গয়নার ব্যবসা করে ভারতের কল্যাণারমণ শতকোটিপতি
Published: 11th, November 2025 GMT
দক্ষিণ ভারতের চেন্নাইয়ের এক ব্যস্ত সড়কে কল্যাণ জুয়েলার্স ইন্ডিয়ার ১ হাজার ৮৬০ বর্গমিটারের মূল বিক্রয়কেন্দ্র। সেখানে সব সময় সোনাপ্রেমী ভারতীয়দের ভিড় লেগেই থাকে। ত্রিশোর্ধ্ব দম্পতি থেকে শুরু করে যুক্তরাষ্ট্রফেরত ভারতীয় প্রবাসী—বিভিন্ন বয়স ও পেশার ক্রেতারা ভিড় করেন ঝকমকে সোনার নেকলেস, চুড়ি, কানের দুল ও আংটির বিপুল সংগ্রহ দেখতে।
বিক্রয়কর্মীরাও ক্রেতাদেরর চাহিদা অনুযায়ী অলংকার দেখাতে ব্যস্ত। এ দোকানে সাধারণ সোনার আংটির দাম ২০০ ডলারের নিচে, যদিও হীরক, রুবি ও পান্নায় খচিত বিয়ের জমকালো গয়নার দাম ৬০ হাজার ডলার পর্যন্ত। এখানেই শেষ নয়, তালাবদ্ধ কাচের শোকেসে রাখা রাজকীয় অলংকারের কিছু সেটের দাম ১ লাখ ২০ হাজার ডলার পর্যন্ত।
সোনার প্রতি ভারতীয়দের আকর্ষণ চিরকালের। দেশটির পরিবারগুলোর হাতে মজুত আছে ৩৪ হাজার ৬০০ টন সোনা। এর দাম প্রায় ৩ লাখ ৮০ হাজার কোটি ডলার (মরগান স্ট্যানলির হিসাব)। এই বিশাল বাজারে বিক্রির হিসেবে কল্যাণ এখন দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম তালিকাভুক্ত খুচরা গয়না বিক্রেতা। সম্প্রতি কয়েক বছরে কোম্পানিটির বেচাকেনা বাড়ছেই। খাঁটি সোনার নিশ্চয়তা তারা দিচ্ছে অনেক আগে থেকেই। এটাই তাদের ব্যবসার মূল শক্তি। ওয়ারবার্গ পিনকাসের মতো ইকুইটি প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগও পেয়েছে তারা।
বাস্তবতা হলো, বিয়ের গয়না বিক্রিতে কল্যাণের খ্যাতি ভারতজুড়েই। গত পাঁচ বছরে কল্যাণের আয় প্রায় দ্বিগুণ বেড়েছে। গত মার্চে শেষ হওয়া অর্থবছরে কোম্পানিটির আয় হয়েছে ২৯০ কোটি ডলার। কর-পরবর্তী মুনাফা বেড়েছে পাঁচ গুণ।এর মধ্যে বিশ্ববাজারে সোনার দাম আউন্সপ্রতি ৪ হাজার ডলার স্পর্শ করেছে। ফলে বেচেকানায় কিছুটা ভাটা তো পড়েছে। গয়না বিক্রেতাদের সামনে এটা নতুন চ্যালেঞ্জ। কীভাবে এ ধাক্কা সামলানো যায়, সেটা নিয়ে তারা চিন্তিত।
কিন্তু কল্যাণের প্রতিষ্ঠাতা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক ৭৮ বছর বয়সী শতকোটিপতি টি এস কল্যাণারমণ (নিট সম্পদমূল্য ৩১০ কোটি ডলার) মোটেই উদ্বিগ্ন নন। তিনি বলেন, চাহিদা বৃদ্ধির শেষ নেই।
দুই ছেলেও বাবার সঙ্গে ব্যবসা করেন। তাঁদের একজন ৫০ বছর বয়সী রাজেশ এবং আরেকজন ৪৮ বছর বয়সী রমেশ। তাঁদের সহযোগিতায় কল্যাণারমণ সারা দেশে প্রায় ৪০০ দোকান এবং মধ্যপ্রাচ্য ও যুক্তরাষ্ট্রে আরও ৪০টি দোকান গড়ে তুরেছেন। সোনার দাম বাড়তে থাকায় বিশ্লেষকদের মতে, কল্যাণ এখন বাজেটবান্ধব ও তুলনামূলক হালকা ওজনের অলংকারে জোর দিচ্ছে। বাজারের পরিবর্তন বুঝে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার সক্ষমতা আছে তাদের। বলা যায়, এটাই তাদের মূল শক্তি। মুম্বাইয়ে তাদের ডিজাইন টিম আছে। সেই সঙ্গে সারা দেশে আছে ৯০০ ঠিকা উৎপাদনকারী।
আইসিআইসিআই সিকিউরিটিজের গবেষণাপ্রধান মনোজ মেনন মনে করেন, এসব উদ্যোগের কারণে মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব অনেকটা মোকাবিলা করা যায়। তাদের পূর্বাভাস, আগামী দুই বছরে কল্যাণের আয় ২৮ শতাংশ এবং কর-পরবর্তী মুনাফা ৩৮ শতাংশ বাড়তে পারে।
বিয়ের অলংকারকাল্যাণের মোট বিক্রির প্রায় ৬০ শতাংশ আসে বিয়ের অলংকার থেকে। এর গয়নার নকশায় আছে হিন্দুধর্মীয় রীতির প্রভাব—মন্দিরের নকশা, দেবী লক্ষ্মী, গণেশসহ হিন্দু দেবদেবীর অলংকরণ ও নানা ধর্মীয় মোটিফ। মেয়েদের উপহার হিসেবে সোনার গয়না দেওয়া ভারতীয় পরিবারে প্রাচীন রীতি। সোনা ‘স্ত্রীধনের অংশ’; এটি আইনে নারীর একান্ত সম্পত্তি হিসেবে স্বীকৃত এবং স্বামী বা শ্বশুরবাড়ির পক্ষ থেকে যার দাবি করা যায় না। বিয়ে ছাড়া অক্ষয় তৃতীয়া ও দীপাবলির মতো উৎসবেও সোনা কেনা শুভ, এটাই ভারতীয় রীতি।
ভারতের সংস্কৃতির সঙ্গে সোনার যোগ অনেক গভীর হওয়ায় এ দেশে সোনার বাজার দীর্ঘ মেয়াদে চাঙা থাকবে—এমনটাই পূর্বাভাস। গবেষণা সংস্থা নোমুরার মতে, আজকের ৯ হাজার কোটি ডলারের বাজার আগামী ৮ বছরে ১৫ হাজার কোটি ডলারে পৌঁছাতে পারে। ভারতের এখন পরিবারের একাধিক সদস্য আয় করছেন। সেই সঙ্গে বিশের ঘরে থাকা তরুণ জনগোষ্ঠীর সংখ্যা বেড়েছে—তাঁরাই কল্যাণের বিয়ের অলংকারের ভবিষ্যৎ ক্রেতা। ২০৩০ সালের মধ্যে এই সংখ্যা ৩৯ কোটি হতে পারে।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনাভবিষ্যৎ চাহিদার কথা মাথায় রেখে কল্যাণারমণ ব্যবসা সম্প্রসারণে গতি আনছেন। চলতি অর্থবছরে আরও ৯০টি দোকান করার পরিকল্পনা তাঁর। গত কয়েকটি ত্রৈমাসিকে দুই অঙ্কের ঘরে প্রবৃদ্ধি হয়েছে। সম্প্রসারণের বড় অংশ আসবে ফ্র্যাঞ্চাইজি মডেল থেকে। তিন বছর আগে পশ্চিম ভারতের আওরঙ্গবাদে প্রথম ফ্র্যাঞ্চাইজি-স্বত্বভোগী কিন্তু কোম্পানি পরিচালিত দোকান খোলে কল্যাণ। এরপর এখন অর্ধেকের বেশি দোকানই ফ্র্যাঞ্চাইজি–মালিকানাধীন। আরও অনেক কোম্পানি–মালিকানাধীন দোকানও ফ্র্যাঞ্চাইজি মডেলে দেওয়া হবে। জুন মাসে শেষ শেষ ত্রৈমাসিকে কল্যাণের মোট আয়ের ৪৩ শতাংশই এসেছে ফ্র্যাঞ্চাইজির দোকানগুলো থেকে।
আইসিআইসিআইর মেনন বলেন, ‘ফ্র্যাঞ্চাইজি মডেলের ব্যবসার জটিলতা সামলানো সহজ। সবকিছু নিজে করলে বড় হওয়া যায় না।
এদিকে বিদেশেও ব্যবসা সম্প্রসারণের পরিকল্পনায় আছে কল্যাণের। এখন আরব আমিরাত, কুয়েত, কাতার ও ওমানে তাদের ৩৮টি দোকান এবং যুক্তরাষ্ট্রে ২টি দোকান আছে—সর্বশেষ ত্রৈমাসিকে মোট আয়ের প্রায় ১২ শতাংশ এসেছে এসব দোকান থেকে। নিউ জার্সির আইসেলিন ও শিকাগোর পর এ বছর যুক্তরাষ্ট্রে আরও দুটি দোকান খুলবে তারা। ইউরোপেও পা বাড়িয়েছে কোম্পানিটি। অক্টোবরে যুক্তরাজ্যে একটি দোকান চালু করেছে তারা।
দেশের বাজারে নতুন গ্রাহক টানতে বিজ্ঞাপনে জোর দিচ্ছে কল্যাণ। গত ৪ বছরে বিজ্ঞাপন বাবদ খরচ করেছে ১৩ বিলিয়ন বা ১ হাজার ৩০০ কোটি রুপি। বলিউড তারকা ক্যাটরিনা কাইফ, জাহ্নবী কাপুর, দক্ষিণি সুপারস্টার নাগার্জুন, প্রভু গণেশন—সবাই তাদের মডেল হয়েছেন।
ব্র্যান্ডের কদর বাড়ছেভারতীয়দের আয় বাড়ছে। সেই সঙ্গে ব্র্যান্ডের দোকান থেকে সোনার গয়না কেনার প্রবণতাও বাড়ছে তাদের। গবেষণা সংস্থা নোমুরার তথ্যানুসারে, ২০০৭ সালে ব্র্যান্ডের দোকান থেকে ভারতীয়দের সোনা কেনার হার ছিল মোট সোনার ৬ শতাংশ। ২০১৮ সালে তা ৩০ শতাংশে উন্নীত হয়। ধারণা করা হচ্ছে, ২০২৫ সালে তা ৪০ শতাংশে উন্নীত হবে এবং ২০২৮ সালে হবে ৪৩ শতাংশে। অর্থাৎ পারিবারিক দোকান থেকে সোনা কেনা কমিয়ে দিচ্ছেন ভারতীয়রা। এ প্রবণতা থেকে বোঝা যায়, কল্যাণের বিক্রি বাড়বে। তবে বাজারে আরও অনেক প্রতিদ্বন্দ্বী আছে। তাদের সঙ্গে লড়াই করেই ব্যবসা করতে হবে তাকে।
টি এস কল্যাণারমণ ছোট টেক্সটাইলের ব্যবসা শুরু করে ১৯৯৩ সালে বড় আকারের গয়নার দোকান চালু করেন। সোনার শুদ্ধতার সনদ, পেশাদারি ব্যবস্থাপনা ও ওয়ারবার্গ পিনকাসের বিনিয়োগ—এসব কারণে ব্র্যান্ডটি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ফ র য ঞ চ ইজ য ক তর ষ ট র কল য ণ র র অল ক র র ব যবস গয়ন র র গয়ন
এছাড়াও পড়ুন:
রাজশাহীতে আ.লীগ কার্যালয়ের সামনে ককটেল বিস্ফোরণ
রাজশাহী নগরের সিটিহাট এলাকায় কার্যক্রম নিষিদ্ধ জেলা আওয়ামী লীগের পরিত্যক্ত কার্যালয়ের সামনে দুটি ককটেল বিস্ফোরিত হয়েছে। সোমবার (১০ নভেম্বর) রাত সাড়ে ১০টার দিকে ঘটনাটি ঘটে।
এ ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে বলে জানিয়েছেন নগরের শাহমখদুম থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মাছুমা মুস্তারী। তিনি বলেন, “সন্ত্রাসীরা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের সামনের সড়কে পরপর দুটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে পালিয়ে যায়।”
আরো পড়ুন:
এনসিপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ককটেল বিস্ফোরণ, যুবক আটক
ভয়াবহ বিস্ফোরণে কেঁপে উঠল দিল্লি, নিহত ১০
তিনি জানান, পুলিশ গিয়ে বিস্ফোরিত ককটেলের আলামত সংগ্রহ করেছে। স্থানীয় বিএনপির নেতারা ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন। তারা এ ব্যাপারে মামলা করতে চেয়েছেন। মামলা হলে বিস্তারিত জানানো হবে।
ঢাকা/কেয়া/মাসুদ