কাইয়ুম চৌধুরীর ‘কাইয়ুম চৌধুরী’ হয়ে ওঠার পেছনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা কার বা কীসের যদি নিজেকে জিজ্ঞেস করি, উত্তর পাই– নিষ্ঠা। তিনি অত্যন্ত নিষ্ঠাবান ছিলেন তাঁর কাজ ও বিষয়ের প্রতি। এবং নানান বিষয়ে তাঁর দখল ছিল। আঁকার ধরন নানান মাধ্যমে বদলে যায়, যেমন– ক্যানভাসে আঁকা আর পোস্টারে আঁকা। কাইয়ুম চৌধুরী ক্যানভাস ও পোস্টার দুটোতেই সমান আধুনিক ও পৃথক। সমসাময়িক পোস্টার বিষয়ে তাঁর খুব ভালো ধারণা ছিল। আমাদের দেশে কিন্তু এগুলো আগে থাকলেও কাইয়ুম চৌধুরী পোস্টারের ধ্যান-ধারণাই বদলে দিয়ে গেছেন। সহজ ও সুন্দরের সম্মিলন ঘটিয়েছেন। শিল্পকলায় আমাদের বৈঠকগুলোরও প্রাণ ছিলেন তিনি। তাঁকে ছাড়া কোনো অনুষ্ঠান নামানোর কথা চিন্তা করা যেত না। লোগো তাঁকেই করতে হতো।
আমরা খুব কাছাকাছি ছিলাম। অনেক স্মৃতি মনে পড়ে। এর ভেতর নিকট অতীতের যে স্মৃতি মনে পড়ে তা হলো, সার্কের পদকের নকশা, মনোগ্রাম প্রভৃতি তৈরির একটি কমিটিতে আমরা দু’জন ছিলাম। এর আগেও কাছ থেকে বহুবার দেখে যা বুঝেছি, সেবারও বুঝলাম, নকশা সম্পর্কে তাঁর ধারণা ও পরিকল্পনা কত ব্যাপক। আমাদের দেশে নকশাকে সেভাবে মূল্যায়ন করা হয় না। অথচ নকশা সবখানে ব্যবহৃত হয়। এই নকশার আধুনিকায়ন, বিকাশে কাইয়ুম চৌধুরী পথিকৃৎ। তাঁর শিল্পবোধ অতি উন্নত ছিল। আর শিল্পের অন্যতম রসদ ছিল দেশপ্রেম। দেশকে ভালো না বাসলে, বাংলার যে রূপায়ণ তিনি তাঁর ছবিতে করেছেন, সেই স্তরের কাজ সম্ভব না। তাঁর ছবি ও বিষয়ের ভেতর বাঙালিপনা ছিল।
নানান রকম মজার স্মৃতি আছে। একবার আমাকে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হলো কাইয়ুম চৌধুরীকে একটি মসজিদ দেখাতে। এমন এক মসজিদ, যা স্থাপত্যশৈলী এবং শিল্পমান দু’দিক থেকেই চমৎকার। ঠিক করলাম আমাদের পুরান ঢাকার তারা মসজিদ দেখাব তাঁকে। কথা ছিল আমি এসে তাঁকে নিয়ে যাব। কিন্তু তিনি সময় করে উঠতে পারেন না। আজ নয়, কাল নয়, এভাবে মাস পার হয়ে গেল। কয়েক মাস পার হলো, আমাদের আর যাওয়া হয় না। একদিন কাইয়ুম চৌধুরী বললেন, ‘তুমি আসো।’ আজ তিনি যাবেনই। আমিও প্রস্তুত হয়ে গেলাম তাঁর কাছে। অবশেষে আমরা তারা মসজিদ দেখতে যাচ্ছি। বাসায় পৌঁছালে তিনি আমাকে গাড়িতে ওঠালেন। গাড়ি যাচ্ছে আমারই বাসার দিকে। স্যার বললেন, ‘আজকেও আমি পারব না। আজকে তোমাকে দিয়ে আসি।’ এটি একটি মধুর স্মৃতি হয়ে আছে। আমি অনেককে বলি।
ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল আমাদের। কাইয়ুম চৌধুরীর গ্রামের বাড়ি ফেনীতে যাওয়া হয়নি কখনও। তবে ঢাকার বাসায় বহুবার গিয়েছি। কাইয়ুম চৌধুরীর কাজ দেশের সীমানা পেরিয়েছে, কিন্তু তিনি নিজে জীবনের দীর্ঘ সময় দেশের সীমা পার হননি। জীবনের শেষ দিকে আমেরিকায় বেড়িয়েছেন। সেসব জায়গায় অল্প বিস্তর তাঁর প্রদর্শনী হয়েছে। একবার কাইয়ুম চৌধুরী তাঁর এক আত্মীয়ের বাড়িতে বেড়াতে গেছেন, ওয়াশিংটনে। সেখানেও গিয়েছি। বাসায় গিয়ে দেখি, তিনি ভীষণ ব্যস্ত। বিষয় হলো, কারও বইয়ের প্রচ্ছদ করার কথা ছিল, কিন্তু দুই বছর পার হয়ে গেছে, কাইয়ুম স্যার এখনও ধরতে পারেননি। এখন ওরা আসছে। তড়িঘড়ি করে আমার সামনেই ১৫ মিনিটে অনবদ্য এক প্রচ্ছদ করলেন। প্রচ্ছদ, অক্ষরশৈলীর প্রবাদপুরুষ কাইয়ুম চৌধুরী। লোকজন তাঁকে দিয়ে বইয়ের প্রচ্ছদ করাতে পারলে ধন্য হয়ে যেত, এসবের প্রমাণ আমাদের সামনে থেকে দেখা। নানান মাধ্যমে কাইয়ুম চৌধুরী কাজ করেছেন। তেল রং, জল রং, কালিকলম। তাঁর ছবিতে, নকশায় গাছপালা, মানুষ ও পশুপাখির দেহাবয়ব, নানা রকম জ্যামিতিক আকার আকৃতি সব প্রাকৃতিক রূপ পেত। সবটাতেই বাঙালিপনার ছাপ। লোকশিল্পেরও প্রচুর উপকরণ তাঁর ছবিতে ও নকশায় এসেছে। উজ্জ্বল রং ব্যবহার করতেন। চিত্রকলার বাইরেও অনেক জানতেন কাইয়ুম চৌধুরী। সেসব তাঁর শিল্পকে সমৃদ্ধ করেছিল। সাহিত্যিকদের সঙ্গে তাঁর সখ্য ছিল। সংগীতের সঙ্গেও তাঁর আত্মার গভীর সংযোগ ছিল। গোপাল হালদার, শচীন দেব বর্মণ, আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ– এমন মানুষদের সঙ্গে তাঁর সখ্য ও পারিবারিক যোগাযোগ ছিল। এরপর সৈয়দ শামসুল হক, শামসুর রাহমান, আলাউদ্দিন আল আজাদ, হাসান হাফিজুর রহমানের মতো সাহিত্যিকরা তাঁর নিকটজন ছিলেন। উৎকৃষ্ট চিত্রকলার সম্ভার উত্তরপ্রজন্মের জন্য তিনি রেখে গেছেন। রেখে গেছেন শিল্পীর জন্য দেশপ্রেম ও রাজনীতি সচেতনতার উদাহরণ। আসছে ৯ মার্চ তাঁর জন্মদিনে তাঁর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা জানাই।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
ঢাকায় জামায়াতসহ ৭ দলের বিক্ষোভ আজ, কোথায়, কখন, কোন দল
ফেব্রুয়ারিতে জুলাই সনদের ভিত্তিতে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানসহ কয়েক দফা দাবিতে রাজধানী ঢাকায় আজ বৃহস্পতিবার একযোগে বিক্ষোভ মিছিল করবে জামায়াতে ইসলামীসহ সাতটি দল।
বিক্ষোভের আগে বায়তুল মোকাররম, জাতীয় প্রেসক্লাবসহ আশপাশের এলাকায় দলগুলো সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করবে। বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এসব কর্মসূচি চলবে।
প্রায় অভিন্ন দাবিতে সাতটি দল তিন দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। আজ প্রথম দিনে রাজধানী ঢাকায়, আগামীকাল শুক্রবার বিভাগীয় শহরে এবং ২৬ সেপ্টেম্বর সব জেলা ও উপজেলায় বিক্ষোভ মিছিলের কর্মসূচি রয়েছে দলগুলোর।
জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, খেলাফত মজলিস, নেজামে ইসলাম পার্টি, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন ও জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা) এই কর্মসূচি পালন করবে। সাতটি দলের কেউ ৫ দফা, কেউ ৬ দফা, কেউ ৭ দফা কর্মসূচি ঘোষণা করলেও সবার মূল দাবি প্রায় অভিন্ন। দাবিগুলো হচ্ছে
জুলাই সনদের পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন এবং তার ভিত্তিতে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান, জাতীয় সংসদের উভয় কক্ষে (কেউ কেউ উচ্চকক্ষে) সংখ্যানুপাতিক (পিআর) পদ্ধতি চালু করা
অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন নিশ্চিত করতে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড (সবার সমান সুযোগ) নিশ্চিত করা
বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের সব জুলুম, গণহত্যা ও দুর্নীতির বিচার দৃশ্যমান করা এবং জাতীয় পার্টি ও ১৪ দলের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা।
সাড়ে চারটায় জামায়াতআজ বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে চারটায় বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের দক্ষিণ ফটকের সামনে সমাবেশের পর বিক্ষোভ মিছিল করবে জামায়াত। সমাবেশে দলের নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের ও সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ারসহ কেন্দ্রীয় ও ঢাকা মহানগর কমিটির নেতারা বক্তব্য দেবেন। জামায়াতের ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ শাখার উদ্যোগে এ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হবে।
জামায়াতের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সেক্রেটারি শফিকুল ইসলাম মাসুদ প্রথম আলোকে জানিয়েছেন, বায়তুল মোকাররম মসজিদের দক্ষিণ ফটক থেকে মিছিল বের হয়ে পুরানা পল্টন মোড়, জাতীয় প্রেসক্লাব ও মৎস্য ভবনের পাশ দিয়ে শাহবাগ পর্যন্ত যেতে পারে।
বায়তুল মোকাররম মসজিদের দক্ষিণ ফটক থেকে মিছিল বের হয়ে পুরানা পল্টন মোড়, জাতীয় প্রেসক্লাব ও মৎস্য ভবনের পাশ দিয়ে শাহবাগ পর্যন্ত যেতে পারে।জোহরের পর ইসলামী আন্দোলনজোহর নামাজের পর বায়তুল মোকাররম মসজিদের উত্তরে প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ মিছিল করবে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। মিছিলে নেতৃত্ব দেবেন দলের জ্যেষ্ঠ নায়েবে আমির সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করীম। ইসলামী আন্দোলনের ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ শাখা যৌথভাবে এ কর্মসূচির আয়োজন করেছে।
জোহর নামাজের পর বায়তুল মোকাররম মসজিদের উত্তরে প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ মিছিল করবে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ।আসরের পর বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসআসর নামাজের পর বায়তুল মোকাররম মসজিদের উত্তর ফটকের সামনে বিক্ষোভ মিছিল করবে মাওলানা মামুনুল হকের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস। গতকাল এক বিবৃতিতে দলের মহাসচিব মাওলানা জালালুদ্দীন আহমদ কর্মসূচিতে সবাইকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করার আহ্বান জানিয়েছেন।
এ ছাড়া খেলাফত মজলিস বেলা তিনটায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনের সড়কে বিক্ষোভ সমাবেশ করবে। এতে দলের মহাসচিব আহমদ আবদুল কাদের প্রধান অতিথির বক্তব্য দেবেন।
একই সময়ে, একই জায়গায় মিছিল করবে বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনও। বিকেল চারটায় একই জায়গায় বিক্ষোভ করবে বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টি।
আসর নামাজের পর বায়তুল মোকাররম মসজিদের উত্তর ফটকের সামনে বিক্ষোভ মিছিল করবে মাওলানা মামুনুল হকের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস।জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা) বিকেল সাড়ে চারটায় বিজয়নগর পানির ট্যাংকের সামনে বিক্ষোভ মিছিল করবে।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, রাজধানীর মধ্য এলাকায় একযোগে সাতটি দলের বিক্ষোভের কর্মসূচি ঘিরে নেতা-কর্মীদের সমাগমে সড়কে যানজটের সৃষ্টি হতে পারে। এ জন্য নগরবাসী দুর্ভোগের সম্মুখীন হতে পারেন। যদিও আজ ও আগামীকাল সকালে বিসিএস পরীক্ষা সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠানের জন্য এই সাত দল কর্মসূচি বিকেলে করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা) বিকেল সাড়ে চারটায় বিজয়নগর পানির ট্যাংকের সামনে বিক্ষোভ মিছিল করবে।