‘যানজটের ভোগান্তি কমাতে আলোচনা হয়। তবুও দুর্ভোগ কমে না। গত পাঁচ বছরে প্রশাসনের উদ্যোগে অত্যন্ত ২৫ বার আলোচনায় বসা হয়েছে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, চেয়ারম্যান, এসিল্যান্ড এবং ওসি সাহেবের কার্যালয়ে। কিন্তু সমস্যার সমাধান হয়নি। উদ্যোগ সীমাবদ্ধ থেকেছে আলোচনাতেই।’

বাজার মোড়ে অসহনীয় যানজট নিয়ে আক্ষেপ করে কথাগুলো বলছিলেন সাদুল্লাপুর উপজেলার স্থানীয় বণিক সমিতির সভাপতি শফিউল ইসলাম স্বপন। একই কথা বলেন, আইনশৃঙ্খলা কমিটির সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুর রশিদ আজমী। 

ভাতগ্রাম ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাহফুজার রহমান বলেন, প্রতিদিন দুই থেকে তিনজন গ্রাম পুলিশ যানজট নিরসনে কাজ করবেন– এমন সিদ্ধান্ত হয়েছিল। দেশে পরিবর্তিত পরিস্থিতির কারণে সে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হয়নি। এ অবস্থায় রমজানে দুর্ভোগ আরও বাড়বে।

সাদুল্লাপুর বাজার মোড়টি পাঁচ রাস্তার সংযোগস্থল। এখান থেকে ইদ্রাকপুর, তুলসীঘাট, ভাতগ্রাম, বকসিগঞ্জ, ধাপেরহাট, বড় জামালপুর, মিরপুর বাজার, কান্তনগর, মহিষবান্দি, ছান্দিয়াপুর, রসুলপুর, নিয়ামতনগর, নলডাঙ্গা, কামারপাড়াসহ কয়েকটি স্থানে আসা-যাওয়া হয়। শহরের দুটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ছয়টি কেজি স্কুল, দুটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, তিনটি কলেজ ও চারটি মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা এ পথ দিয়ে চলাচল করেন। এ মোড়ের পশ্চিম দিকে রাস্তার দু’ধার দখলে নিয়েছেন কাঁচা তরকারি বিক্রেতারা। চারপাশজুড়ে ফলের দোকান। যত্রতত্র দাঁড়ানো ইজিবাইক। যানজট নিরসনে এ মোড়ে একসময় ট্রাফিক পুলিশ কাজ করত। দেড় বছর আগে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। কী কারণে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে, কেউ বলতে পারে না! বর্তমানে গাড়ি চলাচলে শৃঙ্খলা না থাকায় মোড়টিতে যানজট লেগেই থাকে। 

ব্যবসায়ী এনায়েতুল মোস্তাফিজ রাসেল বলেন, শহরঘেঁষে নেই কোনো বাইপাস সড়ক। নেই গণপরিবহন চালকদের দায়িত্ববোধ। এসব নিয়ন্ত্রণে দেখা যায় না আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। 

স্থানীয় গণপরিবহনের টিকিট কাউন্টারের মাস্টার আবদুর রাজ্জাক বলেন, যাত্রীবাহী কোচ, মালবাহী ট্রাক, কার এবং মাইক্রোবাসের সঙ্গে সিএনজিচালিত অটোরিকশা চলাচল করে বাজার মোড় দিয়ে। সেই সঙ্গে প্রতিদিন পাঁচ শতাধিক ইজিবাইক চলে। এসব পরিবহনের জন্য শহরে নির্ধারিত ‘স্ট্যান্ড’ নেই। যত্রতত্র দাঁড় করিয়ে যাত্রী ও পণ্য ওঠানামা করায় যানজট লেগে যায় বলেন তিনি। 

সাদুল্লাপুর ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের ইনচার্জ নারায়ণ চন্দ্র ভর্মা বলেন, যানজটের কারণে প্রায়ই আটকা পড়তে হয়। অনেক সময় ফায়ার সার্ভিসের গাড়ির জন্যও রাস্তা ফাঁকা করা যায় না। এ কারণে দুর্যোগ মুহূর্তে ফায়ার কর্মীরা সময়মত গন্তব্যে পৌঁছাতে পারেন না। তাতে ক্ষিপ্ত হয়ে অনেকে গালমন্দ করেন। 

ব্যবসায়ীদের দাবির মুখে সাদুল্লাপুর মোড়ে ট্রাফিক পুলিশ দেওয়া হয়েছিল বলে জানিয়েছেন বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মশিউর রহমান সাবু। এখন তা তুলে দেওয়া হয়েছে। তাই যানজটের বিশৃঙ্খলা লেগেই থাকে। 

থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তাজউদ্দিন খন্দকার বলেন, সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করে ট্রাফিক পুলিশের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। 

সদ্য যোগদান করা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কাজী মোহাম্মদ অনিক ইসলাম বলেন, যানজট নিরসনে সব পক্ষকে নিয়ে ফের আলোচনা করা হবে। রমজানে যাতে সমস্যা না হয়, সেটি মাথায় রেখেই কাজ করা হবে। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: য নজট ন য নজট র ন রসন

এছাড়াও পড়ুন:

৯ ঘণ্টা ধরে শাহবাগ অবরোধ, জনভোগান্তি চরমে

জুলাই ঘোষণাপত্র ও জুলাই সনদ বাস্তবায়ন এবং দ্রুত স্থায়ী বিধানে যুক্ত করার দাবিতে রাজধানীর শাহবাগ মোড় ৯ ঘণ্টা ধরে অবরোধ করে রেখেছেন ‘জুলাই যোদ্ধারা’। আজ বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে জুলাই শহীদ পরিবার ও জুলাই যোদ্ধাদের (আহত) ব্যানারে তাঁরা এ ‘অবস্থান কর্মসূচি’ পালন করছেন।

রাজধানীর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এই মোড় দিয়ে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এর প্রভাব পড়ে আশপাশের সড়কগুলোতে। এসব সড়কে দিনভর ব্যাপক যানজট তৈরি হয়। ফলে বৃষ্টির মধ্যে জীবনের তাগিদে ঘর থেকে বের হওয়া মানুষদের বেশ ভোগান্তি পোহাতে হয়। বাধ্য হয়ে বিকল্প পথে চলে গণপরিবহন, অনেক যাত্রীকে গন্তব্যে পৌঁছাতে দেখা গেছে হেঁটে হেঁটে। বিশেষ করে অফিসফেরত মানুষকে বেশি ভোগান্তিতে পড়তে হয়।

বেলা ১১টায় শাহবাগ মোড়ের সঙ্গে যুক্ত সব সড়কের মুখ আটকে দিয়ে সড়কের মাঝখানে অবস্থান নেন অবরোধকারীরা। এ সময় তাঁরা জুলাই সনদ দ্রুত বাস্তবায়নসহ বিভিন্ন দাবি জানান। অবরোধকারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, জুলাই যোদ্ধা সংসদ নামে একটি প্ল্যাটফর্ম ওই কর্মসূচির উদ্যোগ নেয়। এ সময় অবরোধকারীরা ‘জুলাই নিয়ে টালবাহানা, চলবে না চলবে না’, ‘জুলাইয়ের চেতনা দিতে হবে ঘোষণা’, ‘জুলাই সনদ দিতে হবে, দিতে হবে, দিতে হবে’ স্লোগান দিতে থাকেন।

বন্ধ হয়ে পড়ে শাহবাগ থেকে ফার্মগেট, সায়েন্স ল্যাব ও গুলিস্তানগামী প্রধান সড়কগুলোও। ফলে সকাল থেকেই এসব এলাকায় যান চলাচল পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। এসব সড়কে চলাচলকারী গণপরিবহনগুলো বিকল্প পথে চলাচল করে।

বেলা তিনটার দিকে দেখা যায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদ–সংলগ্ন মূল সড়কে পুলিশের ব্যারিকেড ও বাঁশ ব্যবহার করে সড়ক আটকে রেখেছেন অবরোধকারীরা। শাহবাগ থানার সামনের সড়কেও প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেন তাঁরা।

বারডেম হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা ষাটোর্ধ্ব নূরে আলম বলেন, ‘কেরানীগঞ্জে যাব। কোনো বাস পাচ্ছি না। রিকশায় যে কিছু দূর যাব, তারাও ভাড়া বেশি চাচ্ছে।’ একপর্যায়ে হেঁটেই রওনা দেন তিনি।

এক পথচারী ইমরান হোসেন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘দুই দিন পরপর সড়ক অবরোধ হয়। এর ভোগান্তি পোহাতে হয় আমাদের মতো সাধারণ মানুষদের।’

বেলা সাড়ে তিনটার দিকে শাহবাগ থানার সামনে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে বাগ্‌বিতণ্ডা হতে দেখা যায় মোটরবাইক আরোহীদের। শাহবাগ থানার সামনে সিএনজিচালিত একটি অটোরিকশাকে বাধা দিলে চালক বলেন, ‘এত দাবিদাওয়া এত দিন আছিলো কই।’ তবে গণপরিবহন আটকে দেওয়া হলেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর যানবাহন এবং তাদের ব্যক্তিগত গাড়ি চলাচল করতে দেখা গেছে। এ ছাড়া রোগী বহনকারী অ্যাম্বুলেন্স শুরু থেকেই চলাচল করতে দেখা গেছে।

অবরোধকারীদের দাবি

অবরোধকারীদের দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে জুলাই শহীদ ও জুলাই যোদ্ধাদের স্বীকৃতি; শহীদ পরিবার ও আহতদের আজীবন সম্মান; চিকিৎসা, শিক্ষা ও কল্যাণের পূর্ণ নিশ্চয়তা প্রদান করা; শহীদ পরিবার ও আহতদের প্রতি দায়িত্ব গ্রহণ করা; আহতদের চিকিৎসা, পুনর্বাসন, কর্মসংস্থান ও কল্যাণমূলক ব্যয় রাষ্ট্রকে বহন করা; আহত ও শহীদ পরিবারের জন্য আজীবন সম্মানজনক ভাতা নিশ্চিত করা; শহীদ পরিবার ও আহতদের জন্য বিশেষ আইনি সুরক্ষা ও সহায়তাকেন্দ্র গঠন করা; শহীদ ও আহতদের ওপর সংগঠিত দমন-পীড়নের জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে বিচারকাজ সম্পন্ন করা এবং একটি স্বাধীন সত্য ও ন্যায় কমিশন গঠন করা।

শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা খালিদ মনসুর বলেন, সকাল থেকেই শাহবাগে অবরোধের কারণে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। শাহবাগ থানা-পুলিশ আলোচনার মাধ্যমে অবরোধকারীদের সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছেন।

তবে জুলাই যোদ্ধা সংসদের মুখ্য সংগঠক মাসুদ রানা জানান, তাঁদের আন্দোলন চলছে। সনদ ঘোষণা না আসা পর্যন্ত তাঁরা এখানেই থাকবেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ৯ ঘণ্টা ধরে শাহবাগ অবরোধ, জনভোগান্তি চরমে