পাকিস্তানের বেলুচিস্তানে যাত্রীবাহী একটি ট্রেনে সশস্ত্র গোষ্ঠীর সদস্যদের হাতে জিম্মি যাত্রীদের উদ্ধারে কাজ করছে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা। মঙ্গলবার বেলুচিস্তানের বোলান এলাকার কাছে কোয়েটা থেকে পেশোয়ারগামী জাফর এক্সপ্রেস নামের যাত্রীবাহী ট্রেনে হামলা চালায় সশস্ত্র একটি গোষ্ঠী। তারা এলোপাতাড়ি গুলি ছুড়ে যাত্রীদের জিম্মি করে। পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম এ তথ্য জানিয়েছে। 

রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন সংবাদমাধ্যম রেডিও পাকিস্তান এবং পিটিভি নিউজ এর আগে নিরাপত্তা বাহিনীর সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে জানিয়েছিল যে, বোলান পাসের ধাদার এলাকায় সশস্ত্র গোষ্ঠীর সদস্যরা জাফর এক্সপ্রেসে হামলা চালিয়ে নারী ও শিশুসহ যাত্রীদের জিম্মি করে রেখেছে। ওই সময় তাদের সঙ্গে ‘বিদেশি সহায়তাকারীদের’ যোগাযোগ ছিল। সংবাদমাধ্যমগুলোর প্রতিবেদনে বলা হয়, নিরাপত্তা বাহিনী এলাকাটি ঘিরে ফেলেছে এবং সব যাত্রীকে উদ্ধারের জন্য একটি অভিযান শুরু করেছে।

সবশেষ খবরে রেডিও পাকিস্তান জানিয়েছে, নিরাপত্তা বাহিনী সশস্ত্র গোষ্ঠীর কাছ থেকে ৮০ জন জিম্মিকে উদ্ধার করেছে। ‘নিরাপত্তা বাহিনীর সূত্রের দেওয়া তথ্যমতে, উদ্ধারকৃতদের মধ্যে ৪৩ জন পুরুষ, ২৬ জন নারী এবং ১১ জন শিশু। নিরাপত্তা কর্মীরা বাকি যাত্রীদের নিরাপদে উদ্ধারে কাজ করছেন।

গভীর রাতে সংবাদমাধ্যমটি জানিয়েছে, এ ঘটনায় নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে সশস্ত্র গোষ্ঠীর ১৩ সদস্য নিহত হয়েছেন, আহত হয়েছেন অনেকে। 

রেডিও পাকিস্তানের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, নিরাপত্তা বাহিনীর সূত্রমতে, নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযানের কারণে সশস্ত্র গোষ্ঠীটি ছোট ছোট দলে বিভক্ত হয়ে পড়ে। আহত যাত্রীদের নিকটবর্তী হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। বাহিনীর অতিরিক্ত সদস্যরা এলাকায় অভিযানে অংশ নিচ্ছে।

হামলার দায়

নিষিদ্ধ সশস্ত্র গোষ্ঠী বেলুচিস্তান লিবারেশন আর্মি (বিএলএ) এ হামলার দায় স্বীকার করেছে।

জিও নিউজের এক অনুষ্ঠানে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এ ঘটনার বিস্তারিত বর্ণনা দিয়ে পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী তালাল চৌধুরী বলেন, দুপুরের দিকে দুর্গম এলাকায় ট্রেনটিকে জিম্মি করা হয়। নিরাপত্তা বাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছাতে শুরু করলে কিছু যাত্রীকে ছেড়ে দেওয়া হয়। তবে কতজনকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে তা তিনি প্রকাশ করতে পারবেন না বলে জানিয়েছেন।

তালাল চৌধুরী আরও বলেন, মুক্ত যাত্রীদের নিকটতম স্টেশনে এবং সবশেষে তাদের নির্ধারিত গন্তব্যে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। অনেক লোককে ট্রেন থেকে পাহাড়ি এলাকায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। [সন্ত্রাসীরা] নারী ও শিশুদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করছে।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, প্রাণহানির কারণে নিরাপত্তা বাহিনী সাবধানতার সঙ্গে পদক্ষেপ নিচ্ছে। অভিযান এখনো চলছে।

জরুরি অবস্থা 

বেলুচিস্তান সরকারের মুখপাত্র শহীদ রিন্দ আগে এক বিবৃতিতে বলেছেন, পেহরো কুনরি এবং গাদালারের মাঝামাঝি কোয়েটা থেকে পেশোয়ারগামী একটি জাফর এক্সপ্রেস [ট্রেনে] তীব্র গুলি চালানোর খবর পাওয়া গেছে।

রেলওয়ে নিয়ন্ত্রক মুহাম্মদ কাশিফ বলেছেন, নয়টি কোচবিশিষ্ট ট্রেনটিতে প্রায় ৫০০ যাত্রী রয়েছে। ৮ নম্বর টানেলের মধ্যে সশস্ত্র ব্যক্তিরা ট্রেনটি থামিয়েছে।।

রয়টার্সের তথ্যমতে, নিরাপত্তা বাহিনী বলেছে, টানেলের কাছে একটি বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। তারা পাহাড়ি এলাকায় জঙ্গিদের সঙ্গে গুলি বিনিময় করছেন।

আরও পড়ুনপাকিস্তানে বোমা ফাটিয়ে ও গুলি চালিয়ে ট্রেনের নিয়ন্ত্রণ নিল সশস্ত্র গোষ্ঠী১১ ঘণ্টা আগে.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: সশস ত র গ ষ ঠ র এল ক য সদস য

এছাড়াও পড়ুন:

ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ইসরায়েলের হামলা

রবিবার বিকেল থেকে ইরানজুড়ে নতুন করে ব্যাপক বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। সামরিক স্থাপনার পাশাপাশি ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কেও লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে।

রবিবার রাতে ইরানের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাইদ খাতিবজাদেহ ইসরায়েলি হামলার তথ্য নিশ্চিত করেছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ একটি পোস্টে তিনি জানান, রবিবার রাজধানী তেহরানে ইসরায়েলি হামলায় ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। খবর তুরস্কের বার্তা সংস্থা আনাদোলুর।

এক্স-পোস্টে সাইদ বলেছেন, “ইসরায়েলের অপরাধী শাসকগোষ্ঠী রাজনৈতিক ও আন্তর্জাতিক গবেষণা ইনস্টিটিউটের ঠিক বিপরীতে অবস্থিত ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি ভবনে ইচ্ছাকৃত এবং নির্মম হামলা চালিয়েছে।”

আরো পড়ুন:

ইসরায়েলের নতুন হামলায় ইরানের আইআরজিসির গোয়েন্দা প্রধান নিহত

ইসরায়েলে ৫০টি ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ল ইরান, তেল আবিব ও হাইফাতে সরাসরি আঘাত

উপ-মন্ত্রী আরো বলেন, “এই হামলায় বেশ কয়েকজন বেসামরিক ব্যক্তি আহত হয়েছেন, আমার বেশ কয়েকজন সহকর্মীও আহত হয়েছেন, যাদের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।”

সাইদ বলেন, “এটি আরো একটি স্পষ্ট যুদ্ধাপরাধ, ইরানের বিরুদ্ধে ইসরায়েলি শাসকগোষ্ঠীর চলমান ও নিয়মতান্ত্রিক আগ্রাসন অভিযানের অংশ।”

এর আগে শনিবার ইরানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সদর দপ্তরে হামলা চালিয়েছিল ইসরায়েল।

ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তারা তেহরানের অস্ত্র উৎপাদন ক্ষমতা ধ্বংস করার লক্ষ্যে ইরানের আইআরজিসি ও সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে রবিবার নতুন করে ব্যাপক বিমান হামলা চালিয়েছে।

বিবৃতিতে  বলা হয়, এই হামলায় ইসলামিক রেভোলিউশনারি গার্ড কর্পস (আইআরজিসি), গার্ডস কুদস ফোর্স এবং ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর অবকাঠামো লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে।

ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী আরো জানিয়েছে, ইরানজুড়ে অসংখ্য অস্ত্র উৎপাদন কেন্দ্রে হামলা চালানো হয়েছে। 

ইরানি বার্তাসংস্থা তাসনিম নিউজ জানিয়েছে, ইসরায়েলের এই হামলায় আইআরজিসিরি গোয়েন্দা প্রধান মোহাম্মদ কাজেমি এবং তার সহকারী হাসান মোহাকিক নিহত হয়েছেন। এছাড়া মোহসেন বাঘারি নামে আইআরজিসির আরো একজন জেনারেল নিহত হয়েছেন। এর প্রতিশোধ নিতে রবিবার রাতে ইসরায়েলে ৫০টি ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ও শতাধিক ড্রোন ছুড়েছে ইরান।

ইসরায়েলের ফায়ার ও রেসকিউ সার্ভিসের বরাত দিয়ে টাইমস অব ইসরায়েল জানিয়েছে, উত্তর ইসরায়েলে দুটি এবং হাইফায় একটি আবাসিক ভবনে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র সরাসরি আঘাত হানার খবর পেয়েছে তারা।

ইসরায়েলি জাতীয় জরুরি সেবা সংস্থা জানিয়েছে, হাইফায় ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে সাতজন আহত হয়েছেন। এছাড়া কিরিয়াত গাটের কাছে দক্ষিণাঞ্চলীয় একটি শহরে একজন আহত হয়েছেন।

এ ঘটনায় ইসরায়েলি সেনাপ্রধান ইয়াল জামির ইরানের ওপর আক্রমণ আরো তীব্র করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। একটি বিবৃতি জারি করে ইসরায়েরি সেনাপ্রধান বলেছেন, “আমরা আমাদের অভিযান তীব্রতর করে যাব এবং এটি করে, আগামী বছরগুলোতে আমাদের নিরাপত্তা জোরদার করব। আমরা জানতাম এর একটি মূল্য দিতে হবে এবং এটিই বোঝায় যে, আমরা কেন এখনই পদক্ষেপ নিয়েছি, তা অনেক দেরি হওয়ার আগেই।”

ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, শুক্রবার থেকে ইসরায়েলি হামলায় ২২৪ জন নিহত এবং ৯০০ জন আহত হয়েছেন।

ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় কমপক্ষে ১৩ জন নিহত এবং ৩৭০ জনেরও বেশি আহত হয়েছেন।

ঢাকা/ফিরোজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ