বাংলাদেশে সব সমস্যার সমাধান গণতান্ত্রিক উপায়ে চায় ভারত
Published: 7th, March 2025 GMT
বাংলাদেশে সব ধরনের সমস্যা সমাধানে অন্তর্ভুক্তি ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন এবং গণতান্ত্রিক উপায়ের ওপর জোর দিয়েছে ভারত। শুক্রবার নয়াদিল্লিতে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল সাপ্তাহিক ব্রিফিংয়ে এমন মন্তব্য করেছেন।
রণধীর জয়সওয়াল বলেন, ‘আমরা শান্তিপূর্ণ, স্থিতিশীল বাংলাদেশের পক্ষে। যেখানে গণতান্ত্রিক উপায়ে এবং 'অন্তর্ভুক্তিমূলক ও অংশগ্রহণমূলক' নির্বাচনের মাধ্যমে সব সমস্যা সমাধান করা হবে।’
বাংলাদেশে ‘আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি’ নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেন জয়সওয়াল। তিনি বলেন, ‘যেভাবে চরমপন্থীরা মুক্তি পাচ্ছে তাতে আমরা উদ্বিগ্ন। বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি নিয়ে আমরা এখনও চিন্তিত।’
বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর সহিংসতার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা বারবার উল্লেখ করেছি হিন্দুসহ অন্যান্য সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তার দায়িত্ব বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের। আমি আবারও এই বিষয়ের ওপর জোর দেব। একই সঙ্গে সংখ্যালঘুদের সম্পত্তি ও ধর্মীয় স্থানগুলোর নিরাপত্তাও সুনিশ্চিত করতে হবে অন্তর্বর্তী সরকারকে।
তিনি বলেন, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট থেকে এ বছরের ১৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ২৩৭৪টি সংখ্যালঘু নির্যাতনের মামলা দায়ের হয়েছে। যার মধ্যে বাংলাদেশের পুলিশ ১২৫৪টি ঘটনা খতিয়ে দেখেছে। আর এই ঘটনাগুলোকে রাজনৈতিক মোড়ক দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। খুন, অগ্নিসংযোগ, হিংসার ঘটনাকে রাজনৈতিক রঙ না দিয়ে যথাযথ তদন্ত করুন, জড়িতদের শাস্তির আওতায় আনুন।’
এসময় কলকাতায় বাংলাদেশ ও ভারতের কর্মকর্তারা যৌথ নদী কমিশনের ৮৬তম বৈঠকে গঙ্গার পানিবণ্টন চুক্তি নবায়ন সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছেন।
জয়সওয়াল বলেন, বছরে তিনবার নির্ধারিত এই নিয়মিত প্রযুক্তিগত সভাটি ১৯৯৬ সালে স্বাক্ষরিত চুক্তির বাস্তবায়ন নিশ্চিত করার জন্য প্রতিষ্ঠিত কাঠামোগত ব্যবস্থার অংশ।বৈঠকে উভয় পক্ষ গঙ্গা পানি চুক্তি, জলপ্রবাহ, পরিমাপ এবং পারস্পরিক স্বার্থের অন্যান্য বিষয় সম্পর্কিত প্রযুক্তিগত বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: গণতন ত র
এছাড়াও পড়ুন:
‘কৃষির উন্নয়নে জাপানের অংশীদারিত্ব আরও বৃদ্ধি করা হবে’
স্বরাষ্ট্র ও কৃষি উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী (অব.) বলেছেন, “জাপান বাংলাদেশের উন্নয়নে অন্যতম প্রধান অংশীদার ও পরীক্ষিত বন্ধু। জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা (জাইকা)-এর মাধ্যমে দেশটি বাংলাদেশের কৃষি খাতের উন্নয়নে ব্যাপকভাবে সহায়তা করে আসছে। আগামী দিনে বাংলাদেশের কৃষি খাতের উন্নয়নে জাপানের অংশীদারিত্ব আরও বৃদ্ধি করা হবে।”
বুধবার (৩০ এপ্রিল) সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তাঁর অফিসকক্ষে বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত Saida Shinichi-এর সাক্ষাৎকালে তিনি এসব কথা বলেন।
বৈঠকে দুই দেশের মধ্যে কৃষি খাতে সহযোগিতা বিশেষ করে কৃষি পণ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ ও বাজারজাতকরণ, ফসলের পোস্ট হার্ভেস্ট ম্যানেজমেন্ট ও সংরক্ষণ, জলবায়ু ও স্মার্ট কৃষি, সেচ ও পানি ব্যবস্থাপনা, ২০২৭ সালে জাপানের ইয়োকোহামাতে অনুষ্ঠিতব্য আন্তর্জাতিক হর্টিকালচার এক্সপো’তে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ, কৃষি বিষয়ক জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের সভা, নিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, পুলিশ সংস্কার, ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় সহযোগিতা, জাতীয় সংসদ নির্বাচন ইস্যু সহ পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়।
বৈঠকের শুরুতে রাষ্ট্রদূতকে স্বাগত জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, “জাপান বাংলাদেশের অন্যতম ঘনিষ্ঠ বন্ধু। আগামী দিনগুলোতে এ সম্পর্ক আরও জোরদার হবে।”
উপদেষ্টাকে ধন্যবাদ জানিয়ে রাষ্ট্রদূত বলেন, “২০২৭ সালে জাপানের ইয়োকোহামা'তে ‘আন্তর্জাতিক হর্টিকালচার এক্সপো’ অনুষ্ঠিত হবে। আন্তর্জাতিক এ এক্সপো'তে বাংলাদেশকে অংশগ্রহণের আমন্ত্রণ।”
উপদেষ্টা বলেন, “বাংলাদেশ একটি কৃষি প্রধান দেশ। আর জাপান কৃষি খাতে সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারী দেশ। তাই জাপান বাংলাদেশের কৃষি খাতে বিশেষ করে কৃষি পণ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ ও বাজারজাতকরণ, ফসলের পোস্ট হার্ভেস্ট ম্যানেজমেন্ট ও সংরক্ষণ, জলবায়ু ও স্মার্ট কৃষি, সেচ ও পানি ব্যবস্থাপনা প্রভৃতি খাতে সহযোগিতা করতে পারে।”
তিনি বলেন, “জাপান বাংলাদেশের কৃষি পণ্য সংরক্ষণে আধুনিক হিমাগার স্থাপন ও কুলিং ভ্যান সরবরাহ করে সহযোগিতা করতে পারে। তাছাড়া জাপান আমাদেরকে আধুনিক কৃষি সরঞ্জাম ও যন্ত্রপাতি দিয়ে সহায়তা করতে পারে।”
তিনি এসময় রাষ্ট্রদূতকে বাংলাদেশে আধুনিক কৃষি সরঞ্জাম ও যন্ত্রপাতি তৈরির জন্য প্রযুক্তিগত সহায়তা দিয়ে সহযোগিতার আহ্বান জানান।
রাষ্ট্রদূত বলেন, “কৃষি বিষয়ক দু'দেশের জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের সর্বশেষ সভা ২০২৪ সালের মে মাসে জাপানের টোকিওতে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। দ্রুত এ সংক্রান্ত পরবর্তী সভা আয়োজন করা দরকার।”
উপদেষ্টা জানান, জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের পরবর্তী সভা এ বছরের অক্টোবর বা নভেম্বর মাসে ঢাকায় অনুষ্ঠিত হতে পারে। এ সভা আয়োজনের বিষয়ে বাংলাদেশ সব ধরনের সহযোগিতা করবে।
বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও নিরাপত্তা প্রসঙ্গে রাষ্ট্রদূতের প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, “বর্তমানে ঢাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ক্রমশ উন্নতি হচ্ছে। তবে এটির আরও উন্নতির সুযোগ রয়েছে এবং আমরা এ ব্যাপারে চেষ্টা করে যাচ্ছি।”
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকালীন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কেমন হবে জানতে চাইলে উপদেষ্টা বলেন, “তখন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির কোনো সুযোগ নেই, বরং দিন দিন এটির উন্নতি ঘটবে বলে আমি আশা করছি।”
পুলিশের সামর্থ্য ও গ্রহণযোগ্যতা বিষয়ে উপদেষ্টা বলেন, “৫ আগস্ট পরবর্তী পরিস্থিতির তুলনায় বর্তমানে পুলিশের সামর্থ্য, মনোবল ও বিশ্বাসযোগ্যতা অনেক বেশি বেড়েছে।”
তিনি এসময় আধুনিক ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় জাপানের সহায়তা কামনা করেন। তাছাড়া তিনি নৌপুলিশ ও কোস্টগার্ডকে পেট্রোল ভেসেল ও আধুনিক যন্ত্রপাতি দিয়ে সহযোগিতা এবং অধিক সংখ্যক পুলিশ সদস্যকে জাপানে উন্নত প্রশিক্ষণে প্রেরণের জন্য রাষ্ট্রদূতকে অনুরোধ করেন।
রাষ্ট্রদূত জানান, আগামী ইন্টারপোল নির্বাচনে নির্বাহী কমিটির সদস্য পদে জাপানের পক্ষ থেকে মনোনয়ন প্রদান করা হবে। উপদেষ্টা এ পদে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে জাপানকে পূর্ণ সমর্থনের আশ্বাস প্রদান করেন।
বৈঠকে কৃষি মন্ত্রণালয় ও জাপান দূতাবাসের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাবৃন্দ অংশগ্রহণ করেন।
ঢাকা/নঈমুদ্দীন/এস