সরকারি গাড়ি ভাঙচুর, ৮০০ শ্রমিকের বিরুদ্ধে মামলা
Published: 6th, March 2025 GMT
সরকার ও উচ্চ আদালতের নির্দেশে অবৈধ ইটভাটা বন্ধে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছে জেলা পরিবেশ অধিদপ্তর। গত ৭ জানুয়ারি থেকে চলছে এ অভিযান। ওইদিন অভিযান শুরু করেন পরিবেশ অধিদপ্তরের মনিটরিং অ্যান্ড এনফোর্সসেন্ট উইংয়ের নির্বার্হী ম্যাজিস্ট্রেট ও সিনিয়র সহকারী সচিব আবদুল্লাহ আল মামুন।
সেদিন নকলা উপজেলার ৮ ও শেরপুর সদর উপজেলার ৩ ইটভাটাকে ৬৫ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। সেই সঙ্গে ৫ ভাটার কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হয়। কিন্তু কয়েক দিন পর থেকে ফের ভাটাগুলো চালু করেন মালিকরা। এরপর গত ৬ ফেব্রুয়ারি জেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তর ফের অভিযান শুরু করে। এ সময় শেরপুর সদর উপজেলার রামকৃষ্ণপুর, যোগিনীমুরা ও পশ্চিম ঝিনিয়া এলাকার কৃষি জমিতে গড়ে ওঠা ৩টি অবৈধ ভাটাকে ৬ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। সেই সঙ্গে কাঁচা ইট নষ্ট ও কিলিং গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। এ সময় ভাটার কার্যক্রমও বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়। সবশেষ ২ মার্চ পৌর শহরের মোবারকপুর এলাকার দুই ভাটাকে ৫ লাখ টাকা জরিমানা করা হয় এবং ভাটার চিমনি ভেঙে দেওয়া হয়। এসব ঘটনায় ক্ষুব্ধ ছিলেন ইটভাটা মালিকরা। এ অবস্থায় গত মঙ্গলবার পরিবেশ অধিদপ্তরের ভ্রাম্যমাণ আদালতের গাড়িতে হামলার ঘটনা ঘটে।
জানা গেছে, একেকটি ইট ভাটায় প্রতিদিন শতাধিক শ্রমিক কাজ করেন। ভাটার বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করায় মালিকদের ক্ষোভের পাশাপাশি কিছুদিন ধরে শ্রমিক অসন্তোষও তৈরি হয়। কারণ, দিনমজুরি করে যারা জীবিকা নির্বাহ করতেন তাদের আয় বন্ধ হয়ে গেছে। এ সুযোগ কাজে লাগায় কিছু ভাটা মালিক। তারা নিজেদের স্বার্থে শ্রমিক অসন্তোষকে উস্কে দেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে গত মঙ্গলবার জেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের তরফ থেকে ইটভাটায় অভিযানের প্রস্তুতি নেওয়া হয়। এ খবর চাউর হলে কয়েকটি ভাটার শ্রমিকরা জড়ো হন শহরের খোয়ারপাড় শাপলা চত্বর এলাকায়। সেখান দিয়ে শেরপুরের তিন উপজেলা, রৌমারী, রাজিবপুর ও বকশীগঞ্জ উপজেলার লোকজন যাতায়াত করেন। সেখানে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন ইটভাটার শ্রমিকরা। বিক্ষোভ চলাকালীন পরিবেশ অধিদপ্তরের ভ্রাম্যমাণ আদালতের একটি গাড়ি খোয়ারপাড় মোড় দিয়ে যাচ্ছিল। হঠাৎ এ গাড়িতে হামলা ভাঙচুর চালান উত্তেজিত শ্রমিকরা। এরপর মিছিল নিয়ে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে গিয়ে স্মারকলিপি দেন তারা।
ভ্রাম্যমাণ আদালতের গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনাটি নিয়ে জেলায় তোলপাড় শুরু হয়। গতকাল বুধবার সকালে পরিবেশ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে সরকারি কাজে বাধা দেওয়া এবং সরকারি গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনায় মামলা করা হয়েছে। আসামি করা হয়েছে ১২ ইটভাটার মালিককে। অজ্ঞাতপরিচয় আসামি করা হয়েছে ৭০০-৮০০ জনকে।
মামলার সত্যতা নিশ্চিত করে পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিদর্শক সুশীল কুমার দাস জানান, ভ্রাম্যমাণ আদালতের গাড়ি ভাঙচুর এবং সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার ঘটনায় এ মামলা হয়েছে।
তবে ইটভাটা মালিক সমিতির সভাপতি আব্দুল্লাহ ও সাধারণ সম্পাদক শাকিল আহমেদ বলেন, ‘গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনাটি দুঃখজনক। শ্রমিকরা কিছু না বুঝেই এ ঘটনা ঘটিয়েছে। এর সঙ্গে মালিকরা জড়িত নন; বরং আমরা শ্রমিকদের শান্ত করতে তাদের সঙ্গে ছিলাম। এটা সবাই জানেন।’
পুলিশ সুপার আমিনুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, সরকারি কাজে বাধাদান এবং গাড়ি ভাঙচুরে জড়িতদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। কেউ আইন অমান্য করলে তাকে শাস্তি পেতে হবে।
জেলা প্রশাসক তরফদার মাহমুদুর রহমানের ভাষ্য, ভ্রাম্যমাণ আদালতের ওপর হামলা ন্যক্কারজনক ঘটনা। মামলার গতিতে মামলা চলবে। সেই সঙ্গে হাইকোর্টের নির্দেশনা পালনে অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে অভিযান চলমান থাকবে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: উপজ ল র সরক র র ঘটন ইটভ ট
এছাড়াও পড়ুন:
পটুয়াখালীতে সৎমা ও দাদিকে গলা কেটে হত্যা
পটুয়াখালীতে কুলসুম বেগম ও মোসা. সাহিদা বেগম নামের দুই নারীকে গলা কেটে হত্যার অভিযোগ উঠেছে এক তরুণের বিরুদ্ধে। আজ শুক্রবার বেলা একটার দিকে সদর উপজেলার মাদারবুনিয়া ইউনিয়নের চারাবুনিয়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
অভিযুক্ত আল আমিন (২৭) সম্পর্কে নিহত সাহিদা বেগমের সৎছেলে এবং বৃদ্ধা কুলসুম বেগমের নাতি। ঘটনার পর থেকে তিনি পলাতক। পুলিশ লাশ দুটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠিয়েছে।
নিহত দুই নারীর স্বজন মো. আশ্রাফ খাঁ জানান, আল আমিন দীর্ঘদিন ধরে অস্বাভাবিক চলাফেরা করছেন। এরপর তাঁর পরিবার তাঁকে মানসিক হাসপাতালে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেন। দুপুরে আল আমিনের বাবা রাজ্জাক খাঁ পাশের একটি মসজিদে জুমার নামাজ পড়তে গেলে আল আমিন দা দিয়ে গলা কেটে তাঁর সৎমা সাহিদা বেগম ও বৃদ্ধ দাদি কুলসুম বেগমকে হত্যা করেন।
বাহাদুর আলম খাঁ (৫০) নামের এক আত্মীয় বলেন, নিহত সাহিদা সম্পর্কে তাঁর চাচিশাশুড়ি এবং কুলসুম বেগম দাদিশাশুড়ি। দুপুরে বাড়ির সবাই জুমার নামাজ পড়তে গেলে মানসিক ভারসাম্যহীন ছোট ছেলে আল আমিন রান্নার কাজে ব্যবহৃত ধারালো দা দিয়ে প্রথমে সৎমা এবং পরে দাদিকে গলা কেটে হত্যা করেন। তিনি বলেন, আল আমিন মাদ্রাসা থেকে দাখিল পাস করে পটুয়াখালী সরকারি কলেজে ভর্তি হয়েছিলেন। এরপর তিন বছর আগে চট্টগ্রামের হাটহাজারী মাদ্রাসায় পড়াশোনা করতে যান। সেখান থেকে বাড়িতে ফিরে অস্বাভাবিক আচরণ শুরু করেন। পরে পরিবারের পক্ষ থেকে চিকিৎসক দেখালেও সুস্থ হননি।
পটুয়াখালী সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. ইমতিয়াজ আহম্মেদ প্রথম আলোকে বলেন, দুই নারীকে হত্যার খবর পেয়ে তাৎক্ষণিকভাবে ঘটনাস্থলে যায় পুলিশ। হত্যাকাণ্ড ঘটানো ব্যক্তি ওই পরিবারের সদস্য। ঘটনার পর মরদেহের সুরতহাল প্রতিবেদন শেষে উদ্ধার করে পটুয়াখালী মর্গে পাঠানো হয়েছে। জড়িত তরুণ এখন পলাতক। তিনি মানসিক ভারসাম্যহীন কি না, তদন্ত করে দেখা হবে।