ময়মনসিংহে নারী নির্যাতন প্রতিরোধের মিছিলে হামলা
Published: 12th, March 2025 GMT
ময়মনসিংহে নারী নির্যাতন প্রতিরোধের মিছিলে হামলার ঘটনা ঘটেছে।
বুধবার (১২ মার্চ) বিকেলে বাম গণতান্ত্রিক জোটের ধর্ষণ, নারী নির্যাতনের বিচার, আইনশৃঙ্খলার উন্নয়ন, দ্রব্যমূল্যের ঊর্দ্ধগতি রোধের মিছিলে এ হামলার ঘটনা ঘটে। এতে বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন।
কেন্দ্র ঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে বিকেলে নগরীর মালগুদাম থেকে মিছিল শুরু করে বাম গণতান্ত্রিক জোট ময়মনসিংহ জেলার নেতাকর্মীরা। মিছিল গাঙ্গিনাপাড়ে ঢোকার পরই বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একটি মিছিল বাম জোটের মিছিলের উপর চড়াও হওয়ার চেষ্টা করে। তারা ‘শাহবাগী গোসল কর’ সহ বিভিন্ন উস্কানীমূলক স্লোগান দিতে থাকে।
এর কিছুক্ষণ পর বৈষম্য বিরোধী ছাত্রদের সাথে যুক্ত হয় ইসলামি ছাত্র আন্দোলনের একটা মিছিল। এরপর পরই তারা নতুন বাজার মফিজউদ্দিন প্লাজার সামনে বাম জোটের নেতাকর্মীদের উপর যৌথভাবে হামলা করে।
হামলায় আহত হন জুলাই গণঅভ্যুত্থানের অন্যতম সংগঠক ও সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট জেলার আহ্বায়ক আরিফুল হাসান, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট বাকৃবি শাখার সহ-সভাপতি অর্ণব দাস, আনন্দমোহন কলেজের যুগ্ম আহ্বায়ক জুঁইসহ বাম জোটের সিনিয়র নেতৃবৃন্দ।
হামলা পরবর্তীতে বাম জোটের নেতাকর্মীরা আবারও মিছিল সংগঠিত করে। মিছিল পরবর্তী সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বাম গণতান্ত্রিক জোটের সমন্বয়ক ও বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক শেখ বাহার মজুমদার, সিপিবি জেলা সভাপতি অ্যাডভোকেট এমদাদুল হক মিল্লাত, বাসদ (মার্কসবাদী) সমন্বয়ক শেখর রায়, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির আহ্বায়ক আজহারুল ইসলাম আজাদ, বাসদ মহানগর কমিটির সদস্য অপূর্ব চন্দ্র দেবনাথ ও অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।
বাম গণতান্ত্রিক জোটের নেতৃবৃন্দ এই ন্যাক্কারজনক হামলার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, ‘‘জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর একটা গণতান্ত্রিক প্রতিবাদ মিছিলে বর্বরোচিত হামলা আবারও ফ্যাসিবাদী সংস্কৃতির লক্ষণ। সারাদেশে খুন, ধর্ষণ, নিপীড়নের বিরুদ্ধে সাধারণ ছাত্র জনতা যখন আন্দোলন করছে, সেই আন্দোলনকে ‘শাহবাগী’ ট্যাগ দিয়ে দমনের চেষ্টা করছে কিছু সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী। তারই অংশ হিসেবে আজকে বাম জোটের নেতাকর্মীদের উপর এই ন্যাক্কারজনক হামলা করল। অবিলম্বে এই হামলার সাথে জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাই।”
ময়মনসিংহ মহানগর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্য সচিব আল নূর মোহাম্মদ আয়াস বলেন, “শাহবাগী ইস্যুতে আমাদের মিছিলটি টাউন হল থেকে শুরু হয়ে গাঙ্গিনারপাড় গেলে বাম জোটের নেতাকর্মীরা কটুক্তি করতে থাকে। পরে আমরা তাদের ধাওয়া করি।”
কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শফিকুল ইসলাম খান বলেন, “বাম গণতান্ত্রিক জোট এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীদের মধ্যে ধাক্কাধাক্কির ঘটনা ঘটেছে। এতে কয়েকজন সামান্য আহত হয়েছে। তারা প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছে।”
ঢাকা/মিলন/এস
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব ম গণত ন ত র ক জ ট ব ম জ ট র ন ত কর ম
এছাড়াও পড়ুন:
‘রক্ত দিয়ে যে আনন্দ পাওয়া যায়, তা আর অন্য কিছুতেই নেই’
ময়মনসিংহ সদর উপজেলার চর আনন্দিপুর গ্রামের মামুন মিয়া (২২) ছোটবেলা থেকে থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত। প্রায় প্রতি মাসেই তাঁর একাধিক ব্যাগ রক্তের প্রয়োজন হয়। কিন্তু দরিদ্র পরিবারের পক্ষে এক সময় রক্তের জোগাড় বেশ কষ্টসাধ্যই হয়ে ওঠে। মানুষ বিনা স্বার্থে রক্ত দিতে চাইতেন না। ২০১৬ সাল থেকে পরিবারটিকে রক্তের জন্য আর কাউকে অনুরোধ করতে হচ্ছে না। মামুনের পাশে দাঁড়িয়েছে জেলার একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন।
সম্প্রতি মামুনের মা মাজেদা বেগম অতীতের কথা স্মরণ করে বলেন, ‘পোলার রক্তের লাইগ্গা মাইনষের দ্বারে দ্বারে ঘুরছি। কেউ রক্ত দিতে চাইতো না। মানুষ টাকা ভিক্ষা চায়, আর আমি মানুষের কাছে আমার পোলার জন্য রক্ত ভিক্ষা করছি। শইল্যে রক্ত না ভরলে আমার পোলা মইরা যাইতো।’
দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত ব্যক্তি, জরুরি বা সিজারিয়ান অস্ত্রোপচার, ক্যানসার, থ্যালাসেমিয়া কিংবা কিডনি আক্রান্ত রোগীর জন্য প্রায়ই প্রয়োজন হয় রক্তের। আত্মীয়স্বজন বা চেনাজানা কারও কাছে প্রয়োজনমাফিক রক্ত না পেয়ে অনেকেই ছুটে যান স্বেচ্ছাসেবী বিভিন্ন সংগঠনের কাছে। খবর পেয়ে স্বেচ্ছাসেবীরা দ্রুততার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট রক্তদাতাকে খুঁজে দেওয়ার চেষ্টা করেন। আর মানুষের জীবন বাঁচানোর মতো মহৎ এই কাজেই তাঁদের আনন্দ বলে জানান ময়মনসিংহের ‘ব্রহ্মপুত্র ব্লাড কল্যাণ সোসাইটি’ নামের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের কয়েকজন কর্মী।
শুধু রক্তদান নয়, সমাজ পরিবর্তনে নানা কাজও করে চলেছে তরুণদের নিয়ে গঠিত স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনটি। ২০১৮ সালের ১৯ আগস্ট এটি সমাজসেবা অধিদপ্তর থেকে নিবন্ধন পায়। তবে এর দু-এক বছর আগেই সংগঠনটির কার্যক্রম শুরু হয় বলে জানান সংগঠনটির মূল পরিকল্পনাকারী মমিনুর রহমান। তাঁর বাড়ি ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার মাইজবাগ এলাকায়।
সম্প্রতি মমিনুর রহমান বলেন, ‘শুধু রক্তের অভাবে একটি মানুষের জীবন বিপন্ন হতে পারে না, এই চিন্তা থেকে কাজ শুরু করি। ময়মনসিংহে রক্তদান নিয়ে কাজ করে—এমন কোনো সংগঠন ছিল না। তখন স্থানীয়ভাবে মানুষকে রক্তদানে উদ্বুদ্ধ করার চেষ্টা করি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ক্যাম্পেইন করে ২০১৬ সালের ১৪ অক্টোবর ৩৯ জনকে নিয়ে প্রথম সভা করি। পরে সেখান থেকে রক্তদানের এই সংগঠন করার বিষয়টি চূড়ান্ত হয়। যেহেতু ব্রহ্মপুত্র নদের পাড়ে বসে ওই সভা হয়েছিল, তাই সংগঠনটির নাম দেওয়া হয়েছিল ‘ব্রহ্মপুত্র ব্লাড কল্যাণ সোসাইটি’। ‘আর্তের মুখে হাসি ফোটানোই হয় যদি মানবতা, তবে তার শ্রেষ্ঠ সেবক হলো প্রতিটি রক্তদাতা’, এই স্লোগান সামনে রেখে শুরু হয় এর যাত্রা।
সংগঠনটি থেকে জানানো হয়েছে, রক্তদাতা তরুণেরা বিভিন্ন স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। সংগঠনটির একটি কমিটি ও ফেসবুক পেজ আছে। এর মাধ্যমে কিংবা মুঠোফোনে খবর পেয়েই রক্ত দিতে ছুটে যান তরুণেরা। তরুণদের তৎপরতায় দিন দিন সংগঠনটির পরিসর বাড়ছে। বর্তমানে এই সংগঠনের প্রায় ৫০ হাজার সদস্য আছেন, যাঁরা নিজেরা রক্তদান করেন এবং রক্তদানে অন্য তরুণদের উৎসাহিত করেন। ২০ বারের বেশি রক্ত দিয়েছেন, এমন রক্তদাতা আছেন ৮০ জন, যার ৬০ জনই শিক্ষার্থী। শুধু ময়মনসিংহ শহরেই ইতিমধ্যে ৩৫ হাজার ব্যাগ রক্ত দিয়েছেন সংগঠনটির তরুণেরা। এর মধ্যে প্রায় ২৩ হাজার ব্যাগ রক্ত দেওয়া হয়েছে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের মধ্যে।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী জান্নাতুল ফেরদৌস ২০১৮ সাল থেকে ব্রহ্মপুত্র ব্লাড কল্যাণ সোসাইটির সঙ্গে যুক্ত আছেন। এ পর্যন্ত তিনি ২৬ বার রক্ত দিয়েছেন। অন্যদের উৎসাহী করতে তিনি বলেন, ‘মুমূর্ষু অবস্থায় মানুষ রক্তের কারণে মারা যাবে, এটি কখনো হতে পারে না। তাই অসুস্থ জটিল রোগীর খবর পেলেই রক্ত দিতে যাই। রক্ত দিয়ে যে আনন্দ পাওয়া যায়, তা আর অন্য কিছুতেই নেই।’
সংগঠনটির বর্তমান সভাপতি আবিদুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক সুমন রাহাত। স্নাতকোত্তরে অধ্যয়নরত আবিদুর রহমান বলেন, ‘যাঁদের রক্তের প্রয়োজন, তাঁরা আমাদের ফেসবুক পেজে যোগাযোগ করেন। অথবা রক্তের প্রয়োজন ফেসবুকে কারও স্ট্যাটাস দেখলেই আমরা নিজে থেকে যোগাযোগ করে রক্তের ব্যবস্থা করে যাচ্ছি। আমরা রক্তদানের মাধ্যমে অন্যের জীবন বাঁচিয়ে আনন্দিত হই। আমরা মানুষ বাঁচানোর এই আনন্দ সারা দেশে ছড়িয়ে দিতে চাই। গ্রামে, পাড়ায় মহল্লায় রক্তের জন্য মানুষ যেন না মরে, এটিই আমাদের লক্ষ্য।’