Samakal:
2025-11-03@19:31:14 GMT

কাইয়ুম চৌধুরীর রেখা ও রং

Published: 6th, March 2025 GMT

কাইয়ুম চৌধুরীর রেখা ও রং

কাইয়ুম চৌধুরীর ‘কাইয়ুম চৌধুরী’ হয়ে ওঠার পেছনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা কার বা কীসের যদি নিজেকে জিজ্ঞেস করি, উত্তর পাই– নিষ্ঠা। তিনি অত্যন্ত নিষ্ঠাবান ছিলেন তাঁর কাজ ও বিষয়ের প্রতি। এবং নানান বিষয়ে তাঁর দখল ছিল। আঁকার ধরন নানান মাধ্যমে বদলে যায়, যেমন– ক্যানভাসে আঁকা আর পোস্টারে আঁকা। কাইয়ুম চৌধুরী ক্যানভাস ও পোস্টার দুটোতেই সমান আধুনিক ও পৃথক। সমসাময়িক পোস্টার বিষয়ে তাঁর খুব ভালো ধারণা ছিল। আমাদের দেশে কিন্তু এগুলো আগে থাকলেও কাইয়ুম চৌধুরী পোস্টারের ধ্যান-ধারণাই বদলে দিয়ে গেছেন। সহজ ও সুন্দরের সম্মিলন ঘটিয়েছেন। শিল্পকলায় আমাদের বৈঠকগুলোরও প্রাণ ছিলেন তিনি। তাঁকে ছাড়া কোনো অনুষ্ঠান নামানোর কথা চিন্তা করা যেত না। লোগো তাঁকেই করতে হতো। 
আমরা খুব কাছাকাছি ছিলাম। অনেক স্মৃতি মনে পড়ে। এর ভেতর নিকট অতীতের যে স্মৃতি মনে পড়ে তা হলো, সার্কের পদকের নকশা, মনোগ্রাম প্রভৃতি তৈরির একটি কমিটিতে আমরা দু’জন ছিলাম। এর আগেও কাছ থেকে বহুবার দেখে যা বুঝেছি, সেবারও বুঝলাম, নকশা সম্পর্কে তাঁর ধারণা ও পরিকল্পনা কত ব্যাপক। আমাদের দেশে নকশাকে সেভাবে মূল্যায়ন করা হয় না। অথচ নকশা সবখানে ব্যবহৃত হয়। এই নকশার আধুনিকায়ন, বিকাশে কাইয়ুম চৌধুরী পথিকৃৎ। তাঁর শিল্পবোধ অতি উন্নত ছিল। আর শিল্পের অন্যতম রসদ ছিল দেশপ্রেম। দেশকে ভালো না বাসলে, বাংলার যে রূপায়ণ তিনি তাঁর ছবিতে করেছেন, সেই স্তরের কাজ সম্ভব না। তাঁর ছবি ও বিষয়ের ভেতর বাঙালিপনা ছিল। 
নানান রকম মজার স্মৃতি আছে। একবার আমাকে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হলো কাইয়ুম চৌধুরীকে একটি মসজিদ দেখাতে। এমন এক মসজিদ, যা স্থাপত্যশৈলী এবং শিল্পমান দু’দিক থেকেই চমৎকার। ঠিক করলাম আমাদের পুরান ঢাকার তারা মসজিদ দেখাব তাঁকে। কথা ছিল আমি এসে তাঁকে নিয়ে যাব। কিন্তু তিনি সময় করে উঠতে পারেন না। আজ নয়, কাল নয়, এভাবে মাস পার হয়ে গেল। কয়েক মাস পার হলো, আমাদের আর যাওয়া হয় না। একদিন কাইয়ুম চৌধুরী বললেন, ‘তুমি আসো।’ আজ তিনি যাবেনই। আমিও প্রস্তুত হয়ে গেলাম তাঁর কাছে। অবশেষে আমরা তারা মসজিদ দেখতে যাচ্ছি। বাসায় পৌঁছালে তিনি আমাকে গাড়িতে ওঠালেন। গাড়ি যাচ্ছে আমারই বাসার দিকে। স্যার বললেন, ‘আজকেও আমি পারব না। আজকে তোমাকে দিয়ে আসি।’ এটি একটি মধুর স্মৃতি হয়ে আছে। আমি অনেককে বলি। 
ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল আমাদের। কাইয়ুম চৌধুরীর গ্রামের বাড়ি ফেনীতে যাওয়া হয়নি কখনও। তবে ঢাকার বাসায় বহুবার গিয়েছি। কাইয়ুম চৌধুরীর কাজ দেশের সীমানা পেরিয়েছে, কিন্তু তিনি নিজে জীবনের দীর্ঘ সময় দেশের সীমা পার হননি। জীবনের শেষ দিকে আমেরিকায় বেড়িয়েছেন। সেসব জায়গায় অল্প বিস্তর তাঁর প্রদর্শনী হয়েছে। একবার কাইয়ুম চৌধুরী তাঁর এক আত্মীয়ের বাড়িতে বেড়াতে গেছেন, ওয়াশিংটনে। সেখানেও গিয়েছি। বাসায় গিয়ে দেখি, তিনি ভীষণ ব্যস্ত। বিষয় হলো, কারও বইয়ের প্রচ্ছদ করার কথা ছিল, কিন্তু দুই বছর পার হয়ে গেছে, কাইয়ুম স্যার এখনও ধরতে পারেননি। এখন ওরা আসছে। তড়িঘড়ি করে আমার সামনেই ১৫ মিনিটে অনবদ্য এক প্রচ্ছদ করলেন। প্রচ্ছদ, অক্ষরশৈলীর প্রবাদপুরুষ কাইয়ুম চৌধুরী। লোকজন তাঁকে দিয়ে বইয়ের প্রচ্ছদ করাতে পারলে ধন্য হয়ে যেত, এসবের প্রমাণ আমাদের সামনে থেকে দেখা। নানান মাধ্যমে কাইয়ুম চৌধুরী কাজ করেছেন। তেল রং, জল রং, কালিকলম। তাঁর ছবিতে, নকশায় গাছপালা, মানুষ ও পশুপাখির দেহাবয়ব, নানা রকম জ্যামিতিক আকার আকৃতি সব প্রাকৃতিক রূপ পেত। সবটাতেই বাঙালিপনার ছাপ। লোকশিল্পেরও প্রচুর উপকরণ তাঁর ছবিতে ও নকশায় এসেছে। উজ্জ্বল রং ব্যবহার করতেন। চিত্রকলার বাইরেও অনেক জানতেন কাইয়ুম চৌধুরী। সেসব তাঁর শিল্পকে সমৃদ্ধ করেছিল। সাহিত্যিকদের সঙ্গে তাঁর সখ্য ছিল। সংগীতের সঙ্গেও তাঁর আত্মার গভীর সংযোগ ছিল। গোপাল হালদার, শচীন দেব বর্মণ, আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ– এমন মানুষদের সঙ্গে তাঁর সখ্য ও পারিবারিক যোগাযোগ ছিল। এরপর সৈয়দ শামসুল হক, শামসুর রাহমান, আলাউদ্দিন আল আজাদ, হাসান হাফিজুর রহমানের মতো সাহিত্যিকরা তাঁর নিকটজন ছিলেন। উৎকৃষ্ট চিত্রকলার সম্ভার উত্তরপ্রজন্মের জন্য তিনি রেখে গেছেন। রেখে গেছেন শিল্পীর জন্য দেশপ্রেম ও রাজনীতি সচেতনতার উদাহরণ। আসছে ৯ মার্চ তাঁর জন্মদিনে তাঁর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা জানাই। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: আম দ র মসজ দ

এছাড়াও পড়ুন:

জকসুর গঠন ও পরিচালনা বিধিমালা, নির্বাচনী আচরণবিধির সংশোধন চায় ছাত্রদল

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জকসু) গঠন ও পরিচালনা বিধিমালা এবং নির্বাচনী আচরণবিধি সংশোধনে নির্বাচন কমিশনকে স্মারকলিপি দিয়েছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদল। সোমবার প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক মোস্তফা হাসানের কাছে এ স্মারকলিপি দেন ছাত্রদলের নেতারা।

স্মারকলিপিতে বলা হয়, ‘আসন্ন জকসু নির্বাচনকে ঘিরে বিভিন্ন গোষ্ঠী জকসু সংবিধি এবং নির্বাচনী আচরণ বিধিমালা নিয়ে বিভ্রান্তিকর প্রচারণা চালাচ্ছে। আমরা বিশ্বাস করি, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্বাচন কমিশন একটি নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করার জন্য দায়বদ্ধ। ন্যায্য ও স্বচ্ছ নির্বাচন নিশ্চিতে আমাদের অনুরোধ, ভোটার তালিকা প্রকাশের সময় প্রত্যেক ভোটারের ছবিসহ তালিকা প্রকাশ করতে হবে। নির্বাচনে অমোচনীয় কালি ব্যবহার বাধ্যতামূলক করতে হবে এবং স্বচ্ছ, নাম্বারযুক্ত ব্যালট বক্স রাখা আবশ্যক।’

স্মারকলিপিতে আরও বলা হয়, ব্যালট ছাপার সংখ্যা, ভোট প্রদানকারীর সংখ্যা এবং নষ্ট ব্যালটের তথ্য প্রকাশ করতে হবে। মিডিয়া ট্রায়াল বা ভুল তথ্য প্রচার হলে সংশ্লিষ্ট সাংবাদিকের বিরুদ্ধে কেন্দ্র থেকে সরাসরি ব্যবস্থা নিতে হবে। সরকার অনুমোদিত সব মিডিয়াকে নির্বাচনকালীন সময়ে পূর্ণ স্বাধীনতা দিতে হবে।

স্মারকলিপিতে বলা হয়, ডাকসুর তফসিল ঘোষণার ৪১ দিন, চাকসুর ৪৪ দিন, রাকসুর ৮০ দিন এবং জাকসুর তফসিল ঘোষণার ৩১ দিন পর নির্বাচন হয়েছে। যেহেতু জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় একটি অনাবাসিক বিশ্ববিদ্যালয়, তাই শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনের জন্য পর্যাপ্ত সময় দিতে হবে। এ ছাড়া বাকি চার বিশ্ববিদ্যালয়ের তফসিল ঘোষণার সময় ও নির্বাচনের মধ্যবর্তী পার্থক্য বিবেচনা করে জকসু নির্বাচনের তারিখ নির্ধারণ করতে হবে।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সদস্যসচিব শামসুল আরেফিন বলেন, ‘জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা যাতে সুষ্ঠু একটা নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ পায়, এজন্য ছাত্রদল নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় আজকে আমরা স্মারকলিপি দিয়েছি। আশা করছি, নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়ার জন্য নির্বাচন কমিশন আমাদের দাবিগুলো মেনে নেবে।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ