অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সেমিফাইনাল জয়ের পরই অনেকে রোহিত শর্মার হাতে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি দেখছেন। ৯ মার্চ দুবাইয়ের ফাইনালে ভারতের সামনে কিউইরা দাঁড়াতে পারবে বলে বিশ্বাস করতে চাচ্ছেন না কেউ কেউ। ইতিহাস কিন্তু ভিন্ন কথা বলে। আইসিসি ইভেন্টের ফাইনালে এই দু’দল এখন পর্যন্ত দু’বার মুখোমুখি হয়েছে। দু’বারই শিরোপা জিতেছে নিউজিল্যান্ড। এবারও সেই ধারা বজায় থাকবে, নাকি দুবাইয়ে নতুন ইতিহাস গড়বে ভারত?

সীমিত ওভারের ফরম্যাটে এই দু’দল আইসিসির ইভেন্টের ফাইনালে মুখোমুখি হয়েছিল ২৫ বছর আগে। তখন চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির নাম ছিল আইসিসি নকআউট ট্রফি। ২০০০ সালে কেনিয়ার নাইরোবিতে শচীন-সৌরভদের ভারতকে ৪ উইকেটে হারিয়ে সেই আইসিসি নকআউট ট্রফি জিতেছিল ফ্লেমিং-কেয়ার্নসদের নিউজিল্যান্ড। সেটাই কিউইদের প্রথম আইসিসি শিরোপা। এর পর ২০২১ সালে সাউদাম্পটনে আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে মুখোমুখি হয় দু’দল। বৃষ্টিবিঘ্নিত সেই ফাইনালে কেন উইলিয়ামসনের নেতৃত্বাধীন নিউজিল্যান্ড ৮ উইকেটে হারিয়ে দেয় ভারতকে।
২৫ বছর আগের সেই শিরোপার পর সীমিত ওভারে আর আইসিসি ট্রফির দেখা পায়নি কিউইরা। এর মধ্যে দু’বার একেবারে কাছে এসেও ব্যর্থ হয় তারা। ২০১৫ সালে ওয়ানডে বিশ্বকাপের ফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার কাছে ৭ উইকেটের বড় ব্যবধানে হারলেও ২০১৯ সালে ইংল্যান্ডের কাছে হেরে যায় তারা অনেকটা ফটোফিনিশে। চরম নাটকীয়তায় পরিপূর্ণ লর্ডসের সেই ফাইনালে নির্ধারিত ৫০ ওভার শেষে দু’দলের স্কোর সমান, এর পর সুপার ওভারেও সমান রান তোলে দু’দল। শেষ পর্যন্ত বেশি বাউন্ডারি মারায় চ্যাম্পিয়ন ঘোষণা করা হয় ইংল্যান্ডকে।

চলতি আসরের গ্রুপ ম্যাচে অবশ্য ভারতের কাছে ৪৪ রানে পরাজিত হয়েছিল নিউজিল্যান্ড। দুবাইয়ে ভারতের ২৪৯ রান তাড়া করতে নেমে বরুণ চক্রবর্তীর ঘূর্ণিতে ২০৫ রানে গুটিয়ে গিয়েছিল কিউইরা। ফাইনালে সেই দুবাইয়েই মুখোমুখি হচ্ছে দু’দল। লাহোরে দাপটের সঙ্গে দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে ফাইনাল নিশ্চিত করার পর রোহিত শর্মাদের হুঁশিয়ারি দিয়ে রেখেছেন কিউই অধিনায়ক মিচেল স্যান্টনার, ‘ফাইনালে উঠতে পেরে খুবই ভালো লাগছে। একটা ভালো দলের বিপক্ষে কঠিন ম্যাচ খেললাম। এবার ভারতকে চাপে ফেলার অপেক্ষায় আছি। আশা করি, তাদেরও হারাতে পারব।’ গ্রুপ ম্যাচে জিততে না পারলেও ভারতকে চাপে ফেলে দিয়েছিল নিউজিল্যান্ড। বিশেষ করে, তাদের শক্তিশালী টপঅর্ডারকে রান করতে দেয়নি। ফাইনালেও বোলারদের কাছ থেকে একই রকম নৈপুণ্য প্রত্যাশা করছেন স্যান্টনার, ‘দুবাইয়ে গিয়ে ভারতকে চাপে ফেলে দেওয়া আমাদের আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দিয়েছে। ওই মাঠে কোন কৌশল কাজে লাগবে এবং কোনটা কাজে লাগবে না, সেটা বুঝতে পেরেছি। আরও একবার টস জিততে পারলে ভালো লাগবে।’

ফাইনাল নিয়ে আত্মবিশ্বাসী দুরন্ত ছন্দে থাকা কিউই তারকা কেন উইলিয়ামসনও। সেমিতে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সেঞ্চুরি করা এ ব্যাটার ফাইনালের প্রতিপক্ষ নিয়ে বলেন, ‘ভারত অসাধারণ দল এবং খেলছেও দুর্দান্ত। তাদের বিপক্ষে আগের ম্যাচ থেকে শিক্ষা নেওয়াটা আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। তবে ফাইনালে যে কোনো কিছু হতে পারে। গত ম্যাচেও চমৎকার আবহ ছিল, আমি নিশ্চিত ফাইনালেও অসাধারণ লড়াই হবে।’ তবে পাকিস্তানের তুলনায় দুবাইয়ের কন্ডিশন বেশ ভিন্ন বলেও স্বীকার কর নিয়েছেন তিনি।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: র ফ ইন ল আইস স ভ রতক

এছাড়াও পড়ুন:

১৬ কোটি টাকায় সারা দেশে ফুটবলের তিন টুর্নামেন্ট

তারুণ্যের উৎসবের অংশ হিসেবে সারা দেশে তিনটি ফুটবল টুর্নামেন্ট আয়োজন করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে)। এই প্রকল্পের আওতায় আয়োজন করা হবে আন্তজেলা হোম অ্যান্ড অ্যাওয়ে ফুটবল টুর্নামেন্ট, ছেলেদের অনূর্ধ্ব-১৭ টুর্নামেন্ট এবং মেয়েদের অনূর্ধ্ব-১৫ ফুটবল।

তিনটি টুর্নামেন্ট মিলিয়ে বাফুফের বাজেট প্রায় ১৬ কোটি টাকা। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ সূত্র জানিয়েছে, এর মধ্যে সরকার পর্যায়ক্রমে দেবে ১০ কোটি টাকা, যা বাফুফে আগামী সপ্তাহ থেকে পেতে পারে। বাকি অর্থ স্পনসরদের কাছ থেকে সংগ্রহ করবে বাফুফে। মাঠ সংস্কার, দলগুলোর অংশগ্রহণ ফি, পুরস্কারসহ নানা খাতে এ অর্থ ব্যয় হবে। প্রকল্পটি এরই মধ্যে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তাদের কাছে উপস্থাপন করেছে বাফুফে।

সবচেয়ে বড় আয়োজন আন্তজেলা ফুটবল টুর্নামেন্ট, যেখানে দেশের ৬৪টি জেলা অংশ নেবে। বাফুফে সূত্র জানিয়েছে, প্রতিটি জেলা খেলবে হোম অ্যান্ড অ্যাওয়ে ভিত্তিতে। প্রথম রাউন্ডে দলগুলোকে আটটি ‘পটে’ ভাগ করা হবে। প্রতি ‘পটে’ থাকবে আটটি করে দল। প্রথম রাউন্ডের জয়ী দলগুলো যাবে দ্বিতীয় রাউন্ডে। দ্বিতীয় রাউন্ডেও থাকবে হোম অ্যান্ড অ্যাওয়ে পদ্ধতি। এভাবে ধাপে ধাপে এগোতে থাকবে টুর্নামেন্ট।

চতুর্থ রাউন্ডের খেলা হবে নকআউট ভিত্তিতে। আন্তজেলা ফুটবল টুর্নামেন্টে বয়সের কোনো বাধ্যবাধকতা থাকবে না। ২৫ থেকে ২৯ আগস্টের মধ্যে এই টুর্নামেন্ট শুরুর পরিকল্পনা বাফুফের। প্রায় চার মাসের এই মেগা টুর্নামেন্টে ফাইনাল হবে ঢাকায়।

বাফুফে এবার সারা দেশে আয়োজন করবে অনূর্ধ্ব-১৭ ছেলেদের টুর্নামেন্ট। আন্তজেলা জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপ শেষ হলে মাঠে গড়াবে অনূর্ধ্ব-১৭ টুর্নামেন্ট, এটিও শুরুর দিকে হবে হোম অ্যান্ড অ্যাওয়ে ভিত্তিতে।

১৯৭৪ সালে শুরু হওয়া শেরেবাংলা কাপ আন্তজেলা ফুটবল একটানা হয়েছিল ১৯৮৬ পর্যন্ত। এরপর দীর্ঘ সময় নানা বিরতির মধ্য দিয়ে চলেছে এর যাত্রা। ১৯৮৭-৮৮, ১৯৯১, ১৯৯৫, ২০০১–০৩, ২০০৫ সালে টুর্নামেন্ট হয়নি। ২০০৬ সালের পর দীর্ঘ ১৩ বছর বিরতি পড়ে শেরেবাংলা কাপে। ২০২০ সালের জানুয়ারিতে টুর্নামেন্টটি আবার মাঠ ফেরে। তবে সেটি শেরেবাংলা কাপ নামে নয়, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের’ জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে তাঁর নামে।

বঙ্গবন্ধু জাতীয় ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপের প্রথম রাউন্ডেও জেলাগুলোকে আটটি অঞ্চলে ভাগ করা হয়েছিল। শুরুর দিকে খেলা হয়েছে হোম অ্যান্ড অ্যাওয়ে ভিত্তিতে। আটটি অঞ্চলের চ্যাম্পিয়ন দল উঠেছিল মূল পর্বে।

আরও পড়ুনটিকিট বিক্রির ‘ডিজিটাল স্বাদ’ নিতে গিয়ে লেজেগোবরে বাফুফে২৭ মে ২০২৫

বাংলাদেশের ঘরোয়া ফুটবলের ইতিহাসে শেরেবাংলা কাপ স্মরণীয় হয়েই আছে। সঙ্গে সোহরাওয়ার্দী কাপ অনূর্ধ্ব-১৯ ফুটবলও। এই দুই আয়োজন ছিল তৃণমূলে প্রতিভা খুঁজে বের করার অন্যতম প্রধান মঞ্চ। এই দুই টুর্নামেন্ট থেকে উঠে এসে অনেক ফুটবলারই গায়ে তুলেছেন জাতীয় দলের জার্সি।  

সোহরাওয়ার্দী কাপ অনূর্ধ্ব-১৯ যুব ফুটবল আজ শুধুই স্মৃতি। তবে বাফুফে এবার সারা দেশে আয়োজন করবে অনূর্ধ্ব-১৭ ছেলেদের টুর্নামেন্ট। আন্তজেলা জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপ শেষ হলে মাঠে গড়াবে অনূর্ধ্ব-১৭ টুর্নামেন্ট, এটিও শুরুর দিকে হবে হোম অ্যান্ড অ্যাওয়ে ভিত্তিতে। এরপর মেয়েদের অনূর্ধ্ব-১৫ টুর্নামেন্ট, যা হবে নকআউট–ভিত্তিক।  

আরও পড়ুনবাংলাদেশের ফুটবলারদের বাজারদর কার কত২০ জানুয়ারি ২০২৫

বাফুফের সহসভাপতি ওয়াহিদ উদ্দিন চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘তিনটি টুর্নামেন্ট আয়োজনের ব্যাপারে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আমাদের আলোচনা হয়েছে। এগুলো তারুণ্যের উৎসবের অংশ হিসেবে করা হবে। এই প্যাকেজের জন্য আমাদের বাজেট প্রায় ১৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে ১০ কোটি টাকা দেবে মন্ত্রণালয়। এ ব্যাপারে মন্ত্রণালয়ের নীতিগত সিদ্ধান্ত আমরা জানতে পেরেছি। বাকি টাকা স্পনসরের মাধ্যমে সংগ্রহের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। অর্থ প্রাপ্তি সাপেক্ষে টুর্নামেন্টগুলো শুরুর সময় ঠিক করা হবে।’

বড় পরিসরে আন্তজেলা ফুটবল টুর্নামেন্ট আয়োজনের সম্ভাবনার কথা প্রথম শোনা যায় গত ১১ এপ্রিল ঢাকার একটি হোটেলে বাংলাদেশ ক্রীড়া লেখক সমিতির বার্ষিক ক্রীড়া পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে। অনুষ্ঠানে যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া বলেছিলেন, ‘জেলা থেকে খেলাধুলা শুরু হওয়া উচিত। আশা করছি, ২-৩ মাসের মধ্যেই জেলা ফুটবল টুর্নামেন্ট আয়োজন করতে পারব।’

গত ডিসেম্বরে শুরু হওয়া তারুণ্যের উৎসব এখনো চলমান। এই উৎসবের অংশ হিসেবেই বাফুফে সারা দেশে অনূর্ধ্ব-১৫ ফুটবল টুর্নামেন্ট আয়োজন করছে, যার চূড়ান্ত পর্ব এখনো বাকি।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ১৬ কোটি টাকায় সারা দেশে ফুটবলের তিন টুর্নামেন্ট