বরজবাঁশি চাকমার জমিজমা বিশেষ ছিল না। ফসল যা পেতেন, তা দিয়ে সংসার চলত না। রাঙামাটির মগাছড়ি গ্রামের এই মানুষটাকে তাই নিরন্তর সংগ্রাম করতে হতো। বছর দশেক আগে ক্যানসারে বরজবাঁশির সেই সংগ্রামও থেমে যায়। একমাত্র উপার্জনক্ষম মানুষটিকে হারিয়ে পাঁচ সন্তানকে নিয়ে অথই সাগরে পড়েন তাঁর স্ত্রী বোজপুতি চাকমা। কষ্টেসৃষ্টে কীভাবে যে দিন পার করেছেন, তা শুধু তিনিই জানেন। অবশেষে মেয়ে ঋতুপর্ণা চাকমার হাত ধরে সচ্ছলতার মুখ দেখেছে এই পরিবার। তাঁদের ২১ বছর বয়সী মেয়েটি যে এখন দক্ষিণ এশিয়ার সেরা নারী ফুটবলার।

ঋতুপর্ণাকে পাদপ্রদীপের আলোয় এনেছে সাফ নারী ফুটবল। গত অক্টোবরে কাঠমান্ডুতে নেপালের বিপক্ষে ফাইনালে ৮১ মিনিটে তাঁর জয়সূচক গোল গোটা দেশকে আনন্দে ভাসিয়েছে। কাঠমান্ডুর দশরথ রঙ্গশালাভর্তি ২০ হাজার দর্শককে স্তব্ধ করে দিয়েছিল সেই গোল। ঋতুপর্ণা বলেছিলেন, ‘মনে হয়েছিল আমি আসলে দর্শকদের চুপ করাতে পেরেছিলাম।’

সেমিফাইনালে ভুটানের বিপক্ষে ৭-১ জয়ের প্রথম গোলটাও তাঁর করা। টুর্নামেন্টে চার ম্যাচে দুই গোল করার পাশাপাশি অন্যকে গোল তৈরি করেও দিয়েছেন ঋতুপর্ণা। প্রথম ম্যাচে পাকিস্তানের কাছে হেরে বিদায়ের শঙ্কায় পড়েছিল বাংলাদেশ। ৯১তম মিনিটে শামসুন্নাহার জুনিয়র গোল করে বাংলাদেশকে ১-১ ড্র এনে দেন। ঋতুপর্ণার ক্রস থেকেই আসে সেই গোল। এভাবেই সাফ শিরোপা ধরে রাখতে বড় ভূমিকা রেখেছেন ঋতুপর্ণা চাকমা।

মায়ের সঙ্গে সাফজয়ী ঋতুপর্ণা চাকমা.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

সাকিবের পথে হাঁটছেন মিরাজ

সাকিব আল হাসানের সঙ্গে নিজের তুলনাকে মেহেদী হাসান মিরাজ হয়তো উপভোগই করেন। কারণ, তাঁর স্বপ্ন সাকিবের মতো বিশ্বনন্দিত অলরাউন্ডার হয়ে ওঠা। সেই পথে বোধ হয় গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে যাচ্ছেন। বিশেষ করে টেস্টে দেশে-বিদেশে সম্প্রতি ভালো করছেন। পাকিস্তানে দারুণ প্রশংসিত ছিলেন অলরাউন্ড পারফরম্যান্স করে। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দুই টেস্টের হোম সিরিজে উভয় টেস্টে নিজেকে ছাপিয়ে গেলেন। সিলেটের হারের ম্যাচেও ১০ উইকেট ছিল তাঁর। চট্টগ্রামে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট নিয়ে সাকিব ও সোহাগ গাজীর কাতারে নাম লেখালেন। মূলত মিরাজের অলরাউন্ড নৈপুণ্যে ইনিংস ব্যবধানে টেস্ট জেতা সম্ভব হয়। 

গতকাল শতকের ঘরে যেতে কম কসরত করতে হয়নি তাঁর। নব্বইয়ের ঘরে গিয়ে তো অনিশ্চয়তায় পড়ে গিয়েছিলেন হাসানের আউটের শঙ্কায়। ভাগ্য সুপ্রসন্ন হওয়ায় দ্বিতীয় শতকের দেখা পান তিনি। ২০২১ সালে এই চট্টগ্রামেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি ছিল মিরাজের। গতকালের পারফরম্যান্স নিয়ে টাইগার এ অলরাউন্ডার বলেন, ‘ব্যাটিংয়ের সময় চেষ্টা করেছিলাম ২ রান নিয়ে ১০০ রানে যেতে। সেভাবে দৌড় দিয়েছিলাম। কিন্তু ফিল্ডারের হাতে বল চলে গিয়েছিল (হাসি)। তার পর তো আল্লাহর ওপর ছেড়ে দিয়েছিলাম। হাসান অনেক ভালো সাপোর্ট দিয়েছে। তানজিমও ভালো সাপোর্ট দিয়েছে। তাইজুল ভাইও। এই তিনজনকেই অনেক অনেক ধন্যবাদ। কারণ, ওদের জন্যই আমি ১০০ রান করতে পেরেছি।’ 

জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে করা সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট প্রাপ্তিকে নিজের সেরা পারফরম্যান্স দাবি মিরাজের, ‘ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাথে ১০০ করেছিলাম, ৩ উইকেট নিয়েছিলাম। অল্পের জন্য ৫ উইকেট হয়নি। হলে ভালো লাগত। ওই ম্যাচ হেরেছিলাম এই মাঠে। সে জিনিসটা মাথায় ছিল। ভালো লাগছে ম্যাচটি জিতেছি।’ মিরাজ ১৬২ বলে ১১টি চার ও একটি ছয় মেরে ১০৪ রান করেন। ২১ ওভারে ৩২ রান দিয়ে নেন পাঁচ উইকেট।

টেস্টে এ রকম অলরাউন্ড পারফরম্যান্স বাংলাদেশে আর দু’জনের আছে। সাকিব আল হাসান দু’বার ম্যাচে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট পেয়েছেন ২০১১ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে মিরপুরে আর ২০১৪ সালে খুলনায়। সোহাগ গাজী নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট শিকার করেন চট্টগ্রামে। সেই মাইলফলক ছোঁয়া মিরাজকে সম্প্রতি অলরাউন্ডার ক্যাটেগরিতে ফেলা হয়। সাকিবের বিকল্প ভাবা হয় তাঁকে এখন। 

এ ব্যাপারে মিরাজের অভিমত, ‘দেখেন একটা জিনিস, যখন সাকিব ভাই ছিলেন, ভিন্ন রোল ছিল। এখন ভিন্ন রোল। যেহেতু টিম ম্যানেজমেন্ট, সবাই ব্যাটিংয়ে আস্থা রাখে। আমিও ভেবেছি আমার ব্যাটিংটা গুরুত্বপূর্ণ। এখন হয়তো আমি লিডিং রোল প্লে করছি, আগে সাকিব ভাই করত। এখন আমাদের দায়িত্ব আরও বেশি।’ 

সিলেটে দুই ইনিংসে পাঁচ উইকেট করে নিয়েও দলকে জেতাতে পারেননি মিরাজ। চট্টগ্রামে সাদমান, তাইজুলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ম্যাচ জয়ের নায়ক হন। এই সাফল্য নিয়ে বলেন, ‘সত্যি কথা বলতে, প্রথম ম্যাচ হারার পর যেভাবে কামব্যাক করেছি, এটা খুবই দরকার ছিল। আমাদের সবাই ভেবেছিল, আমরা ভালো করব।’ মিরাজ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন কোচিং স্টাফ ও সতীর্থের কাছে। আর তাঁর কাছে কৃতজ্ঞতা পুরো দলের।

সম্পর্কিত নিবন্ধ