বগুড়ার টক দই ইফতারে ছড়াচ্ছে ঐতিহ্যের স্বাদ
Published: 6th, March 2025 GMT
ইফতারে বছরের পর বছর বিশেষ জায়গা দখল করে রেখেছে বগুড়ার বিখ্যাত টক দই। এটি স্বাদ ও গুণে অতুলনীয়। রোজাদারের শরীরে প্রশান্তি আনে; বৃদ্ধি করে হজম শক্তি এবং ইফতারে উপহার দেয় অনন্য স্বাদ।
শতবর্ষের ঐতিহ্য আর খাঁটি দুধের মিশেলের দইটি শুধু বগুড়ায় সীমাবদ্ধ নেই। রাজধানীসহ দেশের নানা ইফতারি বাজারে দারুণ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। দোকান ছাড়াও মিলছে অনলাইনে।
বিভিন্ন অঞ্চলে পাওয়া গেলেও বগুড়ার টক দইয়ের স্বাদ ও মান একেবারে আলাদা। মোলায়েম টক স্বাদ ও ঘনত্ব একে দিয়েছে ভিন্নমাত্রা। দই ব্যবসায়ীরা জানান, খাঁটি দুধের সর থেকে দই তৈরি হয়। ঘনত্ব বজায় রাখতে নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় রেখে জমিয়ে তার পর বাজারজাত করা হয়। নিখুঁত প্রক্রিয়ার জন্যই বগুড়ার দই দেশের অন্যান্য অঞ্চলের দইয়ের তুলনায় সুস্বাদু ও স্বাস্থ্যকর।
ব্যবসায়ীরা জানান, রমজান এলেই বেড়ে যায় বগুড়ার টক দইয়ের চাহিদা। বিভিন্ন শোরুম ছাড়াও মুদি দোকান, রাস্তা, পাড়া-মহল্লায় অস্থায়ী টেবিল ও ফেরি করে বিক্রি হয়। দোকানে ৭০ থেকে ২৮০ টাকায় টক ও সাদা ভিন্ন স্বাদের দই বিক্রি হয়। ফুটপাতে নেয় আকারভেদে ৬০ থেকে ১৮০ টাকা। ফুটপাতের দই ঘনত্বে কিছুটা পাতলা হলেও ইফতারে এর আকর্ষণ ভিন্ন। চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় টক দইয়ের জোগান দিতে পারছেন না ব্যবসায়ীরা।
রমজানে জেলায় প্রতিদিন গড়ে ৩০ থেকে ৩৫ লাখ টাকার টক ও সাদা দই বিক্রি হচ্ছে, যা অন্য সময়ের তুলনায় ৩ থেকে ৪ গুণ। শহরের ব্যবসায়ী হিরন বাড়িতে দুই শতাধিক সাদা দই তৈরি করে নবাববাড়ি ফুটপাতে বসেছিলেন। মাত্র এক ঘণ্টায় বিক্রি শেষ। হিরন জানান, দই তৈরিতে যে সময় প্রয়োজন, তা পাওয়া যাচ্ছে না। চাহিদা প্রচুর, ঠিকমতো সরবরাহ করা যাচ্ছে না।
বগুড়া আকবরিয়া লিমিটেডের চেয়ারম্যান হাসেন আলী আলাল জানান, তাঁর প্রতিষ্ঠানের দই আমেরিকায় গেছে বহুবার। প্রবাসীরা বগুড়ায় এসে স্বজনের জন্য নিয়ে গেছেন। তিনি মনে করেন, পণ্যটি বাণিজ্যিকভাবে রপ্তানিতে সরকারি প্রণোদনা দরকার। এখন নতুন পদ্ধতিতে মেশিনে দই বানানো হয়। ফলে খাদ্যমান ঠিক থাকে।
টক দই কিনতে আসা আবুল কাদের জানান, রোজার ক্লান্তি দূর করতে সাদা দইয়ের ঘোল খুব উপকারী। পরিবারের সবার পছন্দের। সঙ্গে নিয়মিত মাঠা কেনা হয়। মাঠা সাদা ও টক দইয়ের মিশ্রণে তৈরি। দুপুরের পর শহরে মাঠা বিক্রির কয়েকশ ভ্রাম্যমাণ গাড়ি ঘিরে ভিড় লেগে যায়।
চিনিপাতা দইয়ের মালিক মুক্তার আলম জানান, বগুড়ায় দিনে গড়ে ৩০ টন দই তৈরি হয়। ছুটি ও উৎসবের দিনে আরও ১০ টন চাহিদা বেড়ে যায়। এখন মানুষ স্বাস্থ্য সচেতন হওয়ায় টক বা সাদা দই পছন্দের শীর্ষে রাখছেন।
বগুড়া শহরেই রয়েছে শতাধিক দইয়ের দোকান। শহরের আশপাশে রয়েছে আরও দুই শতাধিক। এসব দোকানে প্রতিদিন প্রচুর দই বিক্রি হচ্ছে। যদিও সম্প্রতি ক্রেতাদের অভিযোগ, বগুড়ার দইয়ের স্বাদ, গুণগত মান ও ঘনত্ব আগের মতো নেই। কারণ হিসেবে জানা যায়, রমজানে চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় অসাধু ব্যবসায়ীরা নিম্নমানের উপকরণ ব্যবহার করে মুনাফার আশায় নষ্ট করছেন এর গুণগত মান। তারা দুধের পরিবর্তে গুঁড়া দুধ, স্টার্চ ও অন্যান্য রাসায়নিক উপাদানে তৈরি করছেন দই। বাইরে থেকে আসা ক্রেতারা বগুড়ার আসল ও নকল দইয়ের পার্থক্য করতে পারছেন না। ফলে শতবর্ষী দই শিল্পের সুনাম ধীরে ধীরে নষ্ট হচ্ছে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব যবস য় র ক দইয় র ইফত র ঘনত ব
এছাড়াও পড়ুন:
আগে চা পরে লাঞ্চ—বদলে যাচ্ছে ক্রিকেটের শতবর্ষ পুরোনো এক রীতি
চা আগে না লাঞ্চ আগে, জিজ্ঞেস করলে বেশির ভাগই হয়তো লাঞ্চের কথা বলবেন। চা খেয়ে লাঞ্চ করার চেয়ে লাঞ্চ করে চা খাওয়ার চলই সাধারণত দেখা যায়। যে রীতি প্রচলিত টেস্ট ক্রিকেটেও।
টেস্ট ম্যাচে দিনে দুবার বিরতি দেওয়া হয়। প্রথম বিরতিকে বলা হয় লাঞ্চ ব্রেক বা মধ্যাহ্ন বিরতি, দ্বিতীয় বিরতিকে টি ব্রেক বা চা বিরতি।
তবে শত বছরের বেশি সময় ধরে চলা এই রীতির ব্যতিক্রম হতে যাচ্ছে এবার। আগে হবে চা, এরপর লাঞ্চ। ব্যতিক্রমী এই ঘটনা ঘটতে চলেছে আগামী ২২ নভেম্বর শুরু ভারত-দক্ষিণ আফ্রিকা টেস্টে। আসামের গুয়াহাটির বর্ষাপাড়া ক্রিকেট স্টেডিয়ামে হতে যাওয়া ম্যাচটিতে প্রথম সেশনের পর দেওয়া হবে চা বিরতি। লাঞ্চ বিরতি হবে দ্বিতীয় সেশনের পর। এই ম্যাচ দিয়েই টেস্ট অভিষেক হচ্ছে বর্ষাপাড়া স্টেডিয়ামের।
টেস্ট ক্রিকেটে চা বিরতি হয় ২০ মিনিটের, লাঞ্চ বিরতি ৪০ মিনিটের। এই দুই বিরতির সময় দুই দলের খেলোয়াড়েরা মাঠ ছেড়ে ড্রেসিংরুমে চলে যান। দীর্ঘদিন ধরে চলা আগে লাঞ্চ বিরতি পরে চা বিরতির রীতি ভাঙতে চলেছে দিনের দৈর্ঘ্যের কারণে।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের গুয়াহাটিতে নভেম্বরের শেষার্ধে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের মধ্যে সময় কম থাকে। দিনের খেলা আগেভাগে শেষ করতে শুরুও করতে হবে সকালে। যে কারণে স্থানীয় সময় সকাল ৯টায় প্রথম সেশন শুরু হয়ে ১১টায় শেষ হবে।
প্রচলিত রীতি অনুসারে এ সময় ৪০ মিনিটের লাঞ্চ বিরতি হওয়ার কথা। তবে ভারত-দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে ১১টায় হবে চা বিরতি, অর্থাৎ ২০ মিনিটের বিরতি।
এরপর দ্বিতীয় সেশন ১১টা ২০ মিনিটে শুরু হয়ে চলবে ১টা ২০ মিনিট পর্যন্ত। এই সেশনের বিরতি হবে লাঞ্চের, অর্থাৎ ৪০ মিনিটের। আঞ্চলিকভাবে এটিই দুপুরের খাবারের সময়। দুইটায় তৃতীয় সেশন শুরু হয়ে দিনের খেলা শেষ হবে বিকেল ৪টায়।
আগে চা, পরে লাঞ্চ বিরতির বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে জানিয়ে বিসিসিআইয়ের একটি সূত্র ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলেন, ‘গুয়াহাটিতে দিন শুরু হয় আগেভাগে, শেষও হয় দ্রুত। যে কারণে প্রথমবারের মতো চা বিরতি আগে নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে, যাতে মাঠে বাড়তি সময় পাওয়া যায়।
সাধারণত ভারতে টেস্ট ম্যাচ শুরু হয় সকাল সাড়ে নয়টায়। সাড়ে এগারোটায় লাঞ্চ বিরতির পর দ্বিতীয় সেশন শুরু হয় ১২টা ১০ মিনিটে। ২টা ১০ মিনিট থেকে পরের ২০ মিনিট থাকে চা বিরতি। আর আড়াইটা থেকে চারটা পর্যন্ত হয়ে থাকে দিনের তৃতীয় সেশনের খেলা। এ সময়ের মধ্যে ৯০ ওভারের খেলা না হলে ম্যাচ অফিশিয়ালরা আরও আধ ঘণ্টা খেলা চালিয়ে নিতে পারেন।
এর বাইরে পৃথিবীর অন্যান্য প্রান্তে টেস্টে দিনের খেলা শুরুর সময় ভিন্ন হয়ে থাকে। যেমন ইংল্যান্ডে গ্রীষ্মে খেলা শুরু হয় বেলা ১১টায়। দিবারাত্রির টেস্টে অবশ্য প্রথম সেশনের পর চা বিরতি আর দ্বিতীয় সেশনের পর ডিনার বিরতি দেওয়া হয়ে থাকে।
ভারত–দক্ষিণ আফ্রিকার ২ টেস্টের সিরিজ শুরু হবে ১৪ নভেম্বর কলকাতা টেস্ট দিয়ে।