ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলায় পুলিশের অভিযানে আটক সোহাগ মিয়া নামের যুবলীগের এক নেতাকে পালাতে সহযোগিতা করার অভিযোগে যুবদলের এক নেতাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। গতকাল সোমবার বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে জেলা যুবদলের দপ্তর সম্পাদক আল আমিন স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

আরও পড়ুনপুলিশের হাত থেকে যুবলীগ নেতাকে পালাতে সহযোগিতা যুবদল নেতার১৭ মে ২০২৫

বহিষ্কার হওয়া যুবদলের ওই নেতার নাম মিজান মিয়া ওরফে মিজানুর রহমান। তিনি উপজেলার বুধন্তি ইউনিয়ন যুবদলের সাধারণ সম্পাদক। তাঁর সহযোগিতায় পুলিশের হাত থেকে পালিয়ে যাওয়া সোহাগ ইসলাম একই ইউনিয়ন যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। গত ১৭ মে এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে থানায় মামলা করেছে। এ মামলায় যুবদলের নেতা মিজানসহ চারজনকে আসামি করা হয়েছে।

বহিষ্কারাদেশের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিটি জেলা যুবদলের সভাপতি শামীম মোল্লা নিজের ফেসবুকে পোস্ট করেন। ওই সংবাদ বিজ্ঞপ্তি সূত্রে জানা যায়, জেলা যুবদলের সভাপতি শামীম মোল্লা ও সাধারণ সম্পাদক ইয়াছিন মাহমুদের নির্দেশনায় মিজানুর রহমানকে বহিষ্কার করা হয়েছে। সংগঠনের শৃঙ্খলাবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে তাঁকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়।

এর আগে যুবলীগ নেতাকে পালিয়ে যেতে সহযোগিতা করার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে মিজানের বিরুদ্ধে কেন সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না, তা জানতে চেয়ে তাঁকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয় জেলা যুবদল। ১০ কার্যদিবসের মধ্যে নোটিশের জবাব দিতে বলা হয়েছে মিজানকে।

স্থানীয় লোকজন ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ১৫ মে রাত ১১টার দিকে পুলিশ উপজেলার বুধন্তি বাসস্ট্যান্ড এলাকায় অভিযান চালিয়ে যুবলীগ নেতা সোহাগ মিয়াকে আটক করে। এর পরপরই বুধন্তি ইউনিয়ন যুবদলের সাধারণ সম্পাদক মিজানসহ কয়েকজন ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। তিনি পুলিশের ওপর চড়াও হন। একপর্যায়ে পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) সুমন চন্দ্র দাসকে ধাক্কা দিয়ে সোহাগ মিয়াকে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যেতে সহায়তা করেন মিজান।

এ ঘটনায় ১৭ মে সকালে এসআই সুমন চন্দ্র দাস বিজয়নগর থানায় একটি মামলা করেছেন। মামলায় যুবলীগ নেতা সোহাগ ইসলাম (৩৫), যুবদলের নেতা ‍মিজান মিয়া (৪২), ইউনিয়ন শ্রমিক দলের সাধারণ সম্পাদক কাপ্তান মিয়া (৩০) ও ইউনিয়ন শ্রমিক দলের সভাপতি রোমান খানকে আসামি করা হয়।

৩৩ সেকেন্ডের একটি ভিডিওতে দেখা যায়, একটি মুদিদোকানের এক কোনায় লাল রঙের শার্ট পরে যুবলীগের নেতা সোহাগ দাঁড়িয়ে আছেন। তাঁর ঠিক সামনে যুবদলের নেতা মিজান, মিজানের সামনে উপজেলার ইসলামপুর ফাঁড়ির এসআই সুমন চন্দ্র দাস মুঠোফোনে কারও সঙ্গে কথা বলছেন। এসআই সুমন চন্দ্রের পেছনে একজন, ডান দিকে আরেকজন যুবক এবং দোকানের ভেতরে দোকানি দাঁড়িয়ে আছেন। যুবদলের নেতা মিজান কথা বলতে বলতে ধীরে ধীরে এসআই সুমন চন্দ্রের দিকে এগিয়ে যান। মিজান একপর্যায়ে নিজের শরীর দিয়ে এসআই সুমন চন্দ্র দাসকে পেছনের দিকে ঠেলে নিয়ে যান। মুহূর্তের মধ্যেই যুবলীগ নেতা দোকান থেকে দৌড়ে পালিয়ে যান। এরপরই এসআইকে যুবলীগ নেতার পেছনে ছুটতে দেখা যায়।

বহিষ্কার হওয়া যুবদলের নেতা মিজানুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি বহিষ্কারাদেশ দেখেছি। কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়ার সাত দিনে মধ্যেই আমি জবাব দিয়েছি। আমার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ সত্য নয়। পুরো ভিডিও ফেসবুকে দেওয়া হয়নি। পুলিশ এসে ইউনিয়ন শ্রমিক দলের সভাপতি রোমান খানের সঙ্গে খারাপ আচরণ করেছিল। পুলিশের আচরণ এখনো পরিবর্তন হয়নি। তাই পুলিশকে ধাক্কা দিয়েছিলাম। পালাতে সহায়তা করিনি।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: য বদল র ন ত য বল গ ন ত য বদল র স দল র স উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

কুষ্টিয়ার সাবেক এসপি তানভীর আরেক হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার

কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলায় বিএনপি কর্মী কুদরত আলীকে গুলি করে হত্যা মামলার আসামি কুষ্টিয়ার সাবেক পুলিশ সুপার এস এম তানভীর আরাফাতকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।

সোমবার (২৮ জুলাই) দুপুর ১টা ৪১ মিনিটে কড়া নিরাপত্তায় কারাগার থেকে এস এম তানভীর আরাফাতকে কুষ্টিয়া আদালতে আনা হয়। এরপর দৌলতপুর আমলি আদালতের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোস্তফা পারভেজের আদালতে হাজিরা করা হয়। এরপর তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। পরে ১টা ৫১ মিনিটে আদালত থেকে তাকে আবার কারাগারে পাঠানো হয়। 

গত ২৬ ডিসেম্বর বিএনপির আরেক কর্মী সুজন মালিথাকে গুলি করে হত্যা মামলার প্রধান আসামি এই পুলিশ কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর থেকে তিনি কুষ্টিয়া কারাগারে আছেন। 

আরো পড়ুন:

মেহেরপুরে হত্যা মামলায় একজনের মৃত্যুদণ্ড

গজারিয়ায় প্রতিপক্ষের গুলিতে ‘শুটার’ মান্নান নিহত

উপপুলিশ কমিশনার এস এম তানভীর আরাফাত সিলেট রেঞ্জ ডিআইজি অফিসে সংযুক্ত ছিলেন। তার গ্রামের বাড়ি খুলনার খালিশপুর উপজেলায়। কুষ্টিয়ায় চাকরিকালে বিতর্কিত ছিলেন এই পুলিশ কর্মকর্তা। কুষ্টিয়া জেলায় আসার পর থেকে নানা কর্মকান্ডে সমালোচনার মুখে পড়েন তিনি। এমনকি, তখন এ সব কর্মকাণ্ডের জন্য তাকে আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হয়। বিভাগীয় শাস্তিও পেতে হয়। 

নিহত বিএনপি কর্মী কুদরত আলীর ছেলে বাদী হয়ে ২০২৪ সালের ২ অক্টোবর দৌলতপুর থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলার এজাহারে বাদী উল্লেখ করেছেন, কুদরত আলী বিএনপির সক্রিয় সমর্থক ছিলেন। বিএনপির প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে তিনি দলের সঙ্গে আছেন। এ কারণে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা ও কিছু সুবিধাভোগী পুলিশ সদস্য কুদরত আলীকে মিথ্যা মামলায় আটক ও হত্যার পরিকল্পনা করে। এই ষড়যন্ত্রের পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশ পরিদর্শক নিশিকান্ত সরকার, এসআই রোকনুজ্জামান, এসআই মেহেদী হাসান, এসআই শাহজাহান, এএসআই আনিচুর রহমান, পুলিশ সুপার এস এম তানভীর আহমেদসহ অন্য পুলিশ সদস্যরা কুদরত আলীকে হত্যা করার পরিকল্পনা করে। ২০২০ সালের ২৩ জুলাই রাত ২টার দিকে ১০-১২ জন পুলিশ কুদরত আলীকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যায়। ২৫ জুলাই তাকে গুলি করে হত্যা করা হয়। তার বুকের ডান দিকে ও বাম দিকে দুটি গুলির চিহ্ন, দুই হাতে, পিঠে, মুখে ও পায়ে আঘাতের চিহ্ন ছিল। 

বাদী মামলায় দাবি করেন, কুদরত আলীকে গুম করে নির্যাতন ও গুলি করে হত্যা করে লাশ হাসপাতালের মর্গে রেখে চলে যায়।

দৌলতপুর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সোলাইমান শেখ জানান, দৌলতপুর থানার একটি মামলায় এস এম তানভীর আরাফাতকে গ্রেপ্তারের আবেদন করা হয়েছিল। সেই আবেদন আদালত মঞ্জুর করেছেন। 

২০১৯ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর বিএনপির কর্মী সুজন মালিথাকে গুলি করে হত্যার অভিযোগে কুষ্টিয়া সাবেক এসপি এস এম তানভীর আরাফাতের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। গত ২৯ সেপ্টেম্বর নিহত সুজনের রাজনৈতিক বড় ভাই সুজন হোসেন (৪২) বাদী হয়ে কুষ্টিয়া মডেল থানায় মামলা করেন। মামলায় মোট ১৫ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। 

নিহত সুজন মালিথা কুষ্টিয়া সদর উপজেলার টাকিমারা গ্রামের ইসমাইল মালিথার ছেলে। 

ঢাকা/কাঞ্চন/বকুল

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • পেশাদারির সঙ্গে দায়িত্ব পালনে এসআইদের প্রতি ডিএমপি কমিশনারের আহ্বান
  • রাজশাহীতে যুবদল–ছাত্রদলের চাঁদাবাজির মামলার এজাহার ফাঁস, এসআইকে বদলি
  • রূপগঞ্জে দাফনের এক বছর পর যুবকের মরদেহ উত্তোলন
  • কুষ্টিয়ার সাবেক এসপি তানভীর আরেক হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার