লক্ষ্মীপুরে ক্ষমা চাইলেন কান ধরে ওঠবস করানো ব্যবসায়ী নেতা
Published: 13th, March 2025 GMT
লক্ষ্মীপুরে রোজা না রেখে দোকানে খাবার খাওয়ার সময় কয়েকজনকে ওঠবস করানোর ঘটনায় ক্ষমা চেয়েছেন জেলা বণিক সমিতির নেতা আবদুল আজিজ। তবে এ বিষয়ে ভুক্তভোগীরা থানায় কোনো অভিযোগ করেননি।
গতকাল বুধবার রাতে জেলা পুলিশের হস্তক্ষেপে সদর থানা এলাকায় ভুক্তভোগীদের মধ্যে দুজনকে সঙ্গে নিয়ে ক্ষমা চান লক্ষ্মীপুর বণিক সমিতির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আবদুল আজিজ।
আরও পড়ুনলক্ষ্মীপুরে দিনের বেলায় পানাহার করায় লোকজনকে ‘শাস্তি’ দিলেন ব্যবসায়ী নেতা১৭ ঘণ্টা আগেএর আগে রমজান মাসে পানাহার করায় গতকাল দুপুরে লাঠি হাতে ওই খাবার হোটেলে গিয়ে কয়েকজন ব্যক্তিকে কান ধরে ওঠবস করান আবদুল আজিজ। তাঁর নেতৃত্বে শহরের চকবাজার এলাকার দোকানগুলোতে এ অভিযান চালানো হয়।
লক্ষ্মীপুর সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল মোন্নাফ বলেন, ‘কান ধরে ওঠবস করানোর ঘটনায় আজিজকে থানায় ডেকে আনা হয়েছিল। ভুক্তভোগী দুজনকেও এনেছিলাম। কেউ তাঁর বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ দেননি। এ ছাড়া আজিজ নিজেও ক্ষমা চেয়েছেন। এতে তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।’
আবদুল আজিজের ক্ষমা চাওয়ার একটি ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। এতে দেখা যায়, আজিজ ভুক্তভোগী মুনছুরুল হক ও সাজুকে জড়িয়ে ধরে ক্ষমা চাচ্ছেন। এ সময় আবদুল আজিজ বলেন, ‘আমি আসলে যে কাজটি করেছি, এটি অন্যায়, অপরাধ। এটা ধর্মীয় অনুভূতি, সে জন্য এটা আমার করা ঠিক হয়নি। এ জন্য আমি ওনাদের কাছে ক্ষমা চাই। ওনারা যেন আমাকে ক্ষমা করে দেন। আমি এ ধরনের কাজের পুনরাবৃত্তি করব না। এ ধরনের কাজের সঙ্গে জড়িত হব না।’
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
অসংগঠিত জনতার প্রজ্ঞা এবং উচ্ছৃঙ্খল জনতার উন্মত্ততা
আদিতে ছিল উচ্ছৃঙ্খল জনতার ভিড় (মব), আর এই ভিড় ছিল মন্দ। এডওয়ার্ড গিবনের ১৭৭৬ খ্রিষ্টাব্দে রচিত বই ‘ডিক্লাইন অ্যান্ড ফল অব দ্য রোমান এম্পায়ার’-এ হরহামেশাই রোমক ‘উচ্ছৃঙ্খল জনতার ভিড়’ দেখা যায়; এবং প্রায়ই তারা কোনো না কোনো আপসহীন কর্তৃত্ববাদী গলাবাজ নেতার প্ররোচনায় শোরগোল তুলে মুফতে খাবারদাবার আর বিনোদনের (রুটি ও সার্কাস) দাবি জানায়। যদিও শাসনক্ষমতা তাদের হাতে যায় না, কিন্তু শাসন কে করবে না করবে সেটা তারা কখনো-সখনো ঠিক করে দেয়।
গিবন ছিলেন, যাকে বলে, একধরনের রক্ষণশীল র্যাডিক্যাল; খ্রিষ্টধর্ম সম্পর্কে ভীষণ অবজ্ঞা পোষণ করতেন, আর তাঁর গা ঘেঁষাঘেঁষি ছিল মুক্ত চিন্তার অধিকারী এপিকিউরিয়ানিজমের সঙ্গে, অর্থাৎ চতুর্থ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে এথেন্সে বাস করা সেই দার্শনিক এপিকিউরিয়াসের ‘আনন্দ বা সুখই পরম মঙ্গল, এবং সুখ আসে সংযম, সরলতা, বন্ধুত্ব এবং সম্প্রদায় থেকে’, এই মতবাদের অনুসারী ছিলেন তিনি। কিন্তু গিবন আবার সামাজিক অব্যবস্থাকে ভয় পেতেন। উচ্ছৃঙ্খল জনতার ভিড় বলতে তিনি বুঝতেন তাঁর নিজের শহর লন্ডন বা রোমের মতো কোনো বড় শহরের লুম্পেনপ্রলেতারিয়েত তথা শ্রেণিচেতনাহীন নিম্নবর্গীয় লোকজনকে (উল্লেখ্য, ১৭৬৪ খ্রিষ্টাব্দে গিবন রোম সফর করেন এবং সে বছরেরই ১৫ অক্টোবর রোমের বিখ্যাত সাতটি পাহাড়ের একটি ক্যাপিটিলাইন বা ক্যাপিটলের ধ্বংসাবশেষ দেখে তিনি এমনই অভিভূত হয়ে পড়েন যে সেই অভিজ্ঞতাই তাঁকে ’ডিক্লাইন অ্যান্ড ফল অব দ্য রোমান এম্পায়ার’ লেখার অনুপ্রেরণা জোগায়)।
ঊনবিংশ শতকের দ্বিতীয় দশকের পটভূমিতে রচিত চার্লস ডিকেন্সের প্রথম উপন্যাস ‘পিকউইক পেপার্স’-এর নামচরিত্র পিকউইক সাহেবকে যখন জিজ্ঞেস করা হয় যে একটা সাধারণ নির্বাচনের সময় উচ্ছৃঙ্খল জনতার দুটো ভিড় পরস্পরকে লক্ষ করে স্লোগান দিতে থাকলে কী করা উচিত। তখন পিকউইক মহাশয় তাঁর স্বভাবসুলভ প্ররোচনামূলক উত্তরে বলেন, ‘যে দলটা বড় সেটার সঙ্গে গলা মেলানো।’ ধীরে ধীরে উচ্ছৃঙ্খল জনতার ভিড় সম্পর্কে এই আতঙ্কজনক ধারণা বদলে যায়। সে জায়গায় আসে ‘অসংগঠিত জনতার ভিড়’-এর একটা প্রতিচ্ছবি, যে জনতা অধিকাংশ সময়েই ভালো, আর যখন খারাপ তখন তা যেকোনো কিছুর চাইতে কমিক বা মজাদার।
ছবি: সংগৃহীত