আমাদের কাজ করতে দেন, আক্রমণ করবেন না: দেশবাসীর প্রতি আইজিপি
Published: 13th, March 2025 GMT
পুলিশের ওপর আক্রমণ না করতে দেশবাসীর কাছে অনুরোধ জানিয়েছেন মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম। তিনি বলেছেন, ‘আমাদের কাজ করতে দেন, অনুগ্রহ করে আমাদের ওপর আক্রমণ করবেন না। আমরা এই সমাজের, আমরা এই দেশেরই নাগরিক। কীভাবে সমাজে স্থিরতা আসবে, যদি আমরা কাজ না করতে পারি। আমরা কাজ করতে না পারলে সুষ্ঠু নির্বাচনের দিকে কীভাবে আগাব।’
গাজীপুরের ভোগরা বাইপাস মোগরখাল এলাকায় শিল্প পুলিশ-২–এর কার্যালয়ে বিশেষ কল্যাণ সভায় আজ বৃহস্পতিবার প্রধান অতিথির বক্তব্যে আইজিপি এসব কথা বলেন। সভায় সভাপতিত্ব করেন শিল্প পুলিশের আইজি ছিবাগত উল্লাহ। শিল্প পুলিশ সদর দপ্তর আয়োজিত সভায় উপস্থিত ছিলেন, ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি এ কে এম আওলাদ হোসেন, গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার নাজমুল করিম খান, শিল্প পুলিশের ডিআইজি ইসরাইল হাওলাদার, গাজীপুর শিল্প পুলিশের পুলিশ সুপার এ কে এম জহিরুল ইসলাম প্রমুখ।
শিল্প কারখানার শ্রমিকদের কোনো প্রকার গুজবে কান দিতে নিষেধ করে আইজিপি বাহারুল আলম বলেন, গুজব ছড়িয়ে কারখানা ভাঙচুর কার্যক্রমে অংশ নিয়ে যাঁরা এসব ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকবেন, তাঁদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। কোনোভাবেই রাস্তা অবরোধ করার মতো জনদুর্ভোগ সৃষ্টিকারী কোনো কাজকর্ম করা যাবে না।
বাহারুল আলম জানান, শ্রমিকদের ফেব্রুয়ারি মাসের বেতন–ভাতা ও ঈদ বোনাস ২০ মার্চের মধ্যে দেওয়ার পূর্ববর্তী প্রতিশ্রুতি মোতাবেক সংশ্লিষ্ট মালিকদের সঙ্গে আলোচনা অব্যাহত রয়েছে। ঈদের ছুটিতে শ্রমজীবী মানুষ যাতে নির্বিঘ্নে বাড়ি যেতে পারেন, সে জন্য শিল্প, জেলা ও মহানগর পুলিশ নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। দাবি আদায়ের জন্য শ্রমিকদের রাস্তা না আটকানো এবং জনগণের উৎসব আয়োজনে বিঘ্ন হয়ে না দাঁড়াতে অনুরোধ করেন। এসব কাজের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত পদক্ষেপ নেওয়ার ঘোষণা দেন তিনি।
জুলাই অভ্যুত্থানে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে আইজিপি বলেন, ‘৫ আগস্টের আগে আমাদের কিছু সিনিয়র অফিসার, মোস্টলি সিনিয়ার অফিসার অতি উৎসাহ দেখিয়েছেন। আমি আওয়ামী লীগ-বিএনপি কিছু বুঝি না। কিন্তু ওনাদের রাজনৈতিক আনুগত্যের জন্য পুরো পুলিশ কলঙ্কিত হয়েছে। সারা বিশ্বে এখন বলে যে বাংলাদেশ পুলিশ এত নির্মম কীভাবে হলো? আমিও তো পুলিশ। এই দায়ভারটা আমার ওপরও পড়ে। আমি অবসরে থাকলেও সেই দায়ভারটা আসে। আমার আত্মীয়স্বজন বলেন, “তোমরা কী করো? তোমরা এগুলি কী করছ?” আমাদের যা করার কথা ছিল, আমরা তার কিছুই করি নাই। আমরা মানুষের বিরুদ্ধে গেছি। এটা কিছু লোকের উচ্চ বিলাস, কিছু লোকের অন্ধ এবং অন্যায় আনুগত্যের জন্য এটা হয়েছে।’
আইজিপি বাহারুল আলম আরও বলেন, ‘পুলিশ কাজ করতে যাচ্ছে, আইন প্রয়োগ করতে যাচ্ছে। সেখানে আক্রমণের শিকার হচ্ছে; আসামি ছিনিয়ে নিচ্ছে। ট্রাফিক পুলিশ যখন বলছে, “আপনি উল্টো দিক দিয়ে আসবেন না, আপনি আইন মেনে চলেন।’ সেখানে ট্রাফিক পুলিশের ওপরও চড়াও হচ্ছে। আইন না মানার একটা প্রবণতা চলে আসছে কেন? তারা মনে করছে, পুলিশ জনবিরোধী কাজ করেছে, এখন আমরা আমাদের মতো চলব। পুলিশ লাগবে না, এটা পুরো রং। একটা সভ্য দেশ পুলিশ ছাড়া চলতে পারে না। দেশের মানুষকে বুঝতে হবে, দেশের অপরাধ দমন যদি না করা হয়, শৃঙ্খলা যদি ফিরে না আসে, তাহলে কোনো নাগরিক শান্তিতে থাকতে পারবে না।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব হ র ল আলম ক জ করত আম দ র ক জ কর আইজ প
এছাড়াও পড়ুন:
জাতীয় আইনগত সহায়তা দিবস উদযাপন করলো জেলা লিগ্যাল এইড না’গঞ্জ
বিভিন্ন কর্মসূচীর মধ্য দিয়ে জেলা লিগ্যাল এইড কমিটি নারায়ণগঞ্জ উদযাপন করলো জাতীয় আইনগত সহায়তা দিবস।
সোমবার (২৮ এপ্রিল) দিনের শুরুতেই সকাল সাড়ে ৮টায় জেলা লিগ্যাল এইড কমিটির চেয়ারম্যান এবং সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ, নারায়ণগঞ্জ মোঃ আবু শামীম আজাদ পায়রা ও বেলুন উড়িয়ে এর শুভ সুচনা করেন।
এ সময় জাহিদুল ইসলাম মিঞা, জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও জেলা প্রশাসক, মো, রবিউল ইসলাম, চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, পুলিশ সুপার, ডাঃ এ.এফ.এম. মুশিউর রহমান, সিভিল সার্জন, বিচারকবৃন্দ, জেল সুপার, জেলা সমাজ কল্যাণ বিষয়ক কর্মকর্তা, জেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা, জেলা তথ্য বিষয়ক কর্মকর্তা, আইনজীবি সমিতির সভাপতি, সেক্রেটারীসহ নারায়ণগঞ্জ জেলার আইনজীবিবৃন্দ, সকল আদালতের সহায়ক কর্মচারীবৃন্দসহ সর্বস্তরের জনগণের স্বতঃস্ফুর্ত অংশগ্রহণে এক বর্ণাঢ্য র্যালি অনুষ্ঠিত হয়।
এরপর সকাল ৯টার দিকে লিগ্যাল এইড মেলা উদ্বোধন করা হয়। পরে জেলা জজ আদালত প্রাঙ্গণে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন জনাব মাইমানাহ আক্তার মনি, বিজ্ঞ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, নারায়ণগঞ্জ।
আলোচনা অনুষ্ঠানের শুরুতে জেলা লিগ্যাল এইড অফিসার ও সিনিয়র সহকারী জজ জনাব মোহাম্মদ নুরুল হুদা চৌধুরী, জানুয়ারি-২০২৪ হতে মার্চ- ২০২৫ পর্যন্ত লিগ্যাল এইড অফিসের কার্যক্রমের এক পরিসংখ্যান তুলে ধরেন।
এই সময়ের মধ্যে ৬৫৭ জনকে মামলায় আইনগত সহায়তা প্রদান করা হয়, আইনি পরামর্শ গ্রহীতা ১২০ জন, আপোষ মিমাংসার জন্য ১২১২টি আবেদন প্রাপ্ত হয়ে ৪৯৭টি সফল মিমাংসা হয় এবং চার কোটি চৌষট্টি লাখ সত্তর হাজার চারশত টাকা আদায় করে পক্ষদের মধ্যে প্রদান করা হয়।
আলোচনা সভায় সভাপতি বলেন যারা আর্থিক অস্বচ্ছলতার জন্য ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে তারা লিগ্যাল এইড থেকে উপকৃত হচ্ছে। আজকে এখানে যারা এসেছেন তাদের দায়িত্ব হলো সকলের কাছে সরকারের এই সেবার বিষয়টি পৌছে দেয়া, যাতে করে অসহায়, হতদরিদ্র মানুষজন সহজে আইনি সেবাটা পায়, সেটা নিশ্চিত করতে হবে।
নিলুফা ইয়াসমিন, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট বলেন, যেহেতু আইনের চোখে সবাই সমান তাই সবাইকে ন্যায় বিচার প্রাপ্তিতে লিগ্যাল এইড এর প্রচার এবং প্রসারের জন্য প্রত্যেককে নিজ নিজ জায়গা থেকে কাজ করতে হবে।
মো. রবিউল ইসলাম চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আইনগত সহায়তা দিবসকে আরো মানুষের মধ্যে অধিক প্রচারের জন্য পরামর্শ প্রদান দিয়ে বলেন, দ্বন্দে কোনো আনন্দ নাই, তাই ঝামেলা মিটিয়ে সুন্দর জীবন যাপনের জন্য লিগ্যাল এইড এর সহায়তা নিতে পারে সকল শ্রেণীর মানুষ।
পরবর্তীতে জেলা লিগ্যাল এইড কমিটির চেয়ারম্যান সমাপনী বক্তব্যে বলেন, মানুষ যাতে সহজে, দ্রুত বিচার পায়, দারিদ্রতার কারণে যেন কেউ আইনগত সুবিধা থেকে বঞ্চিত না হয় সে উদ্দেশ্যে লিগ্যাল এইড অফিস নিরবিচ্ছিন্ন কাজ করে চলছে। তিনি মানুষদের আইনগত ভাবে সচেতনতা বৃদ্ধির বিষয়ে গুরুত্ব আরোপ করেন। তার বক্তব্যের মাধ্যমে আলোচনা সভা সমাপ্ত ঘোষণা করা হয়।
এছাড়াও এই দিবসটি জনমানুষের মধ্যে অধিক প্রচার ও প্রসারের জন্য দিনব্যাপী লিগ্যাল এইড মেলার আয়োজন করা হয়। মেলায় অংশগ্রহণ করেন, জেলা আইনজীবী সমিতি, কর্মচারী কল্যান পরিষদ, লিগ্যাল এইড অফিস, স্বাস্থ্য বিভাগ এবং জেলা কারাগার।