ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে বৃহস্পতিবার ভোরে রাশিয়া আবারো ব্যাপক ড্রোন হামলা চালিয়েছে, যা টানা দ্বিতীয় রাতের মতো দেশটিতে ভয়াবহ আক্রমণের ঘটনা। তিন বছরেরও বেশি সময় ধরে চলা এই যুদ্ধে সাম্প্রতিক সময়ে রাশিয়া তার বোমা হামলা আরো বাড়িয়েছে। খবর বিবিসির।

কিয়েভের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবারের এই হামলায় কমপক্ষে দুজন নিহত এবং ১৩ জন আহত হয়েছেন। রাজধানীজুড়ে আগুন জ্বলছে। 

এর একদিন আগেই, বুধবার ভোরে ইউক্রেনে সবচেয়ে বড় বিমান হামলা চালায় রাশিয়া। ইউক্রেনীয় কর্মকর্তাদের মতে, সেই হামলায় ৭২৮টি ড্রোন ও ১৩টি ক্রুজ বা ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছিল, এতে অন্তত একজন নিহত হন। 

আরো পড়ুন:

পুতিনের ওপর চটেছেন ট্রাম্প

ইউক্রেনের ড্রোন হামলায় রাশিয়ার কুরস্কে নিহত ৩

গত মঙ্গলবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কিয়েভে আরো অস্ত্র পাঠানোর প্রতিশ্রুতি দেওয়ার এবং রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের তীব্র সমালোচনা করার পরপরই টানা দুইরাত ইউক্রেনে ভয়াবহ হামলা চালাল রাশিয়া। 

বৃহস্পতিবার ভোরে, কিয়েভের সামরিক প্রশাসন ছয়টি শহর জেলায় রাশিয়ার ড্রোন হামলার খবর দিয়েছে।

টেলিগ্রামে একটি পোস্টে কিয়েভের সামরিক প্রশাসনের প্রধান টাইমুর তাকাচেঙ্কো বলেছেন, আবাসিক ভবন, যানবাহন, গুদাম, অফিস এবং অন্যান্য ভবনে আগুন লেগেছে। দুর্ভাগ্যবশত, আমাদের দুজন নাগরিক নিহত হয়েছেন। এটি একটি ভয়াবহ ক্ষতি।”

তাকাচেঙ্কো শহরের বাসিন্দাদের আশ্রয়েকেন্দ্রে থাকতে এবং জানালা ও বারান্দা এড়িয়ে চলতে আহ্বান জানিয়েছেন, কারণ ইউক্রেনের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা হামলা প্রতিহত করতে কাজ করছে।

ইউক্রেনের বিমান বাহিনী রাজধানী ছাড়াও বেশ কয়েকটি অঞ্চলে রাতভর রাশিয়ার ড্রোন হামলার কথা জানিয়েছে।  কিয়েভের বাইরে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেছে কিনা তা তাৎক্ষণিকভাবে স্পষ্ট নয়।

রাশিয়ার সামরিক বাহিনী সর্বশেষ হামলার বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।

নির্বাচনী প্রচারণা চলাকালে একদিনের মধ্যে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ থামিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তবে চলতি বছরের ২০ জানুয়ারি মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত সেই প্রতিশ্রুতি তিনি পালন করতে পারেনি।

ট্রাম্প ও পুতিন নিয়মিত যোগাযোগে রয়েছেন, কিন্তু তাদের মধ্যেকার আলোচনা এখনও পর্যন্ত ইউক্রেনে যুদ্ধবিরতির দিকে বাস্তব পদক্ষেপে রূপান্তরিত হতে ব্যর্থ হয়েছে। 

মঙ্গলবার হোয়াইট হাউজে মন্ত্রিপরিষদ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকের সময় ট্রাম্প পুতিনের ওপর তার ক্ষোভ প্রকাশ করেন। 

ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধে হাজার হাজার সেনা প্রাণ হারাচ্ছেন উল্লেখ করে ট্রাম্প বলেন, “আমি আপনাদের এটুকু বলতে পারি, পুতিনের বিষয়ে আমি সন্তুষ্ট নই। তাকে সবসময় খুব ভদ্রোচিত দেখায় তবে দিনশেষে সবই অর্থহীন। পুতিনের আমাদের সঙ্গে অনেক বেশি বাজে বকেন।”

ট্রাম্প জানান, তিনি সিনেটে এমন একটি বিলকে সমর্থন করবেন কিনা তা বিবেচনা করছেন, যা যুদ্ধের জন্য রাশিয়ার বিরুদ্ধে কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করবে। ট্রাম্প বলেন, “আমি বিষয়টি খুব গুরুত্ব দিয়ে দেখছি।”

ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেন, “মস্কো এ বিষয়ে বেশ শান্ত। ট্রাম্পের কথা বলার ধরন সাধারণত বেশ কঠোর, বিশেষ করে তিনি যে বাক্যাংশ ব্যবহার করেন।”

জানুয়ারিতে ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে ট্রাম্প রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞার হুমকি দিয়ে আসছেন কিন্তু এখনও পর্যন্ত কোনো নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেননি।

পুতিন ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে পূর্ণ মাত্রায় আক্রমণ শুরু করেন।

ঢাকা/ফিরোজ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র শ য় ইউক র ন য দ ধ ইউক র ন ইউক র ন র

এছাড়াও পড়ুন:

হাইতিতে গ্যাং হামলায় ৫০ জনের বেশি নিহত

ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জের দেশ হাইতিতে গত সপ্তাহে একাধিক গ্যাং হামলায় ৫০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। জাতীয় মানবাধিকার প্রতিরক্ষা নেটওয়ার্কের (আরএনডিডিএইচ) তথ্যানুসারে, সংকটে জর্জরিত দেশটিতে সর্বশেষ ভয়াবহ গণহত্যার ঘটনা এটি।

মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) বার্তা সংস্থা এএফপির বরাত দিয়ে এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম ব্যারন’স। 

গতকাল সোমবার এএফপিকে পাঠানো এক প্রতিবেদনে আরএনডিডিএইচ জানায়, গত ১১ ও ১২ সেপ্টেম্বর রাজধানী পোর্ট-অ-প্রিন্সের উত্তর এলাকায় এই হামলাগুলো ঘটে।

ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘২০২৫ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নিহত হওয়া বহু মানুষের লাশ এখনও পাওয়া যায়নি। লাশগুলো এখনও ঝোপের মধ্যে পড়ে আছে এবং কুকুর লাশগুলো খেয়ে ফেলেছে।’

পশ্চিম গোলার্ধের সবচেয়ে দরিদ্র দেশ হাইতি। দেশটির একটি অংশ ও রাজধানী পোর্ট-অ-প্রিন্সের বেশিরভাগ এলাকা সশস্ত্র গ্যাংগুলোর নিয়ন্ত্রণে থাকায় সহিংসতা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

২০২৪ সালের শুরুর দিকে গ্যাংগুলোর একটি জোট লাগাতার হামলা শুরু করলে পরিস্থিতির চরম অবনতি হয়। যার ফলে প্রধানমন্ত্রী এরিয়েল হেনরি পদত্যাগ করেন এবং প্রেসিডেন্টের অন্তর্বর্তীকালীন পরিষদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন।

হাইতির পুলিশকে সমর্থন করার জন্য কেনিয়ার নেতৃত্বাধীন বহুজাতিক বাহিনী মোতায়েন করার পরও সহিংসতা দমন করা সম্ভব হয়নি।

আরএনডিডিএইচ জানিয়েছে, ভিভ আনসানম গ্যাং জোট, যারা ২০২৪ সালের মার্চ মাস থেকে ক্যাবারেট শহরের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে, তারা গত সপ্তাহে নিকটবর্তী ল্যাবোডেরি শহরে বেসামরিক জনগণের বিরুদ্ধে অত্যন্ত নিষ্ঠুর গণহত্যা চালিয়েছে। শহরটি রাজধানী পোর্ট-অ-প্রিন্স থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত।

সংস্থাটি আরো জানায়, ‘তারা ৫০ জনেরও বেশি মানুষকে হত্যা করেছে এবং বেশ কয়েকটি বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে।’

প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, ‘বেঁচে থাকা কয়েকজন পার্শ্ববর্তী এলাকায় পালিয়ে যেতে সক্ষম হন। অন্যান্যরা আক্রমণকারীদের হাত থেকে বাঁচতে নৌকায় করে সমুদ্রে পালিয়ে যায়।’ 

জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস গত মাসে সতর্ক করে বলেছেন, হাইতিতে ‘রাষ্ট্রীয় কর্তৃত্ব ভেঙে পড়ছে।’

তিনি নিরাপত্তা পরিষদকে সতর্ক করে বলেন, হাইতির রাজধানীর বাইরেও সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ছে। সেখানকার ৯০ শতাংশ অঞ্চলের ওপর গ্যাংগুলোর নিয়ন্ত্রণ রয়েছে।

রবিবার, তিনি ক্যাবারে কমিউনে হামলার নিন্দা জানিয়েছেন এবং দেশগুলোকে প্রয়োজনীয় ‘সরবরাহ, কর্মী ও তহবিল দিয়ে বহুজাতিক নিরাপত্তা সহায়তা মিশনকে শক্তিশালী করার প্রচেষ্টা ত্বরান্বিত করার’ আহ্বান জানিয়েছেন।

জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের তথ্যানুসারে, চলতি বছরের প্রথমার্ধে হাইতিতে কমপক্ষে ৩ হাজার ১৪১ জন নিহত হয়েছে।

ঢাকা/ফিরোজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • শান্তি স্থাপনের লক্ষ্যে আত্মসমর্পণ ও অস্ত্রত্যাগের প্রস্তাব মাওবাদীদের
  • হাইতিতে গ্যাং হামলায় ৫০ জনের বেশি নিহত