আশা করি আমরা এই নির্বাচনে জিতব: এএফপিকে নাহিদ
Published: 8th, March 2025 GMT
জুলাই-আগস্টে শেখ হাসিনার কর্তৃত্ববাদী শাসনের বিরুদ্ধে গণঅভ্যুত্থানের সবচেয়ে পরিচিত মুখগুলোর একটি নাহিদ ইসলাম। হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারে যোগ দেন তিনি। সম্প্রতি সরকার থেকে পদত্যাগ করেন নাহিদ। এরপর তার নেতৃত্বে আত্মপ্রকাশ হয় তরুণদের নতুন দল এনসিপির। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে তার দলের ভাবনা, ভবিষ্যৎ লক্ষ্যসহ নানা বিষয় নিয়ে বার্তাসংস্থা এএফপির সঙ্গে কথা বলেছেন নাহিদ।
সাক্ষাৎকারটি শুক্রবার (৭ মার্চ) প্রকাশিত হয়।
এএফপিকে নাহিদ বলেন, “দেশের প্রচলতি রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বড় পরিসরের সংস্কারের সদিচ্ছা নেই। তরুণ প্রজন্ম যেসব সংস্কারের জন্য জীবন দিয়েছে, তাদের (রাজনৈতিক দলগুলোর) সেগুলোর প্রতি কোনো আগ্রহই নেই।”
গত বছরের জুলাই-আগস্টে গণঅভ্যুত্থানে ৮০০ জনের বেশি মানুষ নিহত হয় জানিয়ে তিনি বলেন, “গণঅভ্যুত্থানের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের দায়িত্ব আমাদের ওপরই। এ কারণেই নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের সিদ্ধান্ত।”
তিনি বলেন, “আগামী নির্বাচনের আমাদের দল সরকার গঠন করতে না পারলেও, আমরা এমন একটি রাজনৈতিক শক্তি তৈরি করছি, যা আগামী কয়েক দশক রাজনীতিতে সরব থাকবে।”
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ের আশা প্রকাশ করে নাহিদ বলেন, “আমার আশা ও বিশ্বাস, আমরা এ নির্বাচনে জিতব। কিন্তু এটাই শেষ নির্বাচন নয়। আমাদের লক্ষ্য এই (রাজনৈতিক) শক্তিকে আরো ৫০-১০০ বছর টিকিয়ে রাখা।”
দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পুরোপুরি স্থিতিশীল না হওয়ায় এই মুহূর্তে নির্বাচন সম্ভব না জানিয়ে তিনি বলেন, “আমরা অন্তর্ভূক্তিমূলক রাজনীতিতে বিশ্বাস করি, কিন্তু ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক রীতিনীতির কিছু বাধ্যবাধকতা আছে। তবে বৈচিত্র্যের ক্ষেত্রে জাতীয় নাগরিক পার্টি এখনো একটি প্রশংসনীয় অবস্থানে রয়েছে।”
এনসিপি প্রধান বলেন, “আমরা নারীদের সামনে এনেছি, সব জাতি-ধর্ম-সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করেছি। প্রতিটি নাগরিকের অধিকার নিশ্চিত করার চেষ্টা করব আমরা।”
ঢাকা/ইভা
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরে মামলা মোকাবিলার চ্যালেঞ্জ মির্জা ফখরুলের
গণঅভ্যুত্থানের মুখে পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নেওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরে মামলা মোকাবিলার চ্যালেঞ্জ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) বিকালে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার চিলারং ইউনিয়নে দলীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে গণসংযোগের সময় দেওয়া বক্তব্যে এই আহ্বান রাখেন তিনি।
শেখ হাসিনার শাসন আমলে বিএনপি নেতাকর্মীদের নির্যাতনের শিকার হওয়ার কথা তুলে ধরেন মির্জা ফখরুল। গুম, খুন, ভিত্তিহীন মামলা, লুটপাট, টাকা পাচার, বাকস্বাধীনতা হরণ ও ভোট চুরিসহ নানা বিষয় নিয়ে কথা বলেন তিনি।
আরো পড়ুন:
জুলাই গণহত্যা: শেখ হাসিনাসহ ৪০৮ জনের বিরুদ্ধে আরেক মামলা
হাসিনা-রেহানাসহ ২২ জনের গ্রেপ্তার-সংক্রান্ত প্রতিবেদন ১২ মে
শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, “আমাদের নেতাকর্মীদের গুম করা হয়েছে। লাখ লাখ নেতাকর্মীকে মিথ্যা মামলা দিয়ে নির্যাতন করা হয়েছে, তাদের ঘরে থাকতে দেননি আপনি। আমরা তো কোথাও পালিয়ে যাইনি। আদালতে মিথ্যা মামলা আইনের মাধ্যমে ফেইস (মোকাবিলা) করেছি। উকিল ধরে জামিন নিয়েছি। আপনি (শেখ হাসিনা) পালিয়ে আছেন কেন? আপনিও মামলা লড়েন। আপনি দেশে এসে দাড়ান না দেখি।”
জনগণের উদ্দেশে তিনি বলেন, “আপনারা অনেকে মনে করেন শেখ হাসিনা আবারো দেশে ফিরে আসবেন। তিনি তো ১৫ বছর দেশের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। তার বাবা শেখ মুজিবুর রহমান একজন বিখ্যাত মানুষ ছিলেন। তার তো দেশ থেকে পালানোর কথা ছিল না। তিনি পালালেন কেন? কারণ তিনি একজন ডাইনি ছিলেন। জনগণের ওপর এমন নির্যাতন করেছেন যে, তিনি পালাতে বাধ্য হয়েছেন। জনগণ যদি সেদিন তাকে পেত, তাহলে ছিঁড়ে খেত।”
দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশে মির্জা ফখরুল বলেন, “হাসিনা দেশে ফিরে রাজনীতি করলে আমাদের কিছু করতে হবে না, জনগণই তাকে দেখে নেবে।”
আওয়ামী লীগের শাসনামলের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, “বিএনপির নেতাকর্মীরা যেন আওয়ামী লীগের মতো অন্যায় না করে; এতে মানুষ ভালোবাসবে না। দলের কোনো নেতাকর্মীরা অন্যায় করলে যেন জেলার নেতারা তাদের শক্ত হাতে দমন করেন; তারা যেন অন্যায়কারীদের পুলিশের হাতে তুলে দেন। তাই অপকর্ম বন্ধ করুন, না হলে আওয়ামী লীগের মতো অবস্থা হবে।”
ত্রোদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দৃষ্টি রেখে জনসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছে বিএনপি। মির্জা ফখরুলসহ দলটির শীর্ষ নেতারা সভা-সমাবেশ করছেন। এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের অংশগ্রহণের সুযোগ রাখা, না রাখা নিয়ে ব্যাপক মতপার্থক্য রয়েছে; সেই সঙ্গে আইনি ঝক্কিও সামনে আসছে।
গণহত্যার দায়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের একাধিক মামলায় আসামি করা হয়েছে শেখ হাসিনাকে। এ ছাড়া কয়েক শত ফৌজদারি মামলায় তিনি আসামি। অনেক মামলায় তাকে গ্রেপ্তারে পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত। তবে ভারতের আশ্রয়ে থাকা শেখ হাসিনাকে দেশে ফেরানোর কোনো নিশ্চয়তা এখনো তৈরি হয়নি।
গণঅভ্যুত্থানের মুখে ৫ আগস্ট দেশ ছেড়ে ছোট বোন রেহানাকে সঙ্গে নিয়ে ভারতে চলে যান শেখ হাসিনা। সেদেশে উচ্চনিরাপত্তা শৃঙ্খলে বসবাস করছেন বলে আন্তর্জাতিক সাংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়ে থাকে। সেখান থেকে দেশে আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের সঙ্গে অনলাইনে তার কথোপকথনের ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে, যা নিয়ে অস্বস্তির কথা ভারতকে জানিয়ে রেখে অন্তর্বর্তী সরকার।
ঢাকা/মঈনুদ্দীন/মাসুদ