সিরিয়া কি নতুন ইসলামপন্থী রাজনীতির প্রেরণা জোগাচ্ছে
Published: 11th, March 2025 GMT
সিরিয়ায় সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহ কি ইসলামপন্থার নতুন উত্থানের ইঙ্গিত দিচ্ছে? এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে দেখা যায় যে ইসলামপন্থা এখন আর আগের মতো নির্দিষ্ট মতাদর্শের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই; বরং তরুণদের ধর্মীয় অনুভূতি ও বাস্তববাদী দৃষ্টিভঙ্গি নতুন করে বিভিন্ন আরব শাসককে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে। কিন্তু এই নতুন আন্দোলনের কোনো সুস্পষ্ট কৌশল এখনো গড়ে ওঠেনি।
সিরিয়ার বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে ইসলামপন্থী সংগঠনগুলোর নেতাদের সঙ্গে কথা বললে বোঝা যায়, একদিকে সেখানে নতুন আশার সঞ্চার হয়েছে, আবার অন্যদিকে গভীর অনিশ্চয়তাও রয়েছে।
‘ইসলামপন্থা’ শব্দটি ইসলামের সঙ্গে গুলিয়ে ফেলা ঠিক হবে না। ইসলামপন্থা একটি রাজনৈতিক মতাদর্শ, যা শরিয়াহর ভিত্তিতে রাজনৈতিক ও সামাজিক কাঠামো গড়ে তোলার কথা বলে এবং রাজনৈতিকভাবে ইসলামের নামে জনমত সংগঠিত করার চেষ্টা করে।
গত ১০ বছরে ইসলামপন্থীদের জনপ্রিয়তা কমেছে। দ্বিতীয় আরব বসন্তের (২০১৮-১৯) সময় তা স্পষ্টভাবে বোঝা গেছে। সুদান, ইরাক, লেবানন এবং কিছুটা হলেও আলজেরিয়ায় ইসলামপন্থীদের বিরুদ্ধে ব্যাপক বিক্ষোভ হয়েছে। এতে স্পষ্ট হয় যে তাদের রাজনৈতিক কার্যকলাপ ও ধর্মীয় বয়ানের মধ্যে ফারাক আছে। তবে সিরিয়ার সাম্প্রতিক পরিবর্তন নতুন মাত্রা যোগ করেছে, যা ইসলামপন্থার ভবিষ্যৎ নিয়ে নতুন করে ভাবতে বাধ্য করছে।
আরও পড়ুনসিরিয়ার নতুন শাসক শারা শুরুতেই যে চমক দেখালেন১৭ ডিসেম্বর ২০২৪তুরস্কে অবস্থানরত মিসরের মুসলিম ব্রাদারহুডের এক নেতা বলেন, সিরিয়া নতুন করে আশার আলো দেখাচ্ছে, বিশেষ করে যাঁরা দীর্ঘদিন ধরে সংগ্রাম করেও কোনো আশার আলো দেখতে পাননি। একসময়ের কঠোর শাসক, যাঁর পেছনে ছিল শক্তিশালী সেনাবাহিনী, গোয়েন্দা সংস্থা, আঞ্চলিক মিত্র ও শিয়া মিলিশিয়ারা; সেই আসাদ এখন ক্ষমতাচ্যুত। যদিও সিরিয়ার বর্তমান শাসকগোষ্ঠী ইরান থেকে পুরোপুরি দূরে সরে আসেনি, তথাপি তারা আরব দেশগুলোর কূটনৈতিক পরিমণ্ডলে পুনরায় প্রবেশ করতে পেরেছে।
মরক্কোর জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টির এক নেতা সিরিয়ার অস্থিতিশীল পরিস্থিতি এবং হায়াত তাহরির আল-শাম (এইচটিএস) প্রধান আহমেদ আল-শারার অবস্থান নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, শারার এখনো তাঁর মতাদর্শগত অবস্থান পরিষ্কার করেননি। তাঁর অনুসারীরা যদি তাঁর রাজনৈতিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক অবস্থানের পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে না পারেন, তাহলে ভবিষ্যতে কী হবে?
তাঁর মতে, সিরিয়ার ইসলামপন্থীরা এখনো গণতান্ত্রিক উপায়ে আধুনিক রাষ্ট্রগঠনের লক্ষ্যে কাজ করেননি। তাঁদের সংগ্রাম বরং অস্তিত্ব রক্ষার লড়াইয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ। তাঁর মতে, যেখানে সংঘাত ও দমন-পীড়ন চলছে, সেখানে আধুনিক রাষ্ট্রগঠনের বিকাশ হতে পারে না।
তুরস্কে থাকা সিরিয়রা আসাদের পতনের সংবাদে উল্লাস করছেন.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ইসল মপন থ র জন ত ক অবস থ ন ইসল ম
এছাড়াও পড়ুন:
প্রেম ছিল না তবু কেন মধুবালাকে বিয়ে করেছিলেন কিশোর কুমার
দিলীপ কুমারের সঙ্গে বিচ্ছেদের কিছুদিন পরই কিশোর কুমারকে বিয়ে করেন অভিনেত্রী মধুবালা। তবে তখন তিনি ছিলেন অসুস্থ। কিশোর কুমার জানিয়েছিলেন, ভালোবাসা থেকে নয়, বরং কথা রাখতেই তিনি এ বিয়ে করেছিলেন।
মধুবালা ও দিলীপ কুমারের প্রেম নিয়ে একসময় মুখর ছিল মুম্বাই ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি। কিন্তু অভিনেত্রীর বাবার বাধার কারণে সে সম্পর্কে ফাটল ধরে এবং দুজনের বিচ্ছেদ ঘটে। কিছুদিন পরেই কিশোর কুমারকে বিয়ে করেন মধুবালা। তাঁদের এই বিয়ে অনেককে চমকে দিয়েছিল। কারণ, তাঁদের প্রেমের কথা তখনো গোপন ছিল। তবে মধুবালার শরীর তখন ভালো যাচ্ছিল না। বলা হয়, দীর্ঘ রোগভোগের সময় কিশোর কুমার তাঁকে মায়ের বাড়িতে রেখেই চলে যান।
দ্য ইলাস্ট্রেটেড উইকলি অব ইন্ডিয়াকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে কিশোর কুমার বলেছিলেন, ‘বিয়ের আগেই জানতাম, ও খুব অসুস্থ। কিন্তু কথা তো দিয়েছিলাম। তাই সে কথা রেখেই ওকে ঘরে এনেছিলাম স্ত্রী হিসেবে। জানতাম, ওর জন্মগত হৃদ্রোগ আছে। তবু ৯ বছর ধরে সেবা করেছি। চোখের সামনেই ওকে মরতে দেখেছি। কেউ বুঝবে না এর যন্ত্রণা, না ভুগলে। ও অসম্ভব সুন্দরী ছিল। আর কত যন্ত্রণায় মারা গেছে, সেটা চোখে না দেখলে বিশ্বাস হবে না। হতাশায় চিৎকার করত, কান্নাকাটি করত। এত প্রাণোচ্ছল মানুষ নয়টা বছর বিছানায় শুয়ে থাকবে—এ কল্পনাই করা যায় না। ডাক্তার বলেছিল, ওকে হাসিখুশি রাখতে হবে। আমি তা–ই করেছি—ওর শেষনিশ্বাস পর্যন্ত। কখনো হেসেছি, কখনো কেঁদেছি ওর সঙ্গে।’
তবে কিশোর কুমারের এই বক্তব্য নিয়ে সংশয় তৈরি হয়। কারণ, পরে ফিল্মফেয়ার সাময়িকীতে দেওয়া সাক্ষাৎকারে একেবারে ভিন্ন কথা বলেন তিনি। সেই সাক্ষাৎকারে কিশোর কুমার বলেন, ‘মধুবালার সঙ্গে আমি প্রেমে পড়িনি কখনো। বরং ওর প্রেমিক ছিল আমার বন্ধু দিলীপ কুমার। আমি তো শুধু ওদের বার্তা পৌঁছে দিতাম। বিয়ের প্রস্তাবটা দিয়েছিল মধুবালাই। এমনকি, যখন আমার প্রথম স্ত্রী রুমা তখনো আমার সঙ্গে ছিল, তখনো মধু বলত, “ওকে কখনো ছেড়ো না, না হলে আমি তোমার হয়ে যাব।”’
আরও পড়ুনকিশোর কুমার কি সত্যিই ঘরে কঙ্কাল আর মাথার খুলি নিয়ে ঘুমাতেন২৭ মে ২০২৫মধুবালার পরিবারের ভাষ্য অনুযায়ী, চিকিৎসকেরা তখন বলেছিলেন, অভিনেত্রীর পক্ষে শারীরিক সম্পর্ক কিংবা সন্তানধারণ কোনো কিছুই সম্ভব নয়। সেই বাস্তবতা হয়তো প্রভাব ফেলেছিল কিশোরের সিদ্ধান্তে। এক ঘনিষ্ঠজন বলেন, ‘আমরা বলছি না কিশোরদা ভুল করেছিলেন। ডাক্তার তো স্পষ্ট বলেছিল—শারীরিক সম্পর্ক বা সন্তান কোনোটাই সম্ভব নয়। তবে একজন নারীর তো মানসিক সঙ্গীও দরকার হয়।’
ওই ঘনিষ্ঠজন আরও জানান, কিশোর কুমার তিন মাসে একবার আসতেন মাত্র। বলতেন, ‘আমি এলে তুমি কাঁদবে, আর এতে তোমার হৃদ্যন্ত্রের ক্ষতি হবে। তুমি বিষণ্ন হয়ে পড়বে।’ সে সময় মধু অনেক ছোট ছিলেন, ঈর্ষাও ছিল স্বাভাবিক। হয়তো এ দূরত্বই ধীরে ধীরে তাঁকে শেষ করে দিয়েছিল।
১৯৬৯ সালে মাত্র ৩৬ বছর বয়সে না ফেরার দেশে পাড়ি জমান বলিউড অভিনেত্রী মধুবালা