বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় অনুষ্ঠিত হলো ‘উন্নয়নের নতুন ধারণা: চীনের গ্রামীণ ও নগরায়নের সমন্বিত কৌশল’ বিষয়ে সেমিনার।

সোমবার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের ভার্চুয়াল ক্লাস রুমে অনুষ্ঠিত হয় এই সেমিনার।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর চায়না স্টাডিজ আয়োজন করে এই সেমিনারের। সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে ছিলেন বাংলাদেশে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার প্রতিনিধি ড.

চিয়াওছুন শি। সেমিনারে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন চীনের কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের লিড চেয়ার ড. প্রফেসর লি সিয়াও ইয়ুন।

আরো পড়ুন:

গঙ্গার পানি প্রবাহ খতিয়ে দেখলেন ভারত-বাংলাদেশ যৌথ নদী কমিশনের সদস্যরা

গঙ্গা পানি চুক্তি নবায়ন: ভারত যাচ্ছে বাংলাদেশের দল

মূল প্রবন্ধে লি সিয়াও ইয়ুন তুলে ধরেন চীনের ঐতিহাসিক পটভূমি।১৯ শতকের মাঝামাঝি থেকে জোরপূর্বক আধুনিকীকরণ এবং  কৃষি বিপ্লব ছাড়াই শিল্পায়নের গল্প। এরপর তুলে ধরেন নতুন চীন প্রতিষ্ঠার শুরুতে ১৯৫০-১৯৭০ এর দশকে  শিল্পায়নে কৃষির ভূমিকা ।

লি সিয়াও ইয়ুন বলেন, সংস্কার এবং উন্মুক্তির পর ১৯৮০ থেকে ৯০-এর দশকে কৃষি, শিল্প এবং শহুরে উন্নয়নের একীভূত উন্নয়ন ঘটে চীনে। পাশাপাশি তুলে ধরেন একবিংশ শতকের শুরু থেকে শহর-গ্রামীণ সমন্বিত উন্নয়নের ধারণাটিও।

এরপর উঠে আসে চীনের দারিদ্র্য বিমোচনের গল্প। গ্রাফ চিত্রে দেখানো হয় ২০১২ সালে চীনে প্রায় ১০ কোটি মানুষ ছিল দরিদ্র। এরপরই সরকার শুরু করে জাতীয় দারিদ্র্য বিমোচন অভিযান। যেখানে বিনিয়োগের পরিমাণ ৯.৪ ট্রিলিয়ন ইউয়ান ছাড়িয়ে গিয়েছিল। কয়েক বছরের ধারাবাহিক চেষ্টায় ২০২০ সালে দারিদ্র্যমুক্ত হয় চীন।

চীনের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, সামাজিক রূপান্তর, দারিদ্র্য নির্মূল এবং গ্রামীণ পুনরুজ্জীবনে অসাধারণ ফলাফল অর্জনের কারণ হিসেবে রাজনৈতিক পার্টির ধারাবাহিক কৌশলগত আধুনিকীকরণকেই কৃতিত্ব দিয়েছেন ড. লি।

তার মতে, দীর্ঘমেয়াদি টেকসই ও সমন্বিত উন্নয়নে একটি স্থিতিশীল রাজনৈতিক এবং সামাজিক পরিবেশই ভূমিকা রেখেছে এবং কৃষির উন্নয়নই কৃষি-প্রধান ও গ্রামভিত্তিক দেশগুলোর উন্নয়নের ভিত্তি বলে উল্লেখ করেন তিনি।

এদিকে চীনের এই সমন্বিত উন্নয়ন কৌশল কীভাবে বাংলাদেশেও কাজে লাগানো যায় তা নিয়েও মতামত তুলে ধরেন বাংলাদেশে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার প্রতিনিধি  ড. চিয়াওছুন।

বাংলাদেশে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার প্রতিনিধি ড. চিয়াওছুন বলেন, বাংলাদেশ এলডিসি (স্বল্পোন্নত দেশ) থেকে নিম্ন-মধ্য আয়ের দেশ বা এলএমআইসি হিসেবে উন্নীত হচ্ছে।

অন্যদিকে, কৃষি খাত এবং গ্রামীণ জীবিকা একটি বড় রূপান্তরের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এলডিসি পরবর্তী দৃশ্যপটে, বাংলাদেশে গ্রামীণ-শহুরে সংযোগগুলো অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধির জন্য ক্রমশ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে। দেশটি অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে যাওয়ার সাথে সাথে উন্নত অবকাঠামো, বাজারের প্রবেশাধিকার এবং ডিজিটাল সংযোগ গ্রামীণ উৎপাদকদের সঙ্গে শহুরে ভোক্তাদের ব্যবধান কমাচ্ছে। এই সংযোগগুলোর শক্তিশালীকরণ কৃষি মূল্য চেইন বৃদ্ধি, কর্মসংস্থান তৈরি এবং সুষম আঞ্চলিক উন্নয়ন নিশ্চিত করতে পারে। এর মাধ্যমেই টেকসই নগরায়ন এবং গ্রামীণ উন্নয়নও সম্ভব হবে। 

দুই ঘণ্টাব্যাপী উন্নয়নের নতুন ধারণার এই সেমিনারে অংশগ্রহণ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।এছাড়া দেশটির বিভিন্ন গণমাধ্যমের সংবাদকর্মীরাও উপস্থিত ছিলেন।

ঢাকা/হাসান/এসবি

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর

এছাড়াও পড়ুন:

কোরবানির গরু কেনার আড়াই লাখ টাকা ছিনিয়ে নিতে ব্যবসায়ী জাকিরকে হত্যা করা হয়

রাজধানীর সবুজবাগের প্লাস্টিক ব্যবসায়ী জাকির হোসেনের সঙ্গে থাকা আড়াই লাখ টাকা ছিনিয়ে নিতেই ধারালো অস্ত্রের আঘাতে তাঁকে ছয় টুকরা করে লাশ বস্তায় ঢুকিয়ে কাছের একটি ঝোপের ভেতরে পুঁতে রাখা হয়। এর আগে আজহারুল ইসলাম (গ্রেপ্তার) মুঠোফোনে সবুজবাগের ভাইগদিয়ায় তাঁর ভাড়া বাসায় জাকিরকে (৫৫) ডেকে নেন।

গ্রেপ্তার আজহারুল ইসলাম (৩৯) আজ শুক্রবার আদালতে দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে এ কথা বলেছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। আদালত তাঁর জবানবন্দি নিয়ে তাঁকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। এ ছাড়া এ হত্যাকাণ্ডে গ্রেপ্তার শুক্কুর আলী (৪৪), মো. রাজীব (২৬) ও স্বপনকে (২৫) পাঁচ দিন করে পুলিশি হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দিয়েছেন আদালত। গ্রেপ্তার শুক্কুর আলী পেশায় রাজমিস্ত্রি এবং বাকিরা রংমিস্ত্রি।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সবুজবাগ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. সামছুল আমিন আজ প্রথম আলোকে বলেন, গ্রেপ্তার আজহারুল, শুক্কুর আলী, রাজীব ও স্বপন জবানবন্দি দিতে রাজি হওয়ায় দুপুরে তাঁদের ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে পাঠানো হয়। এর মধ্যে আজহারুল আদালত জবানবন্দি দেন। অপর তিনজন জবানবন্দি দিতে রাজি হননি। পরে তাঁদের সাত দিন করে রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন জানানো হয়। শুনানি শেষে আদালত তাঁদের পাঁচ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

মামলার তদন্ত–সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আজহারুল আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে বলেন, জাকির হোসেনের সঙ্গে তাঁদের চারজনের (আজহারুল, শুক্কুর আলী, রাজীব ও স্বপন) বন্ধুত্ব ছিল। তাঁরা একসঙ্গে আড্ডা দিতেন। মাঝেমধ্যে জাকিরের সঙ্গে তাঁর ভাইগদিয়ার ভাড়া বাসায় তাঁরা একসঙ্গে মদ্যপান করতেন। ৪ জুন রাতে জাকির নন্দীপাড়ায় শেখের বাজারের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান থেকে বাসায় ফিরছিলেন। তখন আজহারুল মুঠোফোনে জাকিরকে তাঁর বাসায় ডেকে নেন। ওই বাসায় আজহার একা থাকতেন। আগেই জাকির তাঁদের জানিয়েছিলেন, তাঁর কাছে কোরবানির গরু কেনার আড়াই লাখ টাকা আছে এবং ডেমরার আমুলিয়া পশুরহাট থেকে কোরবানির জন্য গরু কিনবেন। জাকির তাঁর বাসায় পৌঁছানোর পর ওই টাকার ওপর তাঁদের সবার লোভ জাগে। তাঁরা টাকা ছিনিয়ে নিতে গেলে জাকির বাধা দেন। তখন ইস্পাতের পাইপ দিয়ে জাকিরের মাথায় সজোরে আঘাত করেন আজহারুল। এতে জাকির অচেতন হয়ে যান। এ সময় তাঁর কাছ থেকে এক হাজার টাকার দুটি বান্ডিল ছিনিয়ে নিয়ে সেই টাকা শুক্কুর আলীর কাছে জমা রাখেন।

পুলিশ সূত্র জানায়, আজহারুল আদালতকে জানান, জাকিরকে বাঁচিয়ে রাখা হলে তাঁরা সবাই ফেঁসে যাবেন—এমন আশঙ্কায় জাকিরকে হত্যা করে লাশ গুম করার সিদ্ধান্ত নেন। এরপর ধারালো অস্ত্রের আঘাতে জাকিরের শরীর থেকে মাথা বিচ্ছিন্ন করে ফেলেন। এরপর শুক্কুর, রাজীব ও স্বপন তাঁর শরীর টুকরা টুকরা করেন। পরে লাশের ছয়টি টুকরা রঙের দুটি পাত্রে ভরে একটি অটোরিকশায় করে দক্ষিণ ভাইগদিয়ায় নিয়ে যান। শুক্কুর, রাজীব ও স্বপন অন্য পথ দিয়ে দক্ষিণ ভাইগদিয়ায় আসেন। তখন তাঁরা সবাই মিলে বালতিভর্তি লাশের টুকরাগুলো পাশের ঝোপে নিয়ে যান। এরপর সেখানে খুঁড়ে লাশের টুকরাগুলো পুঁতে রাখেন।

আজহারুল আদালতকে বলেন, জাকিরের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেওয়া টাকা ভাগাভাগি করার আগেই তাঁরা পুলিশের হাতে ধরা পড়েন।

পুলিশ কর্মকর্তা সামছুল আমিন বলেন, আজহারুলের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাহেরচরে। বাকি তিনজন ঢাকার সবুজবাগের ভাইগদিয়ার স্থায়ী বাসিন্দা।

প্লাস্টিক ব্যবসায়ী জাকির হোসেন সপরিবার সবুজবাগ থানার ভাইগদিয়া এলাকায় থাকতেন। ৪ জুন জাকির হোসেন নিখোঁজ হন। এরপর স্বজনেরা বিভিন্ন স্থানে খোঁজ করেও তাঁর সন্ধান পাননি। পরদিন জাকির নিখোঁজ রয়েছেন বলে তাঁর স্ত্রী রেখা বেগম সবুজবাগ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। এর মধ্যে জাকিরের খোঁজ না পাওয়ায় তিনি ১০ জুন আজহার আলীসহ অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে সবুজবাগ থানায় একটি অপহরণের মামলা করেন।

পুলিশ কর্মকর্তা সামছুল আমিন বলেন, এ মামলার তদন্ত করতে গিয়ে এলাকার ক্লোজড সার্কিট টেলিভিশন (সিসিটিভি) ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ ও তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় হত্যাকাণ্ডে জড়িত আজহারুলকে শনাক্ত করা হয়। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে আজহারের অবস্থান নিশ্চিত হয়ে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁর দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে হত্যায় জড়িত অভিযোগে গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে অপর তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গে ময়নাতদন্ত শেষে গতকাল রাতে জাকির হোসেনকে ভাইগদিয়ায় দাফন করা হয়।

সবুজবাগ থানার ওসি ইয়াছিন আলী প্রথম আলোকে বলেন, জমিজমা নিয়ে বিরোধের জের ধরে জাকিরকে হত্যা করা হয়েছে বলে তাঁর পরিবার অভিযোগ করলেও তদন্তে এখন পর্যন্ত এর সত্যতা পাওয়া যায়নি। জাকির হত্যায় আরও একজন জড়িত। তাঁকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • পুরনো স্বাদের ঝুরা মাংসের
  • ভাত খাওয়ার সময় কেন ভাতটাই পরে খেতে বলেন চিকিৎসকেরা?
  • অ্যান্টার্কটিকায় বিরল স্কুইডের সন্ধান
  • পানিতে ভাসছিল ২২ দিনের শিশুর মৃতদেহ, ঘরে ঘুমিয়ে ছিলেন মা
  • বাঁধন কাঁদলেন, কিন্তু কেন...
  • মামাত বোনকে ধর্ষণ-হত্যা করে নিখোঁজের গল্প সাজায় নয়ন: পুলিশ
  • আমাদের যত ঘুঘু 
  • বাউন্ডারি সীমানায় ক্যাচের নিয়ম পাল্টাচ্ছে এমসিসি
  • কমিটি নেই, সবাই নেতা
  • কোরবানির গরু কেনার আড়াই লাখ টাকা ছিনিয়ে নিতে ব্যবসায়ী জাকিরকে হত্যা করা হয়