ফ্যাসিবাদবিরোধী রাজনৈতিক, ছাত্র-শ্রমিক, ওলামায়ে কেরাম এবং বিশিষ্ট নাগরিকদের নিয়ে ইফতার মাহফিল করেছে জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপি। এতে বিএনপি, জামায়াত, ইসলামী আন্দোলন, হেফাজতে ইসলামসহ রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা অংশ নিয়েছেন। তবে এতে জাতীয় পার্টিসহ আওয়ামী লীগের শরীক কোনো দলকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি।

আজ মঙ্গলবার রাজধানীর ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলের রূপসী বাংলা গ্র্যান্ড বলরুমে ইফতার মাহফিলের আয়োজন করা হয়। ইফতার অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন- বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন আহমেদ, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, জামায়াতে ইসলামের আমির ডা.

শফিকুর রহমান, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রেসিডিয়াম সদস্য মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানি, আশরাফ আলী আকন, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিশের আমির মাওলানা মামুনুল হক, হেফাজত নেতা মুফতি সাখাওয়াত হোসাইন রাজি; নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, বাম গণতান্ত্রিক জোটের রুহিন হোসেন প্রিন্স, গণতন্ত্র মঞ্চের সমন্বয়ক সাইফুল হক, এবি পার্টির জেনারেল সেক্রেটারি আসাদুজ্জামান ফুয়াদ, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী, খেলাফত মজলিসের আমীর ও এবি পার্টির নতুন সভাপতি মজিবুর রহমান মঞ্জু প্রমুখ।

অনুষ্ঠানে ছাত্রসংগঠনগুলোর মধ্যে ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব, সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন নাছির, ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক সিবগাতুল্লাহ, জাতীয় নাগরিক কমিটির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক আলী আহসান জুনায়েদ, গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক আবু বাকের মজুমদার, সদস্যসচিব জাহিদ আহসান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আহ্বায়ক আব্দুল কাদের, ছাত্রফেডারেশনের সৈকত আরিফ, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের মোজাম্মেল হক প্রমুখ।

অন্যান্যদের মধ্যে অ্যাক্টিভিস্ট জাহেদুর রহমান, লেখক মূসা আল হাফিজ, ধর্মীয় আলোচক হাবিবুর রহমান মিসবাহ, কলরব শিল্পীগোষ্ঠীর শিল্পী বদরুজ্জামান, আবু রায়হান, গুম হওয়া সাবেক লেফটেন্যান্ট কর্নেল হাসিনুর রহমান, সাংবাদিক মাসুদ কামাল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী অংশ নেন।

ইফতার অনুষ্ঠানে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, আমাদের মধ্যে নানা বিষয়ে মতভেদ-মতপার্থক্য নীতিগত বিরোধ হতে পারে। তবে গণতান্ত্রিক সম্পর্ক, সংলাপ, মিথস্ক্রিয়া যাতে ছেদ না পড়ে। জাতীয় ঐক্য ছাড়া ফ্যাসিবাদকে বিলোপ-পরাস্ত করা সম্ভব নয়। আমরা যেন ভুলে না যাই- দেশের বিপদ এখনও কাটেনি। বাংলাদেশবিরোধীরা এখনও ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে।

তিনি বলেন, রাজনীতিবিদ এবং অভ্যুত্থানের শক্তিদের মধ্যে অনৈক্য, সামরিক বেসামরিক আমলাতন্ত্র, মাফিয়া জোট, ব্যবসায়ী শ্রেণি, ষড়যন্ত্রকারী নানা বৈদেশিক শক্তিকে সুযোগ করে দিতে পারে। তাই আমরা যাতে সতর্ক থাকি। নীতিগত বিরোধ হবে, তবে জুলাইয়ে যে ঐক্য হয়েছে তা থেকে সরে যাব না।

একইসঙ্গে সংসদ এবং গণপরিষদ নির্বাচনের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, সামনের নির্বাচন একইসঙ্গে আইনসভা এবং গণপরিষদ নির্বাচন সম্ভব। এর মাধ্যমে আমরা নতুন সংবিধান এবং গণতন্ত্রের পথে উত্তরণ করতে পারব। সকল কিছুই দ্রুত সময়ের মধ্যে হওয়া সম্ভব মনে করছি। সরকার যে নির্ধারিত সময় দিয়েছে, এর মধ্যেই এসব কার্যক্রম সম্পন্ন করে নির্বাচনের দিকে যাওয়া সম্ভব। তবে নির্বাচনের আগে অবশ্যই আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উত্তরণ ঘটতে হবে।

তিনি আরও বলেন, বর্তমানে সরকার জাতীয় ঐক্যমত্য কমিশনের যে সংস্কার প্রক্রিয়া চালাচ্ছেন- তাদের প্রস্তাবিত জুলাই সনদ দ্রুত কার্যকর দেখতে চাই। জুলাই সনদ কার্যকরের মাধ্যমে সংস্কারের রূপরেখা স্পষ্ট হবে। সংবিধান সংস্কার ছাড়া জনপ্রশাসন পুলিশ সংস্কার অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে অধ্যাদেশের মাধ্যমে দ্রুত বাস্তবায়ন চাই। নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধে আইনগত উদ্যোগ এবং দুর্নীতি-চাঁদাবাজি বন্ধে সরকারকে আরও কঠোর হতে হবে। সন্ত্রাস-উগ্রবাদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান দেখাতে হবে সরকারকে।

এ ছাড়া এনসিপির সদস্যসচিব আখতার হোসেন, উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম, দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ, নাগরিক কমিটির জ্যৈষ্ঠ যুগ্ম আহবায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব এবং সামান্তা শারমিন, জ্যৈষ্ঠ সদস্যসচিব ডা. তাসনিম জারা ও নাহিদ সারওয়ার, মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটোয়ারীসহ কেন্দ্রীয় কমিটির নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: এনস প ইফত র ব এনপ জ ম য় ত ইসল ম র রহম ন কম ট র সরক র ইফত র সদস য ইসল ম

এছাড়াও পড়ুন:

চাকরি খেয়ে ফেলব, কারারক্ষীকে কারাবন্দী আ’লীগ নেতা

‘চাকরি খেয়ে ফেলব, দেখে নেব তোমাকে, চেন আমি কে?’ কারবন্দী কুড়িগ্রাম জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান সাজু (৪৯) মঙ্গলবার বিকেল ৪টার দিকে ২ কারারক্ষীকে এভাবে হুমকি দেন বলে অভিযোগ উঠেছে। 

জানা যায়, কুড়িগ্রাম জেলা কারাগারে জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান সাজুকে দেখতে যান তার কয়েকজন স্বজন। কারা নিয়মানুযায়ী সাক্ষাৎ কক্ষে বেঁধে দেওয়া সময়ে কথা শেষ করার কথা থাকলেও তিনি তার মানতে রাজি নন। তিনি দীর্ঘ সময় কথা বলতে চাইলে সাক্ষাৎ কক্ষে দায়িত্বরত মহিলা কারারক্ষী পপি রানী কারাবন্দী নেতার স্বজনদের সময়ের মধ্যে কথা শেষ করতে বলেন। এতে ক্ষিপ্ত হন আওয়ামী লীগ নেতা সাজু। তখন তিনি বলেন, ‘এই আপনি কে? ডিস্টার্ব করছেন কেন? চিনেন আমাকে? চাকরি খেয়ে ফেলব।’

এ সময় সাক্ষাৎ কক্ষে সাজুর স্বজনরাও পপি রানীর সঙ্গেও আক্রমণাত্মক আচরণ করেন। পপি রানীকে নিরাপদ করতে সুমন নামের আরেকজন কারারক্ষী এগিয়ে এলে তাকে লাথি দিয়ে বের করে দেওয়ার হুমকি দেন সাজু। উত্তেজনার একপর্যায়ে ঘটনাস্থলে দ্রুত উপস্থিত হন প্রধান কারারক্ষী আব্দুর রাজ্জাক। তিনি সাজুর স্বজনদের সাক্ষাৎ কক্ষ থেকে চলে যেতে বলেন। তারাও চলে যাওয়ার সময়ে কারারক্ষীদের গালিগালাজ করেন। 

এ ব্যাপারে কারারক্ষী পপি রানী  বলেন, ‘আমি ডিউটিরত অবস্থায় তিনি আমাকে প্রভাব দেখিয়ে চাকরি খাওয়ার হুমকি দেন ও গালিগালাজ করেন। আমি জেলার স্যারের কাছে বিচার প্রার্থনা করছি।’

প্রত্যক্ষদর্শী কারারক্ষী মো. সুমন বলেন, ‘আমরা তো ছোট পদে চাকরি করি, আমাদের নানান নির্যাতন সহ্য করতে হয়। আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া আর কিছু বলতে পারব না।’

প্রধান কারারক্ষী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘সাক্ষাৎ কক্ষের ভেতরে পুলিশ সদস্যকে গালিগালাজ করা হয়। পরে আমি গিয়ে পরিবেশ শান্ত করি।’ 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কুড়িগ্রাম কারাগারের জেলার এ জি মো. মামুদ বলেন, ‘বিষয়টি আমি শুনেছি। বন্দীরা আমাদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করলেও আমরা মানবিকতা প্রদর্শন করি। কেউ অতিরিক্ত কিছু করলে জেলের নিয়ম অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

উল্লেখ্য, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান সাজুকে গত ৩ ফেব্রুয়ারি বিকেলে রংপুর শহরের সড়ক ও জনপথ কার্যালয়ের কাছ থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)। তার বিরুদ্ধে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে ছাত্র-জনতার ওপর হামলা ও শিক্ষার্থী আশিক হত্যা মামলাসহ একাধিক মামলা রয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ