শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সময়মতো সেবা না পাওয়া নিয়ে যাত্রীদের ক্ষোভ ছিল দীর্ঘদিন থেকেই। সবচেয়ে বেশি হয়রানির শিকার হন প্রবাসী বাংলাদেশিরা। অনেক সময় বন্দরের কর্মী ও নিরাপত্তারক্ষীদের সঙ্গে তাঁদের অপ্রীতিকর ঘটনাও ঘটেছে।

এই প্রেক্ষাপটে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর বিমানবন্দরে যাত্রীদের সেবা নিশ্চিত করতে বেশ কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো প্রবাসী লাউঞ্জ প্রতিষ্ঠা। আগে কেবল ভিআইপিদের জন্য আলাদা লাউঞ্জ ছিল। প্রবাসী কর্মীদের জন্য আলাদা লাউঞ্জ চালু করায় তাঁরা সেখানে বিশ্রাম নিতে ও স্বল্প খরচে খাবার কিনতে পারছেন। এটা নিশ্চয়ই ইতিবাচক দিক।

প্রথম আলোর খবর থেকে জানা যায়, শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্রতিদিন গড়ে ১৫০টি ফ্লাইট ওঠা–নামা করে। যাত্রীসংখ্যা ২৮ হাজারের বেশি। এটা বিরাট কর্মযজ্ঞ। কিন্তু সেখানে যে অবকাঠামো ও কর্মী আছেন, তা যথেষ্ট নয়। তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণ করা হলেও এটি চালু হতে আরও কয়েক মাস লাগবে।

তৃতীয় টার্মিনাল চালু হলে সার্বিকভাবে বিমানবন্দরে যাত্রীসেবার মান বাড়বে আশা করা যায়। কিন্তু সেটি না হওয়া পর্যন্ত যাত্রীরা যাতে হয়রানি ও ভোগান্তির শিকার না হন, সে বিষয়ে কর্তৃপক্ষকে নজর দিতে হবে। লাগেজ পেতে বিলম্ব হওয়া নিয়ে যাত্রীদের বড় অভিযোগ আছে। কখনো কখনো এক–দুই ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়। আবার কোনো কোনো লাগেজ কাটা–ছেঁড়া পাওয়া যায় বলেও মাঝেমধ্যে অভিযোগ পাওয়া যায়। দূর দেশ থেকে এসে যাত্রীদের যদি লাগেজের জন্য দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয়, তা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক।

সাম্প্রতিককালে পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে বলে যাত্রীরা জানিয়েছেন। ২৪ সেপ্টেম্বর আবুধাবি থেকে ঢাকায় আসা একজন যাত্রী ১৫ মিনিটে লাগেজ পেয়েছেন। আবার আবুধাবিতে ফিরে যেতে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তার ইমিগ্রেশন প্রক্রিয়া ১০ মিনিটে শেষ হয়েছে বলেও তিনি জানিয়েছেন। তবে বিমানবন্দরের ই-গেট পুরোপুরি কার্যকর না হওয়া, নির্বিঘ্নে ওয়াই–ফাই সেবা না পাওয়া নিয়ে অসন্তোষও আছে।

ইমিগ্রেশন পুলিশের জনবল–স্বল্পতা, সরঞ্জামাদির ঘাটতির কারণে যাত্রীদের ইমিগ্রেশন সম্পন্ন করতে বিলম্ব হওয়ার অভিযোগ ছিল দীর্ঘদিনের। সাম্প্রতিককালে বেশ কিছু উদ্যোগের কারণে ইমিগ্রেশন সম্পন্ন করার সময় কমে এসেছে। ইমিগ্রেশনের ডেস্ক অফিসারদের দায়িত্ব বণ্টনসহ বেশ কিছু কার্যক্রমে অটোমেশন আনা হয়েছে। পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) বিশেষ পুলিশ সুপার (ইমিগ্রেশন অপারেশনস) এ কে এম আক্তারুজ্জামান প্রথম আলোকে জানিয়েছেন, আমরা ইমিগ্রেশন কার্যক্রমসহ পুরো কার্যক্রম পেপারলেস (কাগজবিহীন) করতে চাই। এর মাধ্যমে ইমিগ্রেশনের কার্যক্রম আরও দ্রুততর, গতিশীল ও নিরাপদ হবে।

করতে চাওয়া ও বাস্তবতার মধ্যে যে বিরাট ফারাক আছে, সেটা পূরণ করতে হবে তাদেরই। বর্তমানে বিমানবন্দরে আগমনী ও বহির্গমনে ১২টি করে ২৪টি এবং দুটি ভিআইপি ই-গেটসহ মোট ২৬টি ই-গেট আছে। ই-পাসপোর্টধারী যাত্রীর ইমিগ্রেশন–প্রক্রিয়া স্বয়ংক্রিয়ভাবে ১৮ সেকেন্ডে শেষ করতে পারার কথা ছিল। যদিও সরেজমিনে বেশির ভাগ গেট অকার্যকর দেখা গেছে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে যাত্রীরা যাতে সেবা পান, সে জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক ই–গেট অবশ্যই সচল করতে হবে। এতে সেবার মান বাড়বে।

যে বিমানবন্দর দিয়ে দেশের ৯০ শতাংশ যাত্রী আসা–যাওয়া করেন, সেই বিমানবন্দরের গতি বাড়ানো ও যাত্রী হয়রানি কমানোর বিকল্প নেই। প্রতিবছর যাত্রীসংখ্যা বাড়ছে। সে ক্ষেত্রে ইমিগ্রেশন পুলিশের সংখ্যা এবং অন্যান্য সুবিধা বাড়ানোও সময়ের দাবি বলে মনে করি।

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

‘রাজশাহীর “চাঁদাবাজদের” তালিকায় উল্লেখিত ৬ ব্যক্তি জামায়াতের জনশক্তি নয়’

রাজশাহীতে ‘চাঁদাবাজদের’ তালিকায় জামায়াতে ইসলামীর কয়েকজন নেতা-কর্মীর নাম আসায় প্রতিবাদ জানিয়েছে দলটি। আজ মঙ্গলবার দলটির রাজশাহী মহানগরীর আমির কেরামত আলী ও সেক্রেটারি ইমাজ উদ্দিন মণ্ডলের এক যৌথ বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়। বিবৃতিটি পাঠিয়েছেন মহানগরীর সহকারী সেক্রেটারি শাহাদৎ হোসাইন।

সম্প্রতি রাজশাহীর ‘চাঁদাবাজ’ হিসেবে ১২৩ জনের একটি তালিকা বিভিন্ন মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এটি পুলিশের নাকি সরকারের অন্য কোনো সংস্থার তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। এতে ‘চাঁদাবাজ’ হিসেবে ১২৩ জনের নাম উল্লেখ করা হয়। ওই তালিকার ৬ জনের নামের পাশে জামায়াত সংশ্লিষ্টতার কথা উল্লেখ করা হয়। পরে ওই তালিকা নিয়ে গতকাল বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়। পরবর্তী সময়ে তালিকাটি ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও।

আরও পড়ুনরাজশাহীতে ১২৩ ‘চাঁদাবাজের’ তালিকা নিয়ে তোলপাড়, আছেন বিএনপি–জামায়াতের ৫০ জন২৮ জুলাই ২০২৫

জামায়াতের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সম্প্রতি ফেসবুকসহ কিছু অনলাইন পোর্টালে রাজশাহীর ১২৩ জন চাঁদাবাজ শীর্ষক তালিকায় ৬ জনের নামের পাশে জামায়াতকর্মী হিসেবে উল্লেখ আছে। এসব মিথ্যা তথ্য পরিবেশন করায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানো হচ্ছে। ১২৩ জন চাঁদাবাজের এই কাল্পনিক তালিকা কতটুকু সঠিক ও নির্ভরযোগ্য—সেটি নিয়েও প্রশ্ন আছে। কারণ, তালিকাটি কারা তৈরি করেছেন, সেটির উল্লেখ নেই।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও এই তালিকার ব্যাপারে কোনো তথ্য দিতে পারেনি। মূলত জামায়াতে ইসলামীর ভাবমর্যাদা ক্ষুণ্ন করার অসৎ উদ্দেশ্যেই কোনো কুচক্রী মহল এই অপপ্রচার চালিয়েছে। তালিকায় যাঁদের নামের পাশে জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার কথা উল্লেখ করা হয়েছে, সেখানে দলটির কোনো জনশক্তির নাম, পিতা ও ঠিকানার সঙ্গে মিল নেই। তাঁরা জামায়াতে ইসলামী রাজশাহী মহানগরীর কোনো পর্যায়ের জনশক্তিও নন। জামায়াতে ইসলামীর কোনো জনশক্তি চাঁদাবাজি করে না এবং কাউকে তা করতেও দেওয়া হবে না।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • কোরিয়ান ভাষা শিক্ষা কোর্সে ভর্তি, ফি এক হাজার টাকা
  • ‘রাজশাহীর “চাঁদাবাজদের” তালিকায় উল্লেখিত ৬ ব্যক্তি জামায়াতের জনশক্তি নয়’