয়েছেন। এছাড়াও বন্দরনগরী হাইফায় অন্তত দুইজন আহত হয়েছেন। এছাড়াও সেখান আরও তিনজন নিখোঁজ রয়েছেন।

এর আগে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) জানিয়েছিল, ইরান থেকে নতুন করে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা শুরু হয়েছে। একাধিক ক্ষেপণাস্ত্র শনাক্ত করেছে ইসরায়েল। বর্তমানে হামলা প্রতিহত করার কাজ চলছে বলে জানিয়েছে আইডিএফ।

আজ সিএনএনের এক খবরে বলা হয়েছে, তেল আবিব ও জেরুজালেমসহ ইসরায়েলের বিভিন্ন শহরে জরুরি সতর্ক সংকেত (সাইরেন) বাজতে শুরু করেছে। আইডিএফ সতর্ক করে বলেছে, তাদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা পুরোপুরি অভেদ্য নয়।

সিএনএনের একজন প্রযোজক জেরুজালেমে সাইরেন এবং একাধিক বিস্ফোরণের শব্দ শুনেছেন। তার তোলা ভিডিওতে আকাশে বহু ক্ষেপণাস্ত্র ছুটে যেতে দেখা গেছে।

ইসরায়েলের জরুরি পরিষেবা সংস্থা ম্যাগেন ডেভিড আদোম জানিয়েছে, তাদের দলগুলো আক্রান্ত এলাকার দিকে রওনা দিয়েছে।

সারা দেশের নাগরিকদের আশ্রয়কেন্দ্রে ঢুকতে এবং পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সেখানে থাকার আহ্বান জানিয়েছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী।

বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসরায়েলি সেনাবাহিনী এক্সে দেওয়া এক পোস্টে বলেছে, বর্তমানে বিমানবাহিনী হামলা প্রতিহত করার পাশাপাশি পাল্টা হামলা চালানোর কাজ করছে।

ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম ওয়াইনেট নিউজ জানিয়েছে, মধ্য ইসরায়েলের পেতাহ টিকভা শহরের একটি ভবনে একটি ইসরায়েলি ক্ষেপণাস্ত্র সরাসরি আঘাত হেনেছে। হামলার ফলে ওই স্থানে আগুন ধরে যায়। তবে এ ঘটনায় তাৎক্ষণিকভাবে কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।

এদিকে মধ্য ইরানে একাধিক বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। দেশটির সেনাবাহিনী এ তথ্য জানিয়েছে। আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সেনাবাহিনীর দাবি, বিভিন্ন ক্ষেপণাস্ত্র স্থাপনা লক্ষ্য করে এসব হামলা চালানো হয়েছে।

ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘ইসরায়েলি বিমানবাহিনী সফলভাবে মধ্য ইরানে অবস্থিত একাধিক স্থাপনায় আঘাত হেনেছে। আমাদের গোয়েন্দা তথ্য বলছে, এসব স্থাপনা থেকে ইসরায়েলের দিকে ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হচ্ছিল।’

তবে ইসরায়েলের এই হামলার প্রতিক্রিয়ায় ইরান এখনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেয়নি।

এদিকে ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরায়েলি বিমান হামলায় রোববার পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা বেড়ে ২২৪ জনে পৌঁছেছে।

বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের (এপি) এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নিহতদের মধ্যে ৯০ শতাংশেরও বেশি বেসামরিক নাগরিক। হামলায় ১ হাজার ২৭০ জনেরও বেশি মানুষ আহত হয়েছেন।

এপির প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, গত ১৩ জুন ইরানে বিমান হামলা শুরু করে ইসরায়েল। ওই হামলায় ইরানের নাতাঞ্জ ও ইসফাহান অঞ্চলের পারমাণবিক স্থাপনা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বেশ কয়েকজন উচ্চপদস্থ সামরিক কর্মকর্তা ও পারমাণবিক বিজ্ঞানী নিহত হন। ইরানে বর্তমানে মসজিদ ও মেট্রো স্টেশনগুলোকে অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।

ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইসরায়েলের তিন শিশুসহ অন্তত ১৫ জন নিহত হয়েছেন। রোববার ইসরায়েল সরকারের বরাতে এ তথ্য জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম সিএনএন।

ইসরায়েল কর্তৃপক্ষ বলেছে, এছাড়া ইরানের হামলায় কমপক্ষে ৩৮৫ জন আহত হয়েছেন, যার মধ্যে সাত জনের অবস্থা গুরুতর।

এদিকে ইসরায়েলি পুলিশের বরাতে আল জাজিরা জানিয়েছে, তেল আবিবের দক্ষিণে অবস্থিত বাত ইয়াম শহরে ৬ জন নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে দুই শিশু রয়েছে। এছাড়া সাতজন এখনও নিখোঁজ। ধ্বংসস্তূপের মধ্যে উদ্ধার অভিযান চালাচ্ছেন জরুরি সেবাদানকারীরা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ