যাত্রীসেবা বাড়াতে দক্ষ জনশক্তি প্রয়োজন
Published: 12th, March 2025 GMT
শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সময়মতো সেবা না পাওয়া নিয়ে যাত্রীদের ক্ষোভ ছিল দীর্ঘদিন থেকেই। সবচেয়ে বেশি হয়রানির শিকার হন প্রবাসী বাংলাদেশিরা। অনেক সময় বন্দরের কর্মী ও নিরাপত্তারক্ষীদের সঙ্গে তাঁদের অপ্রীতিকর ঘটনাও ঘটেছে।
এই প্রেক্ষাপটে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর বিমানবন্দরে যাত্রীদের সেবা নিশ্চিত করতে বেশ কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো প্রবাসী লাউঞ্জ প্রতিষ্ঠা। আগে কেবল ভিআইপিদের জন্য আলাদা লাউঞ্জ ছিল। প্রবাসী কর্মীদের জন্য আলাদা লাউঞ্জ চালু করায় তাঁরা সেখানে বিশ্রাম নিতে ও স্বল্প খরচে খাবার কিনতে পারছেন। এটা নিশ্চয়ই ইতিবাচক দিক।
প্রথম আলোর খবর থেকে জানা যায়, শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্রতিদিন গড়ে ১৫০টি ফ্লাইট ওঠা–নামা করে। যাত্রীসংখ্যা ২৮ হাজারের বেশি। এটা বিরাট কর্মযজ্ঞ। কিন্তু সেখানে যে অবকাঠামো ও কর্মী আছেন, তা যথেষ্ট নয়। তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণ করা হলেও এটি চালু হতে আরও কয়েক মাস লাগবে।
তৃতীয় টার্মিনাল চালু হলে সার্বিকভাবে বিমানবন্দরে যাত্রীসেবার মান বাড়বে আশা করা যায়। কিন্তু সেটি না হওয়া পর্যন্ত যাত্রীরা যাতে হয়রানি ও ভোগান্তির শিকার না হন, সে বিষয়ে কর্তৃপক্ষকে নজর দিতে হবে। লাগেজ পেতে বিলম্ব হওয়া নিয়ে যাত্রীদের বড় অভিযোগ আছে। কখনো কখনো এক–দুই ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়। আবার কোনো কোনো লাগেজ কাটা–ছেঁড়া পাওয়া যায় বলেও মাঝেমধ্যে অভিযোগ পাওয়া যায়। দূর দেশ থেকে এসে যাত্রীদের যদি লাগেজের জন্য দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয়, তা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক।
সাম্প্রতিককালে পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে বলে যাত্রীরা জানিয়েছেন। ২৪ সেপ্টেম্বর আবুধাবি থেকে ঢাকায় আসা একজন যাত্রী ১৫ মিনিটে লাগেজ পেয়েছেন। আবার আবুধাবিতে ফিরে যেতে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তার ইমিগ্রেশন প্রক্রিয়া ১০ মিনিটে শেষ হয়েছে বলেও তিনি জানিয়েছেন। তবে বিমানবন্দরের ই-গেট পুরোপুরি কার্যকর না হওয়া, নির্বিঘ্নে ওয়াই–ফাই সেবা না পাওয়া নিয়ে অসন্তোষও আছে।
ইমিগ্রেশন পুলিশের জনবল–স্বল্পতা, সরঞ্জামাদির ঘাটতির কারণে যাত্রীদের ইমিগ্রেশন সম্পন্ন করতে বিলম্ব হওয়ার অভিযোগ ছিল দীর্ঘদিনের। সাম্প্রতিককালে বেশ কিছু উদ্যোগের কারণে ইমিগ্রেশন সম্পন্ন করার সময় কমে এসেছে। ইমিগ্রেশনের ডেস্ক অফিসারদের দায়িত্ব বণ্টনসহ বেশ কিছু কার্যক্রমে অটোমেশন আনা হয়েছে। পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) বিশেষ পুলিশ সুপার (ইমিগ্রেশন অপারেশনস) এ কে এম আক্তারুজ্জামান প্রথম আলোকে জানিয়েছেন, আমরা ইমিগ্রেশন কার্যক্রমসহ পুরো কার্যক্রম পেপারলেস (কাগজবিহীন) করতে চাই। এর মাধ্যমে ইমিগ্রেশনের কার্যক্রম আরও দ্রুততর, গতিশীল ও নিরাপদ হবে।
করতে চাওয়া ও বাস্তবতার মধ্যে যে বিরাট ফারাক আছে, সেটা পূরণ করতে হবে তাদেরই। বর্তমানে বিমানবন্দরে আগমনী ও বহির্গমনে ১২টি করে ২৪টি এবং দুটি ভিআইপি ই-গেটসহ মোট ২৬টি ই-গেট আছে। ই-পাসপোর্টধারী যাত্রীর ইমিগ্রেশন–প্রক্রিয়া স্বয়ংক্রিয়ভাবে ১৮ সেকেন্ডে শেষ করতে পারার কথা ছিল। যদিও সরেজমিনে বেশির ভাগ গেট অকার্যকর দেখা গেছে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে যাত্রীরা যাতে সেবা পান, সে জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক ই–গেট অবশ্যই সচল করতে হবে। এতে সেবার মান বাড়বে।
যে বিমানবন্দর দিয়ে দেশের ৯০ শতাংশ যাত্রী আসা–যাওয়া করেন, সেই বিমানবন্দরের গতি বাড়ানো ও যাত্রী হয়রানি কমানোর বিকল্প নেই। প্রতিবছর যাত্রীসংখ্যা বাড়ছে। সে ক্ষেত্রে ইমিগ্রেশন পুলিশের সংখ্যা এবং অন্যান্য সুবিধা বাড়ানোও সময়ের দাবি বলে মনে করি।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
জাপানে জনশক্তি রপ্তানি বাড়াতে একগুচ্ছ সিদ্ধান্ত সরকারের
জাপানে জনশক্তি প্রেরণের বিষয়ে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অধীনে গঠিত ‘জাপান সেল’ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
মন্ত্রণালয় থেকে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে প্রেরিত এক চিঠিতে জানানো হয়, গত ৩ সেপ্টেম্বর প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিক বিষয় সংক্রান্ত বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত তৃতীয় সভায় এ সব সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। খবর বাসসের।
আরো পড়ুন:
বাংলাদেশে জাপানের সহযোগিতা বাড়াতে প্রধান উপদেষ্টার আহ্বান
প্রবাসীদের রেমিট্যান্সেই বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়িয়েছে: প্রধান উপদেষ্টা
সভায় বলা হয়, জাপান সেলের কার্যক্রমকে জনগণের কাছে তুলে ধরতে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সেক্রেটারির মাধ্যমে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার চালানো হবে। ফেসবুক পোস্টে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল এবং জাপানে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূতের উদ্ধৃতি প্রকাশ করা হবে, যা প্রধান উপদেষ্টার অফিসিয়াল পেজে প্রচারিত হবে।
মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, জাপান বাংলাদেশের জন্য একটি সম্ভাবনাময় শ্রমবাজার। জাপান টাইমসের তথ্য অনুযায়ী, ২০৪০ সালের মধ্যে দেশটিতে ১ কোটি ১০ লাখ কর্মক্ষম মানুষের ঘাটতি দেখা দিতে পারে। বিদেশি কর্মী নিয়োগের জন্য বিভিন্ন ভিসা ক্যাটাগরি খোলা রাখা হয়েছে।প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের অনুপ্রেরণায় জাপানে কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়াতে ন্যাশনাল বিজনেস সাপোর্ট কো-অপারেটিভ ফেডারেশন (এনবিসিসি), জাপান-বাংলা ব্রিজ রিক্রুটিং এজেন্সি লিমিটেড (জেবিবিআরএ) এবং কাইকোম ড্রিম স্ট্রিট বিডি কোম্পানি লিমিটেডের (কেডিএস) সঙ্গে চুক্তি হয়েছে। এসব চুক্তির মাধ্যমে প্রশিক্ষণ ও কর্মসংস্থান নিশ্চিতে পূর্ণাঙ্গ পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে।
শ্রমবাজার সম্প্রসারণে ‘জাপান ডেস্ক’ চালু করা হয়েছে। এর মাধ্যমে শ্রমবাজারের চাহিদা যাচাই, কর্মসংস্থানের সুযোগ চিহ্নিত ও প্রচারণা, কর্মীদের ভাষা প্রশিক্ষণ, ডিজিটাল টেস্ট, তথ্যসংগ্রহ এবং জাপানসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সমন্বয়ের কাজ করা হবে।
ড. আসিফ নজরুল বলেন, “জনশক্তি রপ্তানির মূল লক্ষ্য হলো কর্মসংস্থান বৃদ্ধি ও দারিদ্র্য বিমোচন। জাপান ডেস্কের মাধ্যমে এই লক্ষ্য অর্জন সম্ভব হবে।”
বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত জানান, জাপান সরকার এখন দক্ষতা ও মানসম্পন্ন কর্মী নিয়োগে জোর দিচ্ছে। এজন্য জাপানি ভাষা প্রশিক্ষণ ও টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টারগুলোতে নতুন উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। এছাড়া কেডিএস নার্সিং সেক্টরে দক্ষ কর্মী পাঠাতে প্রশিক্ষণ ক্যাম্পাস গড়ে তুলবে।
ইতিমধ্যে একাধিক উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে— জাপান সেলের ওয়েবসাইট ও ফেসবুক পেজ চালু, যোগাযোগের জন্য বিশেষ ই-মেইল খোলা, জাপানি ভাষা শেখার মোবাইল অ্যাপস প্রচার, কর্মপ্রার্থীদের জন্য শিক্ষাঋণ চালু, অতিরিক্ত পরীক্ষাকেন্দ্র স্থাপন, অনলাইন ভাষা প্রশিক্ষণ কার্যক্রম শুরু, ভাষা পরীক্ষার্থীদের তথ্যভাণ্ডার তৈরি এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তত্ত্বাবধানে তদারকি কমিটি গঠন। এছাড়া ভাষা শিক্ষকদের সম্মানি বৃদ্ধি, ভিসা আবেদন প্রক্রিয়ার সমস্যা সমাধান এবং জাপানের সহায়তায় ১ লাখ কর্মী প্রশিক্ষণের প্রকল্প প্রণয়ন করা হয়েছে।
বর্তমানে স্পেসিফায়েড স্কিলড ওয়ার্কার (এসএসডব্লিউ) ক্যাটাগরির ছয়টি খাতে—কৃষি, নির্মাণ, কেয়ার ওয়ার্কার, বিল্ডিং ক্লিনিং, অটোমোবাইল পরিবহন ও শিল্প খাতে বাংলাদেশি কর্মী নিয়োগ কার্যক্রম চলছে।ভবিষ্যতে ১৬টি খাতেই এ সুযোগ বাড়ানো হবে। ২০২৭ সাল থেকে টেকনিক্যাল ইন্টার্ন ট্রেনিং প্রোগ্রামের (টিআইটিপি) পরিবর্তে এমপ্লয়মেন্ট ফর স্কিল ডেভেলপমেন্ট (ইএসডি) চালু হবে। বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ পর্যায়ে জাপানি ভাষা প্রশিক্ষণ কার্যক্রমও সম্প্রসারণ করা হচ্ছে এবং জাপান ফাউন্ডেশনের সহযোগিতায় নতুন প্রশিক্ষক পাঠানো হবে।
অন্যদিকে, আগামী নভেম্বর মাসে টোকিও ও নাগোইয়াতে বাংলাদেশি প্রেরণকারী প্রতিষ্ঠান ও জাপানি নিয়োগকর্তাদের মধ্যে ‘ম্যাচ মেকিং ইভেন্ট’ অনুষ্ঠিত হবে।এতে বাংলাদেশ থেকে জাপানে কর্মী নিয়োগের নতুন সুযোগ তৈরি হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
ঢাকা/এসবি